সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্জ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে বাংলাদেশের করার কিছু নেই। গত ২০শে নভেম্বর/২০১১, রোববার সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের এমন কোনো সমঝোতা চুক্তি নেই, যে চুক্তির আওতায় তারা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানাবে।
উল্লেখ্য, মন্ত্রী যাই বলুক কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে না জানিয়ে গোপনভাবে এ চুক্তি করল, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। অথচ বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতিরই নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ।
মূলত, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের জন্য যে কোনো ধরনের চুক্তি করার আগে বাংলাদেশকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা মানেনি ভারত। মনমোহন সিং অঙ্গীকার করেছিলো টিপাইমুখে এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না, যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে।
ভারত টিপাইমুখ বাঁধের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে এবং প্রমাণ করেছে প্রকৃতপক্ষে তারা বাংলাদেশের বন্ধু নয়।
বাংলাদেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে টিপাইমুখ বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার।
উল্লেখ্য, ভারত আন্তর্জাতিক বরাক নদীর উপর বৃহদাকার টিপাইমুখ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের রহস্যজনক নীরবতায় দেশবাসী ক্ষুব্ধ। টিপাইমুখ বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাবে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লাসহ ১২টি জেলা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ও আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। এতে বাংলাদেশের জনগণ ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে যেমন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা এলাকায় মরুভূমির শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করছে, তেমনি টিপাইমুখ বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সারাদেশই বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
তাই স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সব সরকারই এদেশের স্বার্থবিরোধী টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে ভারতের সঙ্গে আঁতাত ও সহযোগিতা করছে।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ চুক্তি করে ভারত ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তি (ধারা : ৯) সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করছে। এটি আন্তর্জাতিক পানি আইনের লঙ্ঘন। বলাবাহুল্য, বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থে কাজ না করে ভারতের স্বার্থে বেশি কাজ করছে, দেশের স্বার্থবিরোধী ট্রানজিট চুক্তি করেছে।
প্রসঙ্গত, এখানে বিরোধীদলের ভূমিকাও চরম আপত্তিকর ও গভীর রহস্যজনক। কারণ একটি বাড়ির জন্য বিরোধী দল হরতাল ডাকে, কিন্তু একটি জাতীয় বিষয় নিয়ে তারা এ যাবৎ উল্লেখ্যযোগ্য কিছু করছে না। তাদের কথিত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে না। কোনো আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রতিবাদ জানাচ্ছে না। বরং তারা গভীরভাবে মেতে আছে তারেক জিয়ার ৪৭তম জন্মদিনে ৪৭ পাউন্ডের কেক কাটতে।
মূলত, টিপাইমুখের সমস্যাটি বাংলাদেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত বৈজ্ঞানিক ভ্রান্তিজাত রাজনৈতিক সমস্যা। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হলে সিলেট জেলার হাওর অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের পরিবেশ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে। সরকারের উচিত এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়া।
আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বলা আছে একাধিক দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত যে কোনো নদীতে কিছু করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে করতে হবে। ভারতেরও উচিত ছিল ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেই যা কিছু করার। কিন্তু ভারত সেটা মানছে না। আইনকে অবজ্ঞা করে ভারত টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করছে।
একটি আন্তর্জাতিক নদীর উপর একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অতীতে স্বাক্ষরিত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে এটা জানার পরও বাংলাদেশকে না জানিয়ে ভারত সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত দুঃখজনক। ভারত সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উপর স্পষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা এ ধরনের ক্ষতিকর বাঁধ নির্মাণ থেকে ভারতকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও দাবি করছি।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সরকারের চরম ব্যর্থতার সুযোগেই ভারত টিপাইমুখে বাঁধ ও পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের এ উদ্যোগ নিতে পেরেছে। সরকার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবাংলার রাজ্য সরকার এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে যথাযথ কূটনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে পারেনি। সরকারের উচিত অবিলম্বে এ বিষয়ে ভারতের নিকট প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত ও জাতিসংঘে উত্থাপন করা এবং এ সম্পর্কিত সমন্বিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। প্রক্রিয়া জানানো।
প্রসঙ্গত, একটি বিষয় দেশের জনগণকে খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। দেশটা মূলত, জনগণের। সরকার পাহারাদার মাত্র। পাহারাদার যদি তার দায়িত্ব ভালোভাবে পালন না করে তাহলে দেশের মালিক জনগণকেই তাদের দেশের স্বাধীনতা সম্পদ রক্ষার জন্য চূড়ান্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। শুধু মুখে নিন্দা, সমালোচনা, অন্তরে ক্ষুব্ধ অনুভূতি নিয়ে সরকারের ঘাড়ে সব দায়িত্ব কল্পনা করে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। দেশের মালিক জনগণ। ব্যর্থ সরকার না পারলে জনগণকেই দেশের স্বাধীনতা ও সম্পদ রক্ষায় একীভূত ও বিস্ফোরিত হতে হবে। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে ইনশাআল্লাহ।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতে তা খুব সহজেই পরিপূর্ণ হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০