আমেরিকাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কথিত শক্তিশালী রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
কিন্তু আসলে আমেরিকা কত বড়?
হিসাবে গোটা আমেরিকার জনসংখ্যা বাংলাদেশের দ্বিগুণ। ৩০ কোটি ৪০ লাখ। গত ২০ শে জানুয়ারি আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামা শপথ গ্রহণ করেন।
এ শপথ অনুষ্ঠানের ঘটনা পর্যালোচনায় কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে।
(১) হোয়াইট হাউসে ওবামার অভিষেক উপলক্ষে দু-তিন দিন আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে শুরু হয়েছে উৎসব। ওয়াশিংটন পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল থেকে লিঙ্কন মেমোরিয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত চত্বরকে সমাবেশস্থল হিসেবে সাজানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটনে এসে পৌছেন। উদ্দেশ্য, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা।
হিম শীতল ঠা-া উপেক্ষা করে সকাল হওয়ার আগেই ন্যাশনাল মলে জড়ো হতে থাকে লাখ লাখ মানুষ। মলের বাইরে লাগানো হয় বিশাল বিশাল টিভি পর্দা। যারা মূল অনুষ্ঠানস্থলে যেতে পারেনি এখানে দাঁড়িয়ে তারা উপভোগ করেন অনুষ্ঠান।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহর জুড়ে মোতায়েন করা হয় প্রায় ৪০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী। এ সময় আকাশেও চক্কর দিচ্ছিলো নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টার। (ইন্টারনেট)
(২) অভিষেকস্থলে বিশাল জনতার উপস্থিতি ছিলো এক আকর্ষণীয় ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার শপথগ্রহণের দৃশ্য অবলোকন করতে ২০ লাখেরও বেশি লোক ন্যাশনাল মলে জড়ো হয়। প্রচ- ভিড় ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও জনতার মনে উৎসাহ, আশা ও কিছু মাত্রায় বাস্তবতা বিরাজ করে। (এপি, গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট)
(৩) যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিল চত্বরে ২০ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশের সামনে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায়) শপথ নিয়েছেন তিনি।
প্রায় দেড়শ বছর আগে ১৮৬১ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন যে বাইবেলটি ছুয়ে শপথ নিয়েছিলেন সেটিকেই স্পর্শ করে শপথ বাক্য পাঠ করেন ওবামা। তার স্ত্রী মিশেল ওবামার হাতে রাখা ছিল এই বাইবেল।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে রক্ষার অঙ্গীকার করে শপথ নেয়ার পর ২০ মিনিটের অভিষেক ভাষণ দেন ওবামা। দেশটির প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাকে শপথ পাঠ করান। কেনীয় বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ বাবা এবং আরকানসাসের শ্বেতাঙ্গ মায়ের সন্তান বারাক ওবামা হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট। (ইন্টারনেট)
