পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরযও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-৪৭

সংখ্যা: ২৬৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

৩২তম ফতওয়া হিসেবে

“পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব চতুষ্ঠয় উনাদের মধ্যে যে কোন একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া”-

পেশ করতে পারায় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

সম্মানিত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সম্মানিত শরীয়ত উনার সঠিক মাসয়ালাগুলো যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সুপ্ত বা পুশিদা বা গুপ্ত যা বুঝা অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য এবং আওয়ামুন্নাস বা সাধারণ মানুষের জন্য অস্পষ্ট সেগুলো স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করেন। যা পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ সম্মানিত শরীয়ত উনার একাংশ অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মতই অকাট্য দলীল। সুবহানাল্লাহ!

হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যে বিষয়গুলো সুপ্ত বা পুশিদা বা গুপ্ত যা বুঝা অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য এবং আওয়ামুন্নাস বা সাধারণ মানুষের জন্য অস্পষ্ট সে বিষয়গুলো উনাদের খোদা প্রদত্ত ইলম তথা ইলমে লাদুন্নী ও গবেষণা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আম-খাছ ইত্যাদি বিষয়ের ২০  প্রকারের পৃথক পৃথক শব্দ ব্যবহার আছে তাও উনারা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আমর অর্থাৎ আদেশ সূচক শব্দের ১৬ প্রকার অর্থ: যথা- ফরয, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ ইত্যাদি এবং নিষেধ বাচক শব্দের ৮ প্রকার অর্থ: যথা-হারাম, মাকরূহ ইত্যাদি অর্থের বিস্তারিত ব্যাখ্যা উনারাই লিপিবদ্ধ করেছেন। অনুরূপ নাসেখ-মানসূখ সম্পর্কিত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ব্যাখ্যাও উনারাই দিয়েছেন। সম্মানিত শরীয়ত উনার ২০ হাজারের অধিক মাসয়ালা হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!

ইমামুল হারামাইন রহমতুল্লাহি আলাইহিম তিনি  বলেন, সম্মানিত শরীয়ত উনার ১০ ভাগের ৯ ভাগ মাসয়ালাই ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের ক্বিয়াস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু হযরত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা কেউই বিনা দলীলে কোন  মাসয়ালা বের করেননি। নি¤েœ এ সম্পর্কিত কিছু প্রমাণ উল্লেখ করা হলো-

(১০১৩-১০১৮)

১। কোনো এক ব্যক্তি ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নামাযে রফে’ ইয়াদাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাবে বলেন, পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারণবশতঃ হাত মুবারক উঠাতেন। পরে কারণ না থাকায় তিনি ত্যাগ করে শুধুমাত্র একবার তাহরীমার সময় হাত উঠাতেন। উনার দলীল: ছহীহ মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, তাহাবী শরীফ, মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহম্মদ  এবং ইমাম বুখারী ও মুসলিম উনাদের উস্তাদ ইমাম ছুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং অন্যান্য তাবি’ তাবিয়ীন উনাদের মত ও রিওয়াত।

(১০১৯-১০২৮)

২। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ইমামের পিছনে পবিত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিষেধ করেন। কারণ ৮০ জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ইমামের পিছনে মুক্তাদিকে কিরাআত পড়তে নিষেধ করেছেন। এর দলীল: ছহীহ মুসলিম শরীফ, মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিক, মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহম্মদ, আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ, তাহাবী শরীফ, মসনদে ইমামে আ’যম শরীফ, কিতাবুল আছার শরীফ ইত্যাদি।

(১০২৯-১০৩২)

৩। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এক ব্যক্তি আমিন জোড়ে পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, পূর্বে শিক্ষা দেয়া সূত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বড় করে পড়ার হুকুম দিয়েছিলেন, পরে ছোট করে পড়ার আদেশ মুবারক দিয়েছেন। দলীল: আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসায়ী শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ ইত্যাদি।

(১০৩৩)

৪। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল দাদী, নানী, নাতিন, পুতনীকে বিবাহ করা হারাম কিনা? তিনি জবাব দিয়েছেন- পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে মাতা ও কন্যাকে বিবাহ করা হারাম বলে উল্লেখ আছে এবং উল্লেখিত মেয়েগণ উনাদেরকে তার অস্পষ্ট দলীল দ্বারা অর্থাৎ পবিত্র ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা বিবাহ হারাম করা হয়েছে। এর প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র ইজমা শরীফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইহা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অস্পষ্টাংশ হতে প্রমাণিত হয়েছে। যার স্পষ্টাংশ হচ্ছে-

حرمت عليكم امهتكم وبناتكم الاية

অর্থাৎ, “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, বোন, মেয়ে উনাদেরকে বিবাহ করা।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

৫। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ধান, কলাইর সুদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জাওয়াব দিলেন, ইহার স্পষ্ট প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই। তবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার স্পষ্টাংশ গম ও যবের প্রতি ক্বিয়াস করে এটা হারাম করা হয়েছে।

সুতরাং পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ বানানো কোনো বিষয় নয় বরং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই নজির ও নমুনা মাত্র। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে যে বিষয়গুলো অস্পষ্ট ছিল পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ সেটা স্পষ্টরূপে প্রকাশ করে দিয়েছে। কাজেই, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ না থাকলে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অস্পষ্ট অংশগুলো যা ১০ ভাগের ৯  ভাগ তা অস্পষ্টই থেকে যেতো ফলে সম্মানিত শরীয়ত বিলুপ্ত হয়ে যেত।

(১০৩৪-১০৩৬)

যেমন এ সম্পর্কে বিখ্যাত ইমাম আল্লামা শা’রানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মীযান’ নামক কিতাবের ৩২-৩৩ পৃষ্ঠায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং আল্লামা জিকরিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, যদি ইমাম-মুজতাহিদ উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অস্পষ্ট বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা না দিতেন তবে আমাদের মধ্যে কোনো আলিমই তা করতে সক্ষম হতেন না। তাই ইমাম শা’রানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মীযান’ নামক কিতাবের ১৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- ক্বিয়াসী মাসয়ালাগুলো সম্মানিত শরীয়তভুক্ত। যেমন- হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘ইকদুলজিদ’ নামক কিতাবের ৫০ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

অতএব, ইমাম-মুজতাহিদ উনারা যে অস্পষ্ট মাসয়ালাগুলো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের স্পষ্ট মাসয়ালাগুলোর উপর ক্বিয়াস করে প্রকাশ করেছেন তা মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই সম্মানিত হুকুম উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ দলীল হওয়ার প্রমাণ

পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ দলীল হওয়া সম্পর্কে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে কবীর ৩য় খ- ২৫১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১০৩৭-১০৪৬)

اعلم قوله تعالى فان تنازعتم فى شئى فردو الى الله  والرسول يدل عندنا على ان القياس حجة الى قوله ذلك هو القياس فثبتت ان الاية دالة على الامر بالقياس.

অর্থ: জেনে রাখ যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম “তোমরা যখন কোনো বিষয়ে মতানৈক্য কর তবে তা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে ধাবিত হও’ এটা প্রমাণ করছে যে, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ বাস্তবিকই সম্মানিত শরীয়ত উনার একটি দলীল এবং উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ পবিত্র ক্বিয়াস করার প্রতি আদেশ মুবারক বুঝানো হচ্ছে এবং পূর্ব বর্ণিত পবিত্র আয়াত শরীফ-

اطِيعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَاُولِى الْأَمْرِ مِنكُمْ

“তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উলিল আমর উনাদের ইতায়াত বা অনুসরণ করো।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)

এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার সাথে মিলালে নিশ্চয়ই উনার অর্থ এরূপ হবে যে বিরোধজনক মাসয়ালাগুলোর ব্যবস্থার জন্য তদসমতুল্য উল্লেখিত আহকামের দিকে রুজু (দৃষ্টি) করা এটাকেই ক্বিয়াস শরীফ বলা হয়। সুতরাং উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে অবশ্যই পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনার জন্য হুকুম করা হয়েছে।  উল্লেখ্য, বুরহান ৯৩/৯৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরে বায়যাবী ২/২৯৫ পৃষ্ঠা, রূহুল মায়ানী ১/১১৭ পৃষ্ঠা, আহমাদী ২৯১ পৃষ্ঠা, মুনীর ১/১৫৬ পৃষ্ঠা, নিশাপুরী ৫/৮১ পৃষ্ঠা, জুমাল ১/৩৯৫ পৃষ্ঠা, খাযিন ১/৪৬০ পৃষ্ঠা, সিরাজুম মুনীর ১/৩৪৭ পৃষ্ঠা প্রভৃতি তাফসীর গ্রন্থে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে যে, বিরোধজনক বিষয়গুলোকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দিকে রুজু করার অর্থ এই যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ প্রমাণ ধরে বিরোধজনক মাসয়ালার সমাধান করা। একেই ক্বিয়াস বলে।

(১০৪৭-১০৪৮)

যেমন: তাফসীরে খাযিন ও তাফসীরে সিরাজুম মুনীরে স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে, বিরোধজনক মাসয়ালার হুকুম পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে না থাকলে ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা সমাধান করতে হবে।

এখন সম্মানিত মাযহাব ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ বিরোধীদের প্রতি আমাদের জিজ্ঞাসা যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বিরোধমূলক বিষয়গুলোতে যদি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সমাধান না থাকে তবে সেখানে আপনারা কিভাবে সমাধান করবেন?

(১০৪৯)

যেমন: ১। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ‘সূরা নিসা শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

كُلٌّ مِّنْ عِندِ الله

অর্থ: “(ভালমন্দ) সবই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ ৭৮)

কিন্তু অন্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আছে-

مَّا اَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللهِ ۖ وَمَا اَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ

অর্থ: তুমি যা ভাল পাও তা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এবং যা মন্দ পাও তা তোমার নিজের থেকে। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৯)

(১০৫০)

২। ‘পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ’ উনার মধ্যে ত্বালাকপ্রাপ্তা আহলিয়ার ইদ্দত সম্পর্কে-

ثلثة قروء

অর্থাৎ, ‘তিন কুরু’ বলে উল্লেখ করেন।

এখন قروء শব্দের অর্থ হায়িয বা তুহুর (পবিত্রতা) দুইটিই হতে পারে। কিন্তু এর স্পষ্ট কোন সমাধান পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে নেই।

(১০৫১-১০৫২)

৩। বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ৬০/৬৩/৫০ বৎসর উল্লেখ আছে। কিন্তু সমাধান উনাদের মধ্যে নেই।

৪। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নামায পড়া, কৃতদাসকে আযাদ করা, জন্তু শিকার করার হুকুম আছে। কিন্তু কোনটি ফরয, কোনটি ওয়াজিব বা মোস্তাহাব, মোবাহ তার কোন সমাধান নেই।

(১০৫৩)

৫। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বহু পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ভিন্ন অন্য কারো ইবাদত নিষেধ করা হয়েছে। কিন্ত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একস্থানে হুকুম আছে-

فاعبدوا ما شئتم

অর্থাৎ যাকে ইচ্ছা ইবাদত করো। (পবিত্র সূরা যুমার শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫)

(১০৫৪)

৬। পবিত্র  কুরআন শরীফ উনার বহুস্থানে সৎ কাজ করতে আদেশ মুবারক করা হয়েছে। কিন্তু এক স্থানে আছে-

اعملوا ما شئتم

অর্থাৎ যা ইচ্ছা করো। (পবিত্র সূরা ফুছছিলাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)

(১০৫৫)

৭। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার এক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আছে

ليس كمثله شيئ

“মহান আল্লাহ পাক তিনি কোনো কিছুর মত নন।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১)

কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্য স্থানে মহান আল্লাহ পাক উনার হাত, পা, চেহারার কথা উল্লেখ আছে।

যেমন-

وجه الله، يد الله فوق ايديهم

“মহান আল্লাহ পাক উনার ‘চেহারা’, মহান আল্লাহ পাক উনার হাত তাদের হাতের উপর।”

এরূপ বহু বিষয়ের সমাধান পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সুপ্ত বা পুশিদা বা গুপ্ত যা বুঝা অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য এবং আওয়ামুন্নাস বা সাধারণ মানুষের জন্য অস্পষ্ট, সে বিষয়গুলো ইমাম মুজতাহিদ উনারা খোদা প্রদত্ত ইলম তথা ইলমে লাদুন্নী ও গবেষণা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। অতএব, মাযহাব বা তাকলীদ বিদ্বেষীরা ইমাম মুজতাহিদ বা বিজ্ঞ আলিমগণ উনাদের ইজতিহাদকৃত বিষয় অনুসরণ না করে নিজেদের মনগড়া মত অনুসরণ করে বিভ্রান্ত হবে কিনা?

৮। এভাবে ছিহাহ সিত্তাহ কাকে বলে? ছহীহ, মুরসাল, দ্বইফ, ইত্যাদি বহু প্রকারের পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নাম কোথা থেকে এলো। ছিহাহ থাকতে বা বুখারী শরীফ থাকতে অন্য হাদীছ শরীফ গ্রহণযোগ্য নয়, এসব কথা কোথায় পেলেন। পবিত্র কুরআন শরীফ বা পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে সমাধান করে দিন। নচেৎ বাধ্য হয়ে অবনত মস্তকে ইমাম ও বিজ্ঞ আলিমদের সমাধান মেনে নিন। এটাই তাকলীদ করা এবং এটাই ক্বিয়াস ও মাযহাব মান্য করা, যা ছাড়া কোনো মু’মিনেরই উপায় নেই।

আর পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-

(১০৫৬-১০৫৮)

عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العلم ثلثة اية محكمة او سنة قائمة او فريضة عادلة وما كان سوا ذلك فهو فضل.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইলমে দ্বীন তিন প্রকার। ১. পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মুহকামা আয়াত শরীফ ২. পবিত্র সুন্নতে নববী শরীফ বা পবিত্র হাদীছ শরীফ যা দ্বারা মাসয়ালাসমূহ প্রকাশ হয়। ৩. ফারিদাতুন আদিলা উনার ইলিম। এর বাইরে যা রয়েছে তা অতিরিক্ত। (আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ ৩৫ পৃষ্ঠা)

(১০৫৯-১০৬০)

মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাত শরীফ ও আশয়াতুল লুময়াত’ কিতাবে ‘ফারীদাতুন আদিলা’ উনার ব্যাখ্যায়- পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদেরকে বুঝানো হয়েছে। (অসমাপ্ত)

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৩

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৪

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৫

জুমুয়া ও ঈদাইনের খুৎবা আরবী ভাষায় দেয়া ওয়াজিব। আরবী ব্যতীত অন্য কোন ভাষায় খুৎবা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ও বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরি করা ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া-২৬