-মুনযির মুহম্মদ গিয়াসউদ্দীন
عن ابى الدرداء قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انكم تدعون يوم القيمة باسمائكم واسماء ابائكم فاحسنوا اسمائكم.
অর্থঃ- “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের এবং তোমাদের পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের সর্বোত্তম নাম রাখবে।” (আহমদ, আবূ দাউদ, মিশকাত)
মূলতঃ নাম হচ্ছে মনোভাব এর বহিঃপ্রকাশ। প্রচ্ছন্ন মনটির বহিরাবরণ। নাম ব্যক্তির উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। মানুষ তার নামের সৌন্দর্য্য, কদর্যতা, মর্যাদা, অমর্যাদা, নম্রতা ও কাঠিন্যতা দ্বারা অবশ্যই প্রভাবিত হয়। ছহিবে আসমা উল হুসনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিভিন্ন নাম রাখতেন এবং অপছন্দনীয় নাম পরিবর্তন করে সর্বোত্তম নাম রাখতেন। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, “হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুৎসিত নাম পরিবর্তন করে রাখতেন।” (তিরমিযী, মিশকাত) অর্থাৎ কারো নাম কুৎসিত বা মন্দ অর্থবোধক হলে অথবা সেটা থেকে কোন নৈরাশ্যজনক অর্থ প্রকাশের অবকাশ থাকলে রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে নাম পরিবর্তন করে ভাল অর্থবোধক নাম রাখতেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, প্রখ্যাত তাবিয়ী হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার দাদাকে তার ‘হাযন’ (কঠোর, শক্ত) নাম পরিবর্তন করে ‘সাহল’ রাখতে বললেন। কিন্তু আমার দাদা এরূপ করতে অসম্মতি প্রকাশ করলেন। যার ফলে পরবর্তীতে এ নামের দূর্ভাগ্যজনক প্রতিক্রিয়ায় আমাদের পরিবারে সর্বদা দুঃখ-দৈন্যতা লেগেই রইল।” (বুখারী, মিশকাত)
হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তাঁদের নবজাত সন্তানকে দোয়া-বরকত লাভের জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমতে নিয়ে আসতেন। হুযূূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে তাহনীক করতেন এবং দোয়া করতেন। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত সাহল ইবনে সায়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুনযির ইবনে আবূ উসাইদ যখন ভূমিষ্ট হলেন তখন তাঁকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আনা হলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে নিজের উরু মুবারকের উপর রাখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, “তাঁর নাম কি?’ উত্তরদাতা বললেন, ‘অমুক’। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, বরং তাঁর নাম ‘মুনযির।’ অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যক্ত নামটি পছন্দ করলেন না এবং বললেন, তোমাদের এ নাম রাখা ঠিক হয়নি। বরং আমি তাঁর নাম রাখলাম ‘মুনযির’। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত, রিয়াদুস্ সালেহিন) অন্য হাদীস শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ‘আছিয়া’ নামে এক কন্যা ছিলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নাম পরিবর্তন করে ‘জামীলা’ রাখলেন। (মুসলিম, মিশকাত) একইভাবে প্রকৃত ভাল নাম হওয়া সত্ত্বেও যখন কোন চরম গোমরাহী, জিহালতী, কুফরী, শেরেকীতে মশগুল থাকে তখন তার নাম পরিবর্তন করাও আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সুন্নত। যেমন আবু লাহাবের নাম আব্দুল উজ্জা হলেও আল্লাহ্ পাক তাঁকে কালামুল্লাহ্ শরীফে আবূ লাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ আবূ জাহিলের নাম ‘আবুল হাকাম’ (জ্ঞানীর পিতা) হওয়া সত্ত্বেও তার চরম গোমরাহী, জিহালতী, কুফরী, শিরকীর দরুন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ‘আবু জাহিল’ (মুর্খের পিতা) বলে অভিহিত করেন।
ঠিক একই ধারাবাহিকতায় বর্তমান জামানায় আল্লাহ্ পাক-এর একমাত্র লক্ষ্যস্থল ইমামুল আইম্মা, মুহইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুযাদ্দিদুয্ যামান, হাবীবুল্লাহ, আওলার্দু রসূল আমাদের মামদূহ শায়খুনা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর ছোহবতে যারা আসা-যাওয়া করে, তাদের মধ্যে কোন খারাপ অর্থাবোধক নাম থাকলে, তিনি আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত অনুযায়ী তাদের নাম পরিচর্তন করে সর্বোত্তম ও সুন্দর সুন্দরনাম রেখে থাকেন। পাশাপাশি বর্তমান জামানায় যারা আবূ লাহাব ও আবূ জাহিলের উত্তরসূরী উলামায়ে ‘ছূ’ রয়েছে। তাদের জন্ম পর নাম পরিবর্তন করেন। যেমন, মুহিউদ্দীনকে ‘মাহিউদ্দীন’ (দ্বীন ধ্বংসকারী), ‘আহমদ শফী’কে ‘আহমক শফী’ ‘শায়খুল হাদীস’কে ‘শায়খুল হদস’ ইত্যাদি। মহান রব্বুল আলামীন আল্লাহ্ পাক নাম পরিবর্তনে ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম-পূঙ্খানুপূঙ্খ অনুসরণ অনুকরণ করার তাওফিক দান করুন। (আমীন)