খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীতে মানুষ পাঠানোর পূর্বেই পৃথিবীতে বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আমরা বলতে পারি পরিবেশ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থাটি খোদ মহান আল্লাহ পাক উনার বরকতময় কুদরতি ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে অর্থাৎ এটি মহান কুদরত উনার অধীন। সুবহানাল্লাহ!
পৃথিবীর প্রথম মানুষ ও সম্মানিত নবী হযরত আদম শফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ফলদার বৃক্ষ রোপন ও মানব খাদ্যের প্রধান উৎস খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রক্রিয়া তথা কৃষি কাজ করে মানব জাতিকে সৃষ্টির শুরু থেকেই ভালো খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকা ও পরিবেশ রক্ষার শিক্ষা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মূলত, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শুরু থেকেই বৃক্ষ রোপণ এবং কৃষির মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
বর্তমান যুগে আবহাওয়া পরিবর্তনে সচেতনতা, পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় পরিবেশবাদীদের আর্তনাদ, বৃক্ষ রোপণের উপর গুরুত্ব দিয়ে যতো সভা সেমিনার হচ্ছে, যতো উপদেশ, পরামর্শ বা তাকিদ দেয়া হচ্ছে তা আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বেই আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অকারণে বা বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন এমনকি অপ্রয়োজনে গাছের পাতা ছেড়া, ডাল-পালা কাটাও নিষেধ করেছেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলামে বিনা প্রয়োজনে গাছের একটি পাতা ছিড়াও মাকরূহ বলা হয়েছে।
হায়াতুন নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ হাত মুবারকে বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তেও কারো হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে সে যেন তা রোপণ করে নেয়। কারণ এজন্য তাকে ক্বিয়ামতের দিন পুরস্কৃত করা হবে।” সুবহানাল্লাহ!
বৃক্ষরাজির গুরুত্ব বোঝাতে তিনিই জানিয়েছেন, বৃক্ষরাজি এমনকি দুর্বাঘাসও সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল থাকে, সিজদারত থাকে এবং তারা তাসবীহ তাহলীল পাঠ করতে থাকে। এমনকি আমাদের চারপাশের সৃষ্টিকুল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ছলাত সালাম পাঠ করতে থাকে তথা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
প্রসঙ্গত, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম অস্বীকারকারী কাফির-মুশরিকরা পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষার মহান কুদরতি ব্যবস্থাকে ‘মানুষের হাতের তৈরি’ অথবা ‘কাফিরদের অবদান’ হিসেবে প্রমাণ করতে প্রতি ঈসায়ী সনের ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ নামে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। কাফিররা এসব তথাকথিত পরিবেশ দিবস আসলেই আবহাওয়া, মাটির প্রকৃতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, ভৌগোলিক পরিবেশ, প্রাণিজ সম্পদ রক্ষা ইত্যাদি বিবেচনায় এনে পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব উল্লেখ করে আলোচনা করে থাকে। তাদের লোক দেখানো কার্যক্রমের মধ্যে ঐসমস্ত বিষয়গুলোই তারা আলোচনা করে থাকে যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চৌদ্দশত বছর আগেই শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু হিংসাবশতঃ তারা কখনই পরিবেশ রক্ষায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক অবদান ও শিক্ষার কথা উল্লেখ করে না। অথচ উনার জীবনী মুবারক গবেষণা করেই কাফিররা এ বিষয়ে জ্ঞানবিদ্যা চুরি করেছে। যদিও তারা নিজেরাই জাতিগতভাবে অসভ্য ও বর্বর হওয়ার কারণে পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমন অনেক পশু-পাখি, বন-জঙ্গলের প্রাণী হত্যা করে থাকে এবং এগুলো ভক্ষণ করে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! পবিত্র দ্বীন ইসলামে এসমস্ত বন্যপ্রাণী শিকার করা, হত্যা করা এবং খাওয়া হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নির্দেশনা মুবারক ও শিক্ষা মুবারক নিয়ে গবেষণা চলছে কাফির বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। লন্ডনের ইসলামিক কালচারাল সেন্টার থেকে প্রকাশিত, ‘দি ইসলামিক কোয়ার্টারলি’ পত্রিকার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর সাইয়্যেদ নাসের হুসাইন, ‘ইসলাম এন্ড এনভায়রণমেন্ট ক্রাইসিস’ নামক এক গবেষণালদ্ধ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘পরিবেশ সঙ্কট’ আধুনিক মানুষের প্রকৃতিকে আধ্যাত্মিক নিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচনা করারই ফল।’ তার মতে, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ সংক্রান্ত ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি মূলত সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের এক অনস্বীকার্য স্থায়ী সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত।’ অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশনা ও শিক্ষা মুবারক অনস্বীকার্য।
