অনেক এমপিই দলের নির্বাচনী ইশতেহার কী? তা যেমন জানেন না তেমনি এমপি’র আসল কাজ কী? এবং আসল গুরুত্ব কোথায়? তাও বুঝেন না। জোট সরকারে শুধু হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নয়, দুর্নীতিবাজ এমপিরা- এমপি হোস্টেলের বদনা চুড়ির মত ছিঁচকে চোরের উদাহরণও তৈরি করতে ছাড়েননি। এমপি মানে যে আসলে ‘ল মেকার’- অন্ততঃ এ চেতনাবোধ জনমনে জাগরিত থাকলে এমনটি এত সহজে হতে পারত না। ছিঁচকে চোরের হাতে জনগণ আইন তৈরীর মত গুরুগম্ভীর বিষয় ছেড়ে দিত না। বর্তমানে স্বাক্ষরতার হার অনেক বেশি দাবি করা হলেও দেশে সাধারণ শিক্ষিত বা সচেতন লোকের সংখ্যাও আসলে খুবই কম। জনগণকেই তাই সচেতন হতে হবে নিজেদের স্বার্থেই

সংখ্যা: ১৮৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ উচ্চারণ করেন ‘এমপি’। ‘এমপি’ মানে তারা বোঝেন পাঁচ বছরের জন্য এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি তৈরির সরকারি অনুমোদ প্রাপ্ত লোক।

যারা একটু শিক্ষিত ও রাজনীতি সচেতন তারা বুঝে থাকেন, ‘এমপি’ মানে- ‘জনপ্রতিনিধি’।

যারা আরেকটু সচেতন তারা মনে করেন এমপি মানে ‘নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি’।

এই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সংসদে গিয়ে এলাকার জনগণের সমস্যার কথা তুলে ধরবেন। বরাদ্দ চাইবেন।

এক্ষেত্রে যিনি যত সাবলীল ভাষায়, সুন্দর করে কথা বলতে পারেন, তাকে তারা মনে করেন তত দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান।

কিন্তু আসলে এমপি মানে যে  গবসনবৎ ড়ভ চধৎষধসবহঃ

‘এমপি’ মানে যে আইনসভার সদস্য আইন প্রণেতা তথা  খধি সধশবৎ

এটা বোধকরি এমপি সাহেবদেরও অনেকে জানেন না।

আইন প্রণেতার চেয়ে বড় ‘জনগণের নির্বাচিত সাংসদ’ হিসেবেই তারা ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকেন বেশি।

১৯৭২-এর সংবিধান প্রণয়নের পর কোন সংসদ অধিবেশনই

মূলতঃ আইন পর্যালোচনা, নতুন আইন প্রণয়ন, পেছনের আইন বাতিল ইত্যাদির ক্ষেত্রে কার্যকর ও জোরদার ভূমিকা দেখাতে পারেনি।

সে সাথে এযাবত অনুষ্ঠিত সব সংসদ অধিবেশনে নতুন আইন প্রণয়নে

আইনগত দিকের পর্যালোচনা

জনস্বার্থ সম্পৃক্ততা, আইনের গভীরতা, আইনের ব্যাপকতা, আইনের অসংযততা, আইনের ব্যর্থতা ইত্যাদি সম্পর্কে তুমুল ও তুখোড় আলোচনার নজির দেখাতে পারেননি কেউ।

এ কারণে আমাদের নবম সংসদ অধিবেশনেও সংশোধনীর সংখ্যা মাত্র ১৮টিও পার হয়নি।

আর সংশোধনী বিল যা এসেছে তাতে সবাই ‘রাবার স্ট্যাম্পের’ মত সিলই প্রদান করেছেন।

অর্থাৎ আমাদের সাংসদরা মূলতঃ নিজেদের।

দলীয় এমপি হিসেবে নিজেদের ভাবেছেন।

আইন প্রণেতা হিসেবে নিজেদের বিবেচনা করেননি।

একজন আইন প্রণেতা হিসেবে-

নিজেদের কি ব্যক্তিত্ব?

জ্ঞানের গভীরতা?

চরিত্রের দৃঢ়তা থাকা উচিত

সে চিন্তাও তারা অনেকেই করেননি বা করেন না।

যে কারণে অনেক সাংসদ ছিঁচকে চোরের মতও আচরণ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।

গত ০২.০৬.২০০৯ ইং তারিখে ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় প্রকাশিত

“এমপি হোস্টেল থেকেও তারা ঘটিবাটিও নিয়ে গেছেন!” শীর্ষক এই রিপোর্ট তাই প্রমাণ করে।

রিপোর্টে বলা হয়: “সপ্তম ও অষ্টম সংসদের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শতাধিক সাংসদ এমপি হোস্টেল ছেড়ে যাওয়ার সময় সরকারি আসবাবপত্রও নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব জিনিসের মধ্যে রয়েছে চেয়ার, টেবিল, খাট, আলনা, ফ্রিজ, রিমোট কন্ট্রোল, প্যাডেস্টাল ফ্যান, টিফিন ক্যারিয়ার ও ডিনার সেট। ব্যবহারে জন্য দেওয়া লেপ, তোশক, বালিশ, বেডশিট, পর্দা, মশারি, জগ, মগ এমনকি তালারও হদিস পাওয়া যায়নি। নোটিশ দেওয়ার পরও সাংসদরা এসব আসবাবপত্র ফেরত দেননি।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, আপনি তালিকা দিন, আমি দেখে ব্যবস্থা নেব।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, প্রায় দেড়শ’ সাংসদ হোস্টেল ছেড়ে যাওয়ার সময় এসব জিনিসপত্রের মায়া ছাড়তে পারেননি।

সপ্তম ও অষ্টম সংসদের ১৫৮ সাংসদ ১৩১টি ডিনার সেট, ৪টি ফ্রিজ, ২৮টি প্যাডেস্টাল ফ্যান, ৫৮টি টিফিন ক্যারিয়ার, ৪টি খাটসহ ১৮টি সেন্টার টেবিল, বেড সাইড টেবিল, প্রেসিং টুল, সোফা, শোকেস ও স্টিলের আলমারি নিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে ২১৭টি বেডশিট, ২৬১টি বেড কভার, ২৫৫টি বালিশ, ২৩৬টি বালিশের কভার, ১৮৩টি মশারি, ২১৬টি তোয়ালে, ৩৩৫টি লেপ ও লেপ কভার, ৭৩টি তোশক, ৭০টি জগ, ৪২টি মগ, ৫৩টি বালতি, ১৬টি বদনারও হদিস নেই।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী ও চীপ হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতি উদঘাটনে সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী এই কমিটির সভাপতি। খোন্দকার দেলোয়ার ফ্রিজসহ সংসদ সচিবালয়ের আনুষঙ্গিক বেশকিছু পণ্যসামগ্রী নিয়ে গেছেন। সূত্র মতে, মেয়াদ শেষে এসব পণ্য ফেরত না দিয়ে সাংসদরা নিয়ে তো গেছেনই, এমনকি এমপি হোস্টেল ত্যাগের সময় কেয়ারটেকারের সঙ্গে সরকারি আসবাবপত্র নিয়ে এক সাংসদের টানাহেঁচড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

পটুয়াখালী-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ আনোয়ারুল ইসলামকে কেয়ারটেকার একটি সেন্টার টেবিল নিয়ে যেতে বাধা দিলে এ টানাহেঁচড়ার ঘটনা ঘটে। ওই সাংসদ ৩৫ পিসের একটি ডিনার সেট, একটি রিমোট কন্ট্রোল ফ্যান, টিফিন ক্যারিয়ার, রাইটিং টেবিল, অকেশনাল চেয়ার, আলনা, ম্যাট্রেস, ৩টি বেড কভার, ৪টি বালিশ, বালতি, তালা, জগ, মগসহ ২২টি সামগ্রী নিয়ে যান। সপ্তম সংসদ (১৯৯৬)

গাইবান্ধা-৫ আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া হোস্টেল ছাড়ার সময় ৩৫টি পিসের ১টি ডিনার সেট, টিফিন ক্যারিয়ার, অ্যাশট্রে, তালা নিয়ে যান। সঙ্গে ৩টি তোশক, ৬টি বেড কভার, ৩টি বালিশ কভার, একটি লেপ, ৫টি লেপ কভার, ২টি বালতি, ১টি করে জগ, মগ, বদনা, পর্দা রয়েছে। ওই সংসদে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়ে এমপি হোস্টেলের ৪ নম্বর ব্লকের ৩ নম্বর রুমটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম-৫ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম ফ্রিজ, প্যাডেস্টাল ফ্রান, টিফিন ক্যারিয়ার, প্রেসিং টেবিল, বেড সাইট টেবিল, হাতাযুক্ত কুশন চেয়ার, ড্রেসিং টেবিল, শোকেস, ৩টি সোফা, ২টি খাট নিয়ে গেছেন। এর সঙ্গে ব্যবহার্য কটন ম্যাট্রেস, ফোম ম্যাট্রেস, চা চামচ, ডিনার সেট, তালা, বালতি, জগ, মগ, পর্দা, ৪টি লেপ কভার, ৩টি লেপ, ৯টি তোয়ালে, ২টি টেবিল কভার, ৪টি মশারি, ৬টি বালিশ, ৬টি বালিশ কভার, ৬টি বেডশিট ও ৪টি বেডও ছিল।

বিএনপি’র সাংসদ অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার ফ্রিজ, ডিনার সেট, টিফিন ক্যারিয়ার, প্যাডেস্টাল ফ্যান, জগ, টেবিল কভার, মশারি, বালিশ, বালিশের কভার, বেডশিট নিয়ে যান। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক সাংসদ জিল্লুর হাকিম প্যাডেস্টাল ফ্যান, টিফিন ক্যারিয়ারসহ নিত্যব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী জমা দেননি।

ফেনী-২ আসনের আলোচিত সাংসদ জয়নাল আবেদীন হাজারী ডিনার সেট, প্যাডেস্টাল ফ্যান, ম্যাট্রেস, বেড সাইড টেবিল, টি টেবিল, ৩টি বেডশিট, ৬টি বালিশ কভার ও লেপ কভারসহ ১৯টি পণ্যসামগ্রী নিয়ে যান।

সাবেক পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আবদুল কুদ্দুছ ডিনার সেট, বেডশিট, বালিশ, তোশক, তালাসহ ১৪টি জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ আবদুল মুকিত চৌধুরী ডিনার সেট, প্যাডেস্টাল ফ্রান, টিফিন ক্যারিয়ার, তোশকসহ ৮টি পণ্য বুঝিয়ে দেননি।

এছাড়া সপ্তম সংসদের সদস্য আবদুর রশীদ সরকার (গাইবান্ধা-২), আবুল কালাম (টাঙ্গাইল-৭), কেএম আবদুল খালেক চন্টু (কুষ্টিয়া-৩), মোঃ শাহজাহান (সিরাজগঞ্জ-৬), আবদুল মজিদ তালুকদার (বগুড়া-৩), শামসুর রহমান শরীফ (পাবনা-৪), আলী রেজা রাজু (যশোর-৩), শরীফ খসরুজ্জামান (নড়াইল-২), লুৎফর রহমান চৌধুরী (গাইবান্ধা-৪), আহাম্মদ আলী (মেহেরপুর-১), হাফেজ রুহুল আমিন (ময়মনসিংহ-৭), এমদাদুল হক ভূঁইয়া (নারায়ণগঞ্জ-২), আবদুল মান্নান তালুকদার (সিরাজগঞ্জ-৩), রায়হানুল হক (রাজশাহী-৫), অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুছ তালুকদার (নাটোর-৪), অ্যাডভোকেট এন কে আলম চৌধুরী (নীলফামারী-১) আহসান আহমেদ (নীলফামারী-২), রুহুল কুদ্দুছ তালুকদার (নাটোর-২), মোশাররফ হোসেন মঙ্গু (বরিশাল-৩), শরফুদ্দিন আহম্মেদ (রংপুর-১) গোলাম ফারুক অভি (বরিশাল-২) ও সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ মিসেস দিলারা হারুন, শাহনাজ সরদার, অধ্যাপক এথিন রাখাইন, অধ্যাপিকা জান্নাতুল ফেরদৌস, কামরুন্নাহার পুতুল, বেগম আলেয়া আফরোজ ও মিসেস রেহেনা আক্তার হীরা প্যাডেস্টাল ফ্যান, টিফিন ক্যারিয়ার, ডিনার সেটসহ ব্যবহার‌্য লেপ, তোশক, বালিশ, বেডশিট, পর্দা, মশারি, জগ, মগ, তালা বুঝিয়ে দেননি।

অষ্টম সংসদ (২০০১): এ সংসদে সাবেক সরকার দলীয় হুইপ ফজলুল হক আসপিয়া প্যাডেস্টাল ফ্যান, টিফিন ক্যারিয়ার, জগ, মগ, বালতি, বদনাসহ ১৩টি পণ্য নিয়ে যান।

বিএনপি দলীয় সাবেক সাংসদ সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ফ্রিজ, টিফিন ক্যারিয়ার, ডিনার সেটসহ ১২টি পণ্য,

কুষ্টিয়া-২ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী সপ্তম-অষ্টম দু’সংসদেই ২টি প্যাডেস্টাল ফ্যানসহ ৪৯টি পণ্য নিয়ে গেছেন।

কক্সবাজার-২ আসনের বিএনপি সাংসদ আলমগীর মোঃ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ টিফিন ক্যারিয়ার ও প্যাডেস্টাল ফ্যানসহ ২০টি পণ্য নিয়ে যান।

বান্দরবানের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ বীর বাহাদুর ২টি ডিনার সেট, টিফিন ক্যারিয়ার, প্যাডেস্টাল ফ্যানসহ ১৪টি পণ্য, রংপুর-৪ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ আলহাজ মোঃ করিম উদ্দিন ভরসা প্যাডেস্টাল ফ্যান, টিভিন ক্যারিয়ার, ২টি ডিনার সেটসহ ১৭টি পণ্য নিয়ে যান।

এছাড়া মোঃ মজিবুর রহমান (লালমনিরহাট-২), বান্দরবানের বীর বাহাদুর, মোঃ মাহবুবুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), মতিয়ার রহমান (বরগুনা-৩), মোঃ আবদুল হাই (ঝিনাইদহ-১), আবদুল মান্নান তালুকদার (সিরাজগঞ্জ-৩), সাবেক হুইপ রেজাউল বারী ডিনা (বগুড়া-২), অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম (কুষ্টিয়া-২), মাসুদ অরুণ (মেহেরপুর-১), শাহজাহান চৌধুরী (কক্সবাজার-৪), মোঃ আখতারুজ্জামান (দিনাজপুর-৪), তালুকদার আবদুল খালেক (বাগেরহাট-৩), শাহজাহান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), মুফতি ওয়াক্কাছ (যশোর ৫), ইলিয়াছ আলী (সিলেট-২), মোঃ মোজাম্মেল হক  (নাটোর-২) মোঃ হারুনুর রশীদ (নবাবগঞ্জ-৩), সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন (নবাবগঞ্জ-২), শাহ রুহুল কুদ্দুছ (খুলনা-৬), ফখরুল ইসলাম চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৫), হাজী মোঃ মোজাম্মেল হক (চুয়াডাঙ্গা-২), মোহাম্মদ আলী সরকার (রংপুর-২), ফ্যান, টিফিন ক্যারিয়ার ও ডিনার সেটসহ বিভিন্ন সরকারি জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন। সংশোধিত বিধির সুযোগ! পঞ্চম সংসদ পর্যন্ত নিয়ম ছিল সাংসদদের জন্য সংসদ সচিবালয় থেকে সরবরাহ করা আসবাবপত্র মেয়াদ শেষে কক্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ককে বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সরকার এসব আসবাবপত্র আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ষষ্ঠ সংসদে এই বিধান সামান্য শিথিল করে ক্ষয়িষ্ণু এবং ভঙ্গুর জাতীয় সামগ্রী হস্তান্তরের সক্ষম না হলে এসব পণ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সাংসদের প্রত্যয়নসাপেক্ষ বিশেষ বিবেচনায় ওই ধারা অবলোপন করা যেতে পারে মর্মে নুতন বিধান করা হয়; কিন্তু উল্লিখিত সাংসদরা ওই ধরনের পণ্যের প্রত্যয়নপত্র দেননি বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সপ্তম সংসদের ৫ বছরে সদস্যদের দেয়া একটি পানির গ্লাসও ভাঙেনি। প্রত্যেক সাংসদ পানির গ্লাসগুলো কক্ষ হস্তান্তরের সময় কেয়ারটেকারকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে মনোগ্রামযুক্ত ৩৫ খণ্ডে ডিনার সেটের কোনো অস্তিত্ব নেই। পানির গ্লাসগুলো অক্ষত থাকলেও মূল্যবান ডিনার সেটগুলো ভেঙে যায়। এক হিসেবে দেখা গেছে, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে এমপি হোস্টেলের ৪, ৫ ও ৬নং ব্লকে বসবাসকারী ১৬৮ জন সাংসদের ১৩১ জনই ভেঙে গেছে এ তথ্য জানিয়ে ডিনার সেট বাসায় নিয়ে গেছেন। এমপি হোস্টেলের একজন কেয়ারটেকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসলে এমপি সাহেবরা ডিনার সেটগুলো ভঙ্গুর দেখিয়ে স্মৃতি হিসেবে নিয়ে গেছেন। সপ্তম সংসদে এমপি হোস্টেলের ওঠার সময় একজন সাংসদ ফ্যামিলি স্যুটের কক্ষে ৩টি খাট, ১টি ফ্রিজ, সিলিং ফ্যানসহ ১টি জাপানের মিৎসুবিসি কোম্পানির রিমোট কন্ট্রোল প্যাডেস্টাল ফ্যান, ১টি টিফিন ক্যারিয়ার, এক সেট সোফা, একটি ডাইনিং টেবিল, ৪টি চেয়ার, ১টি আলমারি, আলনা,  ওয়্যারড্রপ, লেপ, তোশক, বালিশ, মশারি, বেডশিট, বেড কভার, পর্দাসহ নিত্যব্যবহার্য ৪৬ ধরনের সামগ্রী বরাদ্দ পান। সিঙ্গেল রুম বরাদ্দ পাওয়া সাংসদরা সোফা ও ডাইনিং টেবিল ছাড়া ২টি খাট, ফ্রিজ, ফ্যান, টিফিন ক্যারিয়ারসহ সমপরিমাণ জিনিসপত্র পান।

