-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা
(ধারাবাহিক) অনুরূপভাবে চোগলখোরও জাহান্নামী হবে। এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لايدخ اجنة نمام.
অর্থঃ- “চোগলখোর ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবেনা।” চোগলখোরী হলো, “একজনের কথা শুনে তাতে সত্য-মিথ্যা যোগ করে অপরের কান ভারী করা। আবার তার কথার সাথে সত্য-মিথ্যা যোগ করে প্রথমজনকে ক্ষুব্ধ করা।” এটি ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। যারা জিহ্বার ব্যাপারে বে-খেয়াল তাদের দ্বারাই এ জাতীয় অপরাধ বেশী হয়ে থাকে। “তিরমিযী শরীফে” বর্ণিত রয়েছে, একবার পেয়ারা নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় জিহবা মুবারক ধরে বললেন,
كف عيك هذا
অর্থঃ- “এটা তোমার নিয়ন্ত্রনে রাখ।” কারণ
هل يلب الناس فى النار على وجوههم الا حصائد اسنتهم.
অর্থঃ- “মানুষকে তার জিহবা দ্বারা উপার্জিত জিনিসের কারণেই জাহান্নামে উঁপূড় করে নিক্ষেপ করা হবে।” আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন,
اذا اصبح ابن ادم فان الا عضاء كها تكفر السلن تقول اتق الله فينا فانما نحن بك فان استقمت استقمنا وان اعوججت اعوججتا.
অর্থঃ- “আদম সন্তান সকালে ঘুম থেকে উঠলে তার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার মুখের কাছে অনুনয়-বিনয় করে বলে, আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ পাককে ভয় করো। কেননা, আমরা তোমার সাথেই আছি। যদি তুমি ঠিক থাকতে পারো, তবে আমরাও ঠিক থাকবো। আর যদি তুমি বাঁকা পথ ধরো, তবে আমরাও খারাপ হয়ে যাবো।” (তিরমিযী শরীফ) সাইয়্যিদুনা হযরত উক্ববা ইবনে আ’মির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسم ما النجاة؟ قال امسك عليك لسنك وليسعك بيتك وابك على خطيئتك.
অর্থঃ- “আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! “মুক্তির উপায় কি?” তিনি বললেন, “তোমার জিহ্বাকে সংযত রাখো। নিজের ঘরকে (মেহমানদারী করে করে) প্রশস্ত করো। আর কৃত অপরাধের জন্য কান্নাকাটি করো।” (তিরমিযী) আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
من كان يؤمن بالله واليوم ااخر فليقل خيرا او يصمت.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে কিংবা চুপ থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম) আল্লাহ পাক জাল্লা জালালুহু ইরশাদ করেন,
وا تقف ما ليس ك به عم ان السمع والبصر والفؤاد كل اولئك كان عنه مسئولا.
অর্থঃ- “এমন কোন জিনিসের পিছনে লেগোনা, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চিত জেনে রাখ, চোখ, কান ও দিল সব কিছুর জন্যই জবাবদিহি করতে হবে।” (সূরা বণী ঈসরাইল/৩৬) আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যদি কেউ অন্য কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুনিয়াতে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কোন অপপ্রচার করে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তাকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করে হেয় করবেন।” (ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি) আল্লাহ্ পাক তাঁর মহান ইজ্জত ও প্রতাপের কছম করে বলেছেন, আট প্রকার লোক জান্নাতে যেতে পারবেনা। (১) মদ্য পানে অভ্যস্ত, (২) যিনা-ব্যভিচারে অভ্যস্ত, (৩) চোগলখোর, (৪) দাইয়ূ্যূস (অর্থাৎ যার স্ত্রী এবং অধীনস্ত মহিলারা বে-পর্দা ও যিনায় লিপ্ত; কিন্তু সে তাদেরকে বিরত রাখেনা), (৫) অত্যাচারী প্রহরী-পুলিশ, (৬) নপুংসক (যে স্বেচ্ছায় মহিলার ভাব-ভঙ্গি অবলম্বন করে ও গান-বাজনায় মত্ত হয়), (৭) আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদনকারী, (৮) সে ব্যক্তি যে আল্লাহ্ পাক-এর শপথ করে কোন ভাল কাজ করার অঙ্গীকার করেও সেই কাজ করেনা। সাইয়্যিদুনা হযরত কা’বুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। একবার বণী ইস্রাঈলের মধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম বার বার বৃষ্টির জন্য দোয়া করা সত্ত্বেও বৃষ্টি হচ্ছিলোনা। আল্লাহ্ পাক ওহী পাঠালেন যে, “যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের সাথে কোন চোগলখোর লোক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের দোয়া কবুল করা হবেনা।” সাইয়্যিদুনা হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম বললেন, “আল্লাহ্ পাক! আপনি বলে দিন, আমাদের মধ্যে চোগলখোর ব্যক্তি কে? আমরা তাকে আমাদের থেকে পৃথক করে দেই।” আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে আমার রসূল! আমি নিজেই চোগলখোরী হারাম করেছি, আবার আমি বলি কি করে?” অতঃপর তারা সকলেই আল্লাহ্ পাক-এর মহান দরবারে তওবা করলো, পরে বৃষ্টিও হলো। কথিত আছে যে, কবরের এক তৃতীয়াংশ আযাব গীবতের কারণে হয়ে থাকে। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমরা গীবতকে পুরোপুরিভাবে পরিহার করো। কেননা, গীবত ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য। কারণ, ব্যভিচারী ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট তওবা করলে তিনি ক্ষমা করে দিবেন; কিন্তু গীবতকারীর জন্য গীবতকৃত ব্যক্তির ক্ষমা ব্যতীত আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করবেন না। অতএব, গীবত করে থাকলে প্রথমে বান্দার নিকট থেকে ক্ষমা হাছিল করতঃ একান্তভাবে আল্লাহ্ পাক-এর কাছেও তওবা করা উচিত। যাতে আল্লাহ্ পাক-এর হুকুমের অবাধ্যতাও মাফ হয়ে যায়। তবেই পূর্ণ মুক্তির আশা করা যেতে পারে। জনৈক বুযূর্গকে আসমানের চেয়ে অধিক ভারি বস্তু কোনটি জিজ্ঞাসা করলে, তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “নিস্পাপ-নির্দোষ লোকের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা আসমান অপেক্ষা ভারী গুনাহ্।” কবি বলেন, “রব যখন ইচ্ছা করেন দিতে কাউকে অধিক মান-সম্মান, জুড়ে দেন তখন তার পিছনে হিংসুকের রসনার বান।” য (সমাপ্ত)