لا تجعلوا دعاء الرسول بينكم كدعاء بعضكم بعضا.
অর্থ: “তোমরা পরস্পর পরস্পরকে যেভাবে সম্বোধন করে থাক, সেভাবে তোমাদের যিনি রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনাকে সম্বোধন করো না।” (সূরা নূর-৬৩)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর দ্বারা মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে কঠোরভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ যেন উনার পেয়ারা হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেভাবে না ডাকে যেভাবে মানুষ একে অপরকে ডেকে থাকে। স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র কুরআন শরীফ-এর কোথাও উনার পবিত্র নাম মুবারক ধরে ডাকেননি। এটা মূলত আল্লাহ পাক, উনার পক্ষ থেকে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আফযালিয়াতের বহিঃপ্রকাশ।
অথচ বর্তমানে দেখা যায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের যেসব লেখক আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার জীবন চরিত মুবারক রচনা করেছে, সংকলন করেছে তাদের অনেকেই আরবী ভাষা ও সাহিত্যে অনভিজ্ঞ। যার ফলে তারা বাংলা সাহিত্যে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার প্রকৃত আফযালিয়াত তুলে ধরার পরিবর্তে উনাকে মানবীয় বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করেছে নাঊযুবিল্লাহ! যার ফলে দেখা গেছে বাংলা সাহিত্যে রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনাকে মনগড়াভাবে নিছক একজন ‘বিশ্বনেতা’, ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’ নামকরণে চিত্রিত করা হয়েছে। অথচ আমরা গভীরভাবে ফিকির করলে বুঝতে পারব যে, এটা মূলত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার আফযালিয়াত তথা শানের সম্পূর্ণ খিলাফ।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন খাছ রসূলুল্লাহ ও হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-
وما محمد الا رسول
অর্থ: “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসূল ব্যতীত অন্য কিছুই নন।” (সূরা আলে ইমরান-১৪৪)
হাদীছ শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
انا حبيب الله، انا سيد المرسلين، انا خاتم النبين
অর্থ: “আমি ‘হাবীবুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ পাক, উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, অর্থাৎ রসূলগণের সাইয়্যিদ, খাতামুন্ নাবিইয়ীন অর্থাৎ সর্বশেষ নবী।” (মিশকাত শরীফ)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
لست كاحدكم
অর্থ: “আমি তোমাদের কারো মত নই।”
বস্তুত: আমাদের স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, ‘বিশ্বনেতা’ বলতে সাধারণত বিশ্বের মধ্যে যে সবচেয়ে বড় নেতা বা সমকালীন কোন বড় নেতাকে বুঝানো হয়। অপরদিকে ‘মাহমানব’, ‘মহাপুরুষ’ শব্দদ্বয় মুসলমান, অমুসলমান সবার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে ও ব্যবহার হয়ে থাকে।
মূলতঃ এক বা একাধিক বিষয়ে কোন ব্যক্তি বিশেষ যোগ্যতা অর্জন করলে তাকেই ‘মহামানব’, ‘মহাপুরুষ’ বলে অভিহিত করা হয়। সে মুসলমানও হতে পারে আবার ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, মুশরিক, নাস্তিকও হতে পারে। আল্লাহ পাক, উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন- রহমতুল্লিল আলামীন। তিনি মানুষের মাঝে আগমন করলেও তিনি আমাদের মত মানুষ নন। উনার প্রতি ওহী নাযিল হয়। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুল খলায়িক্বে ওয়াল বাশার, তিনি হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, তিনি হাবীবুল্লাহ, তিনি নূরে মুজাস্সাম। অথচ যারা বিশ্বনেতা, মাহামানব, মহাপুরুষ খেতাবে ভূষিত তারা কেউই আলোচ্য কোন একটি গুণের লেশমাত্রেরও অধিকারী নয়।
কাজেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনাকে কাফির-মুশরিক, নাস্তিকদের মত মানহানীকর লক্ববে ডাকা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে যিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার যথাযথ পরিচয় জানার এবং তা জেনে হাক্বীক্বী তা’যীম-তাকরীম, সম্মান ও মুহব্বত করার তৌফিক দিন। আমীন।
মুহম্মদ জাকির হুসাইন, দিনাজপুর