-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
হিজরী সনের সর্ব শেষ মাসটির নাম যিলহজ্ব। এ মাসে হজ্বের কার্যাদি সম্পাদিত হয় বলেই এ মাসের নাম করণ হয়েছে যিলহজ্ব বা হজ্বের মাস। যিলহজ্ব শব্দটির বিশ্লেষণঃ আরবী মাস ذى الج “যিলহজ্ব” এর মধ্যে দু’টি শব্দ। একটি হচ্ছে ذى ‘যি’ বা ذو ‘যূ’ যার অর্থ মালিক, ছাহিব, অধিকারী ইত্যাদি। অপরটি হচ্ছে الحج ‘আলহাজ্ব’ বা الحج ‘আলহিজ্ব’। ح ‘হা’ বর্ণে যবর যোগে শব্দটি মাছদার (ক্রিয়ামূল) এবং ح ‘হা’ বর্ণে যের যোগে শব্দটি ইস্ম (বিশেষ্য)। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- ইচ্ছা করা, সংকল্প করা ও হজ্ব করা। আর পারিভাষিক অর্থে হজ্বের নির্দিষ্ট দিনসমূহে ইহরামসহ কা’বা বা বাইতুল্লাহ শরীফ এবং অন্যান্য পুণ্যময় স্থানসমূহ শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে যিয়ারত করা।
হজ্বের ফরযসমূহঃ হজ্বের ফরয তিনটি। ১. ইহরাম বাঁধাঃ পাক পবিত্রতা অর্জন করতঃ (পুরুষগণ) সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করে মীক্বাত অতিক্রম করার পূর্বেই হজ্ব ও ওমরাহ্র নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করাকে ইহরাম বলে। ২. ওকুফে আরাফাঃ ৯ই যিলহজ্ব সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে যাওয়ার পর থেকে ১০ই যিলহজ্ব সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে কোন সময়ে কিছুক্ষণের জন্য আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। ৩. তাওয়াফে যিয়ারতঃ ১০ই যিলহজ্ব জামরায়ে আকাবায় কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানীর দিনগুলো তথা ১০, ১১, ১২ ই যিলহজ্বের যে কোন এক সময় মিনা থেকে মক্কা শরীফে গিয়ে বাইতুল্লাহ্ শরীফ তাওয়াফ করা।
হজ্জের ওয়াজিবসমূহঃ হজ্বের ওয়াজিব ৫টি। ১. সাফা ও মারওয়া সায়ী করাঃ সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সুনির্দিষ্ট নিয়মে সাতবার গমনাগমন করা। ২. মুযদালিফায় অবস্থানঃ যিলহজ্বে ৯ম তারিখে সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে ফিরে এসে ১০ম তারিখে সুবহে সাদিকের পর হতে সূর্যোদ্বয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময় মুযদালিফায় অবস্থান করা। ৩. কংকর নিক্ষেপঃ মিনায় অবস্থিত তিনটি জামরায় ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্বে মোট ৪৯ টি কংকর নিক্ষেপ করা। ৪. তাওয়াফে ছদরঃ হজ্বের যাবতীয় কার্যাবলী সমাপনান্তে রমল ব্যতীত তাওয়াফ করা। এটাকে বিদায়ী তাওয়াফও বলে।এটা শুধু মীক্বাতের বাইরের হাজীদের উপর ওয়াজিব। ৫. মাথা মুন্ডানোঃ কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডিয়ে বা চুল কেটে হালাল হওয়া। হজ্বের জরুরী বিষয়ের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় “রওযা শরীফ যিয়ারত করা।” এ যিয়ারত যদিও আমভাবে সুন্নত ফতওয়া দেয়া হয়েছে। কিন্তু খাছভাবে ফতওয়া হচ্ছে ফরয।
কারণ হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من حج البيت ولم يزنى فقد جفانى.
“যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহ্ শরীফের হজ্ব করলো কিন্তু আমার যিয়ারত করলোনা সে নিশ্চয়ই আমার সাথে বেয়াদবী করলো।” (ইবনে আদী) অর্থাৎ বেয়াদব আল্লাহ্ পাক-এর রহজ্বত থেকে বঞ্চিত। আর যে রহজ্বত থেকে বঞ্চিত তার উপর আল্লাহ্ পাক-এর গযব পতিত হয়। অর্থাৎ সে জাহান্নামী হয়ে যায়।
আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
ولو انهم اذ ظلموا انفسهم جاءوك فاستغفرلهم الرسول لوجدوا الله توابا رحيما.
অর্থঃ- “আর যখন তারা নিজেদের উপর অত্যাচার করতঃ আপনার কাছে আসে এবং আল্লাহ্ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তবে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ্ তায়ালাকে তওবা কবুলকারী ও দয়ালু হিসেবে পাবে।” এ আয়াত শরীফও রওজা শরীফ যিয়ারতের প্রমাণ বহন করে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
من حج فزار فبرى بعد موتى كان كمن زارنى فى حيوتى.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আমার ওফাতের পর হজ্ব সম্পাদন করে আমার রওযা শরীফ যিয়ারত করবে সে যেন জীবদ্দশায় আমার সাক্ষাত করলো।” (বায়হাক্বী) আর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হায়াতুন্ নবী তখন তাঁর ইন্তিকালের পূর্বে বা পরে তাঁর নিকট আগমন করা একই কথা।
অতএব, প্রত্যেক হজ্ব আদায়কারীর জন্য বাইতুল্লাহ্ শরীফের হজ্ব ও রওযা শরীফের যিয়ারত করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি হাছিল করা উচিত।]
মুর্হরম-ছফর মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা -হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
রবীউল আউয়াল মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা
রবিউস্ সানী মাস ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা