সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১১৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত,

নূরপুর শাখা, রংপুর।

সুওয়ালঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতার নাম কি? অনেকে কুরআন শরীফের সূরা আনআম-এর ৭৪ নং আয়াত শরীফের দলীল দিয়ে বলে থাকে, ‘হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতার নাম ছিল আযর; যে মূর্তিপুজক ছিল।’ এটা কতটুকু সঠিক। দয়া করে সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতার নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম। আযর নামক ব্যক্তি ছিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন,

واذا قال ابرهيم لابيه ازر اتتخذ اصناما اليهة.

অর্থঃ- “আর যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচা আযরকে বললেন, আপনি কি মূর্তিকে ইলাহ্ (মা’বুদ) হিসেবে গ্রহণ করছেন?” (সূরা আনআম/৭৪)

এ আয়াত শরীফে ابيه ازر -এর শাব্দিক অর্থ তাঁর পিতা আযর। কিন্তু ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়া-ই-কিরামগণের সর্বসম্মত মতে, এখানে ابيه অর্থ তাঁর চাচা। অর্থাৎ اب (আবুন) শব্দের অর্থ পিতা না হয়ে এর অর্থ হবে চাচা। কারণ, কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অনেক স্থানেই اب (আবুন) শব্দটি পিতা ব্যতীত অন্য অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।

যেমন, আল্লাহ্ পাক বলেন,

ولابويه لكل واحد منهما السدس مما ترك ان كان له ولد.

অর্থঃ- “পিতা-মাতা উভয়ের জন্যে রয়েছে মৃতের পরিত্যক্ত মালের এক ষষ্ঠমাংশ; যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা/১১)

এ আয়াত শরীফে পিতা ও মাতা উভয়ের ক্ষেত্রেই (আবুন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

আল্লাহ্ পাক আরো বলেন,

قالوا بل نتبع ما الفينا عليه اباعنا.

অর্থঃ- “কাফিররা বললো, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি তারই অনুসরণ করব।” (সূরা বাক্বারা/১৭০)

এ আয়াত শরীফে ও আরো অসংখ্য আয়াত শরীফে পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে اب (আবুন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া সূরা আ’রাফ-এর ২৭ নং আয়াত শরীফে ابويه দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামকে বুঝানো হয়েছে।

অনুরূপ ‘সূরা বাক্বারা’-এর ১৩৩ নং আয়াত শরীফে বলা হয়েছে, نعبد الهك واله ابائك ابرهم واسمعيل واسحق.

অর্থঃ- “(হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর সন্তানদের কথা) আমরা আপনার ইলাহ্ ও আপনার পিতা (পূর্বপুরুষ) হযরত ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিমুস্ সালামের ইলাহ্-এর ইবাদত করব।”

উল্লেখ্য যে, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম হলেন, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা। কাজেই উক্ত আয়াত শরীফে চাচার ক্ষেত্রেও اب (আবুন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

অনুরূপভাবে হাদীস শরীফেরও বহু স্থানে চাচা’র ক্ষেত্রে اب (আবুন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, “তাফসীরে কবীর” ১৩-৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

قال عليه الصلوة والسلام ردوا على ابى يعنى العم  الباس.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমার নিকট ফিরিয়ে দাও।”

অন্য হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

ان ابى واباكم كلاهما فى النار.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আমার চাচা (আবূ তালিব) ও তোমাদের পিতা উভয়ই জাহান্নামী।”

অন্য হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم عمر رضى الله تعالى عنه على الصدقة فقيل منع ابن جميل وخالد بن الوليد والعباس رضى الله تعالى عنهم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما ينقم ابن جميل الا انه كان فقيرا فاغناه الله ورسوله واما خالد فانكم تظلمون خالدا قد احتبس ادراعه واعتده فى سبيل الله واما العباس فهى على ومثلها معها ثم قال يا عمر اما شعرت ان عم الرجل صنو ابيه. (متفق عليه – مشكوة ص 103)

অর্থঃ- “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে যাকাত আদায় করার জন্য প্রেরণ করলেন। তখন বলা হলো যে, ইবনে জামীল, হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যাকাত দিতে অস্বীকার করেছেন। এতদ্শ্রবণে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ইবনে জামীল এই জন্য যাকাত  দিতে অস্বীকার করেছে যে, সে গরীব ছিল; আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই তাঁকে (সদ্য গণীমতের মাল দান করে) ধনী বানিয়েছেন। (অর্থাৎ  এখনও  তাঁর মালের বৎসর পূর্ণ হয়নি।) আর হযরত খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রতি তোমরাই (যাকাত চেয়ে) অন্যায় করেছ। কারণ তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদই আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায় দান করে দিয়েছেন। (এখন তার উপরে যাকাত ফরয নয়।) আর হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু -এর যাকাতের দায়িত্ব আমারই উপর। হে উমর! তোমার কি জানা নেই, কোন ব্যক্তির চাচা পিতারই অনুরূপ। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)

উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, اب (আবুন) শব্দটি পিতা ব্যতীত  চাচা, দাদা, পূর্বপূরুষ ইত্যাদি অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

এ সম্পর্কে “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবের ৩য় খণ্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

والعرب يطلقون الاب على العم.

অর্থঃ- “আরববাসীরা الاب (আল আবু) শব্দটি চাচার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেন।”

“তাফসীরে কবীর” কিতাবের ১৩তম খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,

والعم قد يطلق عليه اسم الاب.

অর্থঃ- “عم (আম্মুন) চাচা শব্দটি সাধারণতঃ الاب (আবুন) (পিতা) হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।”

উপরোক্ত বর্ণনায় এটাই  ছাবিত হলো যে, আরবী اب (আবুন) শব্দটির শাব্দিক অর্থ পিতা। কিন্ত কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে এবং আরব দেশে প্রচলিত পরিভাষায় اب (আবুন) শব্দটি চাচা অর্থেও ব্যবহৃত হতো। সুতরাং সূরা আনআম-এর ৭৪নং আয়াত শরীফে ابيه ازر এর অর্থ  হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা আযর, পিতা নয়।

এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان ابى ابراهيم عليه السلام لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارخ.

অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতার নাম আযর নয়। বরং তাঁর পিতার নাম মুবারক হলো হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম।” (ইবনে আবি হাতিম, ইবনে কাছির- ৩/২৪৮)

ان والد ابراهيم عليه السلام ما كان مشركا وثبت ان ازر كان مشركا فوجب القطع بان والد ابراهيم كان انسانا اخر غير ازر.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা (হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম) মুশরিক ছিলেননা। বরং আযর (তাঁর চাচা) মুশরিক ছিল। কেননা, অকাট্যভাবে প্রমাণিত যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা অন্য একজন অর্থাৎ হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম; কিন্তু আযর নয়।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)

এ সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,

ان والد ابراهيم عليه السلام كان تارخ وازر كان عما له والعم قد يطلق عليه اسم الاب.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতার নাম ছিলো হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম। আর আযর ছিলো তাঁর চাচার নাম। তখন চাচাকেও সাধারণতঃ আবুন (পিতা) বলা হত। (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)

وكان ازر على الصحيح عما لابراهيم والعرب يطلقون الاب على العم كما فى قوله تعالى نعبد الهك واله ابائك ابراهيم واسماعيل واسحاق الها واحدا.

অর্থঃ- “বিশুদ্ধ মতে, আযর ছিলো হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচা। আর আরবরা চাচাকেও ব্জব্দ (আবুন) শব্দে অভিহিত করে থাকে।” যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন, আমরা আপনার প্রতিপালক ও আপনার পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইসহাক আলাইহিস্ সালাম-এর একক প্রতিপালক আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদত করি।” (তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬)

ليس ازر ابا لابراهيم انما هو ابراهيم بن تارخ.

অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা আযর নয় বরং তিনি হলেন হযরত ইব্রাহীম ইবনে তারিখ আলাইহিস্ সালাম।” (তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬)

وفى القاموس ازر اسم عم ابراهيم عليه السلام واما ابوه فانه تارخ.

অর্থঃ- “ক্বামূস অভিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, আযর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর চাচার নাম। আর নিশ্চয়ই তাঁর পিতার নাম হলো হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম।” (তাফসীরে মাযহারী- ৩/২৫৬)

মূলতঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালামসহ প্রত্যেক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ-এর পিতা-মাতা বা পূর্বপুরুষ ছিলেন পরিপূর্ণ ঈমানদার, খালিছ মু’মিন। কেউই কাফির ছিলেন না।

এ সম্পর্কেও কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

ان اباء الانبياء ماكانوا كفارا ويدل عليه وجوه منها قوله وتقلبك فى الساجدين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর পিতা বা পূর্বপুরুষ কেউই কাফির ছিলেননা।

তার দলীল হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর এ কালাম বা  আয়াত শরীফ। (আল্লাহ্ পাক বলেন)

وتقلبك فى الساجدين.

অর্থঃ- “তিনি আপনাকে (হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদাকারীদের মধ্যে স্থানান্তরিত করেছেন।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)

প্রকাশ থাকে যে, আল্লাহ্ পাক-এর জলীলুল কদর নবী ও রসূল হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম হলেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ملة ابيكم ابرهيم هو سمكم المسلمين.

অর্থাৎ- “তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর দ্বীনের উপর কায়িম থাক। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলমান।” (সূরা হজ্ব/৭৮)

কাজেই আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের মাধ্যমে যমীনে তাশরীফ এনেছেন অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন সিজদাকারী। অর্থাৎ সকলেই নামায, কালাম, যিকির, আযকার, ইবাদত, বন্দিগীতে মশগুল ছিলেন। তাঁরা সকলেই পূর্ণ পরহিযগার, মুত্তাক্বী ও ধার্মিক ছিলেন।

এ সম্পর্কে তাফসীরে আরো বর্ণিত রয়েছে,

فالاية دالة على ان جميع اباء محمد صلى الله عليه وسلم كانوا مسلمين وحينئذ يجب القطع بان والد ابراهيم عليه السلام كان مسلما.

অর্থঃ- “উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ সকলেই পরিপূর্ণ মুসলমান ছিলেন। সুতরাং এর দ্বারা অকাট্যরূপে প্রমাণিত বা সাব্যস্ত হয় যে, নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা মুসলমান ছিলেন।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৮)

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين الى ارحام الطاهرات.

অর্থঃ- “আমি সর্বদা পুত-পবিত্র নারী ও পুরুষদের মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হয়েছি।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)

অন্য হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে,

لم يلتق ابوى قط على سفاح.

অর্থঃ- “আমার পিতা-মাতা (পূর্বপুরুষ) কেউই কখনও কোন অন্যায় ও অশ্লীল কাজে জড়িত ছিলেন না।” (কানযুল উম্মাল, ইবনে আসাকীর বারাহিনে  কাতিয়া, নশরুত্তিব)

অন্য হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

بعثت من خير قرون بنى ادم قرنا فقرنا حتى بعثت من القرن الذى كنت فيه.

অর্থঃ- “আমি আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বোত্তম সম্প্রদায়ের মধ্যেই সর্বদা প্রেরিত হয়েছি। এমনকি আমি যে (কুরাইশ) সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলাম সেটাই ছিলো সর্বোত্তম সম্প্রদায়।” (বুখারী, মাযহারী, ৪র্থ খণ্ড ৩০৮ পৃষ্ঠা)

এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,

فلايمكن ان يكون كافرا فى سلسلة ابائه صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতার (পূর্ব পুরুষের) সিলসিলার মধ্যে কেউই কাফির হওয়া অসম্ভব।” (মাযহারী,৪/৩০৮)

এ সম্পর্কে কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,

ان احدا من اجداده ما كان من المشركين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাপ-দাদাগণ কেউই মুশরিক ছিলেননা।” (তাফসীরে কবীর- ১৩/৩৯)

উল্লেখ্য, অনেকে “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭নং আয়াত শরীফ ও সূরা তওবা-এর ১১৪নং আয়াত শরীফের বরাত দিয়ে বলে যে, “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর পিতার জন্য ইস্তিগফার করেছেন কাজেই তাঁর পিতা ঈমানদার ছিলেননা।”          মূলতঃ যারা একথা বলবে তারা উক্ত আয়াত শরীফদ্বয় এর অর্থই বুঝেনি। কারণ “সূরা মরিয়ম”-এর ৪৭নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,

قال سلم عليك ساستغفرلك ربى.

অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম বলেন, আপনার প্রতি (বিদায়কালীন) সালাম, অচিরেই আমি আমার প্রতিপালক-এর নিকট আপনার জন্য মাগফিরাত কামনা করব।”

এবং “সূরা তওবার” ১১৪নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,

ما كان استغفار ابرهيم لابيه الا عن موعدة وعدها اياه.

অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম কর্তৃক স্বীয় চাচার মাগফিরাত কামনা করা ছিলো কেবল মাত্র তার সাথে ওয়াদা করার কারণে।”

অর্থাৎ প্রথমতঃ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করবেন। তাঁর চাচা যেন তওবা করে, র্শিকী ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যান সেজন্য দোয়া করবেন।

আর পরবর্তী “সূরা তওবা”-এর ১১৪নং আয়াত শরীফে সেই ওয়াদা পালনার্থে এবং মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচার জন্য দোয়া করেছিলেন।

যেমন, এ আয়াত শরীফের তাফসীরে এসেছে,

ان ذلك كان قبل النهى عن الاستغفار المشرك وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمه ابى طالب والله لاستغفرن لك.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর এ ইস্তিগফার কামনা করাটা ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া করা নিষেধ হওয়ার পূর্বের। যেমন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিষেধ হওয়ার পূর্বে) তাঁর চাচা আবূ তালিবকে বলেছিলেন, আল্লাহ্ পাক-এর কসম! অবশ্যই আমি আপনার তওবা নছীব হওয়ার জন্য দোয়া করব।” (মাযহারী, ৬/১০০)

এছাড়া হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর চাচা আযর-এর জন্য, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা আবূ তালিব-এর জন্য সরাসরি দোয়া করেননি; বরং তাদের ইস্তিগফার কামনা করেছেন। অর্থাৎ আযর ও আবু তালিব-এর যেন তওবা নছীব হয়, তারা যেন ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়, ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয় সেজন্য দোয়া করেছেন। আর তাও ছিল মুশরিকদের জন্য দোয়া নিষেধ সংক্রান্ত বিধান (আয়াত) নাযিল হওয়ার পূর্বে।

আর চাচা হিসেবে আযর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর এবং আবূ তালিব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনেক খিদমত করেছেন। তার বিনিময় স্বরূপ হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ইস্তিগফার (তওবা কবুল হওয়ার দোয়া) কামনা করেছেন।

এ সম্পর্কে তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে,

وما كان استغفار ابراهيم لابيه يعنى ازر وكان عما لابراهيم عليه السلام وكان ابراهيم بن تارخ.

অর্থঃ- “হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তাঁর পিতার জন্যে ইস্তিগ্ফার করেন। অর্থাৎ আযরের জন্যে ইস্তিগফার করেন। আযর ছিল হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর  চাচা। আর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম ছিলেন হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম-এর ছেলে।” (মাযহারী, ৪/৩০৮)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনায় এটাই ছাবিত হল যে, আল্লাহ্ পাক-এর নবী হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর পিতা হাক্বীক্বী পরহেযগার, মুত্তাক্বী, পরিপূর্ণ ঈমানদার ও মুসলমান ছিলেন। তাঁর নাম মুবারক ছিল হযরত তারিখ আলাইহিস্ সালাম। আর আযর নামক ব্যক্তি ছিল তাঁর চাচা।

আরো প্রমাণিত হলো যে, পূর্ববর্তী সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের পূর্বপুরুষগণ এবং  আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বপুরুষ হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে শুরু করে হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত সকলেই ছিলেন পুত-পবিত্র, পূর্ণ ধার্মিক ও পরিপূর্ণ মুসলমান।

{দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে মাযহারী, (২) ইবনে কাছীর, (৩) ইবনে আবী হাতিম, (৫) কবীর, (৬) আহকামুল কুরআন, (৭) আহমদী, (৮) তাফসীরে বাইযাবী, (৯) বয়ানুল হক্ব, (১০) মাআলিমুত্ তানযীল, (১১) তাফসীরে জালালাইন, (১২) বুখারী, (১৩) মুসলিম, (১৪) তিরমিযী, (১৫) বাইহাক্বী, (১৬) মিশকাত, (১৭) মুস্তাদরাকে হাকিম, (১৮) ত্ববারানী, (১৯) কামূস, (২০) ফতহুল বারী, (২১) উমদাতুল ক্বারী, (২২) মিরকাত, (২৩) আশয়াতুল লুময়াত, (২৪) লুময়াত, (২৫) তা’লীকুছ ছবীহ্, (২৬) শরহুত্ ত্বীবী, (২৭) মুযাহিরে হক্ব,(২৮) ফতহুল মুলহিম, (২৯) শরহে নববী, (৩০) আহমদ, (৩১) ইবনে আসাকির, (৩২) ইবনে মারদুয়া, (৩৩) তাক্বদীসু আবাইন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (৩৪) দুররুল মুখতার, (৩৫) ফিকহুল আকবর, (৩৬) শরহুশ্ শিফা, (৩৭) শুমুলুল ইসলাম লি উছূলির রসূলিল কিরাম, (৩৮) আকাইদে নিজামিয়া, (৩৯) কাছাছূল আম্বিয়া, (৪০) কাছাছূল কুরআন, (৪১) কুরআন কাহিনী, (৪২) কিতাবুদ্ দারাযিল, (৪৩) মাওয়াহিব-ই-লাদুন্নিয়া, (৪৪) শাওয়াহিদুন্ নবুওওয়াহ, (৪৫) কিছাছে আম্বিয়া, (৪৬) মাআতালিউন নূর, (৪৭) আল মুসতালিদ, (৪৮) বারাহিনে ক্বাতিয়া ইত্যাদি।}

মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম (শামীম)

রাঙ্গাদিয়া, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জানুয়ারী/২০০৩ঈঃ সংখ্যায় এক জিজ্ঞাসার সমাধানে বলা হয়েছে যে, “মীলাদের দ্বারা মুসলমানের আমলের পরিবেশ তৈরী হয় এটা ভিত্তিহীন কথা। ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই। রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছাহাবা, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো যুগেই এর অস্তিত্ব ছিলনা বরং পরবর্তীতে বিদয়াত রূপে ৬০৪ হিজরীতে এই মীলাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। মীলাদের মধ্যে মিষ্টান্ন ভোজের শোরগোল হয়। প্রচলিত মীলাদ যে বিদয়াত তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। যার পরিণাম ভ্রষ্টতা সবশেষে জাহান্নাম।”

এছাড়া একইভাবে মাসিক মদীনা ফেব্রুয়ারী/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় নিম্নলিখিত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্নঃ মিলাদ শরীফ পড়া যে বেদাত তার কিছু প্রমাণ জানতে চাই।

উত্তরঃ বেদাত বলা হয় ঐ সমস্ত আমলকে, যা এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় করা হয় কিন্তু কোরআন-হাদীসে সমর্থন পাওয়া যায় না। প্রচলিত মৌলুদ মানুষ এবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় পড়ে থাকে। অথচ এই আমলের কোন উল্লেখ কোরআন্-হাদীসে বা পরবর্তী অনুসরণীয় যুগে, কোন অনুসরণযোগ্য ব্যক্তির আমলের মধ্যে পাওয়া যায় না। এ কারণেই প্রচলিত মীলাদ বেদাতের পর্যায়ভুক্ত।

এখন আমার সুওয়াল হচ্ছে, মীলাদ সম্পর্কে উপরোক্ত পত্রিকাদ্বয়ে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ হয়েছে কিনা?  দয়া করে জানাবেন। জাওয়াবঃ মীলাদ শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ও মাসিক মদীনা পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে যা বলা  হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়নি বরং সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুল, গোমরাহীমূলক ও কুফরী হয়েছে।

প্রত্যেক মুসলমানের এ ধরণের আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে ইস্তিগ্ফার-তওবা করতে হবে। অন্যথায় কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হতে হবে।

তাদের বক্তব্যে তারা বলেছে, (১) আমলের পরিবেশ তৈরী হয়না। শুধু মিষ্টান্ন ভোজই হয়। (২) ইসলামে মীলাদের কোন অস্তিত্ব নেই এবং খইরুল কুরুনেও ছিলোনা। (৩) পরবর্তীতে বিদ্য়াতরূপে প্রকাশ পায়। কাজেই এটা বিদ্য়াত। (৪) বিদ্য়াতীরা ভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।

(ধারাবাহিক)

তাদের উত্থাপিত বক্তব্যের তৃতীয় বক্তব্যে তারা বলেছে, “পরবর্তীতে বিদ্য়াতরূপে প্রকাশ পায়। কাজেই এটা বিদ্য়াত।”

তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে। কারণ মীলাদ শরীফের আলোচ্য বিষয় হচ্ছেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর ছানা-ছিফত ও তাঁর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ।

অতএব, আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছিফত এবং ছলাত-সালাম পাঠের বিষয়টি কখনই বিদ্য়াত হতে পারেনা।

এ বিষয়গুলোকে যারা বিদ্য়াতরূপে আখ্যায়িত করবে তারা দু’শ্রেণীর মধ্যে কোন এক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হবে। (১) তারা আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাট্টা দুশমন হবে। (২) অথবা তারা ‘বিদ্য়াত’-এর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে নিতান্তই জাহিল ও অজ্ঞ হবে।

আমরা গত ১১৬তম সংখ্যায় প্রমাণ করেছি, মীলাদ  শরীফ খইরুল কুরুনে তো ছিলই, শুধু তাই নয় বরং স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতেও ছিল। যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতে ছিল তা কিরূপে বিদ্য়াত হতে পারে বা তাকে কিরূপে বিদ্য়াত বলা যেতে পারে?

তবে বর্তমানে যেভাবে সুনির্দিষ্ট তর্জ-তরীকায় বা তরতীবে মীলাদ মাহ্ফিল হয় তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতে ছিলনা সত্যিই, আর তা ৬০৪ হিজরীতে হয় এটাও ছহীহ্। কিন্তু মীলাদ মাহ্ফিলে যেসব বিষয় পাঠ করা হয় সবগুলোই তাঁর যামানাতে ছিল। যেমন, দ্বীনি তা’লীম রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানাতে ছিল। কিন্তু বর্তমান কালের মত বিল্ডিং, জামায়াত, ঘণ্টা, রুটিন, সিলেবাস, কিতাবভিত্তিক পড়াশুনা তাঁর যামানাতে ছিলনা।

পরবর্তীতে ব্যাপকতার কারণে সুষ্ঠু ও সুন্দর ইন্তিজামের জন্য এটা করা হয়েছে, যাতে একজন শিক্ষার্থী অল্প দিনের মধ্যে ও সহজে ইল্ম হাছিলের যোগ্যতা অর্জন করতে পারে।

একইভাবে মীলাদ শরীফ পাঠের নিয়ম করা হয়েছে বা তরতীব দেয়া হয়েছে এজন্য যে, যাতে কেউ অল্প সময়ের মধ্যে ও সংক্ষিপ্তভাবে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছানা-ছীফত করতে পারে।

বর্তমানে যে পদ্ধতিতে মাদ্রাসায় ইল্মে দ্বীন শিক্ষা দেয়া হয়, তা “খইরুল কুরুনের” অনেক পরে উদ্ভাবিত হওয়ার পরেও যদি তা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ সম্মত হতে পারে, তবে যার ছানা-ছিফত করা ও যার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশ ও সন্তুষ্টি পাওয়ার কারণ, তাঁর ছানা-ছিফত ও তাঁর প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করার জন্য মীলাদ শরীফের উক্ত পদ্ধতি কেন কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ সম্মত হবেনা? অবশ্যই এটা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ সম্মত।

কারণ কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব হবেনা যে, মীলাদ শরীফে যেসব আমল রয়েছে, তার একটিও শরীয়ত বিরোধী। বরং তার প্রত্যকটিই শরীয়ত তথা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস সম্মত।

যেমন- “মীলাদ শরীফের প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কেননা, কোন নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহ্মত, বরকত তথা আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের কারণ।           অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই নির্দেশ।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, মীলাদ শরীফে যেরূপ সম্মিলিতভাবে ছলাত পাঠ করা হয়, তার প্রমাণ কুরআন শরীফ অথবা হাদীস শরীফে রয়েছে কি? জবাব হলো, অবশ্যই হাদীস শরীফে তার প্রমাণ রয়েছে।

যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

قال النبى صلى الله عليه وسلم اذا جلس قوم يصلون على حفت بهم الملئكة من لدن اقدامهم الى عنان السماء بايديهم قراطيس الفضة واقلام الذهب يكتبون الصلوات على النبى صلى الله عليه وسلم ويقولون زيدوا زادكم الله.

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যখন কোন সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে বসে এবং সম্মিলিতভাবে আমার প্রতি ছলাত পাঠ করে, তখন ফেরেশ্তাগণ তাঁদের পা থেকে আকাশ পর্যন্ত বেষ্টন করে নেন। তাঁদের হাতে থাকে রূপার কাগজ ও সোনার কলম। যার দ্বারা তাঁরা ছলাতের ছওয়াব লিখতে থাকেন এবং বলেন, তোমরা আরো অধিক মাত্রায় ছলাত পাঠ কর, আল্লাহ্ পাক তোমাদের মর্যাদা উন্নত করবেন।” (দুররুল মুনাজ্জাম, কাশফুল গুম্মাহ্)

عن ابن عمر رضى الله عنهما قال النبى صلى الله عليه وسلم زبنوا مجالسكم بالصلوة على فان صلاتكم على نور لكم يوم القيامة.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মজলিসকে আমার প্রতি ছলাত পাঠের দ্বারা সুসজ্জিত কর। কারণ তোমাদের ছলাত পাঠ ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের জন্যে নূরে পরিণত হবে।” (দায়লামী)

হাদীস শরীফের উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সম্মিলিতভাবে মজলিসে ছলাত পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ। শরীয়ত সম্মত তো অবশ্যই। তাই মীলাদ শরীফের মধ্যে সম্মিলিতভাবে ছলাত পাঠ করা হয়।

সাথে সাথে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে শরীয়ত সম্মত সুন্দর সুন্দর কাছীদা পাঠ করা হয়। কারণ স্বয়ং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শানে কাছীদা পাঠ করতেন।

যেমন, বিশিষ্ট ছাহাবী ও বিখ্যাত কবি, হযরত হাস্সান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে তাঁর স্বরচিত কাছীদা পাঠ করে শুনানোর জন্য স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ মিম্বর মুবারকের পাশে তাঁর জন্যে আরেকটি মিম্বর স্থাপন করে দিয়েছিলেন, যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত হাস্সান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাছীদাসমূহ পাঠ করতেন।

কাজেই মীলাদ শরীফে যে কাছীদা পাঠ করা হয় তা সুন্নতে ছাহাবা। শরীয়তসম্মত তো বটেই। অতঃপর “তাওয়াল্লুদ শরীফ” পাঠ করা হয়। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “তাওয়াল্লুদ শরীফ বা মুবারক জন্ম বৃত্তান্ত ও জীবনী আলোচনা করা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফেরই নির্দেশ।

যেমন, কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

واذكروا نعمت الله عليكم.

অর্থঃ- “তোমাদেরকে আল্লাহ্ পাক-এর যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তার আলোচনা কর।” (সূরা আলে ইমরান/১০৩) অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই হচ্ছেন সে উল্লিখিত নিয়ামত।

মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাওয়াল্লুদ শরীফ বা মুবারক জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করা শরীয়ত সম্মত তো অবশ্যই, সাথে সাথে অফুরন্ত রহ্মত, বরকত ও সন্তুষ্টি লাভের কারণ। তাই মীলাদ শরীফে “তাওয়াল্লুদ শরীফ” পাঠ করা হয়।           এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, তিনি একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবু আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ঘরে গেলেন। তিনি সেখানে দেখতে পেলেন যে, হযরত আবু আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর নিজ সন্তানাদি ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে একত্রিত করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র বিলাদত শরীফ (জন্ম বৃত্তান্ত)-এর আলোচনা করছেন। এটা দেখে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত খুশী হলেন এবং বললেন, “হে আমের! নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক তোমার জন্য তাঁর রহ্মতের দ্বার উন্মূক্ত করেছেন এবং ফেরেশ্তাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। আর যারা তোমার ন্যায় এরূপ আমল করবে, তারাও তোমার ন্যায় ছওয়াব ও নাযাত লাভ করবে।” (কিতাবুত্ তানবীর ফী মাওলুদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তফা)।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে, একদিন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সেখানকার সকল লোককে তাঁর নিজ ঘরে একত্রিত করে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র (বিলাদত) জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করেন, যা শুনে উপস্থিত সকলেই আনন্দচিত্তে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর ছলাত ও সালাম পাঠ করেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, حلت لكم شفاعتى. অর্থাৎ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। (মাওলুদুল কবীর, দুররুল মুনাজ্জাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলুদিল মুস্তফা)

অতঃপর ক্বিয়াম করা হয় বা দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা হয়। ক্বিয়ামের লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- দণ্ডায়মান হওয়া। আর পারিভাষিক বা প্রচলিত অর্থে ক্বিয়াম শব্দের অর্থ হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় বিলাদত শরীফ বা জন্ম বৃত্তান্ত শ্রবণ করতঃ দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা।

মূলতঃ ক্বিয়াম করা হয় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি তা’যীম প্রদর্শনার্থে ও আদব রক্ষার্থে। কারণ কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অসংখ্য জায়গায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা’যীম-তাক্রীম করার ও তাঁর প্রতি আদব রক্ষা করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যেমন, আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

وتعزروه وتوقروه.

অর্থঃ- “তোমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিদমত কর ও তা’যীম কর।”  (সূরা ফাত্হ/৯)

এ প্রসঙ্গে আশিকে রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় “দুররুল মুনাজ্জাম” কিতাবে লিখেন,

ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনার সময় তাঁর সম্মানার্থে বা তা’যীম-তাক্রীমের জন্যেই ক্বিয়াম করা হয়।” (আল উসীলাহ্ পৃঃ৫৮)

“ইক্বদুল জাওয়াহির” নামক কিতাবের ২৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد استحسن القيام عند ذكر ولادته الشريفة صلى الله عليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.

অর্থঃ- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনাকালে ক্বিয়াম করাকে বিচক্ষণ ইমামগণ মুস্তাহ্সান বা মুস্তাহাব বলেছেন।”

বাংলার মূলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীনের তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফের প্রচার-প্রসারকারী, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় “মুলাখ্খাছ” কিতাবে উল্লেখ করেন,

قال علامة السيوطى اى نفع احسن من عمل المولد والقيام وانهم يهيجان محبة النبى صلى الله عظمته وجلالته فى قلب فاعله.

অর্থঃ- “আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মীলাদ ও ক্বিয়াম অপেক্ষা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এর দ্বারা মীলাদ ক্বিয়ামকারীর হৃদয়ে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।”

“ইশবাউল কালাম” নামক কিতাবের ৫৪নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,

قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعة على استحسان القيام المذكور وقال عليه السلام لاتجتمع امتى على الضلالة.

অর্থঃ- “উম্মতে মুহম্মদীর আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিম মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম মুস্তাহ্সান হওয়ার ব্যাপারে ইজ্মা বা ঐক্যমত পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মত (আলিমগণ) কখনোই গোমরাহীর উপর একমত হবেনা।”

মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেবসহ সকল উলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আ’যম, হযরতুল আল্লামা, হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “হাফতে মাসায়েল  কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

مولود شریف کو ذر یعہ برکات سمجھ کر در سال منعقد کرتا ھوں اور قیا م کے وقت بے حد لطف ولذت پاتا ھوں.

অর্থঃ- “মীলাদ শরীফের মাহ্ফিলকে বরকত লাভের উসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফের মজলিস করি এবং মীলাদ মাহ্ফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।”

বড় কাটারা ও লালবাগ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আ’যম, খাদিমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী ছাহেব ক্বিয়াম সম্পর্কে তাঁর “তাসাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, “মীলাদ শরীফের মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”

“রদ্দুল মোহ্তার ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, ক্বিয়াম তিন প্রকার- (১) ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী, যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, لا تقوموا كما يقوم الاعاجم.

অর্থাৎ “তোমরা আজমীদের মত (মাথা নীচু করে নমস্কারের ছূরতে) দাঁড়িওনা।” এরূপ ক্বিয়াম শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয। (২) ক্বিয়ামে হুব্বী, যেমন- হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুজরা শরীফে আসলে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে যেতেন, একে ক্বিয়ামে হুব্বী বলে। (৩) ক্বিয়ামে তা’যীমী, যেমন- হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীমের জন্যে দাঁড়াতেন। মূলতঃ ক্বিয়ামের পক্ষেও অসংখ্য হাদীস শরীফ রয়েছে।

যেমন, হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,

عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجلس معنا فى المسجد يحدثنا فاذا قام قمنا قياما حتى نراه قد دخل بعض بيوت ازواجه.

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসে আমাদেরকে নছীহত করছিলেন। যখন তিনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন, আমরাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এমনকি তাঁর স্ত্রীদের ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়েই থাকলাম। (বাইহাক্বী ফী শুয়া’বিল ঈমান, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ্ ছবীহ্)

عن عائشة رضى الله تعالى عنها كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذ يدها فقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت له فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.

অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং হাতে বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট যেতেন, তখন তিনি দাঁড়িয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারক বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। (আবু দাউদ, মিশকাত, মিরকাত, বযলুল মাজহুদ, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী)

অন্য হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত মুহম্মদ বিন হিলাল স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘর হতে বের হতেন, তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ না করতেন (আমরা দাঁড়িয়ে থাকতাম)। এ হাদীস শরীফখানা বায্যার বর্ণনা করেছেন, যার রাবী অত্যন্ত শক্তিশালী। (ফিক্বহুস্ সুনানে ওয়াল আছার)

“বুখারী শরীফের টীকা (হাশিয়া) কুসতুলানী-এর ৯ম খণ্ড ১২৫ পৃষ্ঠায়” ছহীহ্ সনদে “হযরত উলামা ইবনে শারীক হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন- আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তা’যীম-এর জন্যে দাঁড়িয়ে তাঁর হস্ত মুবারকদ্বয়ে চুম্বন দিলাম।”

অতএব, উল্লিখিত হাদীস শরীফসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী শরীয়তে হারাম ও নাজায়িয। আর ক্বিয়ামে হুব্বী ও তা’যীমী শরীয়তে জায়িয ও সুন্নত। আর তাই মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা হয় অর্থাৎ দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা হয়; এটি হচ্ছে ক্বিয়ামে তা’যিমী।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, শরীয়তের কোথাও দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে, এরূপ একটি প্রমাণও কেউ পেশ করতে পারবেনা।

অতঃপর মীলাদ শরীফ পাঠ। সব শেষে মুনাজাত করা হয়। হাদীস শরীফে রয়েছে, الدعاء مخ العبادة. অর্থাৎ “দোয়া বা মুনাজাত হচ্ছে, ইবাদতের মূল বা মগজ।” তাই মীলাদ শরীফ শেষে মুনাজাত করা হয়।           সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয় যে, মীলাদ শরীফ, মীলাদ শরীফের পদ্ধতি এবং মীলাদ শরীফে যা যা করা হয়, সবই কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফসম্মত।

অতএব প্রমাণিত হলো যে, সকলে একত্রিত হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র বিলাদতের আলোচনা করা, তাঁর প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠ করা সুন্নতে ছাহাবা।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين المهديين.

অর্থঃ- “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার খুলাফা-ই-রাশিদীন তথা হিদায়েতপ্রাপ্ত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নত পালন করা আবশ্যক।” (মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ্ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)

আর তাই দেখা যায়, পূর্ববর্তী অনেক ইমাম-মুজ্তাহিদগণ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামকে জায়িয বলেছেন এবং সুন্নত আদায় করার লক্ষ্যে নিজে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের মজলিস করতেন।

যেমন, বিশিষ্ট মুজ্তাহিদ, ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে মীলাদ-ক্বিয়াম করতেন এবং এটা জায়িয বলেছেন। হযরত শায়খ আবুল খাত্তাব উমর ইবনে ক্বালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, হাফিজ হযরত ইবনে হাজর আসকালানী মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুফাস্সিরীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম জায়িয হওয়া সম্পর্কে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করেন।

তাছাড়া যিনি সর্ব প্রথম পাক-ভারত উপমহাদেশে হাদীস শরীফের প্রচার-প্রসার করেন অর্থাৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেবের পীর, শায়খুল আরব ওয়াল আ’যম, হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর হিদায়েতের কাজ করনেওয়ালা, হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুযাদ্দিদে যামান, হযরত আবু বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফিযে হাদীস, আল্লামা রুহুল আমীন বশীরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ন্যায় সর্বজনস্বীকৃত, অনুসরণীয় আলিম ও বুযূর্গগণের প্রত্যেকেই মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম করতেন এবং তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে লিখেছেন যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান, জায়িয তো বটেই।

মূলতঃ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুহব্বত ও সন্তুষ্টি হাছিলের এক বিরাট মাধ্যম, যা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সুন্নত এবং অশেষ ফযীলত, বরকত, রহ্মত; ও নাযাতের কারণ।

এ প্রসঙ্গে পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মীলাদ শরীফ পড়ার কারণে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের প্রতি আমার শাফায়াত ওয়াজিব।”

উল্লেখ থাকে যে, মীলাদ শরীফে পঠিত কাছীদার অনুরূপ কাছীদা পড়ার জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হাসসান ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মসজিদে নববীতে আলাদা মিম্বর তৈরী করে দিয়েছিলেন। হযরত হাসসান ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সেখানে কাছীদা পাঠ করতেন।

অতএব, যারা মীলাদ শরীফ পড়েন, তাঁরাও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করার কারণে সম্মানিত ও ফযীলতপ্রাপ্ত। তাই তাঁদের পিছনে নামায পড়া এবং তাঁদেরকে ইজ্জত সম্মান ও সাহায্য সহযোগিতা করা জায়িয তো বটেই বরং তা আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন,

تعاونوا على البر والتقوى.

অর্থঃ- “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে নেকী ও পরহিযগারীর মধ্যে সাহায্য কর।” (সূরা মায়িদা/২)

উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম স্বয়ং আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানা থেকেই হয়ে আসছে। যদিও তার বর্তমান তরতীব পরে দেয়া হয়েছে। সেজন্য মুহাক্কিক-মুদাক্কিক, ইমাম-মুজতাহিদগণ ফতওয়া দিয়েছেন, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান। তাহলে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামকে কি করে বিদ্য়াত বলা যেতে পারে?

প্রকৃতপক্ষে যারা মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামকে বিদ্য়াত বলে তারাই বিদ্য়াতী ও গোমরাহ্ ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)

সেলিম আহ্মদ আসাদগেট, ঢাকা।

সুওয়ালঃ মাসিক রাহমানী পয়গাম মার্চ/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসার জবাব বিভাগে ১২৪৪ নং জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, “কোন মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন খতম, ইছালে ছাওয়াব ও মাগফিরাতের দু’আ করে এর জন্য কোন প্রকার বিনিময় নেয়া বা দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়িয নেই ……।”

আর হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার ফেব্রুয়ারী/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা সমাধান বিভাগে ৩৯২৩নং জিজ্ঞাসার সমাধানে বলা হয়েছে, “…. কুরআন খতমে টাকা-পয়সার আদান প্রদান করা যাবে না …….।”

এখন আমার সুওয়াল হলো, মাসিক রাহমানী পয়গাম ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকাদ্বয়ের বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? দলীল-আদিল্লাহ্সহ বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন শরীফ খতম, ঈছালে ছাওয়াব এবং মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে বিনিময় নেয়া-দেয়া সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকাদ্বয়ের উক্ত বক্তব্য অশুদ্ধ ও জিহালতপূর্ণ হয়েছে যা ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত।

কারণ, উক্ত মাসয়ালাটি সম্পর্কে উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন এবং উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের যদিও ইখতিলাফ রয়েছে।

তবে উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়াটিই হলো ফতওয়াগ্রাহ্য মত। আর ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত ফতওয়া দেয়া হারাম ও নাজায়িয। অথচ রাহমানী পয়গাম, হাটহাজারী এবং তাদের সমজাতীয় গোষ্ঠীরা প্রায়শঃই ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত ফতওয়া দিয়ে শক্ত গুনাহ্র কাজ করছে।

যেমন, উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণের ফতওয়া সম্পর্কে বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর তাফসীরে “রুহুল বয়ান” কিতাবের ২য় খণ্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,

وافتى المتاخرون بصحة الاجرة للاذان والاقامة والتذكير والتدريس والحج والغزو وتعليم القران والفقه وقرأتهما لفتور الرغبات اليوم.

অর্থঃ- “উলামায়ে মুতাআখ্খিরীনগণ বর্তমান কালে দ্বীনের খিদমতে আগ্রহ শিথিল হওয়ার কারণে আযান-ইক্বামত, ওয়াজ-নছীহত, শিক্ষা প্রদান, হজ্জ্ব, জ্বিহাদ, কুরআন শরীফ, ফিক্বাহ্ শিক্ষা দিয়ে এবং তা পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ছহীহ্ অর্থাৎ জায়িয ফতওয়া দিয়েছেন।”

হানাফী ফিক্বাহ্র প্রসিদ্ধ কিতাব “জামিউর রুমূয” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ويفتى اليوم اى يفتى المتأخرون بصحتها اى الاجارة لهذا العبادات.

অর্থঃ- “আর বর্তমানে ফতওয়া হলো অর্থাৎ উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন (পরবর্তী) আলিমগণ ফতওয়া দেন যে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াতসহ উল্লিখিত সকল প্রকার ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও ছহীহ্।”

আর উলামায়ে মুতাআখ্খিরীন-এর মত প্রসঙ্গে “বাহ্রুর রায়িক” কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে,

ان المفتى به جواز الاخذ على القرائة.

অর্থঃ- “কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত গ্রহণ করা জায়িয, এটা ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اختلفوا فى الاستيجار على قرائة القران قال بعضهم يجوز وهو المختار.

অর্থঃ- “কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, এটা অর্থাৎ কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয।

মূলতঃ এটাই (অর্থাৎ শেষোক্তটাই) ফতওয়াগ্রাহ্য বা গ্রহণযোগ্য মত। অনুরূপ সিরাজুল ওহ্হাজ কিতাবে উল্লেখ আছে।”

হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্র কিতাব “জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্” কিতাবের পুরাতন ছাপায় উল্লেখ আছে,

اختلفوا فى الاستيجار على قرائة القران قال بعضهم لايجوز وقال بعضهم يجوز وهو المختار.

অর্থঃ- “আলিমগণ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে ইখ্তিলাফ বা মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, ওটা জায়িয নয়, আর কেউ কেউ বলেন জায়িয, এমতটিই (অর্থাৎ শেষোক্তটিই) মনোনীত বা ফতওয়াগ্রাহ্য মত।”

আর ফিক্বাহ্ শাস্ত্রের উছূল বা নিয়ম হলো, ইখতিলাফ বা মতভেদযুক্ত মাসয়ালায় যে মতটাকে – وبه يفتى – وهوالمختار – عليه الفتاوى. ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ترجيح. বা প্রাধান্য দেয়া হবে, সে মতটিই গ্রহণযোগ্য হবে। প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম।

এ প্রসঙ্গে “উকুদে রস্মুল মুফ্তী” কিতাবের ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ابن حجر المكى قال لايحل لهما الحكم والافتاء بغير الراجح لانه اتباع للهواء وهو حرام اجماعا.

অর্থঃ- “মুহাক্কিক ইবনে হাজর মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইখ্তিলাফযুক্ত মাসয়ালায় প্রাধান্যপ্রাপ্ত মাসয়ালার বিপরীত ফতওয়া দেয়া বা আমল করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা এটা নফসের অনুসরণ।” এটা “ফতওয়ায় কুবরাতে”ও  উল্লেখ আছে।          তবে তাঁরা উছূল নির্ধারণ করেছেন যে, সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করার শর্ত সাপেক্ষে কুরআন শরীফ খতম করা সহ উল্লিখিত সকল ইবাদতের বিনিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয বা হালাল। যা বিখ্যাত মুফাস্সির, রঈসূল মুহাদ্দিসীন, বাহ্রুল উলুম, জামিউল উছূলিয়্যীন, ফক্বীহুল উম্মত শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “তাফসীরে আযীযীতে” সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন।

দ্বিতীয়তঃ মৃত ব্যক্তির জন্য ঈছালে ছাওয়াব করে অথবা মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে বিনিময় নেয়া-দেয়াও জায়িয, হালাল এবং শরীয়ত সম্মত।

যেমন, এ প্রসঙ্গে ফতওয়ার বিখ্যাত কিতাব “বাহ্জাতুল ফতওয়াতে” উল্লেখ আছে যে,

زید نے مسجد کے امام کو ایک غروش اس واسطے دیا کہ وہ عشاء کے بعد  سورہ ملک پرھکر زید کے مردون کی  روح پر بخشے درست ھوگا یا نھیں؟ جواب= درست ھوگا.

অর্থঃ- “যায়দ মসজিদের ইমাম ছাহেবকে এই হেতু এক গোরশ প্রদান করলো যে, সে (অর্থাৎ ইমাম ছাহেব) ইশার নামাযের পর সূরায়ে মূল্ক পাঠ করে যায়দের মৃত আত্মীয়-স্বজনের রূহের উপর ছাওয়াব পৌঁছিয়ে দিবে, এটা জায়িয হবে কিনা?

জাওয়াবঃ- জায়িয হবে।”

ফিক্বাহ্র মশহুর কিতাব “হাদীক্বায়ে নদিয়াহ্তে” আরো উল্লেখ আছে যে,

من تلا القران او ذكر الله تعالى لوجه الله واخذ شيأ من الدنيا وجعل عبادته هذه للمعطى جاز- ووجهه ان الدراهم صدقة من المعطى واخذ الصدقة لايمنع الثواب.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকির ইত্যাদি আল্লাহ্র ওয়াস্তে করে এবং কিছু টাকা-পয়সার বিনিময়ে কাউকে উক্ত ইবাদতগুলো প্রদান করে, তবে এটা জায়িয হবে। তার কারণ এই যে, টাকা-পয়সা দাতার পক্ষ হতে দান। দান গ্রহণ করাতে ছওয়াবের ক্ষতি হয়না।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন শরীফ খতম করে ঈছালে ছাওয়াব করে বা মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে বিনিময় নেয়া-দেয়া সম্পর্কে রাহমানী পয়গাম ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকার জাহিল মৌলভী এবং তাদের সমগোত্রীয়দের বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল যা ফতওয়াগ্রাহ্য মতের বিপরীত হওয়ার কারণে সেটা পরিত্যাজ্য।

(বিঃদ্রঃ কুরআন শরীফ খতম করে বিনিময় দেয়া এবং গ্রহণ করা জায়িয’ এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ২৩ ও ২৪তম সংখ্যার ফতওয়া বিভাগ পড়ুন এবং বিশেষ করে ৩৬, ৪৭, ৫৫, ৬৬, ৬৯, ৭১, ৭৫, ৭৭, ৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯০, ৯২ ও ১১১তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে মাসিক মদীনা, মাসিক রাহমানী পয়গাম এবং হাটহাজারীর অখ্যাত পত্রিকার ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। এবার ১০ম বারের মত অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গামের এবং ৮ম বারের মতো হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত পত্রিকার ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো। এছাড়াও ১৩, ১৪, ২২, ২৫, ২৬, ৩০, ৩৬, ৪৭, ৫২, ৫৩, ৫৭ এবং ৫৮ থেকে ৬৯তম সংখ্যার মতামত বিভাগের উজরত সম্পর্কে তথাকথিত শায়খূল হাদীসের “ভণ্ডামী ফাঁস” মতামতটি পাঠ করুন।)

{দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে রুহুল বয়ান, (২) তাফসীরে ইকলীল, (৩) তাফসীরে আযীযী, (৪) আলমগীরী, (৫) তাতারখানিয়া, (৬) দুররুল মুখতার, (৭) আশবাহ ওয়ান্ নাজায়ের, (৮) জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্ (৯) বাহরুর রায়িক, (১০) তাহতাবী, (১১) বাহজাতুল ফতওয়া, (১২) কাশফুল গুম্মাহ, (১৩) ফতওয়ায়ে আলী আফেন্দী, (১৪) ফতওয়ায়ে ফয়জী, (১৫) ফতওয়ায়ে আবূ সাউদ ইমাদী, (১৬) ফতওয়ায়ে আব্দুর রহীম আফেন্দী, (১৭) মজমূয়ায়ে ফতওয়ায়ে আব্দুল হাই, (১৮) হাদিক্বায়ে নাদিক্বায়ে নাদিয়াহ, (১৯) মাদারেজুন নবুওয়াত, (২০) রোবউল ইফাদাহ, (২১) হাশিয়ায়ে মিসকীন, (২২) জামিউর রুমূজ (২৩) শিফাউল আলীল, (২৪) ইয়াতীমাতুদ্দাহর লিল ইমাম আলাউদ্দীন হানাফী ইত্যাদি।}

মাওলানা মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান

মাওলানা মুহম্মদ মাছূম বিল্লাহ্

মুহম্মদ আসাদুর রহমান, মুহম্মদ মাইজুর রহমান

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম এই তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে প্রদত্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুহাক্কিক-মুদাক্কিক ও হক্কানী উলামায়ে কিরামগণের ফতওয়া মুতাবিক জানতে পারলাম যে, “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো, ঘরে রাখা সর্বাবস্থায় হারাম।”

অথচ রেযাখানী মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ী সংখ্যায় ছবি সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর ফতওয়া প্রকাশ করেছে। যা কিনা মানুষের ঈমান-আমল বিনষ্ট হওয়ার কারণ। রেযাখানীদের ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যের যে বিষয়গুলো আপত্তিকর সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

(ক) রেযাখানীরা ছবি তোলাকে বৈধ বলেছে; কিন্তু দলীল হিসেবে পেশ করেছে ঘরে ছবি রাখা সম্পর্কিত হাদীসসমূহকে।

(খ) .. কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।

(গ) পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এবং হাম্বলী, শাফেয়ী, মালেকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (ঘ) হুজুর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুরুর দিকে ছবি তৈরী করা ও সংরক্ষণ করাকে নিষেধ করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

(ঙ) ছবি হারাম হওয়ার মূলে হলো গায়রুল্লাহ্র সম্মান ও ইবাদত।

(চ) প্রত্যেক যুগের ফক্বীহ্, মুফতী, কাজী ও আলিমগণ যুগের চাহিদা অনুযায়ী ফতওয়া দিয়েছেন এবং দেয়া উচিত।          (ছ) সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বিশেষ প্রয়োজনে ছবি তোলা বৈধ যা যুগের চাহিদাও।       (জ) প্রয়োজনীয় রেকর্ডের জন্য ফাইলবন্দি ছবিসমূহ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট জ্ঞান ও ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য জানার নিমিত্তে সরকারী-বেসরকারী যাদুঘর বা বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্বের নানা মনীষীগণের ছবি সংরক্ষণ/ধারণ করে রাখা বিশেষ প্রয়োজনে মাকরূহ্ হবেনা। এছাড়াও আরো বহু আপত্তিকর বিষয় তাদের উক্ত ছবি সম্পর্কিত বক্তব্যে স্থান পেয়েছে।            কুরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তাদের উল্লিখিত আপত্তিকর বক্তব্যগুলোর শরয়ী ফায়সালা কামনা করি। জাওয়াবঃ  হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম)

উল্লিখিত হাদীস শরীফের পূর্ণ মিছদাক বা নমুনা হচ্ছে রেযাখানীরা। তারা ছবির ব্যাপারে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে যা কিতাবে দেখা তো দূরের কথা কেউ কোনদিন শুনেওনি। মূলতঃ রেযাখানীরা নিজেদেরকৃত বদ আমলকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই মনগড়াভাবে ছবিকে জায়িয করার অপচেষ্টা করেছে।

 (ধারাবাহিক)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব- (খ)

রেযাখানীরা তাদের আমদানীকৃত পীরদের ও নিজেদের ছবি তোলার ন্যায় হারাম কাজটিকে হালাল করার উদ্দেশ্যে মাত্র দু’পৃষ্ঠার একটি বিভ্রান্তিকর রচনায় কত যে মিথ্যাচারিতা, প্রতারণা, জালিয়াতী ও ঠগবাজীর আশ্রয় নিয়েছে তার বহু প্রমাণ আপনারা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছেন।

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা লিখেছে, “কতেক উলামা যেসব ছবির শরীর ও ছায়া নেই সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।”

ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন উভয়

প্রকার প্রাণীর ছবিই হারাম

 অথচ তাদের উক্ত বক্তব্য যে ডাহা মিথ্যা ও দলীলবিহীন তা ইতোপূর্বের দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে। আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, হাম্বলী, শাফিয়ী, মালিকী ও হানাফী চার মাযহাবেই ‘ছায়াযুক্ত’ হোক বা ‘ছায়াহীন’ হোক উভয় প্রকার পাণীর ছবিই অঙ্কন করা এবং তা ঘরে রাখা হারাম। যা ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, শরহে মুসলিম ও অন্যান্য আরো ব্যাখ্যাগ্রন্থের বর্ণনা দ্বারা ছাবিত হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত রেযাখানী গোষ্ঠী তাদের আমদানীকৃত পীর তৈয়ব শাহ, তাহের শাহকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের মূল গুরু রেযাখাঁর বিরুদ্ধেই ফতওয়া দিলো

শুধু তাই নয়, বিভ্রান্ত রেযাখানী গোষ্ঠী যাকে নবীর চেয়ে বেশী সম্মান দিতে চায় (নাউযুবিল্লাহ্) তাদের সেই গুরু রেযাখাঁ নিজেই তার ‘রেজভীয়া” কিতাবে ‘ছায়াযুক্ত ও ছায়াহীন’ উভয়প্রকার ছবিকেই হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।

যেমন, “রেজভীয়া” কিতাবের ১০ম খণ্ডের ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صور تگری جاذدار مطلقا حرام است سایہ دار باشد یا بے  سا یہ دستی  باشد یا عکسی در زمان برکت نشان سید الانس والجن  صلی اللہ علیہ وسلم ھر دوگانہ تصویر  می ساختند  ہم بجسم وہم مسطح ودر  احادیث از مطلق صورتگری نہی اکید وہر صنعت اوو عید شدید بے تخصیص وتقیید ورود یافت بس جمیع اقسا م او  زیر منع در امد تصویر بے سا ہہ را روا داشتن مذھب بعض روافض است.