উল্লেখ্য, ‘গাছের প্রাণ আছে’Ñ এ সত্যটি জগদীশ চন্দ্র বসু নামক এক মুশরিক উচ্চারণ করেছিলো বলে তাকে মাথায় তুলে রীতিমতো লম্ফঝম্ফ করতে দেখা যায় মুশরিকদেরকে। অথচ চৌদ্দশত বছর পূর্বে আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই প্রথম ‘গাছের প্রাণ আছে’ এ তথ্যটি উম্মতদেরকে জানিয়েছেন, সেটি নিয়ে কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে তদ্রুপ চেতনা দেখা যায়না। বৃক্ষরোপন নিয়ে অনেকের বাণী প্রচারিত হয়। কিন্তু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বৃক্ষরোপণকে উৎসাহিত করে বলেছেন, “বৃক্ষরোপণ ছদকায়ে জারিয়া হিসাবে পরিগণিত হবে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “কোনো মুসলমান যদি একটি বৃক্ষ বা গাছ রোপণ করে, অতঃপর তা হতে মানুষ, পাখি বা কোনো প্রাণী ভক্ষণ করে, তা তার জন্য ছদক্বার ছাওয়াব হবে।”
রাস্তা-ঘাটে কোন প্রাণীর মৃতদেহ পেলে আমরা মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখি। এ শিক্ষা আমাদের কে দিলেন? পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পাওয়া যায়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রাণীর মৃত দেহের কোনো অংশ যত্রতত্র ফেলতে নিষেধ করেছেন, কারণ তা একসময় শুকিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যেতে পারে। যা পুঁতে না ফেললে তা কোনো প্রাণী বা পাখির দ্বারা ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হতে পারে। এজন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্ত বা গোশত মাটিতে পুঁতে ফেলতেন বা পুঁতে ফেলার নির্দেশ মুবারক দিতেন।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শরীরে কর্তিত চুল, নখ, পশ ইত্যাদি মাটিতে পুতে রাখার তা’লীম মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আমরা হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় যে মুখ ঢাকি তা কোত্থেকে শিখলাম? হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন হাঁচি মুবারক দিতেন, তখন তিনি মুখ মুবারক ঢেকে নিতেন। মূলত তিনি উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্যই এসব নিয়ম কানুন হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছেন। কেননা উনার পবিত্র নূরুল বারাকাত মুবারক লাভের জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এবং কুল মাখলূক্বাত অধীর হয়ে থাকতেন। সুবহানাল্লাহ!
অগ্নিকা-ের ফলে অনেক দালান-কোঠা, ঘরবাড়ি, দোকানপাট অনেক কিছু পুড়ে যায়, ধ্বংস হয়। সেখান থেকে নির্গত ধোঁয়া পরিবেশ দূষিত করে। অগ্নিকা-ে এমন সব পদার্থ পুড়ে বাতাসে মিশে যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আগুন তোমাদের শত্রু। যখন ঘুমাতে যাবে, তখন আগুন নিভিয়ে ফেলব।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “রাতে শোবার আগে পাত্র ঢেকে রাখ, মশকের (পানির পাত্র) মুখ ঢেকে রাখ, ঘরের জানালা বন্ধ করো এবং বাতি নিভিয়ে দাও।” (মুসলিম শরীফ)।
বায়ু দূষণ ও দুর্গন্ধ ছড়ানোর মাধ্যমেও পরিবেশ দূষিত হয়। আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি দুর্গন্ধযুক্ত দ্রব্য খায়, সে যেন (ঐ অবস্থায়) মসজিদের নিকটবর্তীও না হয়।’ প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও মুসলিম দার্শনিক ইবনে সিনা বলেছেন, “পৃথিবীর এত ধুলা-বালি, ধোঁয়া ও গ্যাস যদি মানুষের ফুসফুসে না ঢুকতো তাহলে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারত।”
মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক থেকেই পরিবেশ রক্ষা বা পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষার শিক্ষা বিস্তৃতি হয়ে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত তাবিঈন ও তাবি-তাবিঈন, ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ পর্যায়ক্রমে মুসলিম বিজ্ঞানী উনাদের মাধ্যমে এসব অনস্বীকার্য শিক্ষা, আদর্শ মুবারক ও তত্ত্বসমূহ বিস্তৃত হয়। একপর্যায়ে অসভ্য বর্বর কাফির-মুশরিকরা এসব মুসলমানদের থেকে চুরি করে। আর অপরদিকে মুসলমানরা কাফিরদের চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ে দ্বীন ইসলাম উনার শিক্ষা ও আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে কাফিরদের বিকৃত অসভ্যতাকে গ্রহণ করেছে। নাউযুবিল্লাহ! সেই কাফিরদের মুখেই যখন পরিবেশ রক্ষার বাণী উচ্চারিত হয় তখন অন্ধ মুসলমানরা বাহ্বা দিয়ে থাকে। নাউযুবিল্লাহ! অথচ এসব বাণী ও তত্ত্ব মুসলমানদের থেকেই কাফিররা চুরি করেছে। যা এই মুসলমানদেরই হারানো সম্পদ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করে পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করার তাওফীক দান করুন। একই সাথে অনন্তকাল পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার তওফিক দান করুন। আমীন।
মুহম্মদ ইবরাহীম সোহেল