তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই  নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু

সংখ্যা: ১১৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

-পীরে কামিল, হাফিয, ক্বারী, মুফতী, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুহম্মদ শামসুদ্দোহা

وكذلك جعلنا لكل نبى عدوا شيطين الانس والجن يوحى بعضهم الى بعض زخرف القول غرورا.

অর্থঃ- “এরূপে আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি মানব ও জ্বীন জাতির মধ্য হতে যারা শয়তান; তাদেরকে। ধোকা বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা একে অন্যকে চমকপ্রদ বাক্য দ্বারা প্ররোচিত করে।” (সূরা আনয়াম/১১২)

তাশরীহ্ঃ এ আয়াত শরীফ থেকে কয়েকটি বিষয় জানা যাচ্ছে তাহলোঃ (১) মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত সাধারণতঃ সকল মাখলুক বা সৃষ্টি আমাদের আঁকা ও মাওলা সাইয়্যিদুনা ওয়া রসূলুনা, ওয়া ত্ববীবুনা ওয়া শাফীউনা, ওয়া হাবীবুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুগত ও বাধ্যগত আর আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদতকারী ও মকবুলকৃত। কেউ কাফির নয়, কেউ দুশমন নয়।

উহুদ পর্বতকে সম্বোধন করে আমাদের পেয়ারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই বলেছিলেন, ‘উহুদ পর্বতটি আমাদেরকে মুহব্বত করে এবং আমরাও তাকে মুহব্বত করি।’ (২) যেসব মানুষ নিজে গোমরাহ্ বা পথভ্রষ্ট এবং অন্য মানুষকেও গোমরাহ্ করে আর শরীয়তের খিলাফ কাজের দিকে প্ররোচিত করে তারাই মানবরূপী শয়তান। যদিও তারা আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধবের মধ্য থেকে কেউ হোক অথবা হোক আলিমের লেবাস পরিহিত নবীজীর বাণী উচ্চারণকারী কেউ। (৩) ‘বান্দা নিজেই তার কর্মের স্রষ্টা’ মুতাযিলাদের এ অভিমত খ-ন করে ‘আল্লাহ্ পাকই সকল কিছুর স্রষ্টা বলে ঘোষণা করেন এখানে। (৪) প্রায় সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর দুশমন থাকা জরুরী। এমনকি নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর ওয়ারিছ তথা হক্কানী, রব্বানী, মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, মুজতাহিদ ও মুযাদ্দিদগণের শত্রু থাকাও জরুরী। কারণ, বেদ্বীন, বদ্দ্বীনদেরকে আল্লাহ্ পাকই সৃষ্টি করেছেন (যদিও তারা দুর্ভাগা হয়ে জন্ম নেয়নি, বয়স বাড়ার পর বেদ্বীন-বদ্দ্বীন হয়েছে)।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

كل مولود يولد على الفطرة فبابويه يهودانه وينصرانه ويمجسانه.

অর্থঃ- “প্রত্যেক (আদম) সন্তান ফিতরাত তথা ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা (ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতী-গোষ্ঠী) তাকে ইহুদী, নাছারা, মজূসী (বেদ্বীন, বদ্দ্বীন, গোমরাহ্ ইত্যাদি) করে ফেলে।” (বুখারী, মিশকাত)

নবী-রসূল তথা আউলিয়া-ই-কিরামগণের দুশমন থাকার হাক্বীক্বত হচ্ছে, যেন নিজের খেয়ে-পড়ে, বিনা বেতনে নবী ও ওলীগণের বিরোধিতা কল্পে মিছিল-মিটিং, গীবত ও ষড়যন্ত্র করে নিজের রক্তকে পানি করে, ঘাম ঝরিয়ে, মানুষের দ্বারে দ্বারে ওলীআল্লাহ্গণের নামে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে অথবা তাদের লক্বব সমূহের বিকৃত ব্যাখ্যা করে তাদের নামে অপবাদ রটনা করে, নিজেদের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করতে পারে। আর নিরপেক্ষ ও হক্ব তালাশী ব্যক্তিরা আল্লাহ্ পাক-এর এই হিকমত বুঝে নিতে পারেন যে, বিপরীত অস্তিত্ব দ্বারাই সঠিকতার পরিচয় ও মূল্যায়ন হয়। যেমন, সূর্যের এতো কদর, অন্ধকার বা রাত আছে বলেই তো। পানির এত মূল্য এমনকি পানির আর এক নাম জীবন বলা হচ্ছে কেন? পিপাসা আছে বলেই তো।

তেমনি আল্লাহ্ পাক-এর অবাধ্য ও হক্বের বিরোধিতাকারী মানুষ ও জ্বীনকে এখানে শয়তান বলা হয়েছে। এই শয়তানেরা সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম তথা আউলিয়া-ই-কিরাম-এর শত্রু। আর এই শত্রুতা আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক অনুমোদিত। আল্লাহ্ পাক কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার কারণে সাধারণতঃ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ তাঁদের শত্রুদের ধ্বংস কামনা করেননি। আর ওলী আল্লাহ্গণও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ সুন্নতটি আদায় করার জন্যই বলে থাকেন, “শত্রু থাকাও সুন্নত।” যেহেতু সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুকরণ ব্যতীত ওলীআল্লাহ্ হওয়া যায়না এবং সুন্নতই হলো পৃথিবীতে মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ (আল্লাহ্ পাক-এর) নিয়ামত। তাই এ সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামতের দ্বারা নিজের জীবনকে যত বেশী ভরপুর করা যায় ততই উত্তম। (অসমাপ্ত)

তাফসীরুল কুরআন : উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি

তাফসীরুল কুরআন: উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪

তাফসীরুল কুরআন উলামায়ে ‘ছূ’ বা ইল্মধারী মুনাফিকদের পরিচয় ও পরিণতি- ৪

তাফসীরুল কুরআন: মানুষ ও জ্বীনের মধ্যে যারা শয়তান; তারাই নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের শত্রু (২)