সূত্র জানিয়েছে, বালিশ, বালিশের কভার, বেডশিট, বেড কভার, মশারি, লেপ, তোশক,  পর্দা সপ্তাহ-দশ দিন পরপর ধোপাখানায় পাঠিয়ে পরষ্কার এবং বছরে একবার এসব সামগ্রী বদলে দেয়া হয়। ছিঁড়ে গেলে বা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়লে পণ্য পরিবর্তন করে দেয়া হয়। এরপরও প্রায় প্রত্যেক সাংসদ উল্লিখিত পণ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে দেখিয়ে কেয়ারটেকারকে বুঝিয়ে দেননি।

টিআইবি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এ বিষয়ে মন্তব্য করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে এসব চুরি চামারির শুরু।

তিনি বলেন, কেবল সংসদ সচিবালয় নয়, সরকারের পদস্থ অন্যান্য কর্মকর্তার বেলায়ও একই ধরনের ঘটনা ঘটে।

এর সঙ্গে গণর্পূতসহ নানান পক্ষ জড়িত। তিনি মনে করেন, সরকারের সম্পদ নষ্ট করা এবং নিয়ে যাওয়া দু’টি ভিন্ন রকমের অপরাধ। সরকারের সম্পদ নিয়ে গেলে এমটিদের বিরুদ্ধে সিভিল স্যুট হওয়া উচিত।”

মূলতঃ এটাই আসলে এক নম্বর আশ্চর্যের বিষয় যে,

যে ল’ মেকার সমাজে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আইন প্রণয়ন করবেন তাদের বিরুদ্ধেই আইনকে পদদলিত করার এমনকি পাহাড় পরিমাণ দুর্নীতি তথা সাগর চুড়ির থেকে আরম্ভ করে বদনা চুরির মত ছিঁচকে চুরি অপরাধের অভিযোগও গঠন করতে হয়। (নাঊযুবিল্লাহ)

বলাবাহুল্য, এ অভ্যাস যে কত ভয়াবহ আকার ধারন করেছে তার উদাহরণ হলো- বিখ্যাত শিল্পপতি করিম উদ্দীন ভরসাও টিফিন ক্যারিয়ারটিও পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)

অথচ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সাংসদরা সশ্রদ্ধ চিত্তে এই বলে শপথ নেন, আমি যে কর্তব্য ভার গ্রহণ করিতেছি, তাহা আইন অনুযায়ী ও বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব; আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম ও আনুগত্য পোষণ করিব; এবং সংসদ সদস্য রূপে আমার কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বর্থের দ্বারা প্রভাবিত হইতে দিব না।

টিআইবি’র সাবেক চেয়ারম্যানের মন্তব্য বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকেই ছাত্র নেতারা এসব চুরি-চামারির অনুশীলন করে; যারাই পরে এমপি হয়। (নাঊযুবিল্লাহ)

প্রসঙ্গতঃ অনিবার্যভাবে দু’টো তীর্যক প্রশ্ন এখানে সম্পৃক্ত হয়।

সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ- বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে কি শিক্ষা দিচ্ছে, যা মহাচোর থেকে ছিঁচকে চোরের খাছলতও তৈরি করে দেয়?

এটা তাহলে কোন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা?

এবং কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান?

সঙ্গতকারণেই এ প্রশ্ন কী তাহলে ঘনীভূত হয় না যে, এর অনিবার্য এবং আশু পরিবর্তন দরকার।

বলাবাহুল্য, সেক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষা এবং আদর্শের সমন্বয়ই কী একমাত্র প্রতিকার এবং প্রতিষেধক নয়?

পাশাপাশি দ্বিতীয় যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তাহলো- গণতন্ত্রের নামে

নির্বাচনের নামে এ কোন্ ধরনের রাজনীতি দেশে চালু রয়েছে,

যেখানে তিনশ’ এমপি’র মধ্যে প্রায় দেড়শ’ এমপিই ছিঁচকে চোরের মত আচরণ করতে ছাড়েন না। লেপের কভারটা পর্যন্ত চুরি করে নেন। (নাঊযুবিল্লাহ)

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “চুরিও করো না এবং কেউ চুরি করতে পারে সে সুযোগও দিও না।”

আসলে দেশের জনগণ এ হাদীছ শরীফ জানে না, আমল করে না।

তারা যদি অজ্ঞতার মধ্যে বিরাজ না করতো

নিজেদের অধিকার সম্পর্কে নিষ্ক্রিয় না থাকতো

ফাসিক-ফুজ্জারদের মূল্যায়ন না করতো

বিজাতীয়-বিদ্য়াতী-হারাম পন্থায় অংশগ্রহণ না করতো

ইসলাম অনুসরণ করতো

তাহলে তাদের উপর বর্ণিত সাংসদদের ন্যায় এ রকম ব্যক্তিত্ব রাজত্ব করতো না।

কাজেই শুধু রাজনীতিবিদদের দূষলেই হবে না, সত্যিকার সুফল পেতে চাইলে জনগণকে অজ্ঞতা ও নিষ্ক্রিয়তা পরিহার করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই।

হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যেদেশের জনগণ যেরকম সেদেশে আল্লাহ পাক সেরকমই শাসকই পাঠিয়ে দেন।”

আর কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “যমীনে এবং পানিতে যত বিপদ-আপদ, বালা-মুছীবত সব মানুষের হাতের কামাই।”

কাজেই মন্ত্রী-এমপিদের দোষ দেয়ার আগে জনগণকে নিজের দোষই আগে খুঁজতে হবে।

অজ্ঞতা এবং নিষ্ক্রিয়তা দু’টোই মহাপাপ।

কিন্তু দেশের জনগণ শুধু এ দু’মহাপাপেই আক্রান্ত নয়

পাশাপাশি তারা ইসলামের প্রতিও আগ্রহী নয়।  অথচ তারা মুসলমান দাবিদার।

মূলতঃ কুরআন-সুন্নাহ পালনেই যে মুসলমানদের মুক্তি আর না পালনে সব আযাব-গযব,  দেশি-বিদেশী লাঞ্ছনা-গঞ্জনা

তা আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায় হজ্জের মশহুর খুৎবায় বলে গেছেন। যা আজও জ্বলজ্বল করছে।

-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ

ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০

বাতিল ফিরক্বা ওহাবীদের অখ্যাত মুখপত্র আল কাওসারের মিথ্যাচারিতার জবাব-১৩ হাদীছ জালিয়াতী, ইবারত কারচুপি ও কিতাব নকল করা ওহাবীদেরই জন্মগত বদ অভ্যাস

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কায্যাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-৫১

‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী

অবশেষে জামাতীরা স্বীকার করিল যে, মুক্তি পাইতে চাহিলে মুরীদ হইতে হয়। আল্লাহ পাক-এর ওলী বা দরবেশ হইতে পারিলে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু জামাতীরা তাহা নয় বলিয়াই আখিরাত তো দূরের কথা দুনিয়াতেই তাহারা দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার। আর মইত্যা রাজাকারের ফতওয়া অনুযায়ী তো- তাহাকেই কতল করা ওয়াজিব।