সব ছানা-ছিফত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। এমন ছানা-ছিফত যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। অপরিসীম, অকৃত্রিম, অগণিত দুরূদ ও সালাম মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। এমন দুরূদ ও সালাম মুবারক যা তিনি পছন্দ করেন।
গত ৭ মার্চ ২০১৩ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক আল ইহসানে প্রথম পৃষ্ঠায় খবর শিরোনাম হয়েছিল-
‘হরতাল বন্ধে আইন চায় এফবিসিসিআই।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “হরতাল, খুনোখুনি ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলে। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চাই আমরা।”
সাম্প্রতিক যে নৈরাজ্যকর অবস্থা তাতে আমরা জিম্মি হয়ে যাই। দলগতভাবে একেকজনের একেক আদর্শ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীরা দেশের স্বার্থে কাজ করি এবং দুদলকেই আমরা শ্রদ্ধা করি।
এখন সময় এসেছে। আপনারা আইন করে হরতাল বন্ধ করুন। প্রয়োজনে হরতাল বন্ধে গণভোট দিন আপনারা।”
তিন দিনের এই হরতাল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিল, এফবিসিসিআইসহ ২৭টি ব্যবসায়ী সংগঠন।
উল্লেখ্য, দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে পণ্য খালাস করছেন না। পাইকারি বাজারগুলোতে পণ্য আসছে না। ফলে আগামীতে নিত্যপণ্যের বাজারে মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিবে, যার আলামত ইতিমধ্যে ফুটে উঠেছে।
গত ৭ মার্চ ২০১৩ ঈসায়ী তারিখ বৃহস্পতিবার থেকে ১১ মার্চ সোমবার পর্যন্ত টানা ৬ দিন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সরকারি ছুটির কারণে বন্ধ থাকে। বুধবার একদিন খোলা থাকলেও গত ৭ মার্চ ২০১৩ ঈসায়ী তারিখ বৃহস্পতিবার আবারও বিএনপি হরতালের ডাক দিয়েছিল। বৃহস্পতিবার হরতাল শেষে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে টানা ১০ দিন রাজনৈতিক ও ছুটির ফাঁদে পড়ে পণ্য সরবরাহ চেইনে এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল।
এছাড়া জামাতে মওদুদীর সহিংস কর্মকা-ের সময় দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক ভেঙে দেয়া হয়। ব্রিজের পাটাতন উপড়ে ফেলা হয়। ফলে সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত থেকে অনেক পণ্যবাহী ট্রাক সীমান্তের ওপারে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের ভেতর প্রবেশ করতে পারছে না। বিদেশ থেকে সমুদ্র পথে আমদানি করা পণ্য খালাস করতে পারছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টানা ৬ দিন পর চট্টগ্রাম বন্দরে মাত্র ৩ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্যতেল খালাস হয়েছে। অন্যান্য বন্দরের অবস্থা একই।
এর প্রভাব পড়েছে দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে। হরতাল ও রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে শ্যামবাজারে কোন পণ্য প্রবেশ করেনি। গত ৭ মার্চ ২০১৩ ঈসায়ী তারিখের পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, শুধু রাজধানী ঢাকার আড়াইশ আড়তঘরে পণ্য ছিল না। এ সুযোগে পিয়াজ আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ ও ধনিয়ার দামসহ সবকিছুর দাম দ্বিগুণ বহুগুণ বেড়েছে।
মূলত সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেক নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের সাহস পাচ্ছেন না।
হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে। ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান- সবখানে স্থবিরতা দেখা দেয়। আর্থিক লেনদেনে গতি থাকে না। ফলে অর্থনীতি চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হরতালের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ- সব স্থবির হয়ে পড়ছে। সময়মতো বিমান এবং অন্যান্য পরিবহন চলাচল করতে না পারায় হাজার হাজার কোটি কোটি ডলারের ক্ষতির হয়। দেশের পুঁজিবাজারের মতো বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই হরতালের কারণে। রাজধানীর বাইরে থেকে কাঁচামাল ও শাকসবজি আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকে; ফলে কৃষক ও সাধারণ মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এ সঙ্কট উত্তরণ করার জন্য সরকারি ও বিরোধী দলসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা খুঁজে বের করে জনগণের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমাদের দেশে যে দলই ক্ষমতায় থাকে সে দল তখন হরতালের বিরুদ্ধে থাকে। আর যারাই বিরোধী দলে থাকে তারাই হরতালকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। এমনও হয়েছে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একটি দল বলেছে যে, তারা বিরোধী দলে গেলে হরতাল করবেনা। কিন্তু বাস্তবে বিরোধী দলে গিয়ে তারা ঠিকই হরতাল করেছে। বিগত সরকারের সময়ে ১৭০টি হরতাল করেছে। অথচ হরতালে ক্ষতি হয় মূলত রাষ্ট্রের তথা জনগণের। প্রতিদিন এ ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকা।
চলতি বছর যে পনের দিন হরতাল হয়েছে তাতে প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অথচ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় হবে তিন বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এ পদ্মা সেতু নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে কী নাজেহাল হতে হয়েছে তা গোটা বিশ্ব অবমাননা ভরে দেখেছে।
মূলত হরতালে কারোই লাভ হয়না। হরতাল দাবিদারদেরও ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বড় ক্ষতি রাষ্ট্র ও জনগণের। কাজেই জনগণেল জান-মালের ক্ষতি, রাষ্ট্র চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে এরকম একটা ব্যবস্থা রাষ্ট্রে চলতে পারে না। সুতরাং এই ক্ষতিকর ব্যবস্থা প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে অবশ্যই আইন প্রণয়নে অগ্রণী হতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা এ বিষয়ে রাষ্ট্র জনগণের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও আকুণ্ঠ সহযোগিতা পাবে।
কারণ, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে হরতাল হারাম। দেশের ৯৭ ভাগ অধিবাসী হরতাল পছন্দ করে না। কাজেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে হারাম হরতাল বন্ধে রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার রাষ্ট্রকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
মূলত সব সমস্যা সমাধানে চাই সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা তথা সততা। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত মুবারক, নেক সংস্পর্শ মুবারক তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ কেবলমাত্র তা পাওয়া সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ
ড. ইউনুসের নোবেল পুরস্কারের নেপথ্য এবং প্রসঙ্গ কথা: আলোর নীচে অন্ধকার
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ২