অটিজম বিষয়ে সচেতনতার গড়তে বিশ্বজুড়ে একসাথে কাজ করার আহবান করা হয়েছে। সাত দফা ঢাকা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু অটিজম উৎপত্তির কারণ সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ ইসলামের প্রাথমিক ইলমেই এর সমাধান আছে। ইসলামী আদর্শের বাইরে যে অনৈসলামী সংস্কৃতি গ্রহণ করা হচ্ছে। তাতে অটিজম সমস্যা আরো বাড়বে।
গত ২৫ ও ২৬ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিস ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ৩৫ জন ও বাংলাদেশের ১৭ জন বিশেষজ্ঞ ছাড়াও অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকরা যোগ দিয়েছে। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোক্তা প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা হোসেন। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে অটিজম নিয়ে কাজ করছেন।
অটিজম বিষয়ক সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য জনসাধারণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, অটিজম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এশীয় অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর আঞ্চলিক নেতা ও বিশেষজ্ঞদের অংগ্রহণের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠান ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা উদ্ভাবন করতে সক্ষম হবে বলে স্পষ্টত আভাস দেয়া হয়েছে। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার কারণেই এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখানে উল্লেখ করার মতো তেমন কাজ হয়নি বলে অনুযোগ রয়েছে। অথচ অটিজমের উৎপত্তি ধনী-গরিব বিচার করে হয় না।
চিকিৎসকের ভাষায়, অটিজম কোনো সাধারণ রোগ নয়। এটি শিশুদের একটি মনোবিকাশগত জটিলতা; যার ফলে সাধারণত ৩টি সমস্যা দেখা দেয়। যেগুলো হচ্ছে- প্রথমত, মৌখিক কিংবা অন্য কোনো প্রকার যোগাযোগ সমস্যা, দ্বিতীয়ত, সমাজিক বিকাশগত সমস্যা, তৃতীয়ত, খুব সীমাবদ্ধ ও গণ্ডিবদ্ধ জীবন-যাপন ও চিন্তা-ভাবনা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ। এছাড়া অতি চাঞ্চল্য (Hiper Activity), জেদী ও আক্রমণাত্মক আচরণ (Aggressiveness), অহেতুক ভয়ভীতি, খিঁচুনি ইত্যাদিও থাকতে পারে।
সাধারণত শিশুর ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে এই রোগ দ্ব্যর্থহীনভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, যত দ্রুত রোগটি সনাক্ত করা যায়, শিশুর জন্য ততই মঙ্গল। সাধারণত নি¤œলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে অটিস্টিক রোগটি সনাক্তকরণ সম্ভব: এদের ভাষার বিকাশ হতে বিলম্ব হয়। (এক বছর বয়সে অর্থবহ অঙ্গভঙ্গি, ১৬ মাস বয়সে একটি শব্দ এবং ২ বছর বয়সে ২ শব্দের বাক্য বলতে পারে না)। এই রোগে আক্রান্ত শিশু সমবয়সী কিংবা অন্যান্যদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। এরা নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না এবং আপন মনে থাকতে পছন্দ করে। এরা অন্যদের চোখের দিকে তাকায় না। অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না। একই কথা পুনরাবৃত্তি করে এবং একই কাজ বারবার করতে পছন্দ করে। এদের কাজ-কর্ম এবং সক্রিয়তা সীমিত ও গণ্ডিবদ্ধ।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে অটিজম বিষয়ে প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক ঘোষণা দেয়া হলো। সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে অন্তত একজনের মধ্যে অটিজম ও বিকাশজনিত সমস্যা রয়েছে। সাত দশক ধরে গবেষণার পরও এর সুস্পষ্ট কোনো কারণ যেমন জানা যায়নি, তেমনি চিহ্নিত করার বৈজ্ঞানিক উপায়ও নির্ধারিত হয়নি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাত দফা ঢাকা ঘোষণা অনুমোদন করা হয়। প্রথম দফায় বলা হয়েছে, অটিজম ও বিকাশজনিত সমস্যার শিকার ব্যক্তিদের উন্নত ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সমন্বিত ও জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে। দ্বিতীয় দফায় বিকাশজনিত সমস্যার শিকার শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা মেটাতে ৯টি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো- ক. বিকাশজনিত সমস্যা আছে এমন শিশু ও তাদের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টি, খ. বিকাশজনিত সমস্যা আছে এমন শিশু ও তাদের পরিবারের চাহিদার নিরিখে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জোরদার করা, গ. বিকাশজনিত সমস্যার শিকার শিশুদের সেবায় সমাজ ও প্রাথমিক সেবাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিশেষায়িত সেবাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সব পর্যায়ে পেশাজীবী শ্রেণীর দক্ষতা বৃদ্ধি, ঘ. বিকাশজনিত সমস্যায় ভোগা শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও তাদের উন্নয়নে অগ্রাধিকারমূলক চিহ্নিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে অধিক হারে মানবিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ বরাদ্দ এবং ছাড় করা, ঙ. পরিবার, আবাসস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি স্থানে তাদের সহযোগিতার ব্যবস্থা রাখা এবং পারিবারিক জীবন, শিক্ষা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদের স্বাভাবিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা, চ. মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার উপায় উদ্ভাবন, ছ. বিকাশজনিত সমস্যা আছে এমন শিশুদের সমাজে স্বাভাবিক অবস্থান নিশ্চিত করতে সহায়ক আইন ও নীতি প্রণয়নে উৎসাহিত করা, জ. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবাসহ সব খাতে কার্যকর গ্রুপ প্রতিষ্ঠা এবং বিকাশজনিত সমস্যা আছে এমন শিশুদের জন্য বাস্তবতার নিরিখে সেবার ব্যবস্থা এবং ঝ. অটিজম ও বিকাশজনিত সমস্যাগুলো এবং এ ব্যাপারে নেয়া সেবা ব্যবস্থাগুলোর বিষয়ে তথ্যবিনিময়ের জন্য নিয়মিত আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা।
