(ধারাবাহকি)
আর দ্বিতীয় ররওয়ায়তে উল্লখে করা হয়ছে,উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ঘরে প্রবশে করে হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে ডেকে নিয়ে পর্দা লটকিয়ে দলিনে। এরপরওে পছিন-েপছিনে ছাহাবায়ে করিাম রদ্বয়িাল্লাহু তায়ালা আনহুম আসতছেলিনে। সইে মুর্হুতে আল্লাহ পাক আয়াত শরীফ নাযলি করলনে, ঘোষণা করে দলিনে,
يايها الذين امنوا لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم الى طعام غير نظرين انه ولكن اذا دعيتم فادخلوا فاذا طعمتم فانتشروا ولا مستانسين لحديث- الى اخر
অথাৎ আয়াত শরীফ খানা পুরাটাই নাযলি করে দয়ো হলো। হযরত ছাহাবায়ে করিাম রদ্বয়িাল্লাহু তায়ালা আনহুমদরে সামনে এসে আখরিী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে শুনালনে। উনারা বুঝতে পারলেন যে র্পদার আয়াত শরীফ নাযিল হয়ছে। প্রত্যকেইে চলে গলেনে।
এখন এই আয়াত শরীফ আল্লাহ পাক নাযিল করছেনে হযরত জয়নাব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার বিয়ের ওলীমা উপলক্ষ সজেন্য উছুল হচ্ছ “নুযূল খাছ হুকুম আম।”
পর্দা এবং তার আনুষঙ্গিক যত মাসয়ালা-মাসায়িল রয়েছে, সবগুলোই হচ্ছে, “হুকুম আম যদিও নুযূল খাছ।” এখানে বিয়ের প্রসঙ্গে আয়াত শরীফ নাযিল করা হয়েছে। সাধারণ মাসয়ালা হচ্ছে, বিয়ে করা হচ্ছে সুন্নত। ক্ষেত্র বিশেষে এটা ফরয, ক্ষেত্র বিশেষে সেটা হারাম। হাদীস শরীফে এসেছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
النكاح من سنتى فمن رغب عن سنتى فليس منى.
“বিয়ে করা হচ্ছে আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত থেকে বিরাগ থাকবে, ফিরে থাকবে, সে আমার উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।” আরো হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,
اربع من سنن المرسلين الحياء، والتعطر، والسواك والنكاح.
চারটা কাজ হচ্ছে রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত। নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত হচ্ছে চারটা কাজ,- এক নম্বর বলা হয়েছে الحياء লজ্জা হচ্ছে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত। والتعطرআতর-গোলাপ মাখা, সুঘ্রাণ-সুগন্ধি মাখা হচ্ছে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত। والسواك মিসওয়াক করা, সেটাও সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের সুন্নত। والنكاح এবং নিকাহ্-বিবাহ করা হচ্ছে সকলেরই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই আমভাবে ফতওয়া হচ্ছে বিবাহ করা সুন্নত; কিন্তু খাছভাবে তার ব্যতিক্রম রয়েছে। কারণ হাদীস শরীফে এসেছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
النكاح نصف الايمان.
“বিয়ে করা হচ্ছে অর্ধেক ঈমান।” অন্য হাদীস শরীফে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله فى النصف الباقى.
“আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন যে, দেখ- اذا تزوج العبد.
‘যখন কোন বান্দা বিয়ে করলো,
فقد استكمل نصف الدين.
‘সে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করলো।’
فليتق الله فى النصف الباقى.
‘আর তার বাকী অর্ধেকের জন্য সে যেন আল্লাহ্ পাককে ভয় করে।” এখানে মুহাদ্দিসিন-ই-কিরাম যেটা বলেছেন, সেটা হচ্ছে, “মানুষের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা এবং তার জবানকে অর্থাৎ জবান ও পেটকে হিফাজত করা।” যেটা অন্য হাদীস শরীফে এসেছে,
من يضمن لى ما بين لحييه و رجليه اضمن له الجنة.
আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি দু’টা বিষয়ের জিম্মাদার হলো আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হয়ে যাব। (সুবহানাল্লাহ) যেটা তার জ্বিব মুখের এবং দুই চাপার মধ্যে অর্থাৎ মুখের মধ্যে যা রয়েছে; এবং দুই পায়ের মধ্যে যা রয়েছে, অর্থাৎ জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান এ দু’টোর জিম্মাদার যে হবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হয়ে যাব।” (সুবহানাল্লাহ)
সে জন্য বলা হয়েছে, মানুষের খাওয়া-পরা সেটা হচ্ছে অর্ধেক। আর নিজের লজ্জাস্থানকে হিফাজত করা হচ্ছে তার অর্ধেক। কাজেই যে বিবাহ্ করল সে তার অর্ধেক দ্বীন হিফাযত করলো। আর বাকী অর্ধেকের জন্য সে যেন আল্লাহ্ পাককে ভয় করে। তাক্বওয়া হাছিল করে; এবং সাধারণভাবে বিয়ে করা সুন্নত। আর যদি কারো গুণাহ্ করার সম্ভাবনা থাকে তখন তার জন্য সেটা ফরয হয়ে যায়। আর বিয়েতে যে শর্ত-শারায়েত ও যে হুকুম-আহকাম রয়েছে সেগুলো পালন করতে পারবেনা, তার জন্য বিয়ে করা হারাম। সেটা আর্থিক, মানসিক, দৈহিক যেটাই হোক বা যা কিছুই হোক না কেন সেটা রক্ষা করতে না পারলে তার জন্য বিয়ে করা হারাম।
যেমন, বিশেষ করে পর্দা হচ্ছে বিয়ের জন্য অন্যতম জরুরী বিষয়। যদি কেউ পর্দা রক্ষা করতে না পারে তাহলে তার জন্য বিয়ে করা যে ফরয বা সুন্নত থাকে সেটা ছাকেত হয়ে যায়। যেহেতু পর্দা করা হচ্ছে ফরয। তাই তার সুন্নত ছাকেত হয়ে যাবে যদি সে পর্দা রক্ষা করতে না, পারে পর্দা করা হচ্ছে ফরয। যেটা আগেও আমি বলেছি, এক একটা দৃষ্টিতে এক একটা কবীরাহ্ গুণাহ্, হাদীস শরীফে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন। সেজন্য বলা হয়েছে, যখন কেউ বিয়ে করবে সে যেন সতর্ক হয়ে সাবধান হয়ে করে অর্থাৎ সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেই যেন সে করে। বিয়ের সাথে সাথে পর্দা করা ফরয এ দায়িত্বটাও তার উপরে আলাদাভাবে অর্পিত হয় যে,
ان المرأة تنكح على دينها وما لها ونسبها وجملها فعليك بذات الدين.
এক হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে যে, “নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়ে করবে তখন তার মাল বা অর্থ-সম্পদ, নসব ও বংশ বা ছূরত এবং তার দ্বীনদারী-পরহিযগারী দেখে বিয়ে করো; তবে দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দিও।
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تنكح المرءة لاربع المالها ولحسبها ولجمالها ولدينها فاظفر بذات الدين تربت يداك.
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, চারটা গুণ দেখে তোমরা বিয়ে করবে, মাল-সম্পদ দেখে, বংশ-নছব দেখে, ছূরত দেখে, এবং দ্বীনদারী-পরহিযগারী দেখে করবে, তবে দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দিও, অন্যথায় তুমি নিজেকেই নিজে ধ্বংস করে ফেলবে। কারণ যদি কেউ দ্বীনদারী দেখে বিয়ে করে, তবে তার পক্ষে পর্দার যে ফরযটা রয়েছে সেটা আদায় করা সম্ভব হবে। আর যদি সে দ্বীনদারী-পরহিযগারী না দেখে, অন্য কিছু দেখে বিয়ে করে তাহলে তার পক্ষে পর্দা রক্ষা করা কঠিন হবে। যে পর্দা হচ্ছে ফরয এবং সেই পর্দাটা শুধু তার উপরেই থাকবে না তার সিলসিলা চলতে থাকবে। সাধারণতঃ মা’র তাছীর মেয়েদের উপর পড়বে। পর্যায় ক্রমে সিলসিলা চলতে থাকবে। যদি মা নেক্কার পরহিযগার হন তাহলে মেয়েরাও নেককার পরহিযগার কমবেশী কিছু তো হবেই। আর যদি মা নেক্কার-পরহিযগার না হয়। তাহলে অবশ্যই সন্তানের জন্য বিশেষ করে মেয়েদের জন্য নেককার পরহিযগার হওয়া খুব কঠিন। সেজন্য আল্লাহ্ পাক বিয়ে উপলক্ষ্যে পর্দার আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন। আল্লাহ্ পাক নাযিল করেছেন লক্ষ-কোটি কারণ তার মধ্যে রয়েছে। মুহাক্কিক, মুদাক্কিক ইমাম-মুজতাহিদ উনারা অনেক কারণ বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটা কারণ হচ্ছে পর্দা বিয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, বিয়ে করার পর একজন স্বামীর উপর তার স্ত্রীর পর্দা করা ফরয, তা দায়িত্ব হিসাবে অর্পিত হয়। এটা আলাদা একটা দায়িত্ব এসে অর্পিত হয়। কারণ, জান্নাতের দরজায় লিখা রয়েছে,
الديوث لايدخل الجنة.
দাইয়্যূছ কখনও জান্নাতে প্রবেশ করবেনা, দাইয়্যূছ হচ্ছে কে? যে পুরুষ তার অধীনস্ত মহিলাদের পর্দা করায় না। অর্থাৎ অধীনস্ত বা মাতাহাত (ماتحت) স্ত্রী, মেয়ে বা যে মহিলা রয়েছে তাদের কে যে পর্দা করাবেনা, যার গাফলতির কারণে পর্দার খিলাফ হবে সে দাইয়্যূছ বলে সাব্যস্ত হবে, এবং সে, জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। কাজেই সেজন্য বিয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে পর্দা যা করা ফরয। আর বিয়ে করা সুন্নত, ফরয, এবং হারাম অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
কাজেই এরপর এ আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ে উপলক্ষ্যে অলীমা করেছেন। অলীমা করাও সুন্নত। হাদীস শরীফে রয়েছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক বিয়েতে অলীমা করেছেন। অন্যকেও বলেছেন অলীমা করার জন্য,
عن انس رضى الله عنه قال ما اولم رسول الله صلى الله عليه وسلم على احد من نسائه ما اولم على زينب رضى الله تعالى عنها اولم بشاة.
হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত উম্মূল মু’মিনীনদের বিয়েতে অলীমা করেছেন, তবে হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহার বিয়ের সময় যেমন অলীমা করা হয়েছে, খাশী জবাই করে রুটি পাকিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বড় করে, তেমন বড় অলীমা অন্য কারো সময় করা হয়নি। তবে অলীমা করলেই যে বড় করে করতে হবে সেটা নয়। ছোট খাটো করেও অলীমা করা যেতে পারে, যেটা অন্য হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال ان رسول اله صلى الله عليه وسلم اعتق صفية رضى الله تعالى عنها وتزوجها وجعل اعتقها صدا قها واولم عليها بحيس.
হযরত আনাছ বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছূফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে (যিনি হুয়াই বিন আকতাব নামে ইহুদীদের মধ্যে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বড় এক সর্দার ছিল তার মেয়ে। সেই হুয়াই বিন আকতাব যুদ্ধে পরাস্ত হলে হযরত ছূফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বন্দিনী হিসাবে আসেন, মুসলমানদের মধ্যে। উনাকে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল, অন্যান্য যারা বন্দি ছিল তাদের মত হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে। কিন্তু বিশিষ্ট ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত ছূফিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তো বিশিষ্ট সম্মানিত ব্যক্তির মেয়ে, হুয়াই বিন আকতাব ইহুদীদের মধ্যে যারা সবচাইতে মান্য-গণ্য ও বিশেষ ব্যক্তি রয়েছে তাদের মধ্যে একজন। তার মেয়ে হিসাবে উনাকে আপনার কাছে রেখে দিলেই উত্তম হয়। তখন আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত দাহিয়াতুল কালবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আরেকজন বন্দীনি দিয়ে হযরত ছূফিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কাছে নিয়ে আসলেন।) আযাদ করে দিলেন, এটা উনার মহর হিসাবে সাব্যস্থ করে উনাকে বিয়ে করে নিলেন। উনার বিয়ের মধ্যে হাইস নামক এক প্রকার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছিলেন অলীমাতে। সেখানে অলীমা করা হয়েছিল। খেজুর, পনির, ঘি, ছাতু ইত্যাদি মিশ্রিত করে এক প্রকার খাদ্য পাকানো হত সেটাকে হাইস বলা হত। একটা মাঝামাঝি ধরণের খাদ্যের ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপরে ইরশাদ করা হয়েছে, আরেক জন মহিলা ছাহাবী বর্ণনা করতেছেন,
عن صفية بنت شيبة رضى الله تعالى عنها قالت اولم النبى صلى الله عليه وسلم على بعض نسائه بمدين من شعير.
মহিলা ছাহাবী উনি বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক স্ত্রীর উম্মুল মু’মিনীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার) বিয়েতে অলীমা করেছিলেন মাত্র দুই মুদ যব দিয়ে। এক মুদ হচ্ছে আমাদের দেশের হিসাবে প্রায় ১৪ ছটাক, প্রায় ১৪ ছটাক হচ্ছে এক মুদ। দুই মুদ দিয়ে অর্থাৎ ২৮ ছটাক দিয়ে অলীমা করেছিলেন। অর্থাৎ যদি কারো সাধ্য সামর্থ থাকে সে বেশী করেও অলীমা করতে পারে। আর যদি তার সাধ্য সামর্থ কম হয় তাহলে সে অল্প, ছোট খাট করেও অলীমার ব্যবস্থা করতে পারবে। সেটা জায়েয রয়েছে এবং অলীমা করা হচ্ছে খাছ সুন্নত।
যেমন আরো হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم راى على عبد الرحمن ابن عوف اثر صفرة فقال ما هذا قال انى تززجت امراة.
