সাইয়্যিদু উলদে আদম, আছলুল ক্বায়িনাত, ফখরে মওজুদাত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূব পুরুষগণের মাহাত্ম বণনা

সংখ্যা: ১০৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-মুহম্মদ আব্দুল কবীর

الله اعلم حيث يجعل رسلته.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন রিসালত কাকে দেয়া আবশ্যক।” (সূরা আনয়াম/১২৪)

নিজের আগমনী সম্বন্ধে নূর নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন,

عن أبى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى اله عليه وسلم بعثت من خير قرون بنى أدم قرنا فقرنا حتى كنت من القرن الذى كنت منه.

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যুগে যুগে মানব সমাজের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বংশ পরম্পরায় আমি প্রেরিত হয়েছি। অবশেষে যে যুগের মানব বংশে আমি এসেছি তাও শ্রেষ্ঠ।”

ছহীহ্ মুসলিম শরীফে হযরত ওয়াসিলা ইবনুল আসকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। রসূলল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

عن واثلة ابن الاسقع قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان الله اصطفى كنانة من ود اسمعيل واصطفى قريشا من كنانة واصطفى من قريش بنى هاشم واصطفنى من بنى هاشم.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম-এর বংশধর থেকে বণী কেনানাকে পছন্দ করেছেন। আর বণী কেনানা থেকে কুরাইশকে আর কুরাইশ থেকে বণী হাশিমকে আর বণী হাশিম থেকে আমাকে পছন্দ করেছেন।

ইবনে সাদের এক মুরসাল বর্ণনায় এতোটুকু অতিরিক্ত রয়েছে যে, বণী হাশিম থেকে আব্দুল মুত্তালিবকে পছন্দ করেছেন।”

হযরত ইমাম তাবারাণী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে বলেছেন যে, তিনি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত ভূমি তালাম করেছেন। কিন্তু বণী হাশিম অপেক্ষা উত্তম কাউকে পাননি।” হযরত হাফিয আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীছ শরীফখানা ছহীহ বলেছেন।  হযরত হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন যে, “হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম পবিত্র সত্ত্বাসমূহের অনুসন্ধানে সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন। যেহেতু তখন জাহিলিয়াতের যুগ ছিলো তাই তাই তিনি অনুসন্ধান করার সময় বাহ্যিক আমলের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে মানুষের যোগ্যতা ও স্বভাবের প্রতি দৃষ্টি রাখেন। এ হিসেবে তিনি আরব জাতিকে বিশেষ করে বণী হাশিমকে উত্তম জাতি বা গোত্র হিসেবে পান তৎকালে বিভিনন দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য জাতি থেকে আরব জাতির প্রাধান্য ছিলো। অন্য কোন জাতি তাদের সম পর্যায়ের ছিলো না।”

لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات على ان جميع ابائه صلى الله عليه وسلم وامهاته الى ادم وحواء عليهما اسلام ليس فيهم كافر.

অথ: “আমি সবদা পবিত্র পৃষ্ঠ মুবারক হতে পবিত্র রেহেম শরীফ-এ স্থানান্তরিত হয়েছি। আমার পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম পর্যন্ত কোন পুরুষ বা মহিলা কউই কাফির ছিলেন না।” অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ মুবারক হয়েছে,

لم يلتق ابواى قط على سفاح.

অথ: “আমার পূর্ব পুরুষগেণর কোন পুরুষ বা মহিলা কউই চারিত্রিক দোষে দোষী ছিলেন না।”

 হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ইন্তিকালের পূবে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাহক উনার পুত্র-সন্তান ও পরবর্তী নবী-রসূ হযরত শীশ আলাইহিস সালামকে নছীহত করতে গিয়ে বলেছিলেন,

ان لا يودع هذا النور الا فى المطهرات من النساء.

অথ: “যেন (হযরত শীশ আলাইহিস সালাম এই নূরের পরবর্তী বাহককে নছীহত করেন) এই নূরকে পবিত্র নারী ব্যতীত অন্য কোন নারীর নিকট নিবেদন না করেন।” (মাওলেদুন মুনাবী)

আরো উল্লেখ যে, সম্রাট কায়সার হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশ সম্পর্কে হযরত আবূ সুফীয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করেছিলো যে, “উনার বংশ কেমন?” হযরত আবু সুফীয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখন ঈমান আনেননি) বলেছিলেন, “বংশ গৌরব ও আভিজাত্যে কউ উনার তুল্য নয়।” তখন বাদশাহ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে উচ্চারণ করেছিলো,

وكذا لك الرسل تبعث فى احساب قومها.

