আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কষ্ট স্বীকার করেছেন, তাকলীফ স্বীকার করেছেন; কিন্তু উম্মতদের কষ্ট না হোক সেটাই তিনি লক্ষ্য রেখেছেন। সেটাই বলা হয়েছে, উনারা যখন আলোচনা করছিলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কষ্ট হচ্ছিল, আল্লাহ্ পাক তখন জানিয়ে দিলেন। কারণ তিনি ওহী ছাড়া কথা বলবেন না। উম্মতকে তিনি কষ্ট দিবেন না, নিজেই কষ্ট করবেন।
والله لايستحى من الحق.
“আল্লাহ্ পাক তো সত্য বলতে লজ্জা করেন না।” আল্লাহ্ পাক সত্য বলবেনই। যেহেতু আল্লাহ্ পাক ওহী নাযিল করবেন, সেটাই আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলবেন। আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করবেন, হুকুম-আহ্কাম নাযিল করবেন, সেটাই জারী করে দিবেন আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তোমরা বসে বসে কষ্ট দিচ্ছ আর আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে কষ্ট বরদাস্ত করে যাচ্ছেন। যেহেতু ওহী নাযিল হচ্ছে না সেহেতু কিছুই বলছেন না। তখন আল্লাহ্ পাক ওহী নাযিল করে দিলেন। আল্লাহ্ পাক স্পষ্ট বলে দিলেন যাতে উম্মতের ইহ্সান হয়। উম্মতকে উপকার করার জন্য, ঈমান হিফাযতের জন্য আল্লাহ্ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন।
কারণ আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উম্মত কষ্ট দিবে, তাহলে তো ঈমান থাকতে পারেনা। তারা ঈমান হারা হয়ে জাহান্নামী হয়ে কাফির হয়ে ইন্তিকাল করবে। যাতে তারা ঈমান নিয়ে যেতে পারে, মুসলমান হয়ে, খালিছ মুসলমান হয়ে যেতে পারে। সে জন্য আল্লাহ্ পাক
والله لايستحى من الحق.
আল্লাহ্ পাক সত্য বলতে লজ্জা করেন না। আল্লাহ্ পাক সত্য বলে থাকেন। সেখানে কাউকে পরওয়া করেন না। সেটাই বলে দিলেন আল্লাহ্ পাক যে, তোমরা এমন আচরণ করনা বরং এভাবে করো। আর সেটাই আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দিলেন। তাই বলা হয়েছে,
انا نحن نزلنا الذكر وانا له لحفظون.
“নিশ্চয়ই আমিই নাযিল করেছি এবং আমিই হিফাযত করব।” আল্লাহ্ পাক নাযিল করেছেন হুকুম-আহ্কাম এবং হিফাজতের জিম্মাদার আল্লাহ্ পাক। আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্ পাক সেটা জারী করে দিয়েছেন; এবং হিফাযতের ব্যবস্থা করেছেন। এরপর আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
واذا سألتموهن متاعا فاسئلوهن من ورأء حجاب.
“যখন তোমরা মেয়েদের নিকট কিছু চাবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চেও।” পূর্বে বলা হয়েছে, তোমরা অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করো। বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবেনা। পর্দা রক্ষা করবে। আর যেটা অন্য আয়াত শরীফে বলা হয়েছে,
وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى.
“তোমরা ঘরে পর্দার সহিত থেকো। বে-পর্দা হয়ে, বস্ত্রহীন হয়ে, সৌন্দর্য প্রদর্শন করে, আইয়ামে জাহিলিয়াতের মত রাস্তায় ঘুরে বেড়িও না।” বে-পর্দা হতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। পর্দা রক্ষা করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। এখন যদি কোন ব্যক্তি কোন মহিলার কাছে কিছু চায়; এবং কোন মহিলা যদি কোন পুরুষকে কিছু দিতে হয় তাহলে সেটা কিভাবে দিবে, সেটাই আল্লাহ্ পাক-এর রসূল উল্লেখ করে দিলেন। যদি কিছু বলতেই হয় বা চাইতেই হয়, তাহলে কি করবে,
واذا سألتموهن مناعا.
“যখন তোমরা কিছু চাবে কোন মহিলার কাছে অথবা কোন মহিলা যদি পুরুষকে কিছু দিতে চায়
فاسئلوهن من وراء حجاب.
সে যেন পর্দার আড়াল থেকে চায়। অথবা পর্দার আড়াল থেকে যেন সে দেয়। হাদীস শরীফে এসেছে, “আখিরী রসুল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেক মহিলারা অনেক সময় কিছু দিয়েছেন, সেটা পর্দার আড়াল থেকে দেয়া হয়েছে, বে-পর্দা হয়ে দেয়া হয়নি।” যখন পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল হয়ে গেলো, এরপর থেকে পর্দার যা হুকুম-আহ্কাম ছিলো পুরোপুরি সেটা আমল করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আদেশ এবং নির্দেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোন ত্রুটি করা হয়নি।
সেটাই বলা হয়েছে, যদি তোমাদের কিছু দিতে হয় অথবা কিছু নিতে হয়, অথবা চাইতে হয় তখন পর্দার আড়াল থেকেই চাবে এবং দিবে।
ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن.
এটা হচ্ছে তোমাদের জন্য এবং যাদের কাছে চাবে সে মহিলা তাদের অন্তরের পবিত্রতার কারণ। আয়াত শরীফ খানা নাযিল হলো হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে উপলক্ষ করে। কিন্তু হুকুমটা আম, নুযূল খাছ। পূর্বে আমি যে আয়াত শরীফ বলেছি, সে আয়াত শরীফের মধ্যে আল্লাহ্ পাক বলেন,
انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهر كم تطهيرا.
নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক চান, আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে, হে আহলে বাইত! এবং পবিত্রা করার মত পবিত্রা করতে চান। খাছ করে, এ আয়াত শরীফখানা নাযিল হয়েছিল হযরত উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণের জন্য। হুকুম সেখানেও আম। এখানে খাছ করে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ্ পাক চান যে আপনাদেরকে পবিত্রা করার জন্য।” এখন এর খাছ হুকুম হচ্ছে আহ্লে বাইত, যারা উম্মূল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্না। উনারা ছিলেন মূল লক্ষ্যস্থল। কিন্তু এর হুকুম আম। অর্থাৎ নুযূল খাছ, হুকুম আম। আল্লাহ্ পাক চান প্রত্যেক পর্দানশীন, যারা নেক্কার, পরহিযগার মহিলা রয়েছে তাদেরকে পবিত্রা করতে।
يذهب عنكم الرجس اهل البيت.
“আল্লাহ্ পাক চান তোমাদেরকে পবিত্রা করার জন্য।”
يطهر كم تطهيرا.
“এবং পবিত্রা করার মত পবিত্রা করতে চান।” সেজন্য আল্লাহ্ পাক আয়াতগুলো আদেশ এবং নির্দেশ হিসেবে নাযিল করেছেন; এবং এখানেও সেই একই কথা বলেছেন,
ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن.
এটা হচ্ছে তোমাদের এবং ঐ সমস্ত মহিলা যাদের সাথে তোমাদের জরুরতে লেনদেন করতে হবে তাদের অন্তরের পবিত্রতার কারণ। এর খিলাফ যদি করা হয় তাহলে অন্তরের মধ্যে গালিজ প্রবেশ করে যেতে পারে। যা পূর্বে বলা হয়েছে। কাজেই পর্দা রক্ষা করা মেয়েদের জন্য যেমন ফরয করা হয়েছে ঠিক পুরুষদের জন্যও ফরয। পুরুষদের জন্য পর্দা ফরয। কারণ তার দায়িত্ব হচ্ছে, তার অধীনস্ত মহিলাদের পর্দা করানো। আরেকটা দায়িত্ব হচ্ছে, সে যেন বেগানা মেয়েদের দিকে দৃষ্টি না করে। এটা তার জন্য ফরয করে দেয়া হয়েছে। কারণ এক একটা দৃষ্টিতে এক একটা কবীরা গুণাহ্। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন,
ياعلى (رضى الله تعالى عنه) لاتتبع النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
“হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তুমি দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রতি দৃষ্টিতে একটা করে কবীরা গুণাহ্ লিখা হবে। প্রথম দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে।” যদি কারো দৃষ্টি অজান্তে পড়ে যায় সেটা ফিরিয়ে নিবে। যদি এরপর সে ফিরিয়ে না নেয় তাহলে প্রতি দৃষ্টিতে তার একটা করে কবীরা গুণাহ্ লিখা হবে। (নাউযুবিল্লাহ্) তবে যে দেখবে, যে দেখাবে উভয়ের জন্যই সেই লা’নতটা এবং সেই গুণাহ্টা রয়েছে। (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনার আলোকে পদার গুরুত্ব-তাৎপয, ফাযায়লে-ফযীলত ও হুকুম-আহকাম