সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
দুধ হাদীছ শরীফ-এ ব্যক্ত একটি পবিত্র পানীয়। দুধের মধ্যে খাদ্য ও পানীয় দুটিই আছে। পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এর রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে পেশ করা হয়েছিল দুধ। দুধ উত্তম পুষ্টিকর খাদ্য। রোগাক্রান্ত থেকে সুস্থ লোক সবাই দুধ পান করেন আগ্রহের সাথে, ভালো হওয়ার জন্য। ভালো থাকার জন্য। দুধ বাঙালীর ঐতিহ্যগত খাবার। দুধ-ভাত শিশুদের প্রিয় খাবার। দুধ সচ্ছলতার-স্বস্তির প্রতীক। তাই বাঙালী প্রবাদ রয়েছে, ‘আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে-ভাতে।’
হাদীছ শরীফ-এ ইফতারী পণ্য হিসেবে দুধের কথাও উল্লেখ আছে। আমাদের দেশে সাধারণ ইফতারীর সময় দুধ ততটা প্রচলিত না হলেও সাহরীর সময় নিম্ন মধ্যবিত্তরাও চেষ্টা করেন একটু দুধ-ভাত খেয়ে স্বস্তি পেতে। কিন্তু যারা দুধ পেতে সমর্থ হননা তাদের জন্য যে প্রবাদ দুধের স্বাদ ঘোলে মিটে। আজকে সে অবস্থারও অধঃপতন হয়েছে। আজকে হচ্ছে দুধের স্বাদ মিটে বিষাক্ত নকল দুধে। (নাঊযুবিল্লাহ)
খবর শিরোনাম হয়েছে, ‘রমজানে পাবনা ও সিরাজগঞ্জে প্রতিদিন ৮০ হাজার লিটার নকল দুধ উৎপাদন।’
খবরে জানা গেছে, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার লিটার নকল দুধ। রমজান মাসে দুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নকল দুধ তৈরি করে বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছে। ছানার পানি, ক্ষতিকর স্কিম মিল্ক পাউডার, ফরমালিন, চিনি, সোডা, দুধের ননীসহ নানা উপকরণ মিশিয়ে এই নকল দুধ উৎপাদন করা হচ্ছে।
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ দুটি জেলায় ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরু পালন করে দুধ উৎপাদন করা হয়। এ অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ ৪৮ হাজার লিটার দুধের চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসে দুধের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার লাখ ২২ হাজার লিটার। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হচ্ছে তিন লাখ ২০ হাজার লিটার। এ হিসেবে প্রতিদিন দুধের ঘাটতি পড়ে প্রায় ৮০ হাজার লিটার। এক শ্রেণীর অসাধু ঘোষ ও ব্যবসায়ী নকল দুধ তৈরি করে দুধের এই ঘাটতি পূরণ করছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী বড়াল নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা মিল্কভিটাকে কেন্দ্র করে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে প্রায় আট হাজার গো-খামার গড়ে উঠেছে। এই দুগ্ধ অঞ্চলকে টার্গেট করে মিল্কভিটার পাশাপাশি প্রাণ ডেইরি, আকিজ ডেইরি, আফতাব ডেইরি, ব্র্যাক ডেইরি ফুড (আড়ং), আমো ফ্রেস মিল্কসহ বেশ কিছু বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ করতে এ অঞ্চলে তাদের আঞ্চলিক দুগ্ধ সংগ্রহশালা স্থাপন করে। এর ফলে তরল দুধের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে। দুধ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় ছানা উৎপাদক এবং এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে নকল দুধ তৈরি করে আসল দুধের সঙ্গে মিশিয়ে বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করে চক্রটি প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
জানা যায়, পাবনা জেলার বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, সুজানগর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, বেলকুচি ও কাজীপুর উপজেলার ৬০টি ছানা কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ২৬০ মন ছানা তৈরি হয়। ওই পরিমাণ ছানা তৈরিতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মণ দুধের প্রয়োজন হয়। ঘোষেরা ছানা তৈরির পর ছানার পানি ফেলে না দিয়ে তা মজুদ করে রাখে। পরে ওই ছানার পানি দিয়ে তৈরি করা হয় নকল দুধ। সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ছানা কারখানার ছানার পানিই নকল দুধ তৈরির প্রধান উপকরণ। কতিপয় অসৎ ব্যবসায়ী ও ঘোষ প্রতি মণ ছানার পানিতে এক কেজি দুধের ননী, সামান্য পরিমাণ লবণ, খাবার সোডা, ১ কেজি চিনি ও দুধের কৃত্রিম সুগন্ধি মিশিয়ে অবিকল দুধ তৈরি করছে, যা রাসায়নিক পরীক্ষা ছাড়া আসল না নকল বোঝার উপায় থাকে না। ছানার পানি ছাড়াও অন্য এক পদ্ধতিতে অসৎ ব্যবসায়ীরা নকল দুধ তৈরি করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এক মণ ফুটন্ত পানিতে এক কেজি দুধের ননী, আধা কেজি স্কিম মিল্ক পাউডার, বাটার অয়েল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, এক ফোঁটা ফরমালিনসহ বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে নকল দুধ তৈরি করা হয়। ক্ষতিকর স্কিম মিল্ক পাউডার ভারত থেকে সীমান্ত পথে দেশে প্রবেশ করছে। সূত্র জানায়, অসৎ ব্যবসায়ীরা দুধে ফরমালিন ও স্কিম মিল্ক পাউডার ব্যবহার করে। এতে দুধের ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং দুধ পচন রোধ করে তাজা রাখে। ফলে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে ল্যাকটোমিটার দিয়ে এই সূক্ষ্ম প্রতারণা ধরা সম্ভব হয় না। তবে সংশ্লিষ্টরা নকল দুধ তৈরি, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কথা অস্বীকার করেছে।
বলাবাহুল্য, উপরের খবরটি উদ্বেগজনক। পুষ্টিকর খাবার হিসেবে কিনে অনেকে প্রতারিত হচ্ছে, পুষ্টির বদলে গ্রহণ করছে ক্ষতিকর উপাদান। জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর দুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ কর্তব্য আছে। সরকারের উচিত উপযুক্ত তদারকি ও তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু সরকারের বাইরেও দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব আছে। দেশের বাজারে ভালো মানের দুধ উৎপাদন করে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে।
এখন তাদের ভালো দুধের মধ্যেও যদি কিছু অংশ ভেজাল হয় তবে তাদের পুরো সুনামটিরই মৃত্যু হবে। মূলত ভেজালের সাথে আপোসহীন এমন কোন দুধ কোম্পানি নেই।
দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রত্যেক কোম্পানিই কিছু ভেজাল ও নকল দুধ সংগ্রহ করে বাজার ধরে রাখছে। মূলত সাধারণে জানতে পারলে এতে তাদের পুরো সুনামই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আগে দুধে পানি দেয়া হতো। এরপর জানা গেল পানিতে দুধ মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে দুধ থেকে টেংরা মাছকেও লাফিয়ে পড়তে দেখা গেছে। এখন জানা যাচ্ছে দুধই নয়, পানির সাথে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে নকল ও বিষাক্ত দুধ। এত হীন ভেজাল প্রবণতা দূর করতে প্রশাসন যেমন নির্বিকার তেমনিই ব্যর্থ। সমাজে রোজার ধারণা ও ইসলামী আদর্শের প্রতিফলন ব্যতীত এর প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়।
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ তা’রিফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০