সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১১৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

সৃষ্টিজগতের সুবিশালতার চেয়েও মহান আল্লাহ পাক উনার সুখ্যাতি বর্ণনাতীত ব্যাপক, যার অপার রহমতে রবিউস সানী মাসে আল বাইয়্যিনাত প্রকাশিত হলো। আর বেশুমার দরূদ ও সালাম উনার প্রতি, যিনি সকল সৃষ্টির মূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যমীনে পানিতে ফিৎনা-ফাসাদ, আযাব-গযব বিপদাপদ এসে থাকে মানুষের (বদ) আমলের কারণে। যেন তারা তাদের (বদ) আমলের স্বাদ গ্রহণ করে। আশা করা যায় তারা ফিরে আসবে।” (পবিত্র সূরা রূম/৪১)

মূলত: উম্মতে মুহম্মদী হওয়ার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের খুব কমই আযাব-গযবে গ্রেফতার করেন। তদবিপরীতে অনুপযুক্ত হওয়ার পরও অনেক নিয়ামতের সাথে সম্পৃক্ত রাখেন।

পূর্ববর্তী উম্মতগণ, উম্মতে মুহম্মদীর তুলনায় অনেক কম গুণাহর কারণেই, প্রস্তর বর্ষণ, ভূমি ধ্বসে যাওয়া, রক্তবৃষ্টি, প্লেগ ইত্যাদি ভীষণ আযাব-গযবে গ্রেফতার হয়ে যেত। কিন্তু তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি গুণাহর সাথে সম্পৃক্ত থাকার পরও, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় উম্মতে মুহম্মদীর প্রতি অপেক্ষাকৃত অনেক কম আযাব-গযব বর্ষিত হয়।

কালের প্রেক্ষিতে বর্তমানে উম্মতে মুহম্মদী এতই গাফিল যে, তারা গযবের কারণ উপলব্ধি করতে বড়ই বে-খবর, শুধু তাই নয় বরং গযবকে গযব রূপে মালুম করতেও বর্তমানে তারা বড়ই অক্ষম হয়ে পড়ছে। নাউযুবিল্লাহ!

এই যে গ্রীষ্মের প্রচ- দাবদাহ, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি, বন্যা, তুফান এগুলো যে আযাব আর গযবেরই অন্তর্ভুক্ত তা ক’জনই বা অনুভব করে। পাশাপাশি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেনতেন ইস্যু দিয়ে ইঙ্গ-মার্কিন, ইসরাঈলী শক্তি যে একের পর এক মুসলিম দেশকে আক্রমণ করে চলছে এটাও মুসলমানদের জন্য সাক্ষাত এক গযব তাও বা আমরা জ’জনে হৃদয়ঙ্গম করছি। যে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার ইরশাদ মুবারক হয়েছে, যখন মুসলমান মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কৃত ওয়াদার খিলাফ করবে অর্থাৎ তাদের বাঞ্ছিত আমল ছেড়ে দিবে তখনই তাদের উপর বিদেশি শত্রু চেয়ে বসবে।

বলাবাহুল্য, যেমনটি বসেছে ইরাকে। জানা গেছে ইরাকে আবিষ্কৃত তেল এর পরিমাণ ১১,২০০ কোটি ব্যারেল আর অনাবিষ্কৃত ২২, ০০ কোটি ব্যারেল। যা দিয়ে খোদ আমেরিকাই আরো ৩০০ বছর চলতে পারবে। আমেরিকায় রয়েছে মাত্র ২% তেল আর মধ্যপ্রাচ্যে ৬৫%। তাই তেলসহ মুসলিম বিশ্বের স্বাধীনতা হরণের জন্য ঈঙ্গ-মার্কিন, ইসরাঈলী শক্তি মরীয়া হয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, মুসলমান লাঞ্ছিত হোক, বিধর্মী আগ্রাসন মুসলিম দেশের উপর আধিপত্য লাভ করুক, কোন মুসলমানই তা গ্রহণ করতে পারেনা। কারণ তা ঈমানের চেতনা বিরুদ্ধ। বরং ঈমানের দাবী ও অধিকার এই যে, সারাবিশ্বে ইসলামের বিজয় কেতন পত পত করে উড়বে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোকের উপর প্রাধান্য বিস্তার করেছে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা/২৪৯)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা চিন্তিত হয়োনা, পেরেশানী হয়োনা তোমরাই কামিয়াবী হাছিল করবে যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” (পবিত্র সূরা ইমরান/১৩৯)

আর মু’মিনের কর্তব্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা/২০৮)

স্মর্তব্য, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করার ক্ষেত্রে এবং নেকীর ছূরতে শয়তানের ধোকা তথা ইসলামের নামে কুফরী, বিদয়াতী আমল অনুধাবন, চিহ্নিতকরণ ও প্রতিহত করণের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র যথাযোগ্য উলীল-আমরই সক্ষম ও পারঙ্গম।

উল্লেখ্য, পৃথিবীর ইতিহাসে তাবত উলিল আমরদের মাঝে গাউসুল আ’যম, মাহবুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, বড় পী হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন মুহম্মদ আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এক বেমেছাল দৃষ্টান্ত। স্বীয় চলার পথে শয়তানের হাজারো ওয়াসওয়াসা, যাঁকে করতে পারেনি চুল পরিমাণ বিচ্যুত। অথচ সেক্ষেত্রে শয়তানের নিজস্ব স্বীকারোক্তিতেই বিবৃত হয়েছে যে, সে তার ওয়াসওয়াসার ফাঁদে ফেলে শত শত নামধারী আলিম দরবেশকে বিভ্রান্ত করেছে, হালাল ছূরতে হারাম মত-পথে পরিচালিত করে তাদেরকে যেমন গোমরাহ করেছে, তেমনি তাদের হাজার হাজার অনুসারীদেরও একইভাবে পথহারা করেছে।

আমরা মনে করি বর্ণিত বিষয়টি বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষ পর্যালোচনাযোগ্য। যেহেতু আমাদের তথাকথিত উলামাদের কার্যকলাপে প্রমাণিত হয় যে তারা শয়তানের উল্লিখিত ফাঁদটিতেই কানামাছির ন্যায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যে কারণে তারা ইহুদী-নাছারা নাস্তিক ইত্যাদির বিরোধিতা করতে গিয়ে করছে তাদেরই নাজায়িয ও হারাম পদ্ধতির অনুশীলন। তারা আমেরিকান পণ্য বর্জনের আহবান জানাচ্ছে কিন্তু নিজেরা আমেরিকান কালচার; ছবি তোলা, গণতন্ত্র, নির্বাচন ইত্যাদির ঠিকই অনুসরণ করে যাচ্ছে। এছাড়াও আরো করছে হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী ইত্যাদি হারাম কাজ। যা তাদের তথাকথিত আন্দোলনকে করছে সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত।

উল্লেখ্য, রবিউছ ছানী মাসের এগার তারিখ সাইয়্যিদুল আউওলিয়া, ইমামুল আইম্মা, হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওফাত দিবস। ফাতেহায়ে ইয়াজদহম নামে এ দিনটি সকলের নিকট বিশেষভাবে সম্মানিত। স্বভাবত:ই এ দিনের তাৎপর্য হাছিলে আমাদেরকে যে বিষয়ে অনুপ্রাণিত হতে হবে তা হলো ক্বলব পরিশুদ্ধ করণ তথা ইলমে তাসাউফ অর্জনে। আর যামানার মুজাদ্দিদ উনাদের নেক ছোহবতের মাধ্যমেই তা সম্ভব যথাযথভাবে।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়