অর্থঃ – “সাধারণভাবে প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম ‘ছায়াযুক্ত’ হোক অথবা ‘ছায়াহীন’, হাতে হোক অথবা ক্যামেরায়। সাইয়্যিদুল ইন্স ওয়াল জ্বিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় যামানায় ছায়াযুক্ত অর্থাৎ মুজাস্সাম এবং ছায়াহীন অর্থাৎ গায়রে মুজাস্সাম উভয় প্রকার ছবিরই প্রচলন ছিলো। আর হাদীস শরীফে আমভাবে (সকল প্রকার) ছবির ব্যাপারেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে এবং তা তৈরী করার কারণে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সকল প্রকার ছবিই নিষেধের আওতায় আসবে। রাফিযী বা শিয়াদের কোন একটি দল ‘ছায়াহীন’ বা ‘শরীরবিহীন’ ছবিকে জায়িয বলে থাকে।”        “রেজভীয়ার” উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, রেযাখাঁঁ আমভাবে সকল প্রকার ছবিকেই হারাম বলে রায় দিয়েছে। অর্থাৎ রেযাখাঁর মতেও ‘ছায়াযুক্ত’ অর্থাৎ ‘মূর্তি’ হোক অথবা ‘ছায়াহীন’ অর্থাৎ কাগজ বা কাপড় ইত্যাদির উপর অঙ্কিত ছবি হোক উভয় প্রকার ছবিই হারাম।

রেযাখানীদের মতে তাদের মূল গুরু

রেযাখাঁই মূর্খ ও সীমালঙ্ঘনকারী

রেযাখানীরা তাদের ছবি সম্পর্কিত উক্ত কলঙ্কিত রচনায় লিখেছে, “ … জরুরী বিষয় ও ইমামগণের উপরোক্ত উদ্বৃতিসমূহ পর্যালোচনা না করে ঢালাওভাবে ছবির ব্যাপারে সাধারণভাবে বা কারো প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষী মনোভাব চরিতার্থ করার জন্যে হারাম ও গুনাহে কবীরা ইত্যাদি ফতওয়া প্রদান করা সীমালঙ্ঘন ও মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়।”

মূলতঃ রেযাখানীরা তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণ করলো যে, তাদের গুরু রেযাখাঁ একজন মূর্খ ও সীমালঙ্ঘনকারী। কেননা, রেযা খা তার ‘রেজভীয়া’ কিতাবে আম বা ঢালাওভাবে সর্বপ্রকার ছবি তোলাকে হারাম ও কবীরা গুনাহ্ বলে ফতওয়া দিয়েছে। এখন রেযাখানীরাই বলুক “ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন” উভয়প্রকার ছবিই হারাম একথা সঠিক? না ‘তাদের গুরু রেযাখাঁ মূর্খ ও সীমালঙ্ঘনকারী” একথা সঠিক?

বস্তুতঃ রেযাখানী গোষ্ঠী তৈয়ব শাহ ও তাহের শাহকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের মূল গুরু রেযাখাঁকেই মূর্খ ও সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে সাব্যস্ত করলো।

রেযাখার ফতওয়া মুতাবিক রেযাখানী গোষ্ঠী রাফিযী ও শিয়া মাযহাবভুক্ত

রেযাখানী গোষ্ঠী তাদের মুখপত্র নভেম্বর/২০০১ ঈসায়ীতে ছবি সম্পর্কিত কলঙ্কিত রচনায় এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, “মূর্তি তৈরী করা হারাম। তবে ছায়াহীন বা শরীরবিহীন অর্থাৎ কাগজ, কাপড় ইত্যাদির উপর অঙ্কিত ছবি জায়িয।”

অথচ তাদের গুরু রেযাখাঁ “রেজভীয়া” কিতাবে উভয় প্রকার ছবি তৈরী করাকেই হারাম বলেছে। শুধু তাই নয় সে আরো লিখেছে,

تصر یر بے سایہ دا روا راشتن مذھب بعض روافض است.

অর্থাৎ- “রাফিযী বা শিয়া ফিরক্বার লোকেরাই ‘ছায়াহীন বা শরীরবিহীন’ ছবিকে জায়িয বলে থাকে।

অতএব, রেযাখার উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, বর্তমান রেযাখানী গোষ্ঠী রাফিযী বা শিয়া। কেননা, রাফিযীরাই ‘ছায়াহীন’ ছবিকে জায়িয বলে থাকে। কাজেই রেযাখানীরা যেহেতু ছায়াহীন ছবিকে জায়িয বলেছে তাই রেযাখাঁর ফতওয়া মুতাবিক তারা শিয়া ও রাফিযী বলে সাব্যস্ত হয়েছে।

মূলকথা হলো, রেযাখানীরা ‘ফতহুল বারী’ থেকে ‘ছায়াযুক্ত’ ও ‘ছায়াহীন’ ছবি সম্পর্কিত ইমাম নববীর বরাতে যে মতটি উল্লেখ করেছে তা আসলে ইমাম নববীর নিজস্ব মত নয়। বরং ইমাম নববীর মতে উক্ত মতটি একটি বাতিল মাযহাবের মত। তিনি আলোচনা প্রসঙ্গে তা বর্ণনা করেছেন মাত্র।

আর আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে, ‘ছায়াযুক্ত’ বা ‘ছায়াহীন’ উভয়প্রকার প্রাণীর ছবিই তৈরী করা ও ঘরে রাখা হারাম। এটাই ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।

কাজেই রেযাখানীরা যে লিখেছে, “…. কতেক উলামা যেসব ‘ছবির শরীর ও ছায়া নেই’ সেসব ছবিকে বৈধ বলেছেন।” তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও দলীলবিহীন প্রমাণিত হলো।

প্রাণীর ছবি সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত রেযাখানীদের আপত্তিকর ও প্রতারণামূলক বক্তব্য সমূহের খণ্ডন মূলক জবাব- (গ)

শুধু তাই নয় রেযাখানীরা নিজেদের হারাম কাজগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে হাম্বলী, শাফিয়ী, মালিকী এমনকি হানাফী মাযহাবের কতিপয় বিশ্ববরেণ্য, অনুসরণীয় ও জগতখ্যাত ইমাম-মুজতাহিদের প্রতি ‘নাজায়িযকে জায়িয করার’ মিথ্যা তোহ্মত দিয়েছে।

যেমন, তারা লিখেছে, “….. হাম্বলীরা মুতলাক্ব বা সাধারণভাবে শরীরবিহীন (গায়রে মুজাস্সাম) ছবি অঙ্কনকে বৈধ বলে মত পোষণ করেন। আর মালিকীদের মধ্যে বিশেষতঃ কুরতুবী, শাফিয়ীদের মধ্যে আল্লামা ইবনে হাজর আস্কালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরীরবিহীন ছবির ব্যাপারে বৈধতার পক্ষে রায় দেন।  আর আমাদের হানাফীদের মধ্যে বিশেষতঃ আল্লামা বদরুদ্দীন আইন রহমতুল্লাহি আলাইহিও শরীরবিহীন ছবিকে প্রয়োজনবশতঃ বৈধ বলে মত পোষণ করেন। …”

অর্থাৎ তাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ হাম্বলী, শাফিয়ী, মালিকী এমনকি হানাফীদেরও কেউ কেউ নাকি (গায়রে মুজাস্সাম) শরীরবিহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্)

বস্তুতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য চার মাযহাবের অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যা তোহ্মত বৈ কিছুই নয়। কারণ, রেযাখানীরা এরূপ একখানা দলীলও পেশ করতে পারবে না যেখানে উল্লেখ আছে যে, চার মাযহাবের কেউ গায়রে মুজাস্সাম বা শরীরবিহীন অর্থাৎ ছায়াহীন ছবিকে বৈধ বলেছেন। শুধু তাই নয়, তারা তাদের ছবি সম্পর্কিত কলঙ্কিত রচনাতেও এ সম্পর্কিত কোন দলীল উল্লেখ করতে সক্ষম হয়নি।

পক্ষান্তরে আমরা বহু দলীল পেশ করতে পারবো যে, আমাদের হানাফী মাযহাবসহ অন্যান্য মাযহাবের মতে মুজাস্সাম (শরীরযুক্ত) আর গায়রে মুজাস্সাম (শরীরবিহীন) ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উক্ত উভয়প্রকার ছবিই তৈরী করা হারাম।

যেমন, হানাফী মাযহাবের অনুসারী আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বখ্যাত কিতাব “উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী”-এর ২২ খণ্ডের ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر …. ولما ماليس فيه صورة حيوان كالشجر ونحوه فليس حرام وسواء كان فى هذا كله ماله ظل ومالا ظل له.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা করানো শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্। … তবে প্রাণহীন বস্তুর ছবি যেমন, গাছপালা ইত্যাদি হারাম নয়। আর এ ব্যাপারে ‘ছায়াহীন ও ছায়াযুক্ত’ ছবির একই হুকুম। অর্থাৎ উভয়টাই হারাম।”

“উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ২২তম জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে,

لا فرق فى تحريم التصوير بين ان تكون الصورة لها ظل او لا.

অর্থঃ- “প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারে ‘ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন’ হওয়ার মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। অর্থাৎ উভয়টার একই হুকুম।”

শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী আল্লামা হাফিয ইবনে হাজর আস্কালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্বসমাদৃত ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফতহুল বারী শরহে বুখারী”-এর ১০ম খণ্ডের ৩৮৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

ولافرق فى ذالك بين ما له ظل ومالا ظل له فان كان معلقا على حائط او ملبوس اوعمامة اونحو ذالك مما لا يعد ممتهنا فهو حرام.

অর্থঃ- “ছায়াযুক্ত ও ছায়াহীন ছবির’ মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। যদি (উক্ত উভয় প্রকার ছবিই) দেয়ালে টাঙ্গানো থাকে অথবা পরিধেয় বস্ত্রে থাকে অথবা পাগড়ীতে থাকে অথবা অনুরূপ সম্মানিত কোন স্থানে বা বস্তুতে থাকে তবে তা হারাম।”

উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

فان الستر الذى انكره النبى صلى الله عليه وسلم كانت الصورة فيه بلا ظل بغير شك ومع ذالك فامر بنزعه.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছবিযুক্ত যে পর্দাটি অপছন্দ করেছেন নিঃসন্দেহে তার ছবিটিও “ছায়াহীন” ছিলো তা সত্ত্বেও তিনি তা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।”

কাজেই রেযাখানীরা যে লিখেছে, “আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী ও আল্লামা ইবনে হাজর আস্কালানী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা গায়রে মুজাস্সাম বা শরীরবিহীন অর্থাৎ “ছায়াহীন” ছবিকে বৈধ বলেছেন।” তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও মনগড়া প্রমাণিত হলো।

মূলকথা হলো, চার মাযহাব তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে মুজাস্সাম ও গায়রে মুজাস্সাম অর্থাৎ ছায়াযুক্ত বা ছায়াহীন উভয়প্রকার ছবি তৈরী করাই হারাম ও নাজায়িয। তবে কোন কোন বাতিল মাযহাব এবং রাফিযী বা শিয়াদের কোন এক দলের মতে গায়রে মুজাস্সাম ছবি তৈরী করা বৈধ। যা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের নিকট গ্রহণযোগ্য নয় বরং সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য। (চলবে)

মুহম্মদ নূরুল্লাহ্ খন্দকার

আহবায়ক- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, সিরাজগঞ্জ।

সুওয়ালঃ মাসিক মদীনা নভেম্বর/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত ২৭নং প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-

প্রশ্নঃ জানাযার নামায পানি থাকা সত্ত্বেও বিনা অযুতে বা তয়ম্মুম করে পড়া যাবে কিনা?

উত্তরঃ পানি থাকা অবস্থায় জানাযার নামায বিনা অযুতে বা তয়ম্মুম করে পড়া জায়েজ হবে না।

এখন আমার সুওয়াল হলো- পানি থাকা অবস্থায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয হবে না? দয়া করে দলীলসহ সঠিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ পানি থাকা অবস্থায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত মনগড়া বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে। কারণ, সর্বজনমান্য, বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে এটাই উল্লেখ আছে যে, “পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয রয়েছে।”

নিম্নে সর্বজনমান্য বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে দলীল পেশ করা হলো-

যেমন, “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৮ম খণ্ডের ১২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

قال ابو حنيفة يجوز التيمم للجنازة مع وجود الماء اذا خاف فوتها بالوضوء.

অর্থঃ- “ইমামে আ’যম, হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয। যদি ওযূর কারণে (অর্থাৎ যদি ওযূ করতে গেলে জানাযার) নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।”

“ক্বিতাবুল ফিক্বহে আ’লাল মাযাহিবিল আরবায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وأما الجنازة والعيد، فانه يتيمم لهما ان خاف فواتهما مع وجود الماء.

অর্থঃ- “পানি থাকা সত্ত্বেও যদি ঈদ ও জানাযার নামায ফউত হয়ে যাওয়ার (না পাওয়ার) আশঙ্কা করে তাহলে ঈদ ও জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করবে। অর্থাৎ পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“ফতহুল ক্বাদীর” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১২২ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

أن كل مايفوت لا الى بدل جاز أداوه بالتيمم مع وجود الماء وصلاة الجنازة عندنا كذلك لانها لاتعاد عندنا وكذلك صلاة العيد تفوت لا الى بدل.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ঐ সকল ইবাদত যা ফউত হয়ে গেলে পরে ক্বাযা করতে হয়না (অর্থাৎ যে সকল ইবাদত ফউত হয়ে গেলে যার বিকল্প নেই) সে সকল ইবাদত পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয আছে। আর অনুরূপভাবে আমাদের হানাফী মাযহাবে জানাযার নামায পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয আছে। কেননা, আমাদের হানাফী মাযহাবে কোন ব্যক্তির জানাযার নামায ফউত হয়ে গেলে পুনরায় আদায় করতে হয়না।”

অনুরূপভাবে আমাদের হানাফী মাযহাবে ঈদের নামায পানি থাকা সত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয আছে, যদি নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা করে। কেননা, কোন ব্যক্তির ঈদের নামায ফউত হয়ে গেলে পুনরায় পড়তে হয়না।

“রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وجاز لخوف فوت صلاة جنازة أى ولو كان الماء قريبا.

অর্থঃ- “পানি নিকটে থাকা সত্ত্বেও ওযূ করতে গেলে যদি জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“আওজাযুল মাসালিক” কিতাবের ৪র্থ খণ্ডের ২৪২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فقال قوم : يتيمم ويصلى لها اذا خاف الفوات وبه قال ابو حنيفة وسفيان والاوزاعى وجماعة.

অর্থঃ- “ইমাম-মুজতাহিদগণের একটা বৃহৎ দল বলেন, তায়াম্মুম করবে এবং জানাযার নামায পড়বে যদি (ওযূ করতে গেলে) জানাযার নামায ফউত হওয়ার ভয় থাকে। আর এটা বলেছেন, ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ছূফীয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আওযাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের একটি বৃহৎ সম্প্রদায়।”

“ফতওয়ায়ে শামী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

أن التيمم عند وجود الماء يجوز …. لكل عبادة تفوت لا إلى خلف ….. مثل صلاة الجنازة فإنها تفوت لا إلى خلف.

অর্থঃ- “যে সকল ইবাদত ফউত হয়ে গেলে ক্বাযা করতে হয়না, সে সকল ইবাদত …. পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয রয়েছে। …. যেমন, জানাযার নামায যা ফউত হয়ে গেলে পরে ক্বাযা করতে হয়না।

সুতরাং পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ہروہ نماز جو لا الی بدل فوت بوتی ہو توپانی موجود ہونے کے با وجود تیمم کے ساتہ اس کا ادا  کر نا جائز ہے اور ہمارے نزدیک نماز جنازہ ایسی  بی ہے کیونکہ اس کی قضا نہیں کی جاتی.

অর্থঃ- “ঐ সকল নামায যা ফউত হয়ে গেলে ক্বাযা নেই, সে সকল নামায পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয রয়েছে। আর আমাদের হানাফীদের নিকট অনুরূপ জানাযার নামাযও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয। কেননা, জানাযার নামায ফউত হয়ে গেলে ক্বাযা করতে হয়না।”

“বাহরুর রায়িক্ব” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صلاة الجنازة …… فيتيمم لها عند وجوده عندنا.

অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহাবে পানি থাকা অবস্থায়ও জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয।”

“হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৪ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

ان كل مايفوت لا الى بدل يجوز اداؤه بالتيمم مع وجود الماء وصلوة الجنازة تفوت لا الى بدل لانها لا تعاد عندنا.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ঐ সকল ইবাদত যা ফউত হয়ে গেলে পরবর্তীতে আদায় করা হয়না। অর্থাৎ ক্বাযা করতে হয়না। সে সকল ইবাদত পানি থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করে আদায় করা জায়িয আছে। আর জানাযার নামাযও পানি থাকা সত্ত্বেও আদায় করা জায়িয। কেননা, আমাদের হানাফী মাযহাবে জানাযার নামায ফউত হয়ে গেলে পরবর্তীতে পুনরায় আদায় করতে হয় না। অর্থাৎ ক্বাযা করতে হয়না।”

“আল মুখতাছারুল কুদূরী” কিতাবের ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويجوز التيمم للصحيح المقيم اذا حضرت جنازة والولى غيره فخاف ان اشتغل بالطهارة ان تفوته صلوة الجنازة فله ان يتبمم ويصلى.

অর্থঃ- “যখন জানাযা উপস্থিত হবে তখন মৃত ব্যক্তির ওলী ব্যতীত যে কোন সুস্থ মুকীম ব্যক্তির জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয। কেননা, পানি থাকা অবস্থায় ওযূ করতে গেলে যদি জানাযার নামায না পাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে।”

“আল জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويجوز التيمم للصحيح فى المصر اذا حضرت جنازة والولى غيره فخاف ان يشتغل بالطهارة انه تفوته الصلاة فانه يتيمم ويصلى.

অর্থঃ- “যখন জানাযা উপস্থিত হবে তখন মৃত ব্যক্তির ওলী ব্যতীত শহরের যে কোন সুস্থ ব্যক্তির জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয। কেননা, পানি থাকা  অবস্থায় ওযূ করতে গেলে যদি জানাযার নামায না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সে ব্যক্তি তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে।”          “হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويتيمم الصحيح فى المصراذا حضرت جنازة والولى غيره فخاف ان اشتغل بالطهارة ان تفوته الصلوة.

অর্থঃ- “যখন জানাযা উপস্থিত হবে তখন মৃত ব্যক্তির ওলী ব্যতীত শহরের যে কোন সুস্থ ব্যক্তি ওযূ করতে গেলে যদি জানাযার নামায না পাওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে সে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويجوز التيمم اذا حضرته جنازة والولى غيره فخاف ان اشتغل بالطهارة أن تفوته الصلاة.

অর্থঃ- “যদি জানাযা উপস্থিত হয় এবং মৃত ব্যক্তির ওলী ব্যতীত অন্য যে কোন ব্যক্তি যদি ওযূ করতে গেলে জানাযার নামায না পাওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”

“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اگر جنازہ حاضر ہو اور ولی اسکے سوا کوئی دوسرا ہو اور خوف ہے کہ اگر وضو کر یگا تو نماز فوت بو جاویگی تو تیمم جانز ہے.

অর্থঃ- “যদি জানাযা উপস্থিত হয় এবং মৃত ব্যক্তির ওলী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি যদি এই আশঙ্কা করে যে ওযূ করতে গেলে জানাযার নামায ফউত হয়ে যাবে তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”

 “শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠার ৯নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

فاذا حضرت جنازة وخاف ان اشتغل بالطهارة ان تفوته صلوتها يجوز له ان تيمم.

অর্থঃ- “যদি জানাযা উপস্থিত হয় এবং ওযূ করতে গেলে জানাযার নামায ফউত হওয়ার (না পাওয়ার) আশঙ্কা করে তাহলে তার জন্য তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”

“বাহর্রু রায়িক্ব” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, يجوز التيمم لخوف فوت صلاة الجنازة.

অর্থঃ- “জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”

“হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صلاة الجنازة ان خاف رفعها قبل ان يحصل شيئا من التكبيرات ان اشتنل بالوضوء تيمم.

অর্থঃ- “ওযূ করতে গেলে জানাযার নামাযের কোন একটি তাকবীর পাওয়ার পূর্বেই যদি জানাযা উঠানোর আশঙ্কা করে তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে।”

“খুলাছাতুল ফতওয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اما التيمم لصلوة الجنازة … ان خاف فوت الصلوة لو توضأ يباح له التيمم وهذا عندنا.

অর্থঃ- “জানাযা নামাযের জন্য তায়াম্মুম জায়িয। … যদি ওযূ করলে জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে। এটাই আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া।”

“নূরুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اگر نما جنازے کی فوت ہونیکا خوف ہے تیمم جائزہے.

অর্থঃ- “যদি জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”

“তুহ্ফাতুল ফুক্বাহ্া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩৮-৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

إذا خاف فوت الصلاة تفوت لا إلى خلف إن اشتغل بالوضوء كصلاة الجنازة والعيدين يباح له التيمم.

অর্থঃ- “যদি ওযূ করতে গেলে ঐ সকল নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা করে যে সকল নামায ফউত হয়ে গেলে পরে ক্বাযা করতে হয়না। যেমন, জানাযার নামায, দু’ঈদের নামায তাহলে ঈদের নামাযের এবং জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করে নামায পড়া বৈধ।”

“নূরুল ইযাহ্” কিতাবের ৪৪ পৃষ্ঠার ১নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে, يجوز التيمم لخوف فوت صلوة الجنازة.

অর্থঃ- “জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“শরহে ইল্ইয়াস” কিতাবে উল্লেখ আছে,

صلوة الجنازة فاذا خاف فوتها تيمم.

অর্থঃ- “জানাযার নামায যদি ফউত হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে।”

“দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

وجاز لخوف فوت صلاة جنازة.

অর্থঃ- “জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ولو تيمم وشرع فى صلاة الجنازة ثم احدث جاز له أن يتيمم.

অর্থঃ- “যদি তায়াম্মুম করে জানাযার নামায শুরু করা হয় অতঃপর যদি তায়াম্মুম ভেঙ্গে যায়, তাহলে পুনরায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৪৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويجوز التيمم لصلاة الجنازة صيانة عن الفوات.

অর্থঃ- “জানাযার নামায ফউত হওয়া থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয।”

“নূরুদ্ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور تندرست ادمی شہر ءیں ربتے ھوئے بھی تیمم کرسکتا ہے جب کے جنازہ سامنے اجائے اور جنازہ کا ولی کوئی دوسرا شخص ہو اور اسے اندشہ ہوکہ اگر وضو کر نے میں لگا تو نماز جنازہ کی قضا نہیں ہوتی.

অর্থঃ- “যখন জানাযা সামনে আসবে এবং জানাযার ওলী অপর কোন ব্যক্তি হয় তবে ওলী ব্যতীত শহরের সুস্থ ব্যক্তি যদি এ আশঙ্কা করে যে, ওযূ করলে জানাযার নামায পাবে না তাহলে শহরের সুস্থ ব্যক্তিও জানাযার নামায পড়ার জন্য তায়াম্মুম করবে। কেননা, জানাযার নামায না পেলে জানাযা নামাযের কোন ক্বাযা নেই।”

“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور تیمم جائز ہی نماز جنازہ کی فوت ہو جانے کے خوف سے.

অর্থঃ- “জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা হলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয।”

“আশরাফুল হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

اور تندرست ارمی شہر میں  ت بمم  كلا ى جل  كہ جنازہ حاضر ہو جائے اور ولی اس کے علاوہ ہو پس خوف کیا کہ اگر وضو کے ساتہ مشغول  ہوگیا تو اس کی نماز فوت ہو جائے گی کیو نکہ جنازہ کی قضا نہیں کی جاتی ہے.

অর্থঃ- “যখন জানাযা উপস্থিত হবে এবং ওলী ব্যতীত শহরের যে কোন সুস্থ ব্যক্তি যদি এ আশঙ্কা করে যে, ওযূতে মশগুল হলে জানাযার নামায ফউত হয়ে যাবে তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে। কেননা, জানাযার নামাযের ক্বাযা নেই।”

“আল ফিক্বহুল হানাফী ফী ছাওবিহিল জাদীদ” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

فلو خاف أن تفوته صلاة الجنازة … إذا اشتغل بالوضوء … جاز له أن يتيمم لادراك الصلاة.