ঢাকা ঘোষণার তৃতীয় দফায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে অটিজম বিষয়ে সহযোগিতার ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়া এবং স্থানীয় প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে অটিজম সমস্যা নিরসনে নেয়া ব্যবস্থাগুলোকে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।
চতুর্থ দফায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার এবং অটিজম ও বিকাশজনিত সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের চাহিদা পূরণে সহায়ক হতে বিশ্বের সরকারগুলোকে বিশেষ করে সব দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঢাকা ঘোষণার পঞ্চম দফায় শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
ষষ্ঠ দফায় আন্তর্জাতিক, দ্বিপক্ষীয় ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে বিশেষ করে অটিজম ও বিকাশজনিত সমস্যা নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোকে ঢাকা ঘোষণার সুপারিশগুলোকে সমর্থন দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঢাকা ঘোষণার সপ্তম ও শেষ দফায় অটিজম ও বিকাশজনিত প্রতিবন্ধিতার শিকার কোটি মানুষের প্রয়োজন মেটানোর বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া এবং তাদের জন্য জুতসই ও উন্নত সেবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আর্থিক সহযোগিতা দিতে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর প্রতি আবেদন জানানো হয়।
সম্মেলনে ঢাকা ঘোষণা পড়ে শোনায় বিশেষ অতিথি শ্রীলঙ্কার কথিত ফার্স্ট লেডি শিরন্থি রাজাপাকসে। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শ্রীলঙ্কার ফার্স্ট লেডি শিরন্থি রাজাপাকসে, মালদ্বীপের সেকেন্ড লেডি ইলহাম হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. এনদাং রাহাইয়ো সেদিয়ানইংসি ও ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জিংলে দুকপা বক্তব্য দেয়। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিও সম্মেলনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে।
প্রধান অতিথি সোনিয়া গান্ধী তার ১৫ মিনিটের বক্তৃতায় বলেছে, ‘এ অঞ্চলে অটিজম বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। অথচ অটিজম সম্পর্কে আমরা এখনো তেমন কিছু জানতে পারিনি।’ সে বলেছে, ‘গত সাত দশকে বিজ্ঞান গবেষণা চালিয়ে অটিজমের কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো উত্তর দাঁড় করাতে পারেনি। আমরা ধীরে ধীরে জানতে পারছি অটিজম খুবই ভিন্ন ও কঠিন একটি সমস্যা।
উল্লেখ্য, অটিজম সম্পর্কে আর কোনো ব্যক্তি অথবা ধর্ম কোনো ধারণা দিতে না পারলেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম ঠিকই দিয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর মূল কারণ হলো সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের একান্তবাসের সময় ইসলামী রীতি বা নিয়ম-কানুন পালন না করা। পাঠকের জ্ঞাতার্থে তা তুলে ধরা হল:
‘বোস্তান’ কিতাবে লেখা আছে, খাওয়ার পর ভরা পেটে রাতের প্রথম অংশে একান্তবাস করলে অথবা পশ্চিম-রোখ শুয়ে একান্তবাস করলে এবং তাতে গর্ভধারণ করলে সে সন্তান মূর্খ হবে।
উক্ত কিতাবে লেখা আছে, যদি একান্তবাসের সময় চাদর বা মশারি দ্বারা নিজেদেরকে ঢেকে না লয় এবং যদি তাতে সন্তান গর্ভধারণ করে, তবে নিশ্চয়ই ওই সন্তান বেয়াদব-নির্লজ্জ হবে। উক্ত কিতাবে আছে, একান্তবাস করতে করতে অতিরিক্ত কথা বললে ও তাতে গর্ভস্থিত হলে, সন্তান বোবা (বাকশক্তি হীন) হবার আশঙ্কা আছে।
‘বোস্তান’ কিতাবে আরো লেখা আছে, যদি কারো এহতেলাম হওয়ার পর গোসল না করে একান্তবাস করে এবং তাতে সন্তান জন্মে, তবে ওই সন্তান পাগল কিংবা বখীল হবে।
হযরত আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘অছায়া’ কিতাবে লিখেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি চাঁদের প্রথম, মধ্যম ও শেষ তারিখে একান্তবাস করে এবং তাতে সন্তান জন্মে, তবে সে সন্তান নিশ্চয়ই কোনো না কোনো দোষে দোষী হয়ে জন্মগ্রহণ করবে।
তিনি আরো বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে অথবা ছফরে যাবার রাতে একান্তবাস করে এবং তাতে সন্তান জন্মগ্রহণ করে তবে নিশ্চয়ই সে সন্তানও কোনো না কোনো দোষে দোষী হবে।
‘ক্বেনিয়া’ কিতাবে আছে, ‘খাড়া হয়ে ও ভরা পেটে একান্তবাস করলে শরীরের বিশেষ ক্ষতি হয় এবং সন্তান বোবা হয়ে জন্মগ্রহণ করে।’
‘রেফাহুল মোছলেমীন’ কিতাবে আছে, শরম-গাহের দিকে দেখে দেখে একান্তবাস করলে এবং তাতে সন্তান জন্ম নিলে সেই সন্তান বে-তমিজ ও বেয়াদব হবে অথবা অন্ধও হতে পারে। আর অতিরিক্ত কথা বলে একান্তবাস করলেও সন্তান বাকশক্তিহীন হতে পারে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময়ের একান্তবাসে সন্তান জন্ম নিলে সে সন্তান যে কোনো দোষে দোষী হতে পারে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০