অথাৎ “রসূলগণ কুলীন বংশ হতেই প্রেরিত হন।”

আমাদের প্রিয় নবী আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‍ুনার বংশ পরস্পরা নিম্নে প্রদত্ত হলো-

وكذالك الرسل تبعث فى احساب قومها.

অথাৎ “রসূলগণ কুলীন বংশ হতেই প্রেরিত হন।”

আমাদের প্রিয় নবী আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশ পরস্পরা নিম্নে প্রদত্ত হলো-

সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদি মান্নাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররা ইবনে কাব ইবনে লুওয়াই বিনে গালিব ইবনে ফিহির ইবনে মালিক ইবনে নাদ্বর (নাযর) ইবনে কিনানা ইবনে খুযাইমা ইবনে মুদরিকাহ ইবনে ইলয়াস ইবনে মুদ্বার (মুযার) ইবনে নিযার ইবনে মা’আদ ইবনে আদনান।

আখিরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাতৃবংশ তালিকা নিম্ন রূপ-

সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ইবনে আমিনা বিনতে ওয়াহাব ইবনে আব্দু মান্নাফ ইবনে যুহরা ইবনে কিলাব ইবনে মুররা। এরপর পিতৃ বংশ অনুরূপ।

পিতৃ পুরুষগণের কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

আদনান: তিনি কায়দার ইবনে সিমাঈল আলাইহিস সালাম উনার বংশধর। আবু জাফর ইবনে হাবীব স্ব-রচিত ইতিহাসে উল্লেখ করেছেন যে, হযরত েইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বণনা করেন, আদনান, মা’আদ, রবীয়া, খুযায়মা ও আসাদ প্রমুখগণ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার ধর্মাবলম্বী ছিলেন।  উনাদের আলোচনা উত্তমরূপে করো। যুহায়র ইবনে বাককার বর্ণনা করেন যে, রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন যে, মুযার ও রবীয়াকে খারাপ বলো না। উনারা ইসলামের উপর ছিলেন। সাঈদ ইবনে মুসাইয়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক মুরসাল রিওয়ায়েতও এ কথা সমথন করে। (ফতহুল বারী ৭ম খণ্ড, ১২৫ পৃষ্ঠা)

খাজা আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অপর নাম শায়বাতুল হামদ। তবকাতে ইবনে সাদে বর্ণিত আছে, আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রূপে-গুণে, বলিষ্ঠতায়, সুঠামতায় সকল কুরাঈশ হতে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তিনি বদান্যতায় ও দাক্ষিণ্যতায় পিতা হাশিমকে ছাড়িয়ে যান। তিনি ফিৎনা-ফাসাদ থেকে দূরে থাকতেন। আতিথেয়তায় এতোটা অগ্রসর হয়েছিলেন যে, স্বদেশবাসী উনাকে ফায়য়ায (দানশীল) ও মোতায়িম তায়রীস সামা (আকাশের পাখীদের আহার করানেওয়ালা) লক্বব দেন রমযান মাসে দান খয়রাত বেশী বেশী করতেন। তিনি সর্বপ্রথম হেরা গুহায় নির্জনে মুরাকাবা করতেন। মহান আল্লাহ পাক উনার দ্বারাই পবিত্র যমযম কুপ নতুন করে প্রকাশিত করান। এতে তিনি সারা আরবে নতুন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। বাদশাহ আবরাহার মোকাবিলায় তিনি বেপরোয়াভাব নিয়ে যেভাবে তাওয়াক্কুল আল্লাহু প্রদর্শন করেন, যেভাবে রব্বুল কাবা আল্লাজাল্লা শানুহুর প্রতি উনার অবিচল আস্থা ও ইসতিকামত প্রকাশ করেন তাতে তিনি প্রবাদ প্রতীম হয়ে পড়েন।