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাপড়ের মধ্যে হলুদ সুতার মত একটা কিছু দেখতে পেলেন। দেখে আখিরী রসূল জিজ্ঞাসা করলেন যে, এটা কি? উনি বললেন যে, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
انى تزوحت امراة একজন মহিলাকে আমি বিয়ে করেছি,
على نواة من ذهب
মোহ্র হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছিল খেজুরের বিচির মত এক স্বর্ণের টুকরা দানা।”
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بارك الله لك اولم ولو شاة.
আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন যে, “আল্লাহ্ পাক তোমার বরকত দান করুক, তবে তুমি একটা অলীমা করে নাও। যদিও বকরী দিয়ে হোক না কেন; অলীমা করে নাও। অর্থাৎ অলীমা করা হচ্ছে সুন্নত। তবে আমাদের দেশে একটা নিয়ম রয়েছে, যা বদ রসম। সেটা হচ্ছে, নিয়ম হলো অলীমা করবে ছেলের পক্ষ বা ছেলে। মেয়ের পক্ষের অলীমা করার নিয়ম নেই। হ্যাঁ, মেয়ের পক্ষ অর্থাৎ মেয়েকে যখন তুলে আনতে যাবে তখন মেয়ের পক্ষ অল্প কিছু মেহমানদারী করে মেয়েকে তুলে দিবে। তবে মূল অলীমা যেটা খাদ্যের ব্যবস্থা সেটা ছেলের পক্ষ বা ছেলে করবে। এটা হচ্ছে খাছ সুন্নত। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় বিপরীত। মেয়ের পক্ষ বড় করে, ছেলের পক্ষ সামান্য কিছু করে থাকে। এটা হচ্ছে সুন্নতের খিলাফ। সেটাই আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, অলীমা কর। এই আয়াত শরীফের দ্বারা অলীমা করা সুন্নত সাব্যস্ত হল এবং পর্দা করা সেটা ফরয।
এরপর বলা হয়েছে, যে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন,
لاتدخلوا بيوت النبى الا ان يؤذن لكم.
“অনুমতি ব্যতীত তোমরা প্রবেশ করনা। খাদ্য খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে সত্যি, খাদ্য পাকানোর পূর্বে অপেক্ষা না করে, অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করনা।”
الا ان يؤذن لكم.
“অনুমতি ব্যতীত তোমরা প্রবেশ করনা, অনুমতি নিয়ে এরপর প্রবেশ করবে। বিনা অনুমতিতে যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে।”
এই অনুমতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কোথাও যেতেন সেখানেও বাড়ীর যে আহ্লে বাইত থাকত তাকে জিজ্ঞেস করতেন, ছালাম দিতেন। সেটা হাদীস শরীফে এসেছে,
عن ابد الله ابن بسر قال كان رسول الل صلى الله عليه وسلم اذا اتى باب قوم لم يستقبل الباب من تلقاء وجهه.
হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন বুস্র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন কারো বাড়ীতে যেতেন, তখন সেখানে গিয়ে সরাসরি দরজা বরাবর দাঁড়াতেন না, এক পার্শ্বে দাঁড়াতেন।
ولكن جاء من ركنه الايمان او الايسر فيقول السلام عليكم السلام عيكم السلام عليكم
আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো বাড়ীতে যখন যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতেন বা যেতেন, দরজার সামনে গিয়ে বরাবর দাঁড়াতেন না। এক পার্শ্বে দাঁড়াতেন। হয় ডান পাশে অথবা বাম পাশে, দাঁড়িয়ে ছালাম দিতেন, একবার, দু’বার, তিনবার পর্যন্ত রেওয়ায়েত রয়েছে,
السلام عليكم ورحمة الله
যখন ছালাম দিতেন, একবার, দু’বার, তিনবার। এরপর সে গৃহবাসী জাওয়াব দিত, এবং এসে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাজীম-তাকরীমের সহিত প্রবেশ করিয়ে নিত। আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছালাম দিতেন এক পাশে দাঁড়িয়ে। ডান পাশে অথবা বাম পাশে, সেটাও উল্লেখ করা হয়েছে। পর্দার জন্য সেটা সহজ এবং সুবিধা। দরজা খুললে সরাসরি হয়ত কাউকে দেখা যেতে পারে, এবং বলা হয়েছে যে, অনেক সময় অনেক ঘর-বাড়ীর মধ্যে সামনের দরজায় পর্দা থাকেনা, যদি পর্দাও থাকে হঠাৎ পর্দা সরেও যেতে পারে। পর্দা থাকা সত্ত্বেও পর্দা সরেও যেতে পারে, এবং সে যামানায় অবশ্য অনেক বাড়ী ঘরেই পর্দা থাকত না। সেজন্য আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক পাশে দাঁড়িয়ে ছালাম দিতেন। এরপর প্রবেশ করতেন। (অসমাপ্ত)