সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য, যিনি ইরশাদ ফরমান, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সকল সন্তুষ্টি ও প্রশংসার অধিক হক্বদার। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অনাগত কালের জন্য অগণিত দরূদ ও সালাম। যিনি আর্বিভূত হয়েছেন উম্মতকে কুরআন ও হিকমত শিক্ষা দেয়ার জন্য তথা তাযকিয়া করার জন্য।
উল্লেখ্য, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে, কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়ার তথা তাযকিয়া করার এ মহান দায়িত্ব বর্তায় আলিম সমাজের উপর। যে প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আলিম সম্প্রদায় নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ।” (মিশকাত)
মূলতঃ এ ধারাবাহিকতায় আওয়ামুন্ নাছ তথা আম মুসলমানের নিকট আলিম তথা মাওলানা, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীস, মুফাস্সীরে কুরআন, মুফতি এক শ্রদ্ধাস্পদ শব্দ। যদিও এক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য এসব উপাধি ততক্ষণই কার্যকর যতক্ষণ তারা কুরআন-সুন্নাহর উপর অটল থাকেন।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ যে নায়িবে রসূল, আফজালুন্ নাছ বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা মনোনীত হবার পর প্রথম যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে বলেছিলেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অনুসরণ করবে, মূল্যায়ন করবে যতক্ষণ পর্যন্ত আমি আল্লাহ্ পাক-এর মতে মত, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ থাকব। আমি যদি কুরআন-সুন্নাহ্র বিন্দুমাত্র খিলাফ করি তবে তখন তোমরা আর আমার অনুসরণ করবেনা।”
উল্লেখ্য, আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ। তবে এই ওয়ারিছ স্বত্ব স্বাভাবিক উত্তরাধিকার সূত্রের মত নয়। বাদশাহ্র ছেলে বাদশাহ্ এবং অন্য কেউ ক্ষমতা দখল না করা পর্যন্ত বংশানুক্রমে বাদশাহী চলতেই থাকবে বিষয়টি তা নয়।
দুনিয়াতেই যদি আমরা দেখি, দুর্নীতির দায়ে কাষ্টমস্ কর্মকর্তা বরখাস্ত হতে, পুলিশ, সচিব তথা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দিতে, এডভোকেটশীপ রহিত করতে, ছাত্রের ছাত্রত্ব স্থগিত রাখতে, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাহলে মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিস, মুফাস্সীরে কুরআন, শাইখুল হাদীস, খতীব এসব কোন্ পাকাপোক্ত স্বত্ব অথবা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত? যে ছলে-বলে নকল করে একবার সে অবস্থানে আসীন হতে পারলেই তথা সে ডিগ্রী বাগাতে পারলেই তার আর অপসারণ নেই! তার আর অভিশংসন অথবা বিচ্যূতির অবকাশ নেই।
উসূল রয়েছে, ‘তাফসীর ঐ ব্যক্তি বেশী বুঝে যে দুনিয়া বেশী বুঝে।’ দুনিয়ার প্রেসিডেন্টের মত সর্বোচ্চ পদেরও যদি বিচ্যূতি বা অভিশংসনের সাংবিধানিক ব্যবস্থা থাকে (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ৫২(১) দ্রঃ) তাহলে কুরআন-সুন্নাহ্য় এমন কোন বিধান তো নেই যে, কথিত বা তথাকথিত আলিম একবার হতে পারলে তার আর পদঙ্খলনের আশঙ্কা নেই, তার বিরুদ্ধে পানিশমেন্টের ব্যবস্থা নেই। সেই সাথে তাকে অবমূল্যায়নের আর অবকাশ নেই।
অথচ আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে কি নজীর দেখিয়েছেন? ছয় লক্ষ বছর ইবাদতের প্রেক্ষিতে যে আজাজীল মুয়াল্লিমুল মালাকুত বা ফেরেশ্তাদের শিক্ষকের পদ অলঙ্কৃত করেছিল সে আজাজীল যখন ছয় লক্ষ বছর পর মহান আল্লাহ্ পাক-এর একটি আদেশ অমান্য করল তখনই আল্লাহ্ পাক তাকে মালউন তথা ইবলিশ আখ্যা দিলেন, বিতাড়িত শয়তান রূপে পর্যবসিত করলেন। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, কে নামধারী আলিম, ধর্ম-ব্যবসায়ী আলিম তা উপলব্ধির জন্য নিগুঢ় বা জটিল কোন তত্ত্ব-তালাশের প্রয়োজন নেই। শুধু এ সাধারণ উসূল বিচারেই যথেষ্ট যে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেন, তার খিলাফ কাজ যখন কোন দাবীদার আলিম করে তখন আর সে সত্যিকার বা হক্কানী-রব্বানী আলিমের মর্যাদায় থাকতে পারেনা।
উল্লেখ্য, শতাধিক ছহীহ্ হাদীছ শরীফ রয়েছে যে, ছবি তোলা নিষেধ। পাশাপাশি পর্দা করা সরাসরি আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ। কুরআন শরীফের জায়গায় জায়গায় আল্লাহ্ পাক শক্তভাবে পর্দার কথা বলেছেন; চৌদ্দজনের সীমারেখা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও আমরা দেখছি বর্তমানে দাবীকৃত প্রায় সব মাওলানা মুফতিই ছবি তুলছে। পর্দার খিলাফ করছে। একের পর এক হারাম, বিদয়াত-বেশরা কাজ যথা- হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র, নির্বাচন, ইত্যাদি করছে।
এখানে স্মর্তব্য যে, ওহীর দরজা যখন বন্ধ হয়ে গেছে তখন কুরআন-সুন্নাহ্য় বিবৃত হারাম আর কখনো হালাল হতে পারেনা। এরপরও যদি কেউ বর্ণিত হারামকে হালাল করতে চায়, ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে চলতে চায়; তবে ইসলামী মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে সে তাৎক্ষনিকভাবে আলিম তথা নায়িবে রসূলের পদ হতে বিচ্যূত হয়ে যায়।
সাধারণ মানুষ তাকে অবমূল্যায়ন করতে দ্বিধাগ্রস্থ হলেও দুনিয়াবী আদালত তাকে বরখাস্ত করতে ব্যর্থ হলেও শরীয়তী হুকুম ঠিকই তাৎক্ষনিকভাবে তাকে অভিশংসিত বা অপসারিত করে তার আসল পরিচয়ে পর্যবসিত করে। যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই নামধারী, আমলহীন আলিমরাই দুনিয়ার মাঝে সর্বাপেক্ষা খারাপ জীব।” (মিশকাত)
বর্তমান যামানার মহান মুজাদ্দিদের উছীলায় এই দ্বীনি সমঝ আলীমুল হাকীম, আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলের নছীব করুন। (আমীন)