তাফসীরুল কুরআন

সংখ্যা: ১০৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

 -পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা।

 وجاهدوا فى الله حق حهاده.

“তোমরা জিহাদ করো আল্লাহ্ তায়ালার পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত।” (সূরা হজ্ব/৭৮) তাশরীহ্ঃ  জিহাদ সাধারণতঃ তিন প্রকার।  প্রথমতঃ বেদ্বীন, বদ্দ্বীন, পথভ্রষ্ট ও বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে দলীল-আদিল্লাহ্ তথা যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে জিহাদ করা।           যেমন, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

وجادهم باتى هى احسن.

অর্থঃ- “তাদের সাথে বাহাস বা মুনাযারা তথা বিতর্ক করুন সদ্ভাবে।” (সূরা নাহ্ল/১২৫) নিঃসন্দেহে এ আয়াত শরীফখানা মহামহিম রব ও খালিক আল্লাহ্ পাক-এর পথে মানুষকে আহবান ও তাঁর পরিচয় লাভের জন্য, প্রজ্ঞা সম্পন্ন, হিকমতপূর্ণ আদেশ বা নির্দেশ। যে সকল অজ্ঞ, মূর্খ ও অসত্যবাদী লোক বলে যে, কুরআন শরীফে বল প্রয়োগ অথবা তরবারী দ্বারা দ্বীন ইসলামের প্রচার সমর্থিত হয়েছে, তাদের পক্ষে এই আয়াতে কারীমাখানা পড়ে দেখা কর্তব্য।      বলাবাহুল্য, মানব সমাজে সাধারণতঃ তিন শ্রেণীর লোক দেখা যায়। প্রথম শ্রেণী হলো, আপতাভাবে জ্ঞানী-গুণী। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক সাধারণতঃ নিরীহ্, সহজ-সরল বিশ্বাসী ও অকপট। আর তৃতীয় শ্রেণীর লোক সন্দেহ প্রবণ ও তার্কিক।  অনন্ত অসীম দয়াময় আল্লাহ্ পাক তাঁর এই সকল শ্রেণীর মানুষকে সরল পথ প্রদর্শণের জন্য তাদের স্ব স্ব আক্বল-বুদ্ধি অনুযায়ী দ্বীন প্রচারের আদেশ করেছেন। ফলে, প্রথম শ্রেণীর জন্য হিকমত (যা বিনা মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিকট হতে এসে থাকে যাকে ইলমে লাদুন্নীও বলা হয়)-এর মাধ্যমে, দ্বিতীয় শ্রেণীকে “মাওইযাতুল হাসানাহ্” যা মুহব্বত ও আদব দ্বারা বা সদুপদেশ, সভ্যতা ও ভদ্রতা যোগে এবং তৃতীয় শ্রেণীর সাথে ‘জিদাল’ বা যুক্তি-তর্ক, লিখনী দ্বারা নছীহত করতে হয়। এই প্রকার জিহাদের প্রশংসায় হাদীস শরীফে বিবৃত হয়েছে,

افضل الجهاد كلمة حق عند سلطان جائر.

অর্থঃ- “যালিম শাসকের নিকট হক্ব কথা বলা উত্তম জিহাদ।” দ্বিতীয় প্রকার জিহাদ হলোঃ কাফির ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। এটা স্পষ্ট যুদ্ধ। যেমন এ ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,

يجاهدون فى سبيل الله.

অর্থঃ- “তারা আল্লাহ্ পাক-এর পথে জিহাদ করে।” (সূরা মায়িদাহ্/৫৪)

আল্লাহ্ পাক আরো ইরশাদ করেন,

 يايها النبى جاهد الكفار والمنفقين واغلظ عليهم

অর্থঃ- “হে নবীজী আমার! আপনি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন।” (সূরা তওবা/৭৩)     মূলতঃ “জুহুদ” বা “জাহ্দ” অর্থ সামর্থ, শক্তিমত্তা, সাধনা, কষ্ট, শ্রম, প্রাণপণ প্রচেষ্টা ইত্যাদি। আর ‘জিহাদ’ ও ‘মুজাহাদাহ্’ মুফাযালাহ্ প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে ‘জা’হাদা’ থেকে। এর অর্থ পক্ষ-প্রতিপক্ষ, উভয় দিক থেকে প্রাণপণ প্রচেষ্টা ও প্রাণান্তকর কষ্ট স্বীকার। যুদ্ধক্ষেত্রে এ রকমই পরিলক্ষিত হয়।

আর তৃতীয় প্রকার জিহাদ হচ্ছেঃ রিপু ও কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেছেন,

والذين جاهدوا فينا لنهدينهم سبلنا.

অর্থঃ- “যারা আমার (ও আমার পেয়ারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি লাভের) উদ্দেশ্যে জিহাদ (প্রাণপন সাধনা) করে, তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করবো।” (সূরা আনকাবূত/৬৯)           স্মর্তব্য যে,  সূরা আনকাবূত-এর এ আয়াত শরীফ যা মক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত।  অতএব, এখানে জিহাদ শব্দটির উল্লেখ থাকলেও তা “জিহাদুন্ নফ্স” হিসেবে অগ্রগণ্য হবে।      এ মর্মে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

    افضل الجهاد جهاد النفس.

অর্থঃ- “নফস্ ও কু-রিপুর বিরুদ্ধে জিহাদ করাই হচ্ছে উত্তম জিহাদ।” (অসমাপ্ত)

তাফসীরুল কুরআন: 

তাফসীরুল কুরআন: আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং নায়েবে  নবী, ওয়ারাছাতুল আম্বিয়াগণকে সাধারণ মানুষের মত আহবান করা নিষেধ

তাফসীরুল কুরআন : আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং নায়েবে  নবী, ওয়ারাছাতুল আম্বিয়াগণকে সাধারণ মানুষের মত আহবান করা নিষেধ

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইলমধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইলমধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি