মুর্হরম-ছফর মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

সংখ্যা: ১০৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

আরবী বছরের প্রথম মাস মুর্হরম। আরবী বার মাসের মধ্যে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে কালামুল্লাহ্ শরীফে ঘোষণা করা হয়েছে, মুর্হরম মাস তন্মধ্যে অন্যতম। আসমান-যমীন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে।  মাসটির সম্মান ও ফযীলত বুঝানোর উদ্দেশ্যে হাদীস শরীফে এ মাসকে শাহ্রুল্লাহ্ বা আল্লাহ্ তায়ালার মাস হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে; এবং নির্দেশ করা হয়েছে যে,

اكرموا المحرم من اكرم المحرم اكرمه اله باجنة ونجاه من النار.

অর্থঃ- “তোমরা মুর্হরম মাসকে সম্মান কর। যে ব্যক্তি মুর্হরম মাসকে সম্মান করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে জান্নাত দ্বারা সম্মানিত করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।” বর্ণিত আছে যে, এ মাসেরই দশ তারিখ দশই-মুর্হরম “আশুরা” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়।   সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর কোন না কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এ দিনটি আমাদের সবার জন্য এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন, রহমত, বরকত, ছাকীনা হাছিল করার দিন। তাই এ দিনে কতিপয় আমলের কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- (ক) ১০ই মুর্হরম উপলক্ষ্যে দু’টি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ। সম্ভব হলে উক্ত দিনে যারা রোযা রাখবে তাদের এক বা একাধিকজনকে ইফতার করানো। (খ) সাধ্যমত পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো। (গ) গোসল করা। (ঘ) চোখে সুরমা দেয়া। (ঙ) গরীবদেরকে পানা-হার করানো। (চ) ইয়াতিমের মাথায় হাত বুলানো। বর্ণিত সব আমলগুলোই সুন্নত।

উল্লেখ্য, এ আমলগুলোর ফযীলত সম্পর্কে জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮০তম সংখ্যা পাঠ করুন।   আরবী বর্ষের দ্বিতীয় মাস ছফর। ফযীলত ও বুযুর্গীর ক্ষেত্রে এ মাসটিও এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ মাসেই মুসলমানদের “আখিরী চাহার শোম্বা” নামক বিশেষ দিনটি পালিত হয়।    আর এ মাসেরই ২৮ তারিখ সোমবার দিনে ৬৩ বছর বয়স মুবারকে ১০৩৪ হিজরীতে আল্লাহ্ পাক-এর বেমেছাল ওলী আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যূমে আউয়াল, হযরত শায়খ আহমদ ফারুকী সিরহিন্দী মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ওফাত লাভ করেন।     তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বংশধর।

এই মহান ওলীর আগমনের সুসংবাদ পূর্ববর্তী বহু উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন মাশায়িখগণ কর্তৃক ঘোষিত হয়েছে। এমনকি স্বয়ং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আবির্ভাবের ইঙ্গিত প্রদান করে বলেছিলেন যে, “হিজরতের একাদশ শতাব্দির প্রারম্ভে আল্লাহ্ পাক এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবেন যিনি একটি বৃহৎ নূর, তাঁর নাম হবে আমার নামের অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহ্র মধ্যবর্তী সময়ে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং তাঁর শাফায়াতে অসংখ্য লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে।”   হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব “আবু দাউদ শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, “আল্লাহ্ পাক প্রতি হিজরী শতকের শুরুতে একজন মুজাদ্দিদ পাঠিয়ে থাকেন।”

হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি কেবল শতাব্দির ‘মুজাদ্দিদই’ ছিলেন তা নয় বরং তিনি ছিলেন সহস্রাব্দের ‘মুজাদ্দিদ।’    ‘মুজাদ্দিদ’ পদ কোন সাধনালব্ধ জিনিষ নয়। নুবুওওয়াত যেমন আল্লাহ্ পাক-এর খাছ দান, মুজাদ্দিদিয়াতও তেমনি। তিনি ছিলেন ইল্মে শরীয়ত ও তরীক্বতের ইমাম। তাঁর মহান তাজদীদের প্রভাবে বর্তমান কালের উলামায়ে ‘ছূ’দের ন্যায় সম্রাট আকবরের মদদপুষ্ট ও তার রাজনীতির সাথে জড়িত আবুল ফযল, ফৈজী, মোল্লা মোবারক নাগরী ইত্যাদি উলামায়ে ‘ছূ’দের দ্বারা প্রবর্তিত তাবৎ হারাম, নাজায়িয, কুফরী ও শিরকীতে ভরপুর দ্বীন-ই-ইলাহীর মূলোৎপাটন হয় এবং ইসলামী আহ্কাম নতুন করে জারী হয়।

যিলহজ্জ মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

রবীউল আউয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

রবিউস্ সানী মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

জুমাদাল উলা মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

জুমাদাল উখরা মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা