-মুহম্মদ সাদী
(ধারাবাহিক)
লব্ধ মাকামে ইস্তিকামত
তিনি পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। এই নিয়ন্ত্রনের ব্যাখ্যায় কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.
অর্থঃ- “তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তাঁর মুখ নিঃসৃত বাণী ওহীর মাধ্যমে আসে।” (সূরা নজম/ ৩-৪) দুর্বল ও অস্থিরচিত্ত মানুষ আল্লাহ্ পাক-এর আদেশ পালনে হেরফের করবে এবং কথা ও কাজে অবিচল থাকবেনা, বিশেষতঃ ঈমান, আক্বীদা, আমল, অনুভব ও কোশেশে ইস্তিকামত না থাকায় উম্মতের বিনাশ সাধন সম্পর্কে তিনি শঙ্কিত হয়েছেন। ঈমান এনে মু’মিনে কামিল হওয়া, বিশুদ্ধ আক্বীদায় অনাবিল কর্মনিযুক্তিতে (আমলে ছলেহ) ব্যাপৃত থাকা বান্দার মূল দায়িত্ব। একই সঙ্গে আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক নির্দেশিত সকল বিষয়ে দৃঢ়পদ থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ্ পাক-এর রহমত এবং শাফিউল উমাম, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারক মধ্যস্থতায় কোশেশকারী বান্দার কামিয়াবী হাছিল হয়ে থাকে। আরম্ভ সবাই করে, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে কেউ কেউ। এ গন্তব্যের পথিক সংখ্যা একান্তই নগণ্য। আয়াসসাধ্য আয়োজনে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিকুল পথ পাড়ি দিয়ে যাঁরা মন্জিলে মাকছূদে উপনীত হন, তাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর মনোনীত বন্ধু। এমন দৃঢ়চিত্ত মাহবুব ওলীগণকে আল্লাহ্ পাক তাঁর মুহব্বত-মারিফাত ও নৈকট্যসুধায় পরিপুষ্ট করে জান্নাতুল ফিরদাউস এবং তাঁর দিদারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁদের কোন পিছুটান থাকেনা। দুনিয়া ও গায়রুল্লাহ্-এর প্রতি তাঁরা বিমুখ ও বেপরোয়া। আল্লাহ্ পাক-এর নিগূঢ় নৈকট্যসুধায় আপ্লুত এমন একজন পরিপূর্ণ ও শীর্ষ সোপান অর্জনকারী কামিয়াব মাহবুব ওলী হলেন, আফজালুল ইবাদ, ছহবে কাশ্ফ ও কারামত, ফখরুল আওলিয়া, আওলার্দু রসূল, হযরতুল আল্লামা, শাহ্ ছূফী, সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুখলেছুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি। লব্ধ মাকামে তিনি দৃঢ়চিত্ত, অটল ও অবিচল। ইস্তিকামতপূর্ণ আত্মনিবেদন, নিষ্ঠা ও নিমগ্নতায় আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ নৈকট্যসুধায় কামিয়াবীর অগ্রযাত্রায় এখন কেবলই তাঁর নিরন্তর উত্তরণ।
ওলী আল্লাহগণ তাঁদের জীবন মুবারকের সামগ্রিক পরিসরে আভ্যন্তরীন ও বাহ্যিকভাবে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি সমর্পিত থাকেন। তাঁদের জাহির, বাতিনের নূর ও অনুভব দ্বারা পরিচালিত হয়। বাহ্যিক আমল দেখে তাঁদের কর্মপরিধির গভীরতা নিরূপণ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়না। কারণ তাঁদের প্রয়োজন, আয়োজন ও কর্মপ্রয়াস অনুক্ষণ আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর প্রিয়তম হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। তাঁদের কথা, আচরণ, নিবেদন ও ইবাদত-বন্দেগীর অনাবিল একাগ্রতা দেখে শীর্ষ মাকামে কামিয়াবীর একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা লাভ করা যায় মাত্র। সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা, অনুভব ও অনুসন্ধানের তারতম্যের প্রেক্ষিতে সে আপেক্ষিক ধারণাও পৃথক হতে বাধ্য। উদ্দিষ্ট কাজ শেষে সকলকেই বিদায় নিতে হয়। ওলীআল্লাহগণও এর ব্যতিক্রম নন। অবশ্য ইন্তিকালের পূর্বে ওলীআল্লাহ্গণকে বলতে শোনা যায়, “সব কাজই বাকী রয়ে গেল। কিছুই শেষ করা হলোনা।” আল্লাহ্ পাক-এর উদ্দিষ্ট ব্যবস্থায় আরোপিত দায়িত্বপালন সমাপ্ত না করে ইন্তিকালের প্রশ্নই উঠেনা। আল্লাহ্ পাক-এর মাহবুব ওলীগণের এমন উচ্চারণ কেবলই তাঁদের বিনয় প্রকাশ। “অকাল মৃত্যু” বলে কোন কথা নেই। বয়সের নির্ধারিত ধাপে উপনীত হয়েই সকলের ইন্তিকাল হয়। অনুপলব্ধির কারণে কম বয়সের ইন্তিকালকে মানুষ “অকাল মৃত্যু” নামে অভিহিত করে থাকে (নাউযুবিল্লাহ)! মানুষের ইহলৌকিক জীবন খুব সীমিত। নির্ধারিত সময় শেষে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সকল মানুষকেই আখিরাতে পাড়ি জমাতে হয়। (অসমাপ্ত)