মইজ্জা রাজাকার ওরফে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদ মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্যা রাজাকারকে ‘দরবেশ’ বলিয়া আখ্যা দিয়াছে। এদিকে ‘বাংলার ইহুদী’ খ্যাত- সাঈদী বলিয়াছে, নিজামী ছিলেন একজন আল্লাহওয়ালা মানুষ। মইত্যা রাজাকারকে দরবেশ ও আল্লাহওয়ালা, আল্লাহর ওলী বলা প্রসঙ্গে বিক্ষিপ্ত আলোচনা এদিক-সেদিক হইয়াছে।
তবে জামাতী রাজাকাররা স্বার্থের জন্য কিরূপ বে-ঈমানী করে, মিথ্যাকে সত্য করে, ধর্মের নামে খুন, ধর্ষণ, রাজাকারগিরি জায়িয করতে পারে তাহা যেমন ‘মইত্যা রাজাকারকে’ ‘আল্লাহর ওলী’, ‘আল্লাহওয়ালা’, ‘দরবেশ’ ইত্যাদি বলার মাধ্যমে প্রমাণিত হইয়াছে।
তেমনি তাহার পাশাপাশি জামাতী তত্ত্ব যে ভুল; উহার স্বীকৃতি উহাদের মুখেই উচ্চারিত হইয়াছে। নাজাতের জন্য তাহারাও যে আল্লাহওয়ালার, দরবেশদের বা আল্লাহর ওলীদের মুখাপেক্ষী বা মুহতাজ তাহাও তাহারা প্রতিপন্ন করিয়াছে।
কথা হইল মইজ্জা রাজাকার, ‘বাংলার ইহুদী’ সাঈদী, আল্লাহর ওলী, আল্লাহওয়ালা, দরবেশ বলিতে গেল কেন? স্বাধীনতা উত্তর বিগত ৩৭ বছরে তো তাহারা মইত্যা রাজাকারদের ভূয়সী প্রসংশা করিলেও কখনও আল্লাহর ওলী, আল্লাহওয়ালা দরবেশ বলিয়া সম্বোধন করেন নাই। কিন্তু মইত্যা রাজাকারের গ্রেফতারের পর তাহাদের মুখ দিয়া ঐসব কথা বাহির হইয়া আসিল কেন? তাহারাই না সেই সব ব্যক্তি- যাহারা সারাজীবন আল্লাহর ওলীর কাছে যাওয়ার বিরুদ্ধে বলিয়া মুখে ফেনা তুলিয়াছে। মুরীদ হওয়ার তীব্র সমালোচনা করিয়াছেন।
খানকার মধ্যে বসিয়া থাকিয়ে মুক্তি মিলিবে না বলিয়া সহজ-সরল ধর্মপ্রাণদেরকে দলে ভীড়াইবার চেষ্টা করিয়াছে। সবক, ত্বরীকা, ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ রুহানী ইছলাহ ইত্যকার বিষয়কে বিভ্রান্তির বেড়াজাল বলিয়া প্রচার করিয়াছে। কিন্তু এখন গ্রেফতারের জালে আবদ্ধ হইবার পর সেইসব কথাই তাহাদের মুখ দিয়া বাহির হইয়া পড়িল। ইহার হাক্বীক্বত কি?
ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি একবার বলিলেন, মুসলমানও জাহান্নামে থাকিবে। ইহার ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, কেয়ামত, হাশর, নাশর, বিচার, ফায়সালা হবার পর কাফেররা তো এমনিতেই বুঝিতে পারিবে যে আল্লাহ পাক-এক আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য। হাশর-নাশর সত্য। সুতরাং তখন তো আর তাহারা কাফের থাকে না। ঠিক মইত্যা রাজাকার, বাংলার ইহুদী সাঈদী গংদের অবস্থাও হইয়াছে তদ্রুপ।
ধরা পরিবার পর, গ্রেফতার হইবার পর উহারা এই সত্য স্বীকার করিতে বাধ্য হইল যে, “আল্লাহরওলী হইলে, দরবেশ হইলে, আল্লাহওয়ালা হইলে আখিরাতেই নিজের মুক্তি তো নিশ্চিতই বরং সুপারিশ করিয়া লাখ লাখ মুরীদ-মোতাকেদদের পার করিয়া দেয়া যায়। সুতরাং সেখানে দুনিয়াবী মুক্তি তো নস্যি মাত্র।”
আর এই চিরন্তন সত্যের প্রেক্ষিতেই নিজামীকে বাচাইবার তাগিদে উহারা উপায়ন্তর না দেখিয়া অবশেষে নিজামীকে আল্লাহওয়ালা, আল্লাহর ওলী, দরবেশ আখ্যা দিয়া তাহাকে রক্ষা করিতে প্রাণান্তকার চেষ্টা করিল।
অথচ তাহাদের ভাষায় মইত্যা রাজাকারের পরিচয় হওয়া উচিত ছিল, “গণতন্ত্রের পূজারী, ইসলামী জাতীয়তাবাদের ধারক-বাহক, প্রখ্যাত ইসলামী রাজনীতিক, ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় সিপাহসালার”, ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি সাবেক মন্ত্রী বা জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর কথাটাও তাহারা উচ্চকিত করে নাই। হাই লাইট করে নাই।
অর্থাৎ তাহাদের গোটা জামাতে ইসলামী বাংলাদেশও তাদের আমীরকেই রক্ষা করিতে পারে নাই।
যেই মইত্যা রাজাকার সারা জীবন ‘জামাতে ইসলাম’ করিল সেই ‘জামায়াত’ তাহাকে সামান্য গ্রেফতারেও ঢাল হইতে পারিল না।
জামাতের এই অন্ত:সার শুন্যতার কথা আসলে মইজ্জা রাজাকার, বাংলার ইহুদী-সাঈদী গং সবাই ভেতরে ভেতরে জানে। কেবল স্বার্থের জন্যই তাহারা জামাতের রাজনীতি করে।
তাই মুসলমানের ঘরে জন্ম নেয়া নাস্তিক যেমন ঝড়ের কবলে পড়লে ঠিকই ‘আল্লাহ পাক-এর নাম’ নেয় ঠিক তেমনি তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারী, আল্লাহওয়ালা বিরোধী, রাজারবাগ শরীফের বিরোধী জামাতী রাজাকাররা ঠিকই বিপদে পড়ে আত্মরক্ষার জন্য আল্লাহওয়ালা, ওলীআল্লাহর কথা স্বীকার করিল।
প্রকারন্তরে তাহারা মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর তাজদীদের কাছেই আত্মসমর্পন করিল।
আল্লাহর ওলীর ছূরতেই মুক্তি পাওয়া যায় সেই কথাই প্রতিভাত ও প্রতিপন্ন করিল। কিন্তু যেহেতু মইত্যা রাজাকার আদৌ আল্লাহওয়ালা না সুতরাং আল্লাহওয়ালার বরকতে সে মুক্তি পাইবে; ইহা কি করিয়া সম্ভব। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, ‘যে আলিম আর যে আলিম নয় তাহারা কি সমান? কখনও নয়।’
মইত্যা রাজাকার বরং কি জিনিস তাহা তাহার লেখা ফতওয়ার আলোকেই বিচার করা যায়। মইত্যা রাজাকার তাহার লেখা ‘ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন’ নামক বইয়ের ১৩ পৃষ্ঠায় সূরা আত্ তওবার একটি আয়াত শরীফ উল্লেখ করিয়াছে, “জিহাদ কর আহলে কিতাবদের সেইসব লোকদের বিরুদ্ধে যাহারা আল্লাহ পাক ও তাহার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাহা হারাম করেছেন তাহাকে হারাম সাব্যস্ত করে না। (সূরা আত তওবা-২৯)
উল্লেখ্য, কুরআন-সুন্নাহয় শত শত দলীল রহিয়াছে, “ছবি তোলা হারাম, নারী-নেতৃত্ব হারাম, গণতন্ত্র করা হারাম, হরতাল করা হারাম, মৌলবাদ দাবী করা হারাম।”
কিন্তু সেই সব হারাম কাজের মধ্যে মইত্যা রাজাকারই আকণ্ঠ ডুবিয়া রহিয়াছে। সুতরাং তাহার ফতওয়া মোতাবেকই তাহার বিরুদ্ধে জিহাদ করা, তাহাকে কতল করা ওয়াজিব নয় কি?
-মুহম্মদ তারীফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০