আল্লামা যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কুরাঈশরা দুর্ভিক্ষ কালে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সাথে নিয়ে সুবায়র পাহাড়ের উপরে যেত। উনাকে উছীলা করে সকলে আল্লাহ পাক উনার রহমতের বৃষ্টি কামনা করত। আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বরকতে কুরাইশগণ নানান বিপদ হতে উদ্ধার পেত। তিনি স্বীয় বংশীয় লোকদের যুলুমবাজী থেকে বিরত রেখে উত্তম আখলাক অর্জনে সবাইকে উৎসাহিত করতেন। মান্নত পূরণ করার ব্যাপারে জোর দিতেন। মাহরাম নারীগণ অর্থাৎ বোন ফুফু, খালা প্রভৃতিজনকে বিবাহ করতে নিষেধ করতেন। মদ্যপান, ব্যভিচার, কন্যাসন্তান জীবন্ত কবর দেয়া আর বস্ত্রহীনভাবে কাবা শরীফ তাওয়াফ করতে বাঁধা প্রদান করতেন। চোরের হাত কাটার নির্দেশ দান করতেন। উনার এ সকল আদেশ নিষেধ মূলত: আল কবুরআনের নির্দেশের অনুরূপ। হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সত্য স্বপ্ন ও ইলহামের অধিকারী ছিলেন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূবপুরুষগণের মধ্যে যিনি যতটা নুবুওওয়াতের সময়কালের নিকটবর্তী হয়েছিলেন উনার থেকে ততবেশী ঈমান, আখলাক, আদব, ইহসান নূর ইত্যাদি নবুওওয়াতী বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রকাশ পেয়েছিলো।

খাজা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ঃ তিনি আব্দুল মুত্তালিবের দশ পুত্রের সর্বকনিষ্ঠ জন। আব্দুল্লাহ্ নামটি আল্লাহ্ পাক-এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় নাম। হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সারা আরব এবং বিশেষতঃ কুরাইশ নেতৃত্বের অসম্মতির মুকাবিলায় যমযম কুপ পুনরুদ্ধার করার জন্য খনন কাজ চালান। এ কাজে সে সময়ে তাঁর একমাত্র পুত্র হারিস তাঁকে সাহায্য করেন। আর কোন সাহায্যকারী ও সহানুভূতি প্রকাশকারী তিনি পাননি। এ জন্য তিনি মানত করেছিলেন, যদি আল্লাহ্ তায়ালা তাকে দশটি পুত্র সন্তান দান করে আর তাঁরা যৌবনে পদার্পন করেন, পিতার হাতকে শক্তিশালী করেন তাহলে তাদের একজনকে আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায় কুরবানী করবেন।      অবশেষে আল্লাহ্ পাক তাঁকে দশপুত্র দান করে আশা পূর্ণ করেন। স্বপ্নে তিনি আদিষ্ট হন মান্নতপূর্ণ করার ব্যাপারে। জাগ্রত হয়ে তিনি সকল পুত্রকে সমবেত করে তা অবগত করেন। পুত্রগণ সানন্দে রাজি হন। হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু লটারীর ব্যবস্থা করেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নাম উঠে। যিনি সবার কনিষ্ঠ জন। সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। পিতা কনিষ্ঠ পুত্রকে বধ্যভূমিতে নিয়ে যেতে থাকেন, এক হাতে ছুরি, অপর হাতে প্রাণাধিক পুত্র। হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বোনেরা পিছন পিছন যাচ্ছিলেন প্রিয়তম ভাইয়ের তরে ক্রন্দন করতে করতে। এক পর্যায়ে এক বোন বললেন,  আব্বাজান আপনি দশটি উট আর আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মাঝে লটারী দিন। সেকালে দশটি উট এক ব্যক্তির খুনের বদলা ছিলো। এতে করে হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রাজী হলেন। লটারী করলেন, তাতে হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নামটিই উঠলো। অতঃপর আরো উট যোগ করে হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ভাগ্য পরীক্ষা করলেন। প্রতিবারই প্রাণাধিক পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নাম উঠতে লাগলো। অবেশেষ উটের সংখ্যা একশতে পৌঁছলে উটের নাম লটারীতে চলে আসে। তখন হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ সকলে আল্লাহ্ পাক-এর তাকবীর ধ্বনি দেন। বোনেরা আল্লাহ্ পাক-এর শুকরিয়া আদায় করে ভাইকে নিয়ে চলে যান। আর হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে একশত উট কুরবানী করেন। এরপর থেকে একজন লোকের খুনের বদলা দশের পরিবর্তে এক’শ সাব্যস্ত হয়।

উপরোক্ত ঘটনার কিছুকাল পর হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বীয় পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বিবাহ্ করানোর জন্য উদ্যোগ নিলেন। পিতা-পুত্র মদীনা অভিমুখে চলছিলেন। চলার পথে ফাতিমা বিনতে র্মুরা নামে এক ইহুদী মহিলার সাথে দেখা। উক্ত মহিলা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব সম্পর্কে উচ্চ শিক্ষিতা ছিলো। হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর চেহারা মুবারকে নুবুওওয়াতী নূর দেখে তাঁকে একান্ত কাছে পাবার জন্যে ব্যকুল হয়ে উঠে এবং নিয়ত করে, যদি হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সান্নিধ্য লাভ করতে পানি তাহলে এক হাজার উট মান্নত করব। উত্তরে হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কবিতাকারে জাওয়াব দেন,

اما الحرام فالممات دونه

والحل لاحل فا ستبينه

فكيف بالامر الذى تبغينه

يحمى الكريم عرضه ودينه.

অর্থঃ- “হারাম কাজ করা অপেক্ষা মৃত্যুই সহজ। এখানে এমন কোন হালাল কাজ নেই যা আমি প্রকাশ করতে পারব। তুমি যে বিষয়টি আমার কাছে চাচ্ছ তা আমার দ্বারা কি করে হতে পারে? সম্মানিত ভদ্র ব্যক্তি সর্বদাই স্বীয় সম্মান ও দ্বীন রক্ষা করে থাকেন।”      হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্তন কালে পুনরায় ঐ ইহুদী মহিলার সাথে দেখা হয়। এবার উক্ত মহিলা হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি কোন আগ্রহ প্রকাশ না করায় তিনি বিস্মিত হন। তখন উক্ত মহিলা জানায়, আল্লাহ্ পাক-এর কছম! আমি কোন বদ্কার নারী নই। আপনার চেহারায় নুবুওওয়াতী নূর দেখে আমি তা আমার মাঝে আনতে চেয়েছিলাম মাত্র। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আল্লাহ্ পাক সে নূর যেখানে রাখার ইচ্ছা করেছেন সেখানেই তা চলে গেছে।     হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আম্মাজান হযরত আমিনা বিনতে ওয়াহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানের সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। হযরত ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখিত “আন্ নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” নামক কিতাবে বিস্তারিত ভাবে হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর গৌরব গাঁথা বর্ণিত হয়েছে। জলিলুল ক্বদর আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালাম  ও বিশিষ্ট জান্নাতী মহিলাগণ যথা, হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালাম, হযরত মরিয়ম আলাইহাস্ সালাম, হযরত আছিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা প্রমূখগণ তাঁকে সান্তনা দান করেছিলেন নবীজীর জন্মকালে, জন্ম মাসে ও জন্ম বৎসরে। হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ইন্তিকালের পূর্বে তাঁর পুত্র আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে বলেছিলেন,

كل كثير يفنى وانا ميتة وذكرى باق تركت حيرا ولدت طهرا.

অর্থঃ- “সবকিছুই ধ্বংস হবে, আমিও ইন্তিকাল করবো। কিন্তু আমার আলোচনা চিরস্থায়ী থাকবে। কারণ আমি শ্রেষ্ঠ (পুত্র)কে রেখে যাচ্ছি, যাঁকে পাক-পবিত্র হিসেবে জন্মদান করেছি।” আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়ীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানীত মাতা-পিতা এবং তাঁর পূর্ব পুরুষগণের প্রতি পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করার মাধ্যমে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি-রেযামন্দি নছীব করুন। (আমীন)

সাইয়্যিদুল জিননি ওয়াল ইনস, ইমামুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, খতীবুল আম্বিয়া হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হায়াতুন নবী

ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মযদা-মতবা, শান-মান সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়ে অনেক উর্দ্ধে

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ছাহিবু মাক্বামি মাহমূদ, শাফউল উমাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম উনার শ্রেষ্ঠত্ব

সাইয়্যিদুল কাওনাইন, শাফিউল মুজনিবীন, ইমামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলে বাইতগণের ফযীলত

সাইয়্যিদুল বাররি ওয়াল বাহর, ইমামুস সাক্বালাইন, তাজেদারে মদীনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদগণের ফযীলত