অর্থঃ- “ওযূ করতে গেলে …. যদি এ আশঙ্কা হয় যে, জানাযার নামায ফউত হয়ে যাবে …. তাহলে জানাযার নামায পাওয়ার জন্য তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয রয়েছে।”

“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

جواز التيمم لصلوة الجنازة عند خوف فوتها.

অর্থঃ- “জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কায় জানাযার নামায পড়ার জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয।” “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ويجوز التيمم للولى اذا كان من هو مقدم عليه حاضرا اتفاقا لانه يخاف الفوت وكذا يجوز له التيمم اذا أذن لغيره بالصلاة.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ওলীর চাইতে হক্বদার সে ব্যক্তি যখন উপস্থিত থাকবে তখন সকলের ঐক্যমতে ওলীর জন্যও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয রয়েছে। কেননা, ওলীর পক্ষেও জানাযার নামায ফউত হয়ে যাওয়ার বা না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

অনুরূপভাবে ওলীর জন্যও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে যদি ওলী অন্য কোন ব্যক্তিকে জানাযার নামায পড়ার জন্য অনুমতি দেয়। (অনুরূপ বাহর্রু রায়িক্ব ১ম খণ্ড ১৫৭ পৃষ্ঠা, জাওহারাতুন্ নাইয়্যিরাহ্ ১ম খণ্ড ৩১ পৃষ্ঠা, হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্ ৭৬)

 “হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ایک جنازہ کی نماز تیمم سے پڑہ چکا پھر دوسرا جنازہ ایا اگرپہلے اور دوسرے کے درمیان میں اتنی مہلت ہی کہ جاوے اور وضو کرے پھر اوے اور نماز پڑھے ئو ئبمم کا اعادہ کریگا اور اگر ائنی دیر نہیں ہوئی کہ جتنی دیر میں یہ سب کام  کرسکے تواسی تیمم سے نماذ پڑہ لے اسی پر فتوی ہی.

অর্থঃ- “একটি জানাযার নামায তায়াম্মুম করে পড়া হয়েছে। অতঃপর অপর একটি জানাযা এসেছে, এক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় জানাযার মধ্যে এতটুকু পরিমাণ সময় যদি অবকাশ পায় যে, গিয়ে ওযূ করে এসে জানাযার নামায পড়তে পারে তাহলে পুনরায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে। আর যদি এতটুকু সময় অবকাশ (বিলম্ব) না পায় যে পরিমাণ অবকাশ সময়টুকুতে উক্ত কাজসমূহ করতে পারে তাহলে ঐ তায়াম্মুম দিয়ে (অর্থাৎ প্রথমবার তায়াম্মুম করে যে জানাযার নামায পড়া হয়েছে ঐ তায়াম্মুম দিয়ে দ্বিতীয়) জানাযার নামায আদায় করবে। এর উপরই ফতওয়া।”

“ফতওয়ায়ে কাযীখান” কিতাবে উল্লেখ আছে,

واذا تيمم لصلاة الجنازة وصلى جاز له ان يصلى بذلك التيمم على جنازة أخرى.

অর্থঃ- “(ফউত হওয়ার আশঙ্কায়) যদি জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করে এবং জানাযার নামায পড়ে তাহলে ঐ প্রথম তায়াম্মুম দিয়েই দ্বিতীয় জানাযার নামায পড়াও জায়িয রয়েছে।”

“শরহে বিক্বায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৮৯ পৃষ্ঠার ৯নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

ولو تيمم وصلى على جنازة ثم اتى باخرى فان كان بين الثانية والاولى مقدار ما يذهب ويتوضأثم يأتى ويصلى اعاد التيمم.

অর্থঃ- “যদি তায়াম্মুম করে একটি জানাযার নামায আদায় করা হয় অতঃপর অপর একটি জানাযা নিয়ে আসা হয় তাহলে প্রথম এবং দ্বিতীয় জানাযার মধ্যে যদি এতটুকু পরিমাণ সময় পাওয়া যায়, যে পরিমাণ সময়ে পানির নিকটে গিয়ে ওযূ করে এসে জানাযার নামায পড়া যায় তাহলে পুনরায় তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে।”

“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৬১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

واذا تيمم لصلاة الجنازة وصلى جاز له ان يصلى بذلك التيمم على جنازة أخرى قبل ان يقدر على الوضوء.

অর্থঃ- “যদি জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়ে তাহলে ওযূ করা যায় এই পরিমাণ সময়ের পূর্বেই হলে উক্ত তায়াম্মুম দ্বারাই দ্বিতীয় জানাযা নামায পড়া জায়িয।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ويجوز التيمم للجنب لصلاة الجنازة.

অর্থঃ- “জুনুব ব্যক্তির জন্যও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয রয়েছে।” (অনুরূপ মিনহাতুল খালিক্ব কিতাবেও উল্লেখ আছে)

“ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

يجوز التيمم للجنب لصلاة الجنازة.

অর্থঃ- “জুনুব ব্যক্তির জন্যও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে।”

“হিন্দিয়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

جنب کو جنازۃ کی نماز کے لے …. تیمم جائز ھے.

অর্থঃ- “জুনুব ব্যক্তির জন্যও জানাযার নামাযের জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয।” অর্থাৎ যে ব্যক্তির জন্য গোছল করা ফরয সে ব্যক্তির জন্যও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয আছে, যদি গোছল করতে গেলে জানাযার নামায না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

“হাশিয়াতুত্ তাহ্তাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্” কিতাবের ৭৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وظاهر الرواية جواز التيمم لكل لان تأخير الجنازة مكروه.

অর্থঃ- “জাহির রিওয়ায়েতে উল্লেখ আছে যে, সকলের জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয আছে। কেননা, জানাযা দেরী করা মাকরূহ্।” (অনুরূপ হাশিয়ায়ে নূরুল্ ইজাহ্, ফতওয়ায়ে শামী ১ম খণ্ড ২৪১ পৃষ্ঠা, ফতহুল ক্বাদীর ১ম খণ্ড ১২২ পৃষ্ঠা, আশরাফুল হিদায়া ১ম খণ্ড ২৩০ পৃষ্ঠা)

“বাহর্রু রায়িক্ব” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

أما على ظاهر الرواية فيجوز اليمم لكل عند خوف الفوت.

অর্থঃ- “অতঃপর জাহির রিওয়ায়েতে উল্লেখ আছে, (জানাযা) ফউত হওয়ার আশঙ্কা হলে সকলের জন্য তায়াম্মুম করা জায়িয।”        “নূরুদ্ দিরায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

ایک جنازہ کی نماز تیمم سے پڑہ کر اگر دوسرا جنازہ اجائے پس دونوں کے درمیان اگر وضو  کر نے کا وقفہ ملتاہے تو تیمم کا اعا دہ ضروری ہے  اور وقت تنگ ہو توپہلے ہی تیمم سے نماز پڑہ  سکتا ہے اسی پر فتوی ھے.

অর্থঃ- “এক জানাযার নামায তায়াম্মুম করে আদায় করার পর যদি দ্বিতীয় আর একটি জানাযা আসে অতঃপর উভয় জানাযার মধ্যে যদি ওযূ করা যায় এ পরিমাণ সময় বিলম্ব পায় তাহলে দ্বিতীয়বার (পুনরায়) তায়াম্মুম করা জরুরী। আর যদি উভয় জানাযার মধ্যে সময় সংকীর্ণ হয় তাহলে প্রথমবারেই তায়াম্মুম দিয়ে দ্বিতীয় জানাযার নামায পড়বে। এর উপরই ফতওয়া।”

“ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صلى على جنازة بتيمم أتى باخرى فان كان بين الثانية والاولى مقدار مدة يذهب ويتوضأ ثم يأتى ويصلى أعاد التيمم وان لم يكن مقدار مايقدر على ذلك صلى الله بذلك التيمم وعليه الفتوى.

অর্থঃ- “একটি জানাযার নামায তায়াম্মুম করে আদায় করা হয়েছে। অতঃপর পরে অন্য একটি জানাযা নিয়ে আসা হয়েছে। এক্ষেত্রে যদি প্রথম এবং দ্বিতীয় জানাযার মধ্যে এতটুকু পরিমাণ সময় পায় যে, পানির নিকটে গিয়ে ওযূ করে ফিরে এসে জানাযার নামায পড়তে পারে তাহলে এই পরিমাণ সময় পেলে পুনরায় দ্বিতীয়বার তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে। আর যদি এতটুকু পরিমাণ সময় না পায়, যে পরিমাণ সময়টুকুতে উক্ত কাজগুলো করতে পারে তাহলে ঐ তায়াম্মুম দিয়ে অর্থাৎ প্রথমবার তায়াম্মুম করে যে জানাযা নামায পড়েছে ঐ প্রথম তায়াম্মুম দিয়েই দ্বিতীয় জানাযার নামায আদায় করবে। এর উপরই ফতওয়া।” (অনুরূপ ফতওয়ায়ে খানিয়া, বাহরুর রায়িক্ব ১ম খণ্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা, আইনুল হিদায়া নিছফে আউয়াল খণ্ডের ১৯৩ পৃষ্ঠা, ফতওয়ায়ে শামীতেও উল্লেখ আছে)

তাছাড়া হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال إذا خفت أن تفوتك الجنازة وانت على غير وضوء فتيمم وصل.

অর্থঃ- “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ওযূ বিহীন অবস্থায় (ওযূ করতে গেলে) যদি জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়বে।” (ইবনে আবী শাইবা, আল ফিক্বহুল হানাফী ফী ছাওবিহিল জাদীদ ১ম খণ্ড ১৬০ পৃষ্ঠা, হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া ১ম খণ্ড ৫৪ পৃষ্ঠার ৪নং হাশিয়া, বিনায়া ফী শরহে হিদায়া ১ম খণ্ড ৫৩৯ পৃষ্ঠা, শরহুন্ নিকায়া ১ম খণ্ড ৬৩ পৃষ্ঠা, আইনুল হিদায়া নিছফে আউয়াল খণ্ডের ১৯৩ পৃষ্ঠা)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, পানি থাকা অবস্থায়ও তায়াম্মুম করে জানাযার নামায পড়া জায়িয রয়েছে, যদি পানি থাকা অবস্থায় ওযূ করতে গেলে জানাযার নামায ফউত হওয়ার আশংকা হয়।

সুতরাং মাসিক মদীনা যে বলেছে, “পানি থাকা অবস্থায় জানাযার নামায …… তয়ম্মুম করে পড়া জায়েজ হবে না।”

তার এ বক্তব্য ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন বলেই প্রমাণিত হলো।

{দলীলসমূহঃ (১) নাসাঈ, (২) বাইহাক্বী, (৩) ত্বহাবী, (৪) দারে কুতনী, (৫) ইবনে আবি শাইবা, (৬) উমদাতুল ক্বারী, (৭) আওজাযুল মাসালিক, (৮) শরহে ত্বহাবী, (৯) ফতওয়ায়ে নাওয়াযিল, (১০) আল মুখতাছারুল কুদুরী, (১১) হিদায়া মা’য়াদ দিরায়া, (১২) নিহায়া, (১৩) ইনায়া, (১৪) বিনায়া, (১৫) কুনিয়া, (১৬) মাবসূত, (১৭) মুজমিরাত, (১৮) জহিরীয়া, (১৯) খানিয়া, (২০) শরহে বিক্বায়া, (২১) মুসতাছফা, (২২) খুলাছাতুল ফতওয়া, (২৩) ফতওয়ায়ে কাযীখান, (২৪) ফতহুল ক্বাদীর, (২৫) সারাখ্সী, (২৬) ওয়ালওয়ালিজিয়া, (২৭) মাজমাউল আনহুর, (২৮) শরহে মুনিয়া, (২৯) কিফায়া, (৩০) শরহে ইনায়া, (৩১) বিদায়া, (৩২) বাহরুর রায়িক্ব, (৩৩) মিনহাতুল খালিক্ব, (৩৪) জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্, (৩৫) আলমগীরী, (৩৬) দুররুল মুখতার, (৩৭) রদ্দুল মুহতার, (৩৮) শামী, (৩৯) হাশিয়াতুত্ তাহতাবী আলা মারাকিউল ফালাহ্, (৪০) কানযুদ্ দাক্বায়িক্ব, (৪১) কাশফুল হাক্বায়িক্ব, (৪২) আন নিছাব, (৪৩) ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, (৪৪) হিন্দিয়া, (৪৫) শরহে নিক্বায়া, (৪৬) আত্ তানকীহুদ দুরূরী, (৪৭) আল লুবাব লিল মায়দানী, (৪৮) মি’রাজুদ্ দিরায়া, (৪৯) নূরুল হিদায়া, (৫০) আইনুল হিদায়া, (৫১) তুহফাতুল ফুক্বাহা, (৫২) কিতাবুল ফিক্বহে আলাল মাযাহিবিল আরবায়া, (৫৩) শরহে ইলিয়াস, (৫৪) নূরুল ইজাহ্, (৫৫) নূরুদ্ দিরায়া, (৫৬) উমদার্তু রিয়াআ, (৫৭) গায়াতুল আওতার, (৫৮) আল ফিক্বহুল হানাফী ফী ছাওবিহীল জাদীদ, (৫৯) আশরাফুল হিদায়া, (৬০) ইলমুল ফিক্বাহ্ ইত্যাদি।}

মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন

নর্থ ওয়েষ্ট রেসিঃ ক্যাডেট একাডেমী, বগুড়া।

সুওয়ালঃ শরীয়ত, তরীক্বত, হাক্বীক্বত ও মা’রিফত এ সমস্ত কুরআন-সুন্নাহ সম্মত কি-না? এবং এ সমস্ত মানা যাবে কি-না? এ প্রশ্নের উত্তরে এক অখ্যাত, অচেনা পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, “শরীয়ত, তরীক্বত, হাক্বীক্বত ও মা’রিফত বলে ইসলামী শরীয়তে কোন কিছু নেই। এক শ্রেণীর কথিত আলিম ইসলামকে বিকৃত করার জন্য রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথ ও পদ্ধতি ছেড়ে উক্ত পদ্ধতি ধরেছে।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- অখ্যাত-অচেনা পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি-না? কুরআন-সুন্নাহর দলীল-আদিল্লাহ্র ভিত্তিতে জানিয়ে বাধিত করবেন। জাওয়াবঃ না, অখ্যাত-অচেনা পত্রিকার উল্লিখিত বক্তব্য সঠিক হয়নি; বরং তা সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ ও কুফরী হয়েছে।

কারণ, দ্বীনের ভিতর নতুন করে কিছু প্রবেশ করানো যেমন হারাম ও নাজায়িয ঠিক একইভাবে দ্বীনের মধ্যে যা আছে এমন কোন বিষয়কে দ্বীনের মধ্যে তা নেই বলে শরীয়ত হতে বের করে দেয়াও হারাম ও নাজায়িয। অর্থাৎ দ্বীনের ভিতর প্রকাশ্য ইফরাত-তাফরীত তথা বাড়ানো-কমানোর শামীল। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

من احدث فى امرنا هذا ماليس منه فهو رد.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে এমন বিষয় প্রচলন করলো যা আমাদের দ্বীনে নেই তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) আর যারাই দ্বীনের ভিতর ইফরাত-তাফরীত করবে তারাই দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ মুরতাদ ও কাফির হয়ে যাবে এবং তাদেরকে ইহুদীদের দোসরও বলা যেতে পারে।

কারণ, ইহুদীরা পূর্ববর্তী নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহের ভিতর হের-ফের করে নিজেদের ধ্বংস সাধন করেছিল।

যেমন, কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

يحرفون الكلم عن مواضعه.

অর্থঃ- “তারা (ইহুদীরা) কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যূত করে দেয়।” (সূরা মায়িদা/১৩)

وقد كان فريق منهم يسمعون كلم الله ثم يحرفونه من بعد ماعقلوه وهم يعلمون.

অর্থঃ- “তাদের (ইহুদীদের) মধ্যে একদল ছিল যারা মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী শ্রবণ করত অতঃপর বুঝে-শুনে পরিবর্তন করত অথচ তারা অবগত ছিল।” (সূরা বাক্বারা/৭৫)

কাজেই দ্বীন সম্পর্কে কোন কথা বলতে হলে তা পূর্ণ তাহক্বীক্ব করে বলতে হবে। না জেনে মনগড়াভাবে কোন কথা বললে হাশরের ময়দানে গলায় আগুনের বেড়ী পরানো হবে এবং আগুনের কেচি দিয়ে তার জিহ্বা কেটে দেয়া হবে এবং ভুল ফতওয়া দানের কারণে যত লোক তদানুযায়ী আমল করবে তাদের সকলেরই গুনাহ্র বোঝা ফতওয়া দানকারীর উপরই বর্তাবে।

এ সকল ভয়াবহ পরিণতির কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে।

من افتى بغير علم كان اثمه على من افتاه.

অর্থঃ- “যাকে না জেনে (ভুল) ফতওয়া দেয়া হলো, উক্ত ফতওয়া আমলকারীর সমূদয় গুনাহ্ ফতওয়াদাতার উপর বর্তাবে।” (মিশকাত)

মূলতঃ শরীয়ত, তরীক্বত, হাক্বীক্বত ও মা’রিফত এসব প্রত্যেকটিই কুরআন-সুন্নাহ সম্মত এবং তা মানা ও বিশ্বাস করাটাও কুরআন-সুন্নাহ্রই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,

لكل جعلنا منكم شرعة ومنهاجا.

অর্থঃ- “আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই শরীয়ত ও তরীক্বত নির্ধারণ করে দিয়েছ।” (সূরা মায়িদা/৪৮)

আর হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

الشريعة شجرة والطريقة افضالها والمعرفة ازراقها والحقيقة ثمرها.

অর্থঃ- “শরীয়ত একটি বৃক্ষ স্বরূপ, তরীক্বত তার শাখা-প্রশাখা, মা’রিফত তার পাতা এবং হাক্বীক্বত তার ফল।” (সিররুল আসরার) হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

الشريعة اقوالى والطريقه افعالى والحقيقة احوالى والمعرفة اسرارى.

অর্থঃ- “শরীয়ত হলো আমার কথা (আদেশ-নিষেধ), তরীক্বত হলো আমার কাজ (আমল), হাক্বীক্বত হলো আমার অবস্থা এবং মা’রিফত হলো আমার গুপ্ত রহস্য।”

উল্লিখিত প্রত্যেকটি বিষয়ের ব্যাখ্যা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

শরীয়তঃ

শরীয়ত বলতে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলামকে বুঝানো হয়ে থাকে। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

ان الدين عند الله الاسلام.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক-এর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।” (সূরা আলে ইমরান/১৯)

অপর এক আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الدين كله وكفى بالله شهيدا.

অর্থঃ- “সেই মহান আল্লাহ পাক, যিনি উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন সমস্ত দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে বা বাতিল ঘোষণা করে। যার সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট।” (সূরা ফাতহ্/২৮)

এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماوسعه الا اتباعى.

অর্থঃ- “আমি তোমাদের নিকট স্বচ্ছ ও পরিপূর্ণ দ্বীন তথা শরীয়ত নিয়ে এসেছি। (জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল) হযরত মূসা আলাইহিস্ সালামও যদি হায়াতে থাকতেন তবে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মিশকাত)

দ্বীন ইসলাম বা ইসলামী শরীয়তের মিনহাজ তথা পথ নির্দেশিকা সম্পর্কে ইসলামী আক্বাঈদ ও উছূলের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

اصول الشرع ثلاثة القران والحديث والاجماع ورابعها القياس.

অর্থঃ- “শরীয়তের উছূল বা দলীল তিনটি-কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা এবং চতুর্থটি হচ্ছে-ক্বিয়াস।” (নূরুল আনোয়ার)

তরীক্বত

শরীয়ত যথাযথভাবে পালন করতে হলে দ্বীনি ইল্ম অর্জন করতে হবে যা ফরয। এ ইল্ম দু’প্রকার। (১) ইল্মে ফিক্হ; যা আকাইদ, ইবাদত, মুয়ামালাত ও মুয়াশারাতের সমষ্টি। যার দ্বারা ইবাদতে যাহিরা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ হয় এবং তার উপর আমল করা সম্ভব হয়। (২) ইল্মে তাছাউফ; যার দ্বারা ইবাদতে বাতিনা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় এবং বাতিনী বা আভ্যন্তরীণ অবস্থা পরিশুদ্ধ হয়ে ইখলাছ অর্জিত হয়।

এ মর্মে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

العلم علمان علم فى القلب فذاك العلم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عز وجل على ابن ادم.

অর্থঃ- “ইল্ম দু’প্রকার, (১) ক্বলবী ইল্ম। এটা হলো উপকারী ইল্ম। (২) লিসানী বা যবানী ইল্ম। এটা হলো আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে আদম সন্তানের প্রতি দলীল স্বরূপ।” (মিশকাত)

আর এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মালিকী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, ফখরুল ফুক্বাহা, শাইখুল উলামা হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد نزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.

অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্হ্ (যবানী ইল্ম) অর্জন করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ (ক্বল্বী ইল্ম) অর্জন করলোনা সে ব্যক্তি ফাসিক। আর যে ব্যক্তি তাছাউফের দাবী করে কিন্তু শরীয়ত স্বীকার করেনা সে ব্যক্তি যিন্দীক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয় প্রকার ইল্মই অর্জন করলো সে ব্যক্তিই মুহাক্কিক তথা মু’মিনে কামিল।”  (মিরকাত)

অর্থাৎ ইল্মে ফিক্হ ও ইল্মে তাছাউফ উভয় প্রকার ইল্ম অর্জন করতঃ দ্বীনের উপর সঠিকভাবে চলার কোশেশ করা প্রত্যেকের জন্য ফরয।

আর উল্লিখিত ইলমে তাছাউফই ইল্মে তরীক্বত বা তরীক্বত নামে মশহুর। এছাড়াও ইল্মে তাছাউফকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়। যেমন- ইল্মে আসরার, ইল্মে ক্বল্ব, ইল্মে তায্কিয়া, ইল্মে ইহ্সান, ইল্মে বাতিন, ইল্মে হাক্বীক্বত, ইল্মে মা’রিফত। অর্থাৎ তরীক্বত  বা তাছাউফ মশ্ক করার ফলে হাক্বীক্বত ও মারিফত হাছিল হয়।

উল্লেখ্য, ইল্মে ফিক্বাহ্র ইমাম হলেন মাযহারের চার ইমামগণ যথাক্রমে- ১। হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি।  (৮০-১৫০), ২। মালিকী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি। (৯৩-১৭৯), ৩। শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি। (১৫০-২০৪), ৪। হাম্বলী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি। (১৬৪-২৪৬) এবং আরো অনেকে।          আর ইল্মে তরীক্বতের ইমাম হলেন- ১। ক্বাদিরীয়া তরীক্বার ইমাম গাউসুল আ’যম হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, ২। চীশ্তিয়া তরীক্বার ইমাম সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৩। নক্শবন্দিয়া তরীক্বার ইমাম হযরত বাহাউদ্দীন নক্শবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ৪। মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার ইমাম ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ।

আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যমীনে পাঠিয়েছেন কেন? এর হাজারো কারণ থাকার পরও আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ্ শরীফে ‘সূরা বাক্বারা, আলে ইমরান ও জুমুয়া’-এর চার জায়গায় চারটি কারণ বর্ণনা করেছেন।

যেমন, “সূরা আলে ইমরান”-এর ১৬৪নং আয়াত শরীফে বলেন,

لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم ايته ويزكيهم ويعلمهم الكتب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহ্সান করেছেন যে, তিনি তাঁদের মধ্যে একজন রসূল পাঠিয়েছেন যিনি লোকদেরকে আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শোনাবেন, তাযকিয়া করবেন, কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হিদায়েত প্রাপ্ত ছিলনা।”    উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেছেন যে, তিনি তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চারটি বিশেষ কারণে পাঠিয়েছেন। তারমধ্যে একটি হলো, “তাযকিয়া বা ইছলাহ্ করার জন্য।” এ তাযকিয়াই হচ্ছে ইল্মে তাছাউফ যা ইল্মে তরীক্বত নামে মশহুর।

ইল্মে তরীক্বতকে হাদীস শরীফের পরিভাষায় ইলমুল ইহ্সানও বলা হয়েছে। এর দু’টি স্তর বা দরজা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

اخبرنى عن الاحسان قال ان تعبد الله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك.

অর্থঃ- “আপনি (ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আমাকে ইহ্সান সম্পর্কে সংবাদ দিন। তিনি বললেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদত কর যেন তাঁকে দেখছ। আর যদি দেখতে না পাও তাহলে খেয়াল করবে, তিনি তোমাকে দেখছেন।” (মুসলিম,মিশকাত) এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কোন বান্দা বা উম্মত যদি ইহ্সানের উপরোক্ত দু’দরজার কোন এক দরজায় পৌঁছতে না পারে তাহলে তার কোন ইবাদত-বন্দিগী কবুল হবেনা।

যেমন, হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

لا صلوة الا بحضور القلب.

অর্থঃ- “হুযূরী ক্বল্ব ব্যতীত নামায হয়না।”

অর্থাৎ ছূরতান নামায হয়ে যাবে কিন্তু হাক্বীক্বতান নামায আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কবুল হবেনা। কাজেই হাক্বীক্বী হুযূরী বা ইহ্সানের উক্ত দরজায় পৌঁছতে হলে ইল্মে তাছাউফ বা ইল্মে তরীক্বত মশ্ক করতে হবে।

উল্লেখ্য, তরীক্বত শরীয়তেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যা শরীয়তের মতই ফরয।

হাক্বীক্বত

এর অর্থ হচ্ছে অবস্থা বা হাল। ইল্মে তরীক্বত বা তাছাউফ মশ্ক করার কারণে যে অবস্থা সৃষ্টি হয় তরীক্বতের ভাষায় তাকেই হাক্বীক্বত বলে। উল্লেখ্য, ইল্মুল ইহ্সান বা ইলমুত্ তরীক্বতের উল্লিখিত দু’দরজাকে তাছাউফের পরিভাষায় হাক্বীক্বত বলা হয়। হাক্বীক্বতের উপরোক্ত দু’দরজার কোন এক দরজায় না পৌঁছা পর্যন্ত আল্লাহ্ পাক-এর নিকট কোন ইবাদত-বন্দিগী কবুল হবেনা।

হাক্বীক্বতের অপর নাম হচ্ছে ইখলাছ। সেজন্য বলা হয়েছে, হাক্বীক্বত বা ইখলাছ ব্যতীত দ্বীন বা শরীয়ত পালন মূল্যহীন। আর হাক্বীক্বত তথা ইখলাছ না থাকলে দ্বীন পালনের উদ্দেশ্য হবে গায়রুল্লাহ্। তাই আমলকারীর কোন আমল কবুল তো হবেই না বরং তার কৃত আমলই জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে।           এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,

فويل للمصلين الذين هم عن صلاتهم ساهون الذين هم يراءون.

অর্থঃ- “হালাকী ঐ সকল নামাযীদের জন্য যারা গাফলতীর সাথে এবং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নামায আদায় করে।” (সূরা মাউন/৪, ৫, ৬)

আর “মুসলিম শরীফে” ইরশাদ হয়েছে,

عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان اول الناس يقض عليه يوم القيامة رجل استشهد فاتى به فعرفه نعمته فعرفها فقال فما عملت فيها؟ قال قاتلت فيك حتى استشهدت، فقال كذبت ولكنك قاتلت لان يقال جرى فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه حتى القى فى النار ورجل تعلم العلم وعلمه وقرأ القران فاتى به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها؟ قال تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القران قال كذبت ولكنك تعلمت العلم ليقال انك عالم وقرأت القران ليقال هو قارئ فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه حتى القى فى النار ورجل وسع الله عليه واعطاه من اصناف المال كله فاتى به فعرفه نعمه فعرفها قال فما عملت فيها؟ قال ماتركت من سبيل تحب ان ينفق فيها الا انفقت فيها لك قال كذبت ولكنك فعلت ليقال هو جواد فقد قيل ثم امر به فسحب على وجهه ثم القى فى النار.

অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কিয়ামতের দিন তিনজন লোককে প্রথমে বিচারের জন্য আনা হবে। প্রথম যে ব্যক্তিকে আনা হবে, সে হলো একজন শহীদ। তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, “হে ব্যক্তি! তোমাকে আমি এত শক্তি-সামর্থ দিলাম, তা দিয়ে তুমি কি করেছ?” সে বলবে, “আল্লাহ্ পাক! আমি জিহাদ করতে করতে আপনার জন্য শহীদ হয়েছি।” আল্লাহ্ পাক বলবেন, “মিথ্যা কথা, তুমি আমার জন্য জিহাদ করনি। মানুষ তোমাকে বড় পালোয়ান বা শক্তিশালী বলবে, সেজন্য তুমি জিহাদ করেছ, যুদ্ধ করেছ। মানুষ তোমাকে শহীদ বলেছে। (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)।” তখন ফেরেশ্তাদেরকে বলবেন, “হে ফেরেশ্তারা! এ লোকটিকে চুলে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।” তাই করা হবে।

দ্বিতীয় আরেকজন লোককে আনা হবে, যাকে ইল্ম দান করা হয়েছে এবং সে তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন শরীফ ছহীহ্-শুদ্ধভাবে পড়তে শিখেছে। আল্লাহ্ পাক তাকে বলবেন, “হে আলিম বা ক্বারী ছাহেব! তোমাকে এত ইল্ম দেয়া হয়েছিল, শুদ্ধ করে কুরআন শরীফ পাঠ করতে শিক্ষা দেয়া হয়েছিল, তুমি কি করলে?” সে ব্যক্তি বলবে, “আল্লাহ্ পাক! আমি আপনার জন্য ইল্ম শিক্ষা করেছি এবং তা অন্যকে শিক্ষা দিয়েছি, আর আপনার জন্যই আমি কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পাঠ করেছি।” আল্লাহ্ পাক বলবেন, “মিথ্যা কথা। বরং মানুষ তোমাকে বড় আলিম বা বড় ক্বারী ছাহেব বলবে, সে জন্যই তুমি ইল্ম অর্জন করেছ, কুরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়তে শিখেছ। কাজেই মানুষ তোমাকে বড় আলিম, বড় ক্বারী ছাহেব বলেছে (তোমার বদলা তুমি পেয়েছ)।” তখন আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তাদেরকে বলবেন, “হে ফেরেশ্তারা! তোমরা এ লোকটিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।” তখন তার চুল ধরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর তৃতীয় আর একজনকে আনা হবে, যাকে অনেক সম্পদ দান করা হয়েছে। তাকে আল্লাহ্ পাক বলবেন, “হে ব্যক্তি! তোমাকে আমি দুনিয়াতে অনেক সম্পদের মালিক করেছিলাম, তার বিনিময়ে তুমি কি আমল করলে?” সে ব্যক্তি বলবে, “আয় আল্লাহ্ পাক! আমি আপনার পছন্দনীয় এমন কোন পথ নেই, যে পথে দান-খয়রাত করিনি। অর্থাৎ আপনি যতগুলো রাস্তা পছন্দ করতেন- মস্জিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, ইয়াতীমখানা, গরীব-মিস্কীন, রাস্তা-ঘাট, পুল ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রেই আমি কম-বেশী দান করেছি। কোন প্রার্থীকে আমি খালি হাতে ফিরিয়ে দেইনি। সবাইকে কম-বেশী দান করেছি, একমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য।” আল্লাহ্ পাক বলবেন, “মিথ্যা কথা। তুমি এ জন্য দান করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে, তোমাকে তা বলা হয়েছে।” আল্লাহ্ পাক তখন বলবেন, “হে ফেরেশ্তারা! এ দানশীল ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দাও।” তখন ফেরেশ্তারা তাকেও চুলে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।             বুঝা গেল, নামাযী, শহীদ, আলিম, ক্বারী, দানশীল সকলেই একটি কারণে জাহান্নামে যাবে; সে কারণটি হচ্ছে ‘ইখলাছ’ বা হাক্বীক্বত।  অর্থাৎ ইখলাছ বা হাক্বীক্বত না থাকার কারণে উল্লিখিত আমলকারীদের পক্ষে খালিছভাবে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির জন্য আমল করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

যে কারণে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

اخلص دينك يكفيك العمل القليل.

অর্থঃ- “ইখলাছের সাথে দ্বীন পালন তথা আমল কর, অল্প আমলই তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।” (তারগীব)

উল্লেখ্য, ‘ইখলাছ’ বাহ্যিক ও দৃশ্যমান কোন বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণরূপে ক্বল্ব বা অন্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটা ইল্মে তরীক্বত বা তাছাউফের সবক ‘ক্বল্বী যিক্র’-এর দ্বারা অর্জিত হয়।

আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

الا بذكر الله تطمئن القلوب.

অর্থঃ- “সাবধান! আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরের দ্বারা অন্তরসমূহ ইত্মিনান লাভ করে।” (সূরা রা’দ/২৮)

আর হাদীস শরীফে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

الشيطان جاثم على قلب ابن ادم فاذا ذكر الله خنس واذا غفل وسوس.

অর্থঃ- “শয়তান আদম সন্তানের ক্বল্বের উপর বসে থাকে। আদম সন্তান যখন আল্লাহ্ পাক-এর যিক্র করে তখন শয়তান ভেগে যায়। আর সে যখন যিকির থেকে বিরত হয় শয়তান তখন ওয়াস্ওয়াসা দেয়।” (বুখারী, মিশকাত)

الا وان فى الجسد مضغة اذا صلحت صلح الجسد كله واذا فسدت فسد الجسد كله الا وهى القلب.

অর্থঃ- “সাবধান! নিশ্চয়ই আদম সন্তানের শরীরে এক টুকরা গোশ্ত রয়েছে। সেটি শুদ্ধ হলে গোটা শরীরটাই শুদ্ধ হয় আর সেটি বরবাদ হলে গোটা শরীরটাই বরবাদ হয়ে যায়। সাবধান! সেটি হলো ক্বলব।” (বুখারী, মিশকাত)

لكل شيئ صقالة وصقالة القلوب ذكر الله.

অর্থঃ- “প্রত্যেকটি জিনিষ পরিষ্কার করার যন্ত্র রয়েছে। আর অন্তর পরিশুদ্ধ করার যন্ত্র বা মাধ্যম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর যিকির।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)     অতএব, তরীক্বতের নিয়ম মুতাবিক ক্বল্বী যিকির করলে ক্বল্ব ইছলাহ্ হয়ে যায়। তখন শয়তানের পক্ষে আর ওয়াস্ওয়াসা দেয়া সম্ভব হয়না। যার ফলে অন্তর থেকে যাবতীয় বদ খাছলত দূরীভুত হয়ে নেক খাছলত পয়দা হয়। আর তখনই ইখলাছ হাছিল হয়। তাই সকলের জন্যই তরীক্বতের নিয়ম অনুযায়ী ক্বল্বী যিকির করা ফরয।

কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

الناس كلهم هلكى الا المؤمنون والمؤمنون كلهم هلكى الا العالمون والعالمون كلهم هلكى الا العاملون والعاملون كلهم هلكى الا المخلصون والمخلصون على خطر عظيم.

অর্থঃ- “সমস্ত মানুষ ধ্বংসশীল ঈমানদারগণ ব্যতীত; এবং সমস্ত ঈমানদারগণ ধ্বংসশীল আলিমগণ ব্যতীত; এবং আলিমগণ ধ্বংসশীল আমলকারীগণ ব্যতীত; এবং আমলকারীগণও ধ্বংসশীল ইখলাছ অর্জনকারীগণ ব্যতীত। আর ইখলাছ অর্জনকারীগণ চিন্তা-পেরেশানীর মধ্যে।” (কানযুল উম্মাল)

অর্থাৎ ইখলাছ অর্জনকারীগণ আল্লাহ্ পাক-এর খালিছ বান্দা হতে পারলেন কিনা এ ভয় এবং আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ইবাদত করেন। সুতরাং একমাত্র তাঁরাই কামিয়াবী লাভ করবেন।

মারিফত

এর অর্থ হচ্ছে পরিচয়। তাছাউফের পরিভাষায় মা’রিফতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর পরিচয় লাভ করা। অথবা আল্লাহ্ পাক-এর গুপ্তভেদ বা রহস্য অবগত হওয়া।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,

وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.

অর্থঃ- “আমি জ্বীন ও মানুষকে আমার ইবাদত-বন্দিগী করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সূরা জারিয়াত/৫৬)

তাফসীরে ليعبدون শব্দের ব্যাখ্যায় ليعرفون এসেছে। অর্থাৎ আমার মা’রিফত লাভ করার জন্য জ্বীন-ইনসানকে সৃষ্টি করেছি।

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ্ পাক বলেন,

كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف.

অর্থঃ- “আমি গুপ্ত-ধনভান্ডার ছিলাম, আমার মুহব্বত হলো আমি পরিচিত হই, তখন আমি মাখলুকাত সৃষ্টি করলাম। অর্থাৎ মানবজাতিকে সৃষ্টি করলাম।”       অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ্ পাক-এর মা’রিফত হাছিল করার জন্য।

যখন কোন ব্যক্তি ইল্মে শরীয়তের উপর কায়িম থেকে ইল্মে তরীক্বত বা তাছাউফ মশক করে তখন তার মধ্যে এক প্রকার হাক্বীক্বত বা অবস্থা বা যোগ্যতা পয়দা হয়। সে যোগ্যতার কারণে সে আল্লাহ্ পাক-এর ইল্ম ও কুদরত এবং আসমা ও ছিফতের ইল্ম অর্জন করে। সে ইল্মের দ্বারা সেরূপ অনুযায়ী সে আল্লাহ্ পাক-এর মা’রিফত অর্জন করে যা তার ইহকাল এবং পরকালে আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য, দীদার ও রেযামন্দী হাছিলের কারণ।

তাই মা’রিফত হাছিল করতে হলে আল্লাহ্ পাক যে ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা হাযির-নাযির আর যে আসমা ও ছিফতের দ্বারা যাহির সে সম্পর্কে হাক্বীক্বী ইল্ম অর্জন করা।

ইল্ম ও কুদরতের দ্বারা আল্লাহ্ পাক হাযির ও নাযির এ সম্পর্কে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,

علم الغيب والشهادة.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক দৃশ্য ও অদৃশ সম্পর্কে জানেন।” (সূরা হার্শ/২২)

ان الله عليم بذات الصدور.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক অন্তরের অন্তঃস্থলের খবরও জানেন।” (সূরা আলে ইমরান/১১৯)

يعلم سركم وجهركم.

অর্থঃ- “তিনি (আল্লাহ্ পাক) তোমাদের প্রকাশ্য ও গোপন সব বিষয় সম্পর্কে জানেন।” (সূরা আনয়াম/৩)

ان الله على كل شئ قدير.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সববিষয়ে সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা বাক্বারা/২০)

ان بكل شئ محيط.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন।” (সূরা হা-মীম-সিজদা/৫৪)

وهو معكم.

অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক তোমাদের সাথে আছেন।” (সূরা হাদীদ/৪)

আল্লাহ্ পাক আসমা ও ছিফতের দ্বারা যাহির। এ সম্পর্কে কালাম পাকে ইরশাদ হয়েছে,

وف الارض ايت للموقنين وفى انفسكم.

অর্থঃ- “বিশ্বাসীগণের জন্য বহু নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে যমীনে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও।” (সূরা জারিয়াত/ ২০, ২১)

قل ادعوا الله اوادعوا الرحمن ايا ما تدعوا فله الاسماء الحسنى.

অর্থঃ- “(হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলুন, তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে আল্লাহ পাক বলে ডাক অথবা রহমান বলে ডাক। উনার নাম মুবারকসমূহের যে কোন নাম মুবারকেই ডাকতে পার। উনার সুন্দর সুন্দর অনেক নাম মুবারক রয়েছে।” (সূরা বণী ইসরাঈল/১১০)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, শরীয়ত, তরীক্বত, হাক্বীক্বত, মা’রিফত প্রতিটি বিষয়ই বান্দার জন্য অত্যন্ত জরুরী যা সম্পূর্ণ রূপেই কুরআন-সুন্নাহ সম্মত।

অতএব, যারা বলে, শরীয়ত, তরীক্বত, হাক্বীক্বত ও মা’রিফত বলতে কোন কিছু নেই তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ, মিথ্যা ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণিত হলো।

{দলীলসমূহ ঃ (১) রুহুল মায়ানী, (২) রুহুল বয়ান, (৩) মাযহারী, (৪) ইবনে কাছীর, (৫) ইবনে আব্বাস, (৬) খাযিন, (৭) বাগবী, (৮) কুরতুবী, (৯) কবীর, (১০) তাবারী, (১১) বয়ানুল কুরআন, (১২) বুখারী, (১৩) মুসলিম, (১৪) বায়হাক্বী, (১৫) তারগীব, (১৬) মুইয়াতে কবীর, (১৭) মিশকাত, (১৮) ফতহুল বারী, (১৯) উমদাতুল ক্বারী, (২০) তাইসীরুল বারী, (২১) ফতহুল মুলহিম, (২২) শরহে নববী, (২৩) মুফহিম, (২৪) মিরকাত, (২৫), আশয়াতুল লুময়াত, (২৬) লুময়াত, (২৭) শরহুত্ ত্বীবী, (২৮) তালিকুছ্ ছবীহ্, (২৯) মুযাহিরে হক্ব, (৩০) নূরুল আনোয়ার, (৩১) সিররুল আসরার, (৩২) ফতর্হু রব্বানী, (৩৩) ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন, (৩৪) কিমিয়া-ই-সায়াদাত, (৩৫) মিনযাজুল আরিফীন, (৩৬) মকতুবাত্ শরীফ, (৩৭) মুকাশাফাতুল কুলূব, (৩৮) আল বুরহানুল মুশাইয়্যাদ, (৩৯) তরীক্বত দর্পন, (৪০) আওয়ারিফুল মায়ারিফ, (৪১) লুমা, (৪২) কুওওয়াতুল কুলূব, (৪৩) আল ক্বওলুল জামীল,(৪৪) তা’লীমে মা’রিফত, (৪৫) মুরাদুল মুরীদীন, (৪৬) কাশফুল গুয়ূব, (৪৭) রিসালায়ে কুশাইরিয়া, (৪৮) মকতুবাতে সদী, (৪৯) মানতিকুত্ তায়ির, (৫০) মসনবী শরীফ, (৫১) কেলিদে মসনবী, (৫২) আনীসুল আরওয়াহ্, (৫৩) মাবদা মা’আদ, (৫৪) মুকাশিফাতে আইনিয়া, (৫৫) মা’আরিফে লাদুন্নিয়া, (৫৬) কাশফুল মাহ্যূফ, (৫৭) মিনহাজুল আবিদীন, (৫৮) ইসরারুল আউলিয়া, (৫৯) ফাওয়ায়িদুস্ সালিকীন, (৬০) ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ, (৬১) রাহাতুল কুলূব, (৬২) রাহাতুল মুহিব্বীন, (৬৩) পীর-মুরীদী তত্ত্ব, (৬৪) তাবলীগে দ্বীন, (৬৫) সিরাজুস্ সালিকীন, (৬৬) তাছাউফ তত্ত্ব, (৬৭) ইলমুত্ তাছাউফ, (৬৮) তা’লীমুদ্দীন, (৬৯) শরীয়ত্ ও তরীক্বত  ইত্যাদি)

হাফিয মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক

মতলব, চাঁদপুর।

সুওয়ালঃ বর্তমানে ৩ (তিন) শতক জমির উপর স্থাপিত সেমি পাকা মসজিদকে পার্শ্ববর্তী জমিতে (বর্তমান অবস্থান থেকে আনুমানিক ৫০ ফুট দূরে) স্থানান্তর করে, অধিকতর প্রশস্ত জায়গায় (৮/১০ শতক জমিতে) ৩ (তিন) তলা ভিত্তি প্রস্তর সহকারে নির্মাণ করতে চাই। এতে ধর্মীয় দিক থেকে কোন প্রকার বাধা বা নিষেধ আছে কিনা? জাওয়াবঃ   মসজিদ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে- সিজদার স্থান। আর শরয়ী অর্থে মসজিদ ঐ স্থানকে বলে যে স্থানকে আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মুসলমানদের নামায পড়ার জন্য ওয়াক্ফ করা হয়েছে।         মসজিদে নামায পড়ার ফযীলত হচ্ছে, যদি পাঞ্জেগানা হয় তাহলে পঁচিশ বা সাতাশ গুণ। আর যদি জুমুয়ার মসজিদ হয় তাহলে পাঁচশত গুণ। সেটা পৃথিবীর যে কোন স্থানেই হোক না কেন।

এছাড়া বাইতুল মুকাদ্দাস ও মসজিদে নববী শরীফে পঞ্চাশ হাজার গুণ। আর শুধুমাত্র বাইতুল্লাহ্ শরীফে এক লাখ গুণ ফযীলত পাওয়া যাবে।

ওয়াক্ফ ব্যতীত যে সমস্ত ঘরে নামায পড়া হয় সেগুলোকে মসজিদ বলা হয়না, নামাযের ঘর বলা হয়।

আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক জুমুয়ার নামায পড়ার জন্য ওয়াক্ফ হওয়া বা করা শর্ত নয়। কাজেই কোন ব্যক্তি যদি ওয়াক্ফ ব্যতীত কোন ঘর নির্মাণ করে সেখানে পাঞ্জেগানা নামায এবং সাথে সাথে জুমুয়ার নামায আদায় করে তাহলে উভয় নামাযই আদায় হয়ে যাবে।

কোন নামায ঘর অর্থাৎ যা মসজিদ হিসেবে ওয়াক্ফ করা হয়নি তা কাঁচা হোক, সেমি পাকা হোক, পাকা হোক অথবা বড় বিল্ডিংও যদি হয় তা সর্বাবস্থায় ভেঙ্গে স্থানান্তরিত করা শরীয়তে জায়িয রয়েছে। এতে শরয়ী কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।

আর যদি কোন মসজিদ হয় অর্থাৎ যা ওয়াক্ফকৃত তাহলে তার ওয়াক্ফনামা দেখতে হবে, কোন্ শর্তে ওয়াক্ফ করা হয়েছে।

যদি প্রয়োজনে স্থানান্তরিত করার শর্তে ওয়াক্ফ করা হয়ে থাকে তবে তা শর্ত অনুযায়ী স্থানান্তরিত করা জায়িয রয়েছে।         তবে এর মধ্যে শর্ত রয়েছে। তা হচ্ছে- (১) যে স্থানে মসজিদ স্থানান্তরিত করা হবে সে স্থানটি পূর্বের স্থান হতে অবশ্যই বেশী হতে হবে, (২) সবদিক থেকে সুযোগ-সুবিধা বেশী থাকতে হবে, (৩) অবশ্যই পরবর্তী স্থানটি পূর্ববর্তী স্থানটি হতে অধিক মূল্যবান হতে হবে।

যদি ওয়াক্ফনামায় মসজিদ স্থানান্তরিত করার কোন শর্ত-শারায়েত উল্লেখ না থাকে তাহলে প্রথমতঃ কোন অবস্থাতেই মসিজদ স্থানান্তরিত করা যাবেনা।         দ্বিতীয়তঃ যদি সেই মসজিদকে মসজিদ হিসেবে কোন অবস্থাতেই ব্যবহার করা সম্ভব না হয় তাহলে ওয়াক্ফনামায় স্থানান্তরিত করার শর্ত না থাকলেও ওজরে স্থানান্তরিত করা যাবে। তবে পূর্বের মসজিদের স্থানটিকে দেয়াল দিয়ে বা বেড়া দিয়ে বা কাটা তার দিয়ে ঘেরাও করে রাখতে হবে। তা কোন অবস্থাতেই ব্যবহার করা যাবেনা। যেমন, ঘর-বাড়ী করা, ফসলের জন্য চাষাবাদ করা, অথবা অন্য কোনভাবে।

তবে ঘেরাওকৃত মসজিদের স্থানটি দুব্বা ঘাস বা অন্যান্য জংলী গাছপালা দ্বারা জংগল হয়ে থাকবে যা কোন কাজে আসবেনা সেজন্য জায়গাটি জংগল অবস্থায় না রেখে বরং ফল-ফলাদি বা কোন দামী কাঠের গাছ লাগানো যেতে পারে যাতে লাগানো গাছের ফল বা উপযুক্ত গাছ বিক্রি করে তার অর্থ পরবর্তী মসজিদে ব্যবহার করা যাবে।   ওয়াক্ফনামায় স্থানান্তরিত করার শর্ত না থাকলেও যেসব ওজরে নিম্নের শর্তে মসজিদ স্থানান্তরিত করা জায়িয রয়েছে তা হচ্ছে- যেমন,     (১) জায়গা সংকুলান না হলে অন্যত্র বড় জায়গা দেখে স্থানান্তরিত করা যাবে। অর্থাৎ বর্তমান মসজিদের জায়গার পরিবর্তে অন্যত্র বড় জায়গা নিয়ে মসজিদ করা যাবে।           (২) যাতায়াতের রাস্তার অসুবিধা হলে।       (৩) পবিত্রতা বজায় রাখার অসুবিধা হলে।   (৪) আল্লাহ্ পাক না করুন; যদি সেই স্থান বিরান হয়ে যায় ইত্যাদি শরয়ী কারণে মসজিদ স্থানান্তরিত করা জায়িয রয়েছে।         (১) যদি স্থান সংকুলানের অভাবে মসজিদ স্থানান্তরিত করতে চায় তাহলে বর্তমান মসজিদকে মসজিদ হিসেবে রেখেও নতুন কোন জায়গায় সুবিধা মত বড় মসজিদ তৈরী করা যাবে। তবে নিকটবর্তী দুই মসজিদে জুমুয়ার নামায আদায় করতে অসুবিধা হলে পূর্ববর্তী ছোট মসজিদটিকে পাঞ্জেগানা মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করে, পরবর্তী বড় মসজিদটিকে পাঞ্জেগানাসহ জুমুয়ার মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে। এতে শরীয়তের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই।       একাধিক মসজিদ তৈরী করার ক্ষেত্রে দূরত্বের কোন শর্ত-শারায়েত শরীয়তে নেই। অর্থাৎ এত গজ, এত কিলোমিটার, এত মাইল দূরত্ব হতে হবে এ ধরণের কোন শর্ত নেই। তবে শর্ত হলো, যদি পূর্বের মসজিদ বিরান হয়ে যাবার কোনরূপ আশঙ্কা না থাকে এবং নতুন মসজিদ তৈরী করলে মুছল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়, নামায আদায়ের সুবিধা হয় তাহলে ইত্যাদি দ্বীনি উদ্দেশ্যে মসজিদ থাকার পরও তার কাছাকাছি অন্য মসজিদ নির্মাণ করা জায়িয রয়েছে।    আর যদি ব্যক্তিগত কোন্দল, জিদের বশবর্তী হয়ে, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, নাম কামানোর উদ্দেশ্যে, পূর্বের মসজিদকে বিরান করার উদ্দেশ্যে হয় তবে কোন মতেই দ্বিতীয় মসজিদ তৈরী করা জায়িয হবেনা।          (২) যদি মসজিদে যাতায়াতের রাস্তার কোন ব্যবস্থা না থাকে এবং যারা মসজিদের প্রতিবেশী তারাও কোন রাস্তা না দেয়।

(৩) যদি কোন অবস্থাতেই মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করা সম্ভব না হয় তাহলে ইত্যাদি শর্তেও মসজিদকে স্থানান্তরিত করা জায়িয রয়েছে।

(৪) আল্লাহ্ পাক না করুন; যদি কোন স্থান বিরান হয়ে যায় এবং সেখানে যদি ওয়াক্ফকৃত মসজিদ থাকে, যেহেতু কেউ সে মসজিদে নামায পড়বেনা তাই তার অস্থাবর সম্পত্তি যা স্থানান্তর হওয়ার যোগ্য তা নিকটবর্তী কোন মসজিদে ব্যবহারের জন্য দেয়া যেতে পারে। অথবা সে সম্পত্তি বিক্রয় করে তার টাকা কোন মসজিদের ফান্ডে জমা দিতে পারে। অথবা বিরান হওয়ার কারণে ঐ স্থানের লোকেরা যে স্থানে চলে গেছে সেই স্থানে নতুন মসজিদ নির্মাণ করলে বা পুরাতন কোন মসজিদ থাকলে সে মসজিদে দেয়া যেতে পারে।

আর ওয়াক্ফকৃত বিরান হওয়া মসজিদের স্থান যেহেতু স্থানান্তর করা সম্ভবপর নয় সেহেতু তা সীমানা নির্ধারণ করে চিহ্নিত করে রাখতে হবে। অথবা বিভিন্ন ফল-ফলাদি বা দামী কাঠের গাছ লাগানো যেতে পারে যাতে লাগানো গাছের ফল বা উপযুক্ত গাছ বিক্রি করে তার অর্থ স্বীয় এলাকার মসজিদের কাজে খরচ করে । পরবর্তী সময়ে সেস্থানে আবার জনবসতি গড়ে উঠলে যেন তারা ওয়াক্ফকৃত মসজিদের স্থানকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।        {দলীলসমূহ্ঃ (১) আহ্কামুল কুরআন, (২) তাফসীরে মাযহারী, (৩) তাফসীরে রুহুল মায়ানী, (৪) তাফসীরে সিরাজুম্ মুনীর, (৫) কুদুরী, (৬) আলমগীরী, (৭) মুনিয়া, (৮) ফতহুল ক্বাদীর, (৯) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (১০) ফতওয়ায়ে মাজমুয়াত, (১১) কিফায়া ইত্যাদি}

মুছাম্মত রাহেনা আখতার

সেনপাড়া, রংপুর।

সুওয়ালঃ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাদা-দাদী ও নানা-নানীগণের নাম মুবারক কি ছিলো? আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা ও চাচা এবং ফুফুরা কয় ভাই-বোন ছিলেন? তাঁদের নাম মুবারক জানালে বাধিত থাকবো।

জাওয়াবঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাদার নাম মুবারক ছিল হযরত আবদুল মোত্তালেব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও দাদীর নাম মুবারক ছিল হযরত ফাতেমা বিনতে আমর ইবনে আইছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। নানার নাম মুবারক ছিল হযরত ওহাব ইবনে আব্দে মান্নাফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও নানীর নাম মুবারক ছিল হযরত বার্রা বিনতে আবদুল উজ্জা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা এবং চাচারা বার ভাই ছিলেন। দু’জন ছোটবেলাতেই ইন্তিকাল করেছিলেন আর ফুফুরা ছয় বোন ছিলেন। হযরত আব্দুল মুত্তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যায়ক্রমে ছয়টা বিবাহ করেছিলেন। তাঁদের ঘরে সর্বমোট আঠারজন সন্তান হয়। তাঁদের নাম মুবারক নিম্নে দেয়া হলো-

(১) হযরত আবদুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (২) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৩) হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, (৪) হারিস, (৫) কাশেম (কুসুম), (৬) আবু তালেব (আব্দে মান্নাফ), (৭) আবু লাহাব (আবদুল উজ্জা), (৮) ধীরার (আবদুল কাবা), (৯) গাইদাক (জাহাস, হজল, মুগিরা, মাসাব, নাওফেল), (১০) মুকাত্তইম (মুকাইম), (১১) জুবায়ের ও (১২) আওয়াম।       আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফুফুগণের নাম মুবারক- (১) হযরত সুফীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা [সাফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা], (২) উম্মে হাকিম আল বায়জা, (৩) আত্তিকা, (৪) বার্রা, (৫) উমায়মা ও (৬) আরওয়া।

{দলীলসমূহ্ঃ (১) সীরতে ইবনে ইসহাক, (২) সীরতে ইবনে হিশাম, (৩) তবাকাতে ইবনে সা’দ, (৪) তারিখে ইবনে খালদুন, (৫)) মাদারিজুন্ নুবুওয়াহ্, (৬) সীরাতুন্ নবী, (৭) রওযুল উনফ, (৮) সীরতে হালবীয়া, (৯) মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, (১০) খাছায়িছুল কুবরা, (১১) সীরতে রহমাতুল্লিল আলামীন, (১২) যাদুল মাআদ, (১৩) আছাহ্হুস্ সিয়ার, (১৪) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, (১৫) তারীখুল কামিল, (১৬) হিসট্রি অব এরাবস্, (১৭) হিসট্রি অব সেরাসিন ইত্যাদি}

মুহম্মদ রেজার্উ রফিক

পোংশা নওগাঁ।

সুওয়ালঃ নামাযের মধ্যে যদি কোন রোকন বেশী আদায় করে। যেমন, দুই সিজদার স্থলে তিন সিজদা দেয় তাহলে কি হবে?

জাওয়াবঃ যদি কোন রোকন ইচ্ছাকৃত বেশী আদায় করে, তাহলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি অনিচ্ছাকৃত বেশী আদায় করে, তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। (সমূহ্ ফিক্বাহের কিতাব)

মুহম্মদ আমজাদ হুসাইন

ভবানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপূর।

সুওয়ালঃ নামাযের মধ্যে কোন এক রোকন ছেড়ে দিলে নামায বাতিল হবে কিনা। যেমন এক সিজদাহ্।

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, রোকন বাদ হলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। (সমূহ্ ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ আমানুল্লাহ

কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।

সুওয়ালঃ নামাযের মধ্যে ডান পা অথবা ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল স্থানচ্যূত হলে নামায বাতিল হবে কিনা?

 জাওয়াবঃ না, নামায বাতিল হবেনা। (শামী)

মুছাম্মত মাহফূজা আখতার

শ্রীনগর, মুন্সিগঞ্জ।

সুওয়ালঃ নামাযরত অবস্থায় এক পা তুললে কি হবে? জাওয়াবঃ তিন তছবীহ্ পরিমাণ তুলে রাখা মাকরূহ্। (সমূহ্ ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ জহির খান

গুলশান, ঢাকা।

সুওয়ালঃ নামাযে সেজদারত অবস্থায় দু’পা একসাথে তুুলে ফেললে নামায হবে কি?

জাওয়াবঃ যদি তিন তছবীহ্ পরিমাণ সময় একসাথে পা তুলে রাখে, তাহলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। আর যদি তিন তছবীহ্-এর চেয়ে কম হয়, তাহলে নামায সুন্নতের খিলাফ হবে। (সমূহ্ ফিক্বাহর কিতাব)

মুছাম্মত উম্মে সালমা ফারহানা

নিউ বাবুপাড়া, নীলফামারী।

সুওয়ালঃ নামাযে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়লে কি ফরয আদায় হয়ে যাবে?

জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, শুধু সুরা ফাতিহা পড়লেই ফরজ আদায় হয়ে যাবে। তবে নামাযে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। তাই অন্য সূরা ভুলে না পড়লে ওয়াজিব তরকের কারণে সাহু সিজদা দিতে হবে। (সমূহ্ ফিক্বাহের কিতাব)  মুহম্মদ সোহেল সখিপুর, টাঙ্গাইল।  সুওয়ালঃ ইমাম ছাহেবের পিছনে আলাদাভাবে ক্বিরয়াত পাঠ করা  কি? জাওয়াবঃ ইমাম ছাহেবের পিছনে ক্বিরয়াত পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। (সমূহ্ ফিক্বাহর কিতাব)  মুহম্মদ তাজুল ইসলাম কাউনিয়া, রংপুর।  সুওয়ালঃ  ছোট তিন আয়াত ও বড় এক আয়াতের ব্যাখ্যা কি? জাওয়াবঃ  ছয় অক্ষরবিশিষ্ট আয়াতকে ছোট আয়াত; আর আঠার অক্ষরবিশিষ্ট আয়াতকে বড় আয়াত বলে। (দুরুল মুখতার, শামী)  মুহম্মদ নূরুল হুদা চিলমারী, কুড়িগ্রাম।  সুওয়ালঃ  নামাযে আউযুবিল্লাহ্ ও বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করার হুকুম কি? জাওয়াবঃ  প্রত্যেক নামাযের প্রথম রাকায়াতে ছানা পড়ার পর, ক্বিরয়াত পাঠ করার পূর্বে আউযুবিল্লাহ্ ও বিস্মিল্লাহ্ উভয় পাঠ করা সুন্নত। যদি জামায়াতে হয়, তবে শুধুমাত্র ইমাম ছাহেবের পাঠ করা সুন্নত। মুক্তাদির পাঠ করা সুন্নত নয়। কারণ আউযুবিল্লাহ্ ও বিস্মিল্লাহ্ হলো ক্বিরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। একা নামাযীর জন্যও পাঠ করা সুন্নত। বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা পরবর্তী প্রতি রাকায়াতের শুরুতে সুন্নত।     আর প্রকাশ্য নামাযে সূরা মিলানোর পূর্বে বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা সুন্নত নয়, সূরার শুরু থেকে শুরু করুক অথবা মধ্য থেকে শুরু করুক। চুপে চুপে নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে সূরা পাঠ করবে, তা যদি সূরার শুরু থেকে শুরু করে, তবেই শুধু বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা সুন্নত। আর যদি সূরার মধ্য থেকে শুরু করে, তাহলে বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা সুন্নত নয়।      {দলীলসমূহঃ (১) আলমগীরী, (২) শামী, (৩) গায়াতুল আওতার, (৪) হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, (৫) কবিরী, (৬) দুররুল মুখতার ইত্যাদি}  মুহম্মদ আব্দুল কাদির সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত মানিকগঞ্জ।

সুওয়ালঃ নামাযে তাক্বীরে তাহ্রীমা বলার সময় হাতদ্বয় কোন পর্যন্ত উপরে উত্তোলন করতে হয়?

জাওয়াবঃ  আমাদের হানাফী মায্হাবে কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠানো এবং লতি স্পর্শ করা সুন্নত। তাক্বীরে তাহ্রীমা বলার সময় কাঁধের নীচে অথবা কানের উপরে হাত উত্তোলন করা মাকরূহ্  তানযীহি। (ছগীরী)

মুছাম্মত রেহানা আখতার রীনা মিরপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  নামাযে পুরুষ ও মেয়েদের হাত বাঁধার সুন্নত তরীক্বা কি?

জাওয়াবঃ পুরুষেরা তাকবীরে তাহ্রীমা বাঁধার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠাবে। আর মেয়েরা কাঁধ বরাবর হাত উঠাবে এবং পুরুষেরা হাত বাঁধবে নাভির নীচে আর মেয়েরা হাত বাঁধবে বুকের (স্তনদ্বয়ের) উপর।

হাত বাঁধার নিয়মঃ- পুরুষের হাত বাঁধার ছূরত তিনটি। যথা- (১) বাম হাতের কব্জি বরাবর ডান হাতের কব্জি রেখে ডান হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরবে এবং ডান হাতের অনামিকা, মধ্যমা ও শাহাদত অঙ্গুলী স্বাভাবিকভাবে বাম হাতের কব্জির উপর রাখবে। (২) বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে বাঁধবে। (৩) বাম হাতের কব্জির উপর ডান হাত রেখে ধরবে।  মেয়েদের হাত বাঁধার ছূরত একটি। আর তাহচ্ছে- মেয়েরা পুরুষের ন্যায় হাতের কব্জি জড়িয়ে ধরবে না বরং তারা বাম হাতের পিঠ বরাবর ডান হাতের তালু রাখবে। {দলীলসমূহঃ (১) শামী, (২) আলমগীরী, (৩) শরহে বিকায়া, (৪) গায়াতুল আওতার, (৫) বাহ্রুর রায়িক ইত্যাদি)

  মুহম্মদ সাইফুল হাবীব গাবতলী, বগুড়া।

সুওয়ালঃ  শরীরের যে সমস্ত অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয, তার কতটুকু কি পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকলে নামায বাতিল হয়ে যাবে?

জাওয়াবঃ  নামাযের মধ্যে যে সমস্ত অঙ্গ বা স্থান ঢেকে রাখা ফরয সে সকল স্থানের কিছু কিছু অনাবৃত হয়ে গেলে যদি সেই অনাবৃত স্থানের কয়েক অংশ মিলিত হয়ে এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট অঙ্গের এক চুতর্থাংশ হয় এবং তিন তছবীহ্ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।

{বিঃ দঃ- কোন এক অঙ্গের এক চতুর্থাংশ স্থান তিন তছবীহ্ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকলেই নামায বাতিল হয়ে যাবে} (সমূহ্ ফিক্বাহের কিতাব)

মুছাম্মত সানজিদা আখতার জীবননগর, কুষ্টিয়া।

সুওয়ালঃ  নামাযে দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় পায়ের অঙ্গুলী কোনদিকে থাকবে এবং বসা ও সিজ্দা অবস্থায় হাত ও পা উভয়ের অঙ্গুলীসমূহ কোন দিকে থাকা সুন্নত?

জাওয়াবঃ  দাঁড়ানো, রুকু, বসা ও সিজ্দা অবস্থায় পায়ের অঙ্গুলীসমূহ ক্বিবলামুখী রাখা সুন্নত। আর তাক্বীরে তাহ্রীমা, বসা ও সিজ্দা অবস্থায় হাতের অঙ্গুলিসমূহ ক্বিবলামুখী রাখা সুন্নত যা হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। এর খিলাফ করা মাকরূহ তান্যীহী। (মারাকিউল ফালাহ্, কবিরী ইত্যাদি ফিক্বাহ্র কিতাব দ্রষ্টব্য)

মুহম্মদ ইমরান  চামিলীবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ মসজিদে যদি ফজর নামাযের জামায়াত শুরু হওয়ার পর কোন মুক্তাদী আসে তাহলে সে সুন্নত নামায কোথায় পড়বে?

জাওয়াবঃ জামায়াত চলাকালীন মসজিদে অন্য কোন নামায পড়া মাকরূহে তাহ্রীমী। অগত্যা সুন্নত নামায পড়তে চাইলে মসজিদের বারান্দায় বা বাইরে আদায় করবে। যদি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও নামায পড়ার জায়গা না থাকে তবে মসজিদের এক কোণে যা কাতারের বাইরে এমন জায়গায় আদায় করে নিবে। (সমূহ্ ফিক্বাহর কিতাব)

নেছার আহমদ মুহম্মদিয়া মেডিকেল সেন্টার, ঢাকা।

সুওয়ালঃ নামায যদি মাকরূহ তাহ্রীমীর সাথে অথবা মাকরূহ্ তানযীহীর সাথে আদায় করে তবে সেই নামায কি দোহ্রাতে হবে?

জাওয়াবঃ নামায মাকরূহে তাহরীমীর সাথে আদায় করে ফেললে নামায দোহরিয়ে পড়া ওয়াজিব। আর মাকরূহে তানযীহীর সাথে আদায় করে ফেললে তা দোহ্রিয়ে পড়া মুস্তাহাব। (আলমগীরী, শামী)

সাইয়্যিদ শাবীব আহমদ মাদ্রাসা-ই-আলীয়া, ঢাকা।

সুওয়ালঃ কোন নামাযী ব্যক্তি যদি নামাযরত অবস্থায় ক্বিরয়াত পাঠের সময় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম-এর নাম মুবারক পড়ে বা শুনে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করে, তবে কি তার নামায বাতিল হবে?

জাওয়াবঃ কোন নামাযী ব্যক্তি যদি নামাযরত অবস্থায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক পড়ে বা শুনে জাওয়াব দেয়ার খেয়ালে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করে তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি উত্তর দেয়ার নিয়ত ব্যতীত এমনি বলে তবে তার নামায বাতিল হবেনা। (খুলাছাতুল ফতওয়া)

ইয়্যিদ মুহম্মদ শহীর্দু রহমান  মোহনগঞ্জ, নেত্রকোণা

সুওয়ালঃ কেউ যদি নামাযরত অবস্থায় কোন দুঃসংবাদ শুনে ইন্না লিল্লাহি  …. পাঠ করে, তবে  কি তার নামায বাতিল হবে?

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, নামাযরত অবস্থায় ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক কেউ যদি ইন্না লিল্লাহি …. পাঠ করে, তাহলে তার নামায বাতিল হবে। (মারাকিউল ফালাহ)  মুহম্মদ আহ্সানুল হক মালিবাগ, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  যদি মাটির বাসন, মাটির খোড়া বা কলসি দিয়ে তায়াম্মুম করা হয়, তাহলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে কিনা? জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, শুদ্ধ হবে। (সমূহ্ ফিক্বাহ্র কিতাব)  মুহম্মদ গিয়াসুদ্দীন সদর, মৌলভীবাজার।

সুওয়ালঃ  চীনা মাটির বাসনে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে কিনা? জাওয়াবঃ  চীনা মাটির বাসনের উপরে যদি মাটির প্রলেপ থাকে তাহলে তায়াম্মুম শুদ্ধ হবে। আর যদি কাঁচের প্রলেপ থাকে, তাহলে শুদ্ধ হবে না। (সমূহ্ ফিক্বাহের কিতাব)

মুহম্মদ গোলাম মওলা সাভার, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  তিলাওয়াতে সিজ্দাহ্ মাকরূহ্ ওয়াক্তে আদায় করা যায় কি? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ  তিলাওয়াতে সিজ্দাহ্ মাকরূহ্ ওয়াক্তে আদায় করা মাকরূহ্ তান্যীহী। দেরী করে ভাল ওয়াক্তে আদায় করা উত্তম। (দুররুল মুখতার)  মুহম্মদ আব্দুল মালিক কাউখালী, পিরোজপুর।  সুওয়ালঃ ইমাম ছাহেবের আখিরী বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে মাসবুক (যে মুক্তাদির প্রথম দিকে এক বা একাধিক রাকায়াত নামায ফউত হয়ে গিয়েছে)-এর দাঁড়ানো জায়িয আছে কিনা?

জাওয়াবঃ মাসয়ালা হলো- ইমাম ছাহেব ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে যখন বাম দিকে সালাম ফিরানো শুরু করবেন তখন মাসবুক দাঁড়িয়ে তার বাকী নামায যথারীতি শেষ করবে। তবে যদি এমন অবস্থা হয় যে, মোজা মসেহ্কারীর মুদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার, মাজুর ব্যক্তির ওয়াক্ত ফউত হওয়ার, জুমুয়ার নামাযে আসরের ওয়াক্ত হওয়ার, ঈদের নামাযের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার, ফজর নামাযের সূর্য উদিত হওয়ার এবং ওযু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে ইমাম ছাহেব সালাম ফিরানোর পূর্বে এবং তাশাহুদ পাঠ করার পর মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট নামায যথারীতি শেষ করতে পারবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)

মুহম্মদ আব্দুস্ সবুর অটোয়া, কানাডা।

সুওয়ালঃ  ক্বিবলামুখী হয়ে অথবা ক্বিবলাকে পিছনে রেখে পেশাব-পায়খানা করা কি?

জাওয়াবঃ নাজায়িয। কারণ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন

اذا اتيتم الغائط فلاتستقبلوا القبلة ولاتستدبروها.

অর্থঃ- “যখন তোমরা পেশাব-পায়খানায় আসবে অর্থাৎ পেশাব-পায়খানা করবে, তখন তোমরা ক্বিবলাকে সম্মুখেও রাখবেনা এবং পিছনেও রাখবেনা।” (মিশকাত শরীফ) আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক ক্বিবলাকে সামনে অথবা পিছনে রেখে তা খোলা জায়গায় হোক কিংবা আবদ্ধ জায়গায় হোক পেশাব-পায়খানা করা হারাম ও নাজায়িয। এটা ক্বিবলার তা’যীম বা সম্মানার্থে।     {দলীলসমূহঃ (১) বুখারী, (২) মুসলিম, (৩) মিশকাত, (৪) উমদাতুল ক্বারী, (৫) ফতহুল বারী}

সাইয়্যিদ মুহম্মদ তীতুমীর সদর, সাতক্ষীরা।

সুওয়ালঃ  শরীয়তের দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করা কি? জাওয়াবঃ  হারাম ও নাজায়িয। (হাদীস শরীফ ও সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব দ্রষ্টব্য)  মুহম্মদ জমির হুসাইন কসবা, বি-বাড়ীয়া।

সুওয়ালঃ ব্যাঙ খাওয়া এবং বিক্রি করার ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? জাওয়াবঃ ব্যাঙ খাওয়া এবং বিক্রি করে পয়সা গ্রহণ করা হারাম। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)  মুহম্মদ  আব্দুর রশীদ  মতলব, চাঁদপুর।  সুওয়ালঃ  ওশর কি? কি পরিমাণ ধান পেলে ওশর দিতে হবে এবং কাকে দেয়া যাবে?

জাওয়াবঃ উৎপাদিত ফসলের  দশভাগের একভাগকে ওশর বলা হয়। যা ফসলের যাকাত হিসেবে আদায় করতে হয়। যাকাতের মত ওশরও ফরয। ওশর সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন, انفقوا من طيبت ما كسبتم ومما اخرجنالكم من الارض

অর্থঃ- “তোমরা (আল্লাহ্ পাক-এর রাস্তায়) ব্যয় কর তোমাদের উপার্জিত মালের অংশ থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্য যমীন হতে বের করেছি তার অংশ থেকে অর্থাৎ ওশর দাও।” (সূরা বাক্বারা/২৬৭)

তিনি আরো ইরশাদ করেন, واتوا حقه يوم حصاده.

অর্থঃ- “এবং আদায় কর তার হক্ব (ওশর) শস্য কাটার সময়।” (সূরা আনয়াম/১৪১)  ধান বা যে কোন ফসল বিনা সেচে (অর্থাৎ বৃষ্টি বা ঝর্ণার পানিতে) উৎপন্ন হলে উৎপাদিত ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে (ওশর) আদায় করতে হয়। সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হলে বিশ ভাগের এক ভাগ আদায় করতে হবে। ওশর ফসলের যাকাত বিধায় যাকাতের খাতসমূহে অর্থাৎ যারা যাকাত নেয়ার উপযোগী তাদেরকে দিতে হবে।    উল্লেখ্য, আমাদের হানাফী মাযহাবে ওশরের কোন নেছাব নেই। (বাদায়িউস সানায়ি)  মুছাম্মত নূরবানু বেগম সভানেত্রী- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত চিলমারী থানা শাখা, কুড়িগ্রাম।  সুওয়ালঃ  আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যুগে মায্হাব ছিল কি? কখন হতে মায্হাবের সূচনা হয় এবং মায্হাব মানা কি? মায্হাব না মানলে কি হবে? দলীলসহ জানতে চাই। জাওয়াবঃ  মায্হাবের আভিধানিক অর্থ পথ। শরীয়তের পরিভাষায় যে পথে চলার কারণে শরীয়ত অনুযায়ী আমল করে আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি হাছিল করা সম্ভব হয়।    আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে মায্হাবের কোন প্রশ্নই আসে না। কারণ, সে সময় সরাসরি ওহীর দ্বারা ফায়সালা করা হতো। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জেনে আমল করতেন। প্রত্যেক ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আলাদা আলাদা মায্হাব ছিল।   যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم.

অর্থ- “আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ তারকা সদৃশ। তাঁদের যে কোন একজনকে অনুসরণ করলে তোমরা হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।”(মিশকাত) মূলতঃ মায্হাবের উৎপত্তি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ থেকে শুরু হয়েছে এবং তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীনগণের মধ্যে অনেকেই মায্হাবের ইমাম ছিলেন। কেননা শুরু যামানায় অনেকেই মুজতাহিদ ছিলেন তাঁরা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ পড়ে নিজেই ইজতিহাদ করে চলতেন, কারো অনুসরণ করার প্রয়োজন ছিলনা।   হিজরী শতকের তৃতীয় শতাব্দী থেকে হানাফী (৮০-১৫০), মালিকী (৯৩ বা ৯৫ -১৭৯) শাফিয়ী (১৫০-২০৪) ও হাম্বলী (১৬৪-২৪৬) মায্হাব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সর্বজন মান্য হিসেবে গৃহীত হয়।         আর চতুর্থ হিজরী শতকে ইজ্মা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, উক্ত চার মায্হাবের যে কোন এক মায্হাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব ও ফরয এবং তা অমান্য করা বিদয়াতী ও গোমরাহী।

এছাড়াও সাধারণ লোকেরা অনেককে মায্হাবের ইমাম হিসেবে অনুসরণ করেছেন। যেমন- হযরত ছূফীয়ান সাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আওযায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ছূফী ইবনে ওয়াইনিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ। কিন্তু তাঁদের কিতাবাদিতে দ্বীনের সকল বিষয়ের মাসয়ালা-মাসায়িল না থাকার দরুণ তার বিলুপ্তি ঘটে এবং উপরোক্ত মায্হাব চতুষ্ঠয় প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিস্তার লাভ করে। আর রাষ্ট্র পরিচালনার মাসয়ালা-মাসায়িল একমাত্র হানাফী মায্হাবেই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, প্রত্যেক মুসলমানের উপর মায্হাবের অনুসরণ করা একান্ত অপরিহার্য তথা ওয়াজিব ও ফরয এবং তা অস্বীকারকারী গোমরাহ্, বিদ্য়াতী এবং পথভ্রষ্ট।    {দলীলসমূহঃ (১) বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন, (২) সায়েকাতুল মুসলিমীন, (৩) ইয়াম্বু ইনসাফ, (৪) তাইছিরুল উসূল, (৫) ইকমাল, (৬) ইবনে খালকান, (৭) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (৮) তাবীনুল মাহারেম, (৯) নূরুল আনোয়ার, (১০) ইকদুলজিদ ইত্যাদি} [ বিঃ দ্রঃ- পরবর্তীতে আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাতে মায্হাব সম্পর্কে বিস্তারিত ফতওয়া দিব ইনশাআল্লাহ্ ]

মুহম্মদ মিজানুর রহমান আহবায়ক- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, বরগুণা।

সুওয়ালঃ নামাযে সাহু সিজ্দা ওয়াজিব হওয়ার পর সিজ্দা না করে ডানে বামে সালাম ফিরানোর পর মনে পড়লো সাহু সিজ্দা করিনি। এখন কি করতে হবে, নামায কি পূণরায় পড়তে হবে? দয়া করে বিস্তারিত জানাবেন।

জাওয়াবঃ  আখিরী বৈঠকে সালাম ফিরানোর পর মুসল্লির মুখ, সিনা যদি ক্বিবলার দিক থাকে, অন্য দিকে না ঘুরে বসে বা কোন প্রকার কথা না বলে থাকে এবং নামায ভঙ্গ হবার কোন কারণ যদি সংঘঠিত না হয়, তাহলে সাহু সিজ্দা দিয়ে পুণরায় তাশাহুদ, দুরূদ শরীফ, দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফিরালেই হয়ে যাবে। নামায পূণরায় পড়তে হবে না। এর বিপরীত হলে নামায পূণরায় পড়তে হবে। (সমূহ্ ফিক্বাহ্র কিতাব)

মুহম্মদ হাসান শহীদ কামরুয্ যামান সদর, যশোর।

সুওয়ালঃ  কেউ যদি চতুর্থ রাকায়াতের পর বসতে ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে পঞ্চম রাকায়াত পূর্ণ করে ফেলে তাহলে কি সিজ্দায়ে সাহু দিলে চলবে?

জাওয়াবঃ  চতুর্থ রাকায়াতের পর অর্থাৎ আখিরী বৈঠকে বসা ফরয। এ ফরয ভুলে তরক করার মধ্যে কয়েকটি নিয়ম রয়েছে। যেমন, (১) ভুলে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সময় যদি শরীরের নিম্নার্ধ সোজা হওয়ার পূর্বে স্মরণ হয়, তাহলে বসে আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাছূরা পড়ে সালাম ফিরাবে, সিজ্দায়ে সাহু করতে হবেনা। নামায শুদ্ধভাবে আদায় হয়ে যাবে। (২) ভুলে যদি সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর স্মরণ আসে অথবা দাঁড়ানোর পর সূরা ফাতিহা পড়ার পর স্মরণ হয় অথবা পঞ্চম রাকায়াতে রুকু করার পরও এমনকি সিজ্দার পূর্বে যদি স্মরণ হয়, তাহলে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ে সিজ্দায়ে সাহু করতে হবে এবং বাকী নামাজ যথারীতি শেষ করতে হবে। (৩) আর যদি পঞ্চম রাকায়াতে সিজ্দা করার পর স্মরণ হয়, তাহলে না বসে দাঁড়িয়ে আরো এক রাকায়াত পড়ে ছয় রাকায়াত পূর্ণ করবে। এ নামায নফল হয়ে যাবে। পুণরায় তাকে চার রাকায়াত ফরয আদায় করতে হবে। (৪) যদি ষষ্ঠ রাকায়াত না মিলিয়ে পঞ্চম রাকায়াত পড়ে নামায শেষ করে ফেলে, তবে এক রাকায়াত বাতিল হয়ে চার রাকায়াত নফল হবে। ফরয চার রাকায়াত পুণরায় আদায় করতে হবে। (সমূহ্ ফিক্বাহ্র কিতাব)  হাফিয আনোয়ার হুসাইন নলছিটি, ঝালকাটি।  সুওয়ালঃ  কেউ যদি চার রাকায়াত নামায পূর্ণ করে অর্থাৎ আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর সালাম না ফিরিয়ে ভুলে দাঁড়িয়ে যায়, তবে তার কি হুকুম?

জাওয়াবঃ  শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর সালাম ফিরানোর পূর্বে ভুলে যদি দাঁড়িয়ে যায়, আর পঞ্চম রাকায়াতে সিজ্দাহ্ করার পূর্বে স্মরণ হয়, তবে তৎক্ষণাৎ বসে আত্তাহিয়্যাতু না পড়ে একদিকে সালাম ফিরিয়ে সিজ্দায়ে সাহু করবে, অতঃপর যথারীতি নামায শেষ করবে। আর যদি পঞ্চম রাকায়াতে সিজ্দা করার পর স্মরণ হয়, তাহলে আরো এক রাকায়াত পড়ে ষষ্ঠ রাকায়াত পূর্ণ করে সিজ্দায়ে সাহু দিয়ে নামায শেষ করবে। এতে চার রাকায়াত ফরজ এবং দু’রাকায়াত নফল আদায় হবে। আর যদি পঞ্চম রাকায়াতেই সিজ্দায়ে সাহু দিয়ে নামায শেষ করে ফেলে, তাহলে চার রাকায়াত ফরয আদায় হবে এবং এক রাকায়াত বাতিল বলে গণ্য হবে কিন্তু এটা করা ঠিক হবেনা। (সমূহ্ ফিক্বাহ্র কিতাব)

মুহম্মদ বেলাল হুসাইন  বাংলাবাজার, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  স্বর্ণ বা রৌপ্য দ্বারা দাঁত, নাক ইত্যাদি বাঁধাই করা জায়িয আছে কি?

জাওয়াবঃ  রৌপ্য দ্বারা দাঁত বাঁধাই করা জায়িয আছে। স্বর্ণ দ্বারা বাঁধাই জায়িয নেই। আর কর্তিত নাক স্বর্ণ, রৌপ্য উভয়ই দ্বারা বাঁধা জায়িয রয়েছে। বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আলফাজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর এক জিহাদে নাক কাটা গিয়েছিল। যার কারণে প্রথমে তিনি রৌপ্য দ্বারা নাক প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন, তাতে দূর্গন্ধ হওয়ায় আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে স্বর্ণের নাক তৈরী করার অনুমতি দিয়েছিলেন। এটাই বিশুদ্ধ ফতওয়া। যদিও কোন কোন কিতাবে এর বিপরীত উল্লেখ করা হয়েছে।  {দলীলসমূহঃ (১) জামে’ সগীর, (২) তহাবী, (৩) শামী, (৪) তাহ্তাবী, (৫) জরুরী ফতওয়া ইত্যাদি}

সাইয়্যিদ মুহম্মদ নাজিরুল ইসলাম কালকিনী, মাদারীপুর।

সুওয়ালঃ  বসে দু’রাকায়াত বিশিষ্ট নফল নামায পড়ার সময় প্রথম রাকায়াতে দ্বিতীয় সিজ্দার পর হস্তদ্বয় হাঁটুতে রেখেই সূরা ফাতিহা বা তাশাহ্হুদ পড়ার পর ভুলের কথা স্মরণ হলে এক্ষেত্রে কিভাবে নামায আদায় করবে?

জাওয়াবঃ  দ্বিতীয় রাকায়াতের শুরুতে হাত বাঁধা সুন্নত। যদি ভুলে হাত না বেঁধে হাঁটুতে হাত রেখেই দ্বিতীয় রাকায়াতের জন্য সূরা ফাতিহা পড়া শুরু করে তাহলে স্মরণ হওয়া মাত্রই হাত হাঁটুু থেকে তুলে সুন্নত মুতাবিক হাত বেঁধে যথা নিয়মে বাকী নামায আদায় করবে।

আর যদি দ্বিতীয় রাকায়াতের শুরুতে হাত না বেঁধে হাত হাঁটুতে রেখেই সূরা ফাতিহার স্থলে তাশাহ্হুদ পাঠ করে অতঃপর ভুলের কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই সুন্নত মুতাবিক হাত বেঁধে সূরা ফাতিহার পর সূরা মিলিয়ে যথানিয়মে বাকী নামায আদায় করবে। উপরোল্লিখিত উভয় ছূরতে সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা।  {দলীলসমূহঃ (১) আলমগীরী, (২) যাহিরীয়া, (৩) খানিয়া, (৪) তাবঈন ইত্যাদি}  মুহম্মদ শফিকুর রহ্মান সাভার, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  কেউ যদি আত্তাহিয়্যাতু পড়তে বসে ভুলে সূরা ফাতিহা বা অন্য কিছু পড়ে বা নামাযের নিয়ত বেঁধে ছানা পড়ার পরিবর্তে ভুলে দোয়া কুনূত বা অন্য কিছু পড়ে অথবা ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরিবর্তে আত্তাহিয়্যাতু বা অন্য কিছু পড়ে, তাহলে কি সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবে?

জাওয়াবঃ  তিন বা চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামাযের দ্বিতীয় রাকায়াতে তাশাহ্হুদ পড়তে বসে যদি কেউ ভুলে তাশাহ্হুদ দু’বার পড়ে ফেলে কিংবা তাশাহ্হুদ একবার পড়ার পর আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিন পর্যন্ত দরূদ শরীফ পড়ে ফেলে অতঃপর স্মরণ হওয়া মাত্র দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। এর কম পড়লে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা। সুন্নতে যায়িদা ও নফল নামাযের দ্বিতীয় রাকায়াতে তাশাহ্হুদের পর দরূদ শরীফ পাঠ করলে সিজাদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। কারণ, সুন্নতে যায়িদা ও নফল নামাযে দরূদ শরীফ পড়া জায়িয রয়েছে কিন্তু তাশাহ্হুদ দু’বার পড়লে সিজাদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। এমননিভাবে কেউ যদি তাশাহ্হুদ পড়তে বসে ভুলে অন্য কিছু যেমন- ছানা, দোয়া কুনূত, সূরা ফাতিহা পড়ে তবে তাতে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।  আর নামাযের নিয়ত বেঁধে ছানা পড়ার পরিবর্তে ভুলে দোয়া কুনুত বা আত্তাহিয়্যাতু ইত্যাদি কোন কিছু পড়লে অথবা ফরয নামাযের তৃতীয় বা চতুর্থ রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পরিবর্তে অন্য কিছু পড়লে যেমন- আত্তাহিয়্যাতু, ছানা বা যে কোন সূরা, তাহলে সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা। (সমূহ ফিক্বাহ্রে কিতাব)

মুহম্মদ মনির হুসাইন টেক্কা, সিঙ্গাপুর।

সুওয়ালঃ  কেউ যদি তিন বা চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামাযের দ্বিতীয় রাকায়াতের পর বসতে ভুলে গিয়ে তৃতীয় রাকায়াত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যায় তাহলে সে কিভাবে নামায শেষ করবে?

জাওয়াবঃ  তিন বা চার রাকায়াত বিশিষ্ট ফরয নামাযের দ্বিতীয় রাকায়াতের পর বসতে ভুলে গিয়ে তৃতীয় রাকায়াত আদায়ের জন্য দাঁড়াতে শুরু করে এবং শরীরের নিম্নার্ধ সোজা হওয়ার পূর্বে বসে পড়ে তবে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। কিন্তু যদি শরীরের নিম্নার্ধ সোজা হয়ে যায় তাহলে আর না বসে দাঁড়িয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট নামায আদায় করার পর সিজদায়ে সাহু দিয়ে নামায শেষ রবে।  সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর কেউ বসে তাশাহ্হুদ পড়লে সে গুণাহ্গার হবে এবং এ ক্ষেত্রেও তার নামায আদায় হওয়ার জন্য সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। (সমূহ ফিক্বাহের কিতাব)

মুহম্মদ জাহিদুল হক সদর, ঝিনাইদহ।

সুওয়ালঃ  বিত্র নামাযে দোয়া কুনুতের স্থলে কেউ যদি ভুলে ছানা পড়ে তবে কি সিজ্দায়ে সাহু করতে হবে? জাওয়াবঃ দোয়া কুনূতের স্থলে ভুলে ছানা পড়ার পর স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে দোয়া কুনুত পড়ে নিবে, এতে সিজ্দায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

মুহম্মদ মাহ্বুবুর রহমান চকশিয়ালকোল, সিরাজগঞ্জ।

সুওয়ালঃ কেউ যদি বিত্র নামাযে দোয়া কুনুত পাঠ করতে ভুলে যায় এবং নামায শেষ করার পূর্বেই স্মরণ হয়, তখন সে কি করবে?

জাওয়াবঃ  এমতাবস্থায় উক্ত নামাযী সিজ্দায়ে সাহু দিয়ে নামায শেষ করবে। কেননা বিত্র নামাযে দোয়া কুনুত পাঠ করা ওয়াজিব ছিল। সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় তরকে ওয়াজিবের কারণে। আর এ ওয়াজিব উক্ত নামাযী থেকে ভুলে ছুটে যায়। শরীয়তের মাসয়ালা হলো, ওয়াজিব ভুলে ছুটে গেলে সিজ্দায়ে সাহু দিলে নামায বিশুদ্ধ হয়ে যাবে। আর ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ছেড়ে দিলে নামায দোহ্রিয়ে পড়া ওয়াজিব। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব)

মুহম্মদ মাসুদুর রহমান ঘোড়াশাল, নরসিংদী।

সুওয়ালঃ যদি কেউ ভুলে বিত্র নামাযের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়ে ফেলে, তাহলে তাকে তৃতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়তে হবে কিনা?

জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, তাকে তৃতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়তে হবে। কারণ তৃতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব, আর প্রথম কিংবা দ্বিতীয় রাকায়াতে ভুলে দোয়া কুনূত পড়ার কারণে সিজ্দায়ে সাহু দিয়ে তাকে নামায শেষ করতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

মুহম্মদ মফিজুল ইসলাম রোম, ইতালি।

সুওয়ালঃ নামাযের বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার স্থলে যদি অন্য কিছু পড়ে ফেলে যেমন, সূরা-ক্বিরাত বা দোয়া ইত্যাদি তাহলে কি সিজদায়ে সাহু দিতে হবে?

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, নামাযের বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার স্থলে যদি অন্য কিছু পড়ে এবং তা যদি তিন তসবীহ্ কিংবা তার চেয়ে বেশী হয় তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

মেজর মুহম্মদ মুবাশ্বের বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট, বগুড়া।

সুওয়ালঃ আমরা আলিমগণের মুখে শুনেছি যে, ‘আযানের সময় দুনিয়াবী কথা বললে নাকি ক্ষতি হয়।’ উক্ত বক্তব্য সঠিক কিনা জানাবেন?

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, আযানের সময় দুনিয়াবী কথা বললে ক্ষতি হয়। শুধু আযানের সময়েই নয়, সর্বমোট পাঁচ স্থান বা সময়ে দুনিয়াবী কথা বললে চল্লিশ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যায়।   যেমন, (১) মসজিদের মধ্যে, (২) কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময়, (৩) আযানের সময়, (৪) আলিমদের মজলিসে এবং (৫) কবরস্থানে। (তাফসীরে আহ্মদী)

মুহম্মদ আব্দুল মতিন চব্বিশপরগণা, ভারত।

সুওয়ালঃ পুরুষের জন্য তাকবীরে তাহ্রীমা বাঁধার সময় কানের  উপরিভাগে হাত উঠালে কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াবঃ  পুরুষের জন্যে কানে উলার সময় হাত স্কন্ধের নিম্নে বা কানের উপরিভাগে উঠানো মাকরূহ্ তানযীহী। (ছগীরী)

মুহম্মদ নূরুল ইসলাম আহবায়ক- ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত টেকনাফ, কক্সবাজার।

সুওয়ালঃ ডান দিকে সালাম না ফিরিয়ে  সিজদায়ে সাহু করলে সিজদায়ে সাহু আদায় হবে কিনা?

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, সিজদায়ে সাহু আদায় হবে তবে মাকরূহ্ তানযীহ্ হবে। (কবীরী) মুহম্মদ আতিকুল আলম সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত, নাটোর। সুওয়ালঃ  দেয়াল বা অন্য কিছুর সাথে ঠেস দিয়ে নামায পড়া যাবে কিনা?

জাওয়াবঃ  বিনা ওজরে দেয়াল বা অন্য কিছুর সাথে ঠেস দিয়ে নামায পড়া মাকরূহ্। (কাযীখান)

মুহম্মদ রহমত আলী সভাপতি- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত,   ভোলাহাট, চাপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়ালঃ  লোহার টুপি মাথায় দিয়ে নামায পড়া জায়িয কিনা?

জাওয়াবঃ  লোহার টুপি মাথায় দিয়ে নামায পড়া মাকরূহ্। কিন্তু যুদ্ধস্থলে জায়িয। (আলমগীরী)

আবুল বাশার মুহম্মদ সাইদুজ্জামান

সাধারণ সম্পাদক- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রাজশাহী কলেজ শাখা, রাজশাহী।

সুওয়ালঃ নামাযের মধ্যে শরীর চুলকালে নামায ভঙ্গ হবে কি?

জাওয়াবঃ  বিনা ওজরে শরীর খুজলান বা শরীরের কাপড় ইত্যাদি ঝাড়া মাকরূহ্ তাহরীমী। কিন্তু খুজলী ইত্যাদি হওয়ার কারণে আবশ্যক হলে শরীর খুজলান বা শরীরের ঘাম ইত্যাদিতে কষ্ট হলে কাপড় দ্বারা মুছে ফেললে মাকরূহ্ হবেনা। (গায়াতুল আওতার)

মুহম্মদ তাজুল ইসলাম পাইকগাছা, খুলনা।

সুওয়ালঃ রুকুর মধ্যে ক্বিরয়াত পাঠ করলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি?

জাওয়াবঃ  রুকূর মধ্যে, সেজদার মধ্যে কিংবা তাশাহুদের স্থানে ক্বিরয়াত পাঠ করা মাকরূহ্।(শামী)

মুহম্মদ মাহাদিউল ইসলাম মালীবাগ চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  জুমুয়ার খুৎবা তিওয়ালে মুফাছ্ছাল অপেক্ষা বেশী হলে মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। কিন্ত বর্তমানে অধিকাংশ ইমামকেই এরূপ করতে দেখা যায়।    প্রশ্ন হচ্ছে- জুমুয়ার খুৎবা কতটুকু হবে অর্থাৎ কি পরিমাণ খুৎবা হওয়া সুন্নত? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, জুমুয়ার খুৎবা তিওয়ালে মুফাছ্ছাল থেকে বড় হলে মাকরূহ্ তাহরীমী হবে। তিওয়ালে মুফাছ্ছালের পরিমাণ হলো সূরা হুজুরাত থেকে সূরা বুরূজ পর্যন্ত। অর্থাৎ এর মধ্যে যতগুলো সূরা রয়েছে প্রত্যেকটি তিওয়ালে মুফাছ্ছালের হুকুম রাখে। তিওয়ালে মুফাছ্ছাল সূরা হতে বড় খুৎবা অধিকাংশ ইমাম ছাহেবও যদি পাঠ করে তা বর্তমানেই হোক কিংবা ভষ্যিতেই হোক সেটা মাকরূহ হবে।  {দলীলসমূহঃ (১) গায়াতুল আওতার, (২) রদ্দুল মুহতার, (৩) দুররুল মুখতার ইত্যাদি}

মুহম্মদ হুমায়ূন কবীর  বানারীপাড়া, বরিশাল।

সুওয়ালঃ জানাযার নামায মাকরূহ্ ওয়াক্তে প্রস্তুত হলে উক্ত ওয়াক্তে তা আদায় করলে আদায় হবে কি?

জাওয়াবঃ  হ্যাঁ, মাকরূহ্ তানযীহীর সাথে আদায় হবে। তবে ভাল ওয়াক্তে জানাযা প্রস্তুত হলে ভাল ওয়াক্তেই আদায় করতে হবে যেন মাকরূহ্ ওয়াক্তে গিয়ে না পৌঁছে। আর ভাল ওয়াক্তে প্রস্তুত হলে তা মাকরূহ্ ওয়াক্তে পৌঁছানো উচিৎ হবেনা। (দুররুল মুখতার, জাওহারাতুন্ নাইয়্যারাহ্)

মুহম্মদ রকীবুদ্দীন খন্দকার  হোমনা, কুমিল্লা।

সুওয়ালঃ আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামায পড়া বৈধ কিনা, এ বিষয়ে সমাজে মতভেদ দেখা দিয়েছে। কেউ বলেছেন পড়া বৈধ। আবার কেউ বলেছেন বৈধ নয়। এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কি? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াবঃ আমাদের হানাফী মায্হাব মুতাবিক আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামায পড়তে হবে। তবে শর্ত হলো- আত্মহত্যা করা যেহেতু কবীরা গুণাহ্ সেহেতু কোন পরহিযগার ব্যক্তি তার জানাযার নামায পড়াবেনা ও পড়বেনা। সাধারণ লোকেরা জানাযার নামায আদায় করে কাফন-দাফন সম্পন্ন করবে। {দলীলসমূহঃ (১) কাযীখান, (২) আলমগীরী, (৩) দুররুল মুখ্তার, (৪) তাতারখানিয়া, (৫) নাহ্রুল ফায়িক, (৬) খাজানাতুর রিওয়ায়েত, (৭) মিনহাতুল খালিক ইত্যাদি}

মুছাম্মত লাভলী বেগম কোনাবাড়ী, গাজীপুর।

সুওয়ালঃ কোন মৃত ব্যক্তিকে কোন মাজুর স্ত্রী গোসল দিতে পারবে কিনা?

জাওয়াবঃ মানুষ মারা গেলে মৃতের নিকটে অপবিত্র অবস্থায় মহিলাদের যাওয়া বা থাকা নিষিদ্ধ। কাজেই অপবিত্রাবস্থায় মৃতকে গোসল দেয়া মাকরূহ্। (ফতওয়ায়ে আমিনিয়া, আলমগীরী)

মুছাম্মত আয়িশা ছিদ্দীকা মানিকনগর, ফরিদপুর।

সুওয়ালঃ গর্ভবতী স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে তাতে তালাক হবে কি?

জাওয়াবঃ হ্যাঁ, তিন তালাকই পতিত হবে। (দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে আমিনিয়া)

মুহম্মদ বিলাল হুসাইন ডেমরা, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  মাঝে মাঝে আমার মজি বের হয়, তবে অল্প। এতে কাপড় কি নাপাক হবে, গোসল ফরয হবে কি? জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো।

জাওয়াবঃ কাপড় অপবিত্র হবে, কাপড় বদল করে নামায পড়তে হবে। শরীরে লাগলে ধুয়ে ফেলতে হবে, গোসল করার প্রয়োজন নেই, তবে ওযূ করতে হবে।   {দলীলসমূহঃ (১) আলমগীরী, (২) বাহ্রুর রায়িক, (৩) ফতহুল ক্বাদীর ইত্যদি}

মুছাম্মত আকলিমা মোল্লা বেতাগী, বরগুনা।

সুওয়ালঃ  সৎ শ্বাশুড়ী অর্থাৎ স্ত্রীর বিমাতাকে বিবাহ করা জায়িয আছে কি? জানতে চাই। জাওয়াবঃ সৎ শ্বাশুড়ীকে বিবাহ করা জায়িয আছে। এমনকি স্বীয় স্ত্রী বর্তমান থাকতেও। (ফতহুল ক্বাদীর, শরহে বিক্বায়াহ্)  মুছাম্মত তাছনীম হুমায়রা রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।  সুওয়ালঃ  যদি কেউ আপন ফুফুর দুধ পান করে থাকে সে কি তার ঐ ফুফুর মেয়ে অর্থাৎ তার ফুফাতো বোনকে বিবাহ করতে পারবে? যদি বিবাহ করে ফেলে তবে এখন তার করণীয় কি? দলীলসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

 জাওয়াবঃ  দুধ বোনকে বিবাহ করা হারাম। দুধ বোন ফুফাতো, চাচাতো, খালাতো, মামাতো কিংবা অনাত্মীয়াদের মধ্যে যে কোন মেয়ে হোক না কেন তাকে বিবাহ করা হারাম।  আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে ‘সূরা নিসার’ ২৩নং আয়াত শরীফে বলেন,

حرمت عليكم امهتكم وبنتكم واخوتكم وعمتكم وخلتكم وبنت الاخ وبنت الاخت وامهتكم التى ارضعنكم واخوتكم من الرضاعة وامهت نسائكم وربئبكم التى فى حجوركم من نسائكم التى دخلتم بهن فان لم تكونوا دخلتم بهن فلا جناح عليكم وحلائل ابنائكم الذين من اصلابكم وان تجمعوا بين الاختين الا ماقدسلف ان الله كان غفورا رحيما.

অর্থঃ- “তোমাদের জন্য (বিবাহ করা) হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাগণকে, তোমাদের মেয়েগণকে, তোমাদের ভগ্নিগণকে, তোমাদের ফুফুগণকে, তোমাদের খালাগণকে, তোমাদের ভাইয়ের মেয়েগণকে, তোমাদের বোনের মেয়েগণকে এবং তোমাদের ঐ মাতাগণকে যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন এবং তোমাদের দুধ বোনদেরকে এবং তোমাদের শ্বাশুড়ীগণকে এবং তোমাদের স্ত্রীগণ যাদেরকে তোমরা ব্যবহার করেছ, তাদের মেয়েগণকে যারা তোমাদের তত্বাবধানে আছে। আর যদি তোমরা তাদেরকে ব্যবহার না করে থাক তবে তাদের মেয়েগণকে বিবাহ করাতে কোন গুণাহ্ নেই এবং তোমাদের ঔরশজাত পুত্রগণের স্ত্রীগণকে এবং দু’বোনকে একত্রে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করাও হারাম। তবে যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।”   আর আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

يحرم من الرضاعة مايحرم على الولادة ان الله حرم من الرضاعة ما حرم من النسب.

অর্থঃ- “জন্মগত কারণে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম দুধপানের কারণেও তাদেরকে বিবাহ করা হারাম। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক দুধপান করার কারণে বিবাহ হারাম করেছেন যেমন বংশগত সম্পর্কের কারণে হারাম করেছেন।”

অতএব, যদি কেউ তার ফুফাতো বোনকে বিবাহ করে থাকে আর সে যদি তার দুধবোন হয়, তাহলে এটা জানামাত্রই বিবাহ ছিন্ন করা ফরয। আর এ জন্যই শরীয়তের মাসয়ালা হলো বিবাহের পূর্বে তাহ্ক্বীক্ব করে বিবাহ করা। (তাফসীর ও ফিকাহ্র কিতাব দ্রষ্টব্য)

মুছাম্মত শাহীদা আক্তার চান্দিনা, কুমিল্লা।

সুওয়ালঃ স্বাভাবিক মাজুর, সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর ও ইস্তিহাজার সময় নামায-রোযার হুকুম কি?

জাওয়াবঃ  স্বাভাবিক মাজুর, সন্তান হওয়ার কারণে মাজুরের সময় নামাযও পড়তে হবেনা এবং রোযাও রাখতে হবেনা। তবে সুস্থ হওয়ার পর নামাযের ক্বাযা আদায় করতে হবেনা। কিন্তু ফরয রোযার কাযা আদায় করতে হবে। আর ইস্তিহাজার সময় নামায-রোযা উভয়ই আদায় করতে হবে।  উল্লেখ্য, উভয় মাজুর অবস্থায় স্ত্রীলোকের প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্তে ওযূ করে তসবীহ্-তাহ্লীল পাঠ করা মুস্তাহাব। (গায়াতুল আওতার)

মুছাম্মত সিতারা বেগম সভানেত্রী- আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত পাঠানপাড়া, চাপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ স্বাভাবিক মাজুর, সন্তান হওয়ার কারণে মাজুরের সময় মেয়েরা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দোয়া দরূদ পাঠ, কবর যিয়ারত ইত্যাদি করতে পারবে কিনা?

জাওয়াবঃ স্বাভাবিক মাজুর, সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর কিংবা অন্য যে কোন অশুচিতার কারণে নাপাক অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে পাঠ করা হারাম। যদি তিলাওয়াতে সিজদা শুনে সিজদা দিতেও পারবেনা। কিন্তু দোয়া ও শেফার নিয়তে পাঠ করতে পারবে। যেমন, খাওয়ার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ্’ ও পরে শোকর আদায় করার জন্য ‘আলহামদু লিল্লাহ্’ পাঠ করতে পারবে। অনূরূপভাবে আযানের জাওয়াব দিতে  পারবে, দোয়া করতে পারবে, সালাম দিতে ও নিতে পারবে ইত্যাদি পড়তে পারবে।  কোন শিক্ষার্থীনী নাপাক অবস্থায় কুরআন শরীফ পড়ালে বর্ণ-বিণ্যাস করে পড়াতে পারবে। অর্থাৎ প্রতিবারে একটি একটি শব্দ উচ্চারণ করে পড়াতে পারবে। কুরআন শরীফ স্পর্শ করতে পারবেনা।  পৃথক জুজদানে কিংবা গেলাফ দ্বারা আবৃত থাকলে কুরআন শরীফ স্পর্শ করতে পারে। পরিধানের কাপড় দ্বারা স্পর্শ করতে পারবেনা। কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ঐ অবস্থায় ছোঁয়া মাকরূহ্। কিন্তু নিজ কাপড়ের আস্তিন বা পরিধেয় কাপড়ের পাক আঁচল দ্বারা ধরতে পারবে। উভয় মাজুর অবস্থায় কবর যিয়ারত করতে পারবে। (ফতওয়ায়ে আমিনী, আলমগীরী)

মুছাম্মত আমিনা বেগম সুলতানপুর, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ  আমার মাজুর অবস্থা প্রায় তিন দিন থাকে। কিন্তু তিনদিন পর যখন নামায পড়তে যাব তখন সন্দেহ হয় পাঁচদিন পর আবার ওজর দেখা দেয় কি না। মাঝে মধ্যে পাঁচদিন পর আবার ওজর দেখা দেয়। এখন নামায কিভাবে আদায় করবো?

জাওয়াবঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলাদের মাজুর অবস্থা কমপক্ষে তিন দিন উর্ধ্বে দশ দিন হয়ে থাকে। এর চেয়ে কম বা বেশী হলে সেটা ইস্তিহাজা (রোগ) হিসেবে গণ্য হবে।   প্রত্যেক মহিলারই দায়িত্ব ও কর্তব্য তার মাজুর অবস্থা কত দিন, কত ঘন্টা ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে রাখা। যখন কারো প্রথম মাজুর অবস্থা দেখা দেয় তখন তার কর্তব্য হলো, কত দিন কত ঘন্টা সেটা হিসাব করে রাখবে। পরবর্তী মাস থেকে সেটাই তার মাজুরের মুদ্দত (সময়সীমা) হিসেবে গণ্য হবে। যেমন, কারো প্রথম মাসে পাঁচদিন হলো, পরবর্তী মাসে পাঁচদিনই তার মাজুর হওয়ার সময়সীমা গণ্য হবে।   হ্যাঁ যদি কারো পাঁচদিন থেকে বেড়ে ছয়, সাত, আট, নয় ও দশদিন পর্যন্ত হয়, তাহলে বুঝতে হবে তার অসুস্থতার সময়সীমা বেড়ে গেছে। অর্থাৎ এ মাস থেকে এটাই তার অসুস্থতার সময়সীমা এবং পরবর্তী মাসে এটাই গণ্য হবে, পূর্ববর্তীটা নয়।

আর যদি দশদিন অতিক্রম করে এগার, বার,  তেরদিন ইত্যাদি হয়, তবে পূর্ববর্তী মাসের পাঁচদিনই তার অসুস্থতা হিসেবে গণ্য হবে। বাকী অতিরিক্ত যে কয়েকদিন অসুস্থ ছিল, সেটা ইস্তিহাজা (রোগ) হিসেবে গণ্য হবে। আর এই অতিরিক্ত অসুস্থতার সময় যদি রুগীনি নামায না পড়ে থাকে, তবে নামায ক্বাযা আদায় করতে হবে।

আর যদি পাঁচদিনের কমে যেমন, তিনদিনে সুস্থতা লাভ করে, তবে তিনদিনের পর থেকে নামায পড়া শুরু করতে হবে। কিন্তু পাঁচদিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত স্বামী ব্যবহার করতে পারবে না। আর এ মাস থেকে তার অসুস্থতা তিনদিনই নির্ধারিত হলো এবং পরবর্তী মাস থেকে সেটাই গণ্য হবে।  যদি কারো তিনদিন, চারদিন, পাঁচদিন একাধারা রক্তস্রাব যেতে থাকে, অতঃপর বন্ধ হয়ে একদিন বা দু’দিন বা তিনদিন পর আবার রক্তস্রাব দেখা দেয় এবং সেটা যদি দশদিনের মধ্যেই সুস্থতা লাভ করে তাহলে বুঝতে হবে সেটাই তার অসুস্থতার সময়সীমা। আর যদি সে অসুস্থতা দশ দিনের বেশী সময় ধরে হতে থাকে,তাহলে পূর্ববর্তী মাসের অতিরিক্ত সময় ইস্তিহাজা রোগ হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি কারো প্রথম তিনদিন একাধারা রক্তস্রাব যেয়ে এক-দু’দিনে বন্ধ হয়ে থেকে আবার পঞ্চম দিন থেকে আবার যেতে শুরু করে, ষষ্ঠদিন বা সপ্তম দিনে সুস্থতা লাভ করে এভাবে যদি প্রতি মাসেই চলতে থাকে তাহলে একেবারে সুস্থতা লাভ করার পর থেকে অর্থাৎ ষষ্ঠ বা সপ্তম দিন থেকে নামায-কালাম ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দিগী, স্বামী ব্যবহার ইত্যাদি করতে পারবে। আর যদি কোন মাসে প্রথম তিনদিন একাধারা রক্তস্রাব যেয়ে বন্ধ হয়ে যায়, পঞ্চম দিন বা ষষ্ঠ দিন আর অসুস্থতা দেখা না দেয় তাহলে পরবর্তী মাস থেকে তিনদিনই অসুস্থতা গণনা করতে হবে। আর বর্তমান মাসে পূর্ববর্তী মাসের হিসাবে তিন দিনের মধ্যে সুস্থতা লাভ করা সত্বেও ছয় দিন বা সাত দিন পর্যন্ত নামায বন্ধ রাখা হয়েছিল। যেহেতু এ বর্তমান মাসে তিন দিনে সুস্থতা লাভ করেছে তাই বাকী অতিরিক্ত কয়েক দিনের নামায, ক্বাযা আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য যে, তিনদিন বা চারদিনে যদি সুস্থতা লাভ করে, তাহলে এরপর থেকে নামায-কালাম শুরু করে দিবে। অনর্থক সন্দেহবশতঃ অর্থাৎ পঞ্চম দিন বা ষষ্ঠ দিনে অসুস্থতা দেখা দিতে পারে এ ধারণায় নামায-কালাম বন্ধ রাখা যাবেনা।

(দলীলসমূহঃ (১) শামী, (২) বাহ্রুর রায়িক, (৩) ফতহুল ক্বাদীর, (৪) গায়াতুল আওতার, (৫) শরহে বিকায়া, (৬) আলমগীরী ইত্যাদি}

মুছাম্মত নাছিমা বেগম সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।

 সুওয়ালঃ   যদি কোন স্ত্রীলোকের গর্ভপাতের পর খুন জারী হয়, তবে সেটা কি সন্তান হওয়ার কারণে মাজুর হবে; না স্বাভাবিক মাজুর হবে; না ইস্তিহাজা। কোনটির মধ্যে গণ্য হবে?

জাওয়াবঃ  সন্তান হওয়ার কারণে যে মাজুর হয় তার হুকুম তখনই বর্তাবে যখন শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, হাত-পা এমনকি একটিমাত্র অঙ্গুলি বা তার নখ পর্যন্ত গঠিত হয়ে থাকে। আর  স্বাভাবিক মাজুরের হুকুম বর্তাবে তখন, যখন একখণ্ড গোশ্ত বা রক্তপিণ্ড বা শুধু রক্তপাত হয়, আর তা কমপক্ষে তিনদিন তিন রাত্রি জারী থাকে। অন্যথায় অর্থাৎ এর কম হলে ইস্তেহাজা বলে গণ্য করে নামায, রোযা ইত্যাদি যথারীতি আদায় করতে হবে। (শামী)

মুছাম্মত বিজলী খাতুন উলিপুর, কুড়িগ্রাম।

 সুওয়ালঃ  যমজ সন্তান হলে কোন সময় হতে মাজুর ধরা হবে, আর কখন থেকে ইদ্দত ধরা হবে এবং কতদিন অন্তর যমজ সন্তান হলে এক গর্ভ ধরা হবে?

জাওয়াবঃ  প্রথম সন্তান হওয়ার পরেই মাজুরের হুকুম বর্তাবে, অর্থাৎ অশুচিতা শুরু হয়। দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর হতে ইদ্দত ধরা হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার মধ্যে যদি ছয় মাস ব্যবধানের কম হয়, তাহলে যমজ ধরতে হবে। (শামী)

মুছাম্মত জাকিয়ার্তু রহমান বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ উভয় মাজুরের উর্ধ্বতম ও নিম্নতম মুদ্দত কতদিন এবং কিভাবে দিন-রাত্রির হিসাব রাখতে হবে?

জাওয়াবঃ  স্বাভাবিক মাজুরের উর্ধ্বতম মুদ্দত হচ্ছে- দশদিন এবং নিম্নতম মুদ্দত হচ্ছে- তিনদিন। যদি তিনদিন পূর্বে রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, তবে তা ইস্তেহাজা (রোগ) হিসেবে গণ্য করতে হবে। আবার অনুরূপ যদি দশদিনের বেশী রক্তস্রাব জারী (চালু) থাকে, তাহলে দশদিন মাসিক হিসেবে গণনা করতে হবে এবং অতিরিক্ত সময় বা দিনকে ইস্তেহাজা হিসেবে গণ্য করতে হবে।  আর দিন-রাত্রির গণনা বা হিসাব রাখতে হবে ঘন্টা হিসেবে। অর্থাৎ তিনদিন বলতে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা হিসেবে ৭২ ঘন্টা বুঝতে হবে। এর চেয়ে দু’এক মিনিট কম হলে, সে সম্পূর্ণ সময়টা বা সে সময়ের রক্তস্রাবকে ইস্তেহাজা (রোগ) হিসেবে গণ্য করতে হবে। আর দশদিন বলতে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা হিসেবে ২৪০ ঘন্টাকে বুঝতে হবে।

সন্তান হওয়ার কারণে যে মাজুর হয় তার ঊর্ধ্বতম মুদ্দত হচ্ছে- ৪০ দিন, আর নিম্নতম মুদ্দতের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। যেমন, হযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তিনি যথারীতি নামায আদায় করেছিলেন। যে কারণে তাঁর এক নাম ছিল ত্বাহিরাহ্ (পবিত্রা)।   চল্লিশ দিন বলতে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা হিসেবে ৪০x২৪=৯৬০ ঘন্টা। এর বেশী সময় রক্তস্রাব জারী (চালু) থাকলে, তা ইস্তেহাজা (রোগ) হিসেবে গণ্য করতে হবে। (আলমগীরী, শামী, ইনায়া)

উষামা তাজনীন মোহনা উত্তরা, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  যদি কোন মেয়েলোকের দশদিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে সুস্থ হয়ে যায়, তাহলে গোসলের পূর্বে উক্ত মেয়েলোকের সাথে জেমা করা জায়িয আছে কিনা, জানাবেন।

জাওয়াবঃ  যদি কোন মেয়েলোকের স্বাভাবিক মাজুরতা তিন দিনের পর এবং দশ দিনের পূর্বেই বন্ধ হয়ে যায়, আর সন্তান হওয়ার কারণে যে মাজুর হয় তা চল্লিশ দিনের পূর্বেই বন্ধ হয়ে যায়, তবে ‘গোসল করে নামায পড়তে পারে’- এ পরিমাণ সময় অপেক্ষা না করে উক্ত মেয়েলোকের সাথে জেমা করা বা তাকে ব্যবহার করা জায়িয নেই। আর যদি গোসল করে নামাযের নিয়ত করতে পারে এ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করে জেমা বা ব্যবহার করে, তবে সেটা জায়িয আছে। আর যদি স্বাভাবিক মাজুরতা দশদিন পূর্ণ হয় এবং সন্তান হওয়ার কারণে যে মাজুর হয় তা চল্লিশ দিন পূর্ণ হয়ে বন্ধ হয়, তাহলে গোসল করার পূর্বে জেমা বা ব্যবহার করা জায়িয আছে। তবে বর্ণিত উভয় অবস্থাতেই জেমা বা ব্যবহারের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব।       {দলীলসমূহঃ (১) ফতওয়ায়ে শামী, (২) আলমগীরী, (৩) ইনায়া ইত্যাদি}

মুছাম্মত সায়েমা আখতার ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

সুওয়ালঃ সন্তান মৃত অবস্থায় জন্মিলে নাম রাখা, দাফন-কাফন করা, আক্বীক্বা করা ইত্যাদির মাস্য়ালা কি? দয়া করে জানাবেন। জাওয়াবঃ  সন্তান যদি মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে তবে তার নামও রাখতে হবে এবং গোসলও দিতে হবে। কিন্তু গোসল সুন্নত মুতাবিক দেয়া শর্ত নয় এবং জানাযার নামায পড়তে হবেনা। আর নিয়ম অনুযায়ী কাফন পড়ানো এবং দাফন করাও শর্ত নয়। শুধু একখানা কাপড় জড়িয়ে দাফন করলেই চলবে। যে সন্তানের নাম রাখা শর্ত সে সন্তানের আক্বীক্বা করাও সুন্নতে যায়িদা বা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত।  {দলীলসমূহঃ (১) শামী, (২) বাহরুর রায়িক, (৩) রদ্দুল মুহতার, (৪) দুররুল মুখতার, (৫) শরহে মাজমাউল আনহোর, (৬) তাহ্তাবী, (৭) মারাকিউল ফালাহ্ ইত্যাদি}

মুছাম্মত পারভীন বেগম ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।

সুওয়ালঃ  ওযু করার পর কোন স্ত্রীলোক নিজ সন্তানকে দুধ পান করালে তার ওযু নষ্ট হবে কি?

 জাওয়াবঃ ওযু নষ্ট হবেনা। তবে যদি কোন স্ত্রীলোক নামায পড়ার সময় সন্তান তার স্তন চুষে দুধ বের করে খায় তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু দুধ বের না হলে নামায ভঙ্গ হবেনা। আর নামাযরত অবস্থায় তিনবার চুষলে দুধ বের না হলেও নামায বাতিল হয়ে যাবে। (আলমগীরী, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া)

মুহম্মদ সামছুল হক সরকার থানচি, পার্বত্য বান্দরবান।

সুওয়ালঃ কারো পেট থেকে অনবরত বায়ূ (গ্যাস) বের হলে সে কিভাবে নামায আদায় করবে এবং কিভাবে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে? জাওয়াবঃ যদি কোন ব্যক্তির পেট হতে সর্বদা বায়ূ নির্গত হয় অথবা পেশাবের রাস্তা দিয়ে সর্বদা পেশাব ঝরতে থাকে অথবা নাক বা ক্ষতস্থান হতে সর্বদা রক্ত নির্গত হয় এমন ব্যক্তিকে মা’জুর বলে।

মা’জুরের সংজ্ঞা হলো, যে পূর্ণ এক ওয়াক্তের মধ্যে ঐ ওয়াক্তের ফরয উল্লিখিত ওজর ব্যতীত আদায় করতে পারেনা। অর্থাৎ ওয়াক্তের ফরয নামায দু’রাকায়াত, তিন রাকায়াত, চার রাকায়াত নামাযও উল্লিখিত ওজর ব্যতীত আদায় করতে পারেনা তাকেই মা’জুর বলে। মা’জুর অবস্থায় প্রত্যেক ওয়াক্তে ওযূ করে ঐ ওয়াক্তের ফরয, সুন্নত, নফল ইত্যাদি সব নামায আদায় করতে পারবে এবং একই ওযূতে কুরআন শরীফও তিলাওয়াত করতে পারবে।

মা’জুর ব্যক্তির ওযূ উল্লিখিত ওজরের কারণে ভঙ্গ হবে না তবে যদি উক্ত ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় তাহলে ওযূ ভঙ্গ হবে। আর যদি ওয়াক্তের মধ্যে ওযূ ভঙ্গের অন্য কোন কারণ সংঘটিত হয় তাহলেও ওযূ ভঙ্গ হয়ে যাবে। (সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব)

মুহম্মদ দেলোয়ার হুসাইন উত্তর শাহ্জাহানপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ  পাগড়ীর কাপড় কিনে কিছুদিন পাগড়ী হিসেবে পরিধান করোর পর উক্ত পাগড়ী দিয়ে গেঞ্জি তৈরী করে পরিধান করা যাবে কিনা?

জাওয়াবঃ  আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোর্তার নিচে কোন কিছু পরিধান করেছেন বলে কোন বর্ণনা পাওয়া যায়না। তবে পরবর্তিতে মুহাক্কিক, মুদাক্কিক আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উম্মতদের ইহ্সানের জন্য আধা আস্তিন নামে মশহুর এক প্রকার জামা পরিধান করেছেন যা পরিধান করে কাজ-কর্ম করা সহজ হয়। আর গেঞ্জি পরিধান করা বুযূর্গানে দ্বীন থেকেও বর্ণিত নেই।কাজেই কেউ যদি কোর্তার নীচে কিছু পরিধান করতে চায় তাহলে গেঞ্জির পরিবর্তে আধা আস্তিন পরিধান করাই উত্তম। অতএব, উক্ত পাগড়ীর কাপড় দিয়ে গেঞ্জি তৈরী না করে আধা আস্তিন তৈরী করাই উত্তম হবে। (তাযকিরাতুল আউলিয়া)

ছূফী মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আফজালুল হক মাওলানা

মুহম্মদ মোনাঈম হুসাইন রাজারহাট, কুড়িগ্রাম।

হাফিয মুহম্মদ কবীর হুসাইন, নরসিংদী।

  সুওয়ালঃ  “কুনুতে নাযিলা পাঠ করা নাজায়িয এবং নামায ভঙ্গের কারণ” এ ফতওয়ার উপর আপনারা নাকি একটি হ্যান্ডবিল বের করেছেন। হ্যান্ডবিলটি বহুল প্রচারিত, যামানার তাজদীদী মুখপত্র ‘আল বাইয়্যিনাত শরীফে’ ছাপালে সকলেই উপকৃত হত। তাই হ্যান্ডবিলটি ছাপার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

জাওয়াবঃ    হ্যাঁ, কুনুতে নাযিলা সম্পর্কে একটি হ্যান্ডবিল ছাপানো হয়েছে। আপনাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তা হুবহু জাওয়াব হিসেবে পেশ করা হলো-   আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক ফজরের নামাযে কুনুত বা “কুনুতে নাযেলা” পাঠ করা নাজায়িয ও বিদয়াত এবং নামাযের বাইরের জিনিস পাঠ করার কারণে নামায ফাসেদ বা বাতিল হওয়ার কারণ।

যেমন, এ প্রসঙ্গে “শরহে মায়ানিল আছার” (তাহাবী শরীফ)  নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

لاينبغى القنوت فى الفجر فى حال الحرب ولا غيره وهذا قول ابى حنيفة وابى يوسف ومحمد رحمهم الله.

অর্থঃ- “যুদ্ধাবস্থা বা অন্যান্য সময়েও ফজরের নামাযে কুনুত পাঠ করা জায়িয নয়। এটা হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম আবূ হানীফা, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত।”            তবে ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে ফজরে কুনুত পাঠ করা জায়িয। যেমন এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে কুরতুবীতে” উল্লেখ আছে যে,

يقنت فى الفجر دائما فى سائر الصلوات اذا نزل بالمسلمين نازلة قاله الشافعى.

অর্থঃ- “যখন মুসলমানদের মধ্যে বিপদ আসবে তখন ফজর নামাযে সর্বদা এমনকি সকল নামাযে কুনুত পাঠ করবে। এটা শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত।”

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ফজরে কুনুত পড়া জায়িয এটা মূলতঃ শাফিয়ী মাযহাবের মত। হানাফী মাযহাবের নয়, বরং হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মতে ফজরে কুনুত পড়া নাজায়িয ও বিদয়াত যদিও যুদ্ধ বা অন্যান্য বালা-মুছীবতের সময় হোকনা কেন। আর হানাফীদের জন্যে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসরণ করা নাজায়িয ও হারাম।  এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে আহমদী”তে উল্লেখ আছে,

لايجوز الانتقال الى مذهب اخر كذالك لايجوز ان يعمل فى مسئلة على مذهب وفى اخرى على اخر.

অর্থঃ- “এক মাযহাবের অনুসারীর মাযহাব পরিবর্তন করে অন্য মাযহাব গ্রহণ করা যেরূপ জায়িয নেই; তদ্রুপ এক মাযহাব অনুসারীর জন্য অন্য মাযহাবের মাসয়ালা আমল করাও জায়িয নেই।” কেউ কেউ ফজরের নামাযে কুনূত জায়িয করার লক্ষ্যে একখানা হাদীস শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে থাকে। যে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে এক মাস কুনুত পাঠ করেছেন।” অথচ তারা উক্ত হাদীস শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ, তাই তারা উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাপারে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে। হ্যাঁ, হাদীস শরীফে “একমাস কুনুত পাঠ করার কথা ঠিকই উল্লেখ আছে।” তবে সাথে সাথে এটাও উল্লেখ আছে যে, ثم تركه অর্থাৎ রসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মাস ফজরে কুনুত পাঠ করার পর তা তরক করেন বা ছেড়ে দেন।” (বুখারী, আবূ দাউদ, তিরমিযী)           মূলতঃ এর পূর্বে যেরূপ তিনি কখনো ফজরে কুনুত পড়েননি এর পরেও কখনো পড়েননি। যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে

যে,

لم يقنت قبله ولابعده.

অর্থঃ- “রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এক মাসের) পূর্বে ও পরে আর কখনো ফজরে কুনুত পাঠ করেননি।” (তাবারানী, বায্যার, ইবনে আবী শায়বা)   বস্তুতঃ উক্ত হাদীস শরীফ খানা আমাদের হানাফীদের মতে ‘মান্সূখ’ হয়ে গেছে। যেমন, উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে,

والقنوت فى صلوة الفجر منسوخ عندنا.

অর্থাৎ “আমাদের হানাফীদের নিকট ফজর নামাযে কুনুত পাঠ করা (সম্পর্কিত হাদীস শরীফখানা) মান্সুখ হয়ে গেছে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, নাওয়াযিল, ইনায়া, নিকায়া, দেরায়া, হিদায়া)        আর মানসূখ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের সময়ে বহু যুদ্ধ-জিহাদ ও বালা-মুছীবত সত্ত্বেও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ফজরে কুনুতে নাযেলা পাঠ করেননি।    যেমন এ প্রসঙ্গে “আছার” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে,

ان ابن مسعود لم يقنت هو ولا احد من اصحابه حتى فارق الدنيا يعنى فى صلوة الفجر. سنده صحيح.

অর্থাৎ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের কেউ জীবনে কখনো ফজরের নামাযে কুনুত পাঠ করেননি।” (এর সনদ ছহীহ্)

এ কারণেই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এটাকে “বিদয়াত অর্থাৎ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ” বলে উল্লেখ করেছেন।

যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে, انها بدعة অর্থাৎ “ফজরের নামাযে কুনুত পাঠ করা বিদয়াত।” (কুরতুবী, নাসাঈ, বুখারী)

স্মর্তব্য যে, কেউ কেউ “ফতওয়ায়ে দেওবন্দের” বরাত দিয়ে বলে থাকে যে, ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি “বালা-মুছীবতের সময় ফজরে কুনুত পড়া জায়িয বলেছেন।” বস্তুতঃ ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দের’ উক্ত বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা উক্ত মত ইমাম তাহাবীর একান্তই নিজের যা হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতের সম্পূর্ণই খিলাফ। কাজেই উক্ত মতকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করা জিহালত বৈ কিছুই নয়।    মূলকথা হলো- হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের জন্যে ফজরের নামাযে ‘কুনুতে নাযেলা’ পাঠ করা জায়িয নেই, বরং হারাম ও বিদয়াত তবে শাফিয়ী মাযহাব মতে সর্বদাই ফজরে ‘কুনুত’ পাঠ করা জায়িয। তাই হানাফীগণ ফজরে কুনুত পাঠ করলে তাদের নামায ফাসেদ বা বাতিল বলে গণ্য হবে। উক্ত নামায দোহরায়ে আদায় করা ওয়াজিব। নচেৎ প্রত্যেকেই ফজর নামায তরকের গুণাহ্ েগুণাহ্গার হবে। তবে মুসলমানদের কামিয়াবীর জন্য যে কোন সময় যেকোন অবস্থাতেই দোয়া-ইস্তিগ্ফার করা জায়িয রয়েছে। শুধু জায়িযই নয় বরং তা প্রত্যেক মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।      এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১০২ ও ১১৪ তম সংখ্যা পাঠ করুন। আরো বিস্তারিত জানতে হলে অপেক্ষায় থাকুন, অচিরেই ‘ফতওয়ায়ে দেওবন্দ’ ও বাতিলপন্থীদের মত খণ্ডনসহ ‘কুনুতে নাযেলা’ সম্পর্কে ‘আল বাইয়্যিনাতে’ বিশেষ ফতওয়া প্রদান করা হবে। (ইনশাআল্লাহ)    {দলীলসমূহঃ (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) বুখারী, (৩) তিরমিযী, (৪) ইবনে মাজাহ, (৫) আবূ দাউদ, (৬) ফতহুল বারী, (৭) উমদাতুল ক্বারী, (৮) মিরকাত, (৯) শরহে মায়ানিল আছার, (১০) শরহুন্ নিক্বায়া, (১১) হিদায়া, (১২) ফতহুল ক্বাদীর, (১৩) বিক্বায়া, (১৪) দিরায়া ইত্যাদি। }     {বিঃ দ্রঃ- ‘কুনুতে নাযেলা’ সম্পর্কে কেউ বাহাছ করতে চাইলে আমরা তার সাথে শর্ত স্বাপেক্ষে যে কোন সময়, যে কোন স্থানে বাহাছ করতে প্রস্তুত আছি। (ইনশাআল্লাহ}

সুওয়াল – জাওয়াব

সুওয়াল-জাওয়াব

 সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