من يطع الرسول فقد اطاع الله
অর্থ: “যে ব্যক্তি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইতায়াত করলো সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পাক উনারই ইতায়াত করলো।” (সূরা নিসা-৮০)
নামাযে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্মরণ করা যাবেনা এমন বক্তব্য কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই। বরং নামাযে আল্লাহ পাক উনার হাবীবকে স্মরণ করতে হবে সে কথাই হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব বলেন-
صلوا كما رايتمونى اصلى
“তোমরা ঐভাবে নামায পড়; যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছ।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এখন আল্লাহ পাক উনার হাবীব যেভাবে নামায পড়েছেন সেভাবে নামায পড়তে গেলে তো ইচ্ছায়- অনিচ্ছায় আল্লাহ পাক উনার হাবীবকে স্মরণ করতেই হবে। আল্লাহ পাক উনার হাবীব যেভাবে নামাযের নিয়ত করেছেন, নিয়ত বেঁধেছেন, ক্বিয়াম করেছেন, ক্বিরায়াত পাঠ করেছেন, রুকু করেছেন, সিজদা করেছেন, বসেছেন, সালাম ফিরিয়েছেন অর্থাৎ নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নামাযের যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করার মধ্য দিয়ে যেভাবে নামায আদায় করেছেন সেভাবে নামায আদায় করতে গেলে অবশ্যই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্মরণ আসতেই হবে। এছাড়া নামাযের ভিতরে তাশাহ্হুদ ও দুরূদ শরীফ-এর মধ্যে তো সরাসরি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক পড়তেই হচ্ছে। তাহলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে স্মরণ করা ব্যতীত কিভাবে নামায পড়া সম্ভব হতে পারে?
কাজেই, আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার স্মরণ নামায ভঙ্গের কারণ কিংবা শিরক কোনটিই নয়। বরং আল্লাহ পাক উনার হাবীবকে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে নামায পড়াই হচ্ছে আসল বা খাঁটি নামায।
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল শরীফ-এর আগ মুহূর্তে অসুস্থতার সময়ে উনার নির্দেশে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামাযের ইমামতি করছিলেন। একদিন তিনি যুহরের নামাযের ইমামতি করছিলেন, এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অসুস্থতা কিছুটা প্রশমিত হওয়াতে তিনি দু’জন ছাহাবীর কাঁধে ভর করে মসজিদে আগমন করলেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামায পড়াকালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন। তখন তিনি পিছনে সরে আসতে চাইলেন। কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশারা করে নিষেধ করলেন। ছাহাবী দু’জন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বসিয়ে দিলেন ফলে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান পাশে থাকলেন। তখন তিনি বসে নামায পড়তেছেন। আর হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়িয়ে নামায পড়তেছেন। তিনি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইক্তিদা করতেছিলেন এবং ছাহাবাগণ হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ইক্তিদা করতেছিলেন।
প্রমাণিত হলো, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামায পড়াচ্ছিলেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের খেয়ালও করছিলেন।
এখন বলুন, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামাযের মধ্যেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সম্মান দেখানো কিরূপ শিরক্? শিরক্ বললে কি ঈমান থাকবে? নামায তো আল্লাহ তায়ালার ধ্যানে মগ্ন হয়ে যাওয়ার অপর নাম। কিন্তু হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এইরূপ নামাযে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেয়ালও করছেন এবং নামাযও পড়ছেন। তিনি তো প্রথমে মুছল্লীগণের স্বয়ং ইমাম হওয়ার নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা বেঁধেছিলেন, কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের পর তিনি উনার মুক্তাদী হয়ে গেলেন। এখন উনার ইমামতি বাকি রইল কিনা? এবং উনার নামায হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেয়াল বা স্মরণে পড়া হয়েছে কি না?
উল্লেখিত অবস্থাগুলির প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সর্বদাই আল্লাহ পাককে স্মরণ করার সাথে সাথে নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ধ্যান, খেয়াল ও স্মরণ নিয়েই থাকতেন এবং সর্বাবস্থায় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানের প্রতি দৃষ্টি রাখতেন। এর নামই হলো আসল ঈমান এবং এর নামই হলো হাক্বীক্বী নামায।
মুফতী আবূ আহমদ খুবাইব