মূলঃ হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি,
ভাষান্তরঃ মুহম্মদ শামসুল আলম
সুলতানুত্ ত্বরিক্বিন হযরত শায়খ হামিদুদ্দীন ছূফী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(ধারাবাহিক)
আল্লাহ্ পাক রোজ আজল থেকেই কোন কোন বান্দাকে কোরব এবং কারামতের জন্য বেছে নিয়ে সেই (নিয়ামত) তাঁদের দান করেছেন। তাঁর এই দানের মধ্যে কোন প্রকার স্বেচ্ছাচারিতা ও জবরদস্তি নেই। তুমি এই সমস্ত জিনিষ থেকে পৃথক হয়ে সকল প্রকার মুয়ামালাত তাঁর উপরই সোপর্দ করে দাও। যদি দুনিয়ার মধ্যে দিল না লাগে তবে আখিরাতের আমল করে তার মধ্যে সন্তুষ্ট থাক। পরিশেষে তোমাকে কে বললো যে, “দুনিয়ার মধ্যে দিল লাগাও এবং তার মধ্যেই শান্তিতে থাকা? কিন্তু তোমার মধ্যে যদি শক্তি (হিম্মত) থাকে তাহলে উভয় জাহান থেকেই পৃথক হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর সাথে দিল লাগাও।” এক স্বেচ্চাচারী, ধূর্ত, কপট বাদশা দুনিয়াবী কামনা-বাসনার (বস্তু) হাছিল করে (সেটার মধ্যেই) সন্তুষ্ট থাকে। এবং আখিরাতের রাস্তায় চলনেওয়ালা সমদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি পারলৌকিক ভালাই, সন্তুষ্টি হাছিল করে এর মধ্যেই সুখী থাকে। এবং (তরীক্বতের) এক প্রেমিকের, আরিফের বাসনাই হচ্ছে রেজায়ে ইলাহী, যা আল্লাহ্ পাক-এর সাক্ষাৎ, দীদার লাভের মধ্যে সন্তুষ্ট (ডুবে) থাকে। সুওয়ালঃ- উপরোল্লিখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেলো, আমাদের যার সাথে ওয়াসীতা (মধ্যস্থতা) ও তায়াল্লুক (সম্পর্ক) রয়েছে সেটা দু’টি জিনিষের মধ্যে। একটা হচ্ছে দ্বীন, আরেকটা হচ্ছে দুনিয়া। দুনিয়ার হাক্বীক্বত এবং তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট দুনিয়াবী (বস্তুর) পর্দা, অবগুক্তন করা সম্পর্কে ব্যাখ্যা, বর্ণনা প্রদান করুন। আপনি বলেছেন, দ্বীন কি এবং তার হাক্বীক্বত কি? জাওয়াবঃ- দুনিয়ার মধ্যে তিন ধরণের মানুষ রয়েছে। এক জালিম (অত্যাচারী), দুই মুকতাসিদ এবং আওসাত (মধ্যবর্তী) ধরণের লোক এবং তৃতীয় হচ্ছে, সাবেকুন (অগ্রগামী)। স্বেচ্ছাচারী লোকদের দ্বীন হচ্ছে গুণাহ থেকে দূরে থাকা এবং (কোন কাজের সাথে) সংলগ্ন ও সংশ্লিষ্ট থাকা। যার ব্যাখ্যা এরূপ, তারা গুণাহ্ থেকে দূরে থেকে নেক কাজ করার মধ্যে মশগুল থাকে। এবং আওসাত (মধ্যবর্তী) দরজার লোকদের দ্বীনও হচ্ছে দু’প্রকারের। এক বরিদান, দুই আরামীদান। অর্থাৎ দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক কর্তন করে (সম্পূর্ণ) জুদায়ী হয়ে নির্জনতা ইখতিয়ার করা এবং অন্য কোন জিনিষের মধ্যে শান্তির অন্বেষণে থাকা। এর অর্থ হচ্ছে, ইহজগতে নেক কাজে মশগুল থেকে আখিরাতের আরাম আয়েশের সাথে জিন্দেগী যাপন করা। এভাবে সাবেকুন(অগ্রগামীদের) দ্বীন ও দু’জিনিষের মধ্যে। এক তাবাররা ও দুই তাওলা। অর্থাৎ গাইরুল্লাহ এবং আল্লাহ্ পাক ব্যতীত (সকল বস্তুর সাথে সম্পর্ক) ছেদন করা এবং আল্লাহ্ পাককেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা। যেমন, কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قل الله ثم ذرهم فى خوضهم يلعبون.
অর্থঃ- “আপনি বলে দিন আল্লাহ্ পাক নাযিল করেছেন। অতঃপর তাদেরকে তাদের ক্রীড়ামূলক বৃত্তিতে মশগুল থাকতে দিন।” (সূরা আনআম/৯১) সুওয়ালঃ- এই বর্ণনা ও ব্যাখ্যা থেকে বুঝা যায় দ্বীন হচ্ছে কয়েক প্রকারের। জাওয়াবঃ- দ্বীন এর মধ্যে বিভিন্ন রকমফের নেই। দ্বীন হচ্ছে এক প্রকারের এবং একটিই। উপরোল্লিখিত তাকরীর থেকে দ্বীনের মধ্যে যে ভিন্নতা, প্রকারভেদ, পার্থক্য যা নজরে পড়ে সেই পার্থক্য ও ভিন্নতা দ্বীনের মধ্যে নয় বরং লোকের মধ্যে মানুষের মাঝে বিভিন্ন রকম ফেরের কারণেই এই ভিন্নতা (পরিলক্ষিত হয়)। দ্বীন (আসলে) একটিই। জাহিরীভাবে এ তিন প্রকারের কারণের দিকেই নিশানা, লক্ষ্য কর। কিন্তু হাক্বীক্বতের পরিচয়, ইল্ম হচ্ছে এটাই,
اينما تولوا فثم وجه الله
অর্থঃ- “অতএব, তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহ্ পাক বিরাজমান।।” (সূরা বাক্বারা/১১৫) য (অসমাপ্ত)
বিশ্ব সমাদৃত, হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অনুপম মুবারক চরিত গ্রন্থ আখবারুল আখইয়ার