(৪) প্রথা অনুযায়ী ঠিক বেলা ১২টায় ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম চত্বরে অনুষ্ঠিত অভিষেকের প্রারম্বে পরবর্তী চার বছর দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জোবাইডেনকে ৩৫ শব্দের শপথ বাক্য পড়ান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস জুনিয়র এবং সহযোগী বিচারপতি স্টিভেন্স। প্রেসিডেন্টদের শপথ বাক্য পড়ানোদের তালিকায় জন রবার্টস হলেন চতুর্দশতম বিচারপতি। জন এডামন্স থেকে শুরু করে সকল নির্বাচিত প্রেসিডেন্টই শপথ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতির কাছে। ব্যত্যয় ঘটে ১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটন শপথ নেন নিউইয়র্ক স্টেট চ্যান্সেলর রবার্ট লিভিংস্টনের কাছে। তবে কর্তব্যরত অবস্থায় প্রেসিডেন্ট মারা গেলে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের শপথ পড়ান যাকে কাছে পাওয়া যায় সেই বিচারপতি। ১ মিনিটের এই শপথ অনুষ্ঠানের সাক্ষী হওয়ার জন্য সারা আমেরিকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ হাঁড় কাপানো ঠা-া উপেক্ষা করে ওয়াশিংটন ডিসিতে সমবেত হন। আমেরিকায় কোন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানই শুধু নয়, ক্যাপিটল হিলের সামনে থেকে ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা লোকে লোকারণ্য। এতবড় সমাবেশ আর কখনও ঘটেনি। (ওয়াশিংটন পোস্ট, এনা)
(৫) প্রবল শীতের মধ্যে অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতা আর প্রথায় ঘেরা একটি দীর্ঘ দিন কাটানোর পর বল নাচের উষ্ণতায় মিশে মঙ্গলবার রাতটি কেটেছে আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা ও ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার। অভিষেকের রাতে প্রেসিডেন্টের বল নাচের ওই প্রথাটিও ২০০ বছর পূর্ণ করল।
অভিষেক উৎসবের অংশ হিসেবে রাতে ওয়াশিংটনজুড়ে বসে কয়েকডজন বল নাচের আসর। সারাদিন যে আমেরিকানরা ওয়াশিংটন মলে বসে ওবামাকে অভিষিক্ত হতে দেখেছেন, নাচের আসরেও তারা ভিড় করেছেন নাচের ছন্দে বাঁধা ওবামা দম্পতিকে একনজর দেখতে। অবশ্য মিশেল আর ওবামা সব আসরে দর্শন দিতে পারেননি। সরকারিভাবে যে ১০টি আসরের আয়োজন করা হয়েছিল, তার ছয়টি বসে শহরতলির ওয়াশিংটন কনভেনশন সেন্টারে। আর ওবামা দম্পতি ঘুরে ঘুরে ওই ছয়টি আসরেই সময় কাটান। তবে পুরো সময়টায় কনভেনশন সেন্টারের সেন্ট্রাল লবি তারা এড়িয়ে গেছেন বারবার। সাংবাদিক আর আলোকচিত্রীরা সেখানেই অপেক্ষায় ছিলেন ইতিহাসের দরজায় পা রাখা ওবামা ও মিশেলের অনুভূতি জানার জন্য।
ওবামা দম্পতির নাচ শুরু হয় বিকেলে কনভেনশন সেন্টারের নেইবারহুড বলে। নেইবারহুড কমিটির বাছাই করা টিকিটধারী আমেরিকানরাই কেবল ওই নাচের আসরে যোগ দিতে পেরেছে। এ আসরে তারকারও অভাব ছিল না। মারিয়া ক্যারি, কুইন লতিফা আর বিয়ন্সের পরিবেশিত সঙ্গীত হাজার মানুষের ভিড়েও প্রেসিডেন্সিয়াল জুটিকে অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
অনুষ্ঠানে মিশেলের পরনে ছিল অফ হোয়াইট গাউন। তাইয়ানের ডিজাইনার জেমস উ বিশেষভাবে ওই গাউনটি তৈরি করেছেন ফার্স্ট লেডির সম্মানে । আর ওবামার পরনে ছিল কালো টাক্সেডো, সঙ্গে সাদা বো-টাই। আসরে অভ্যাগতদের বঞ্চিত করেননি তারা। এক সঙ্গে দু’কদম নেচে ওবামা-মিশেলও শামিল হন আমেরিকার ঐতিহ্যের আনন্দে। আসরের এক ফাঁকে হোয়াইট হাউসের নতুন বাসিন্দা সবাইকে বলেন, ‘আমরা আপনাদেরই প্রতিবেশী।’
প্রায় দুই হাজার অভ্যাগতকে হর্ষধ্বনিতে মুখরিত করে মিশেলের দিকে তাকিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘দেখ, আমার স্ত্রীকে কী দারুণ দেখাচ্ছে!’
ওবামা দম্পতি এরপর যান ইউথ বলের আসরে। সেখানেও চলে দু’কদম নাচ আর অভ্যাগতদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, হাসি আর আনন্দ। ছয়টি বলের শেষ আসর সাউদার্ন রিজিয়ন বল থেকে যখন তারা বের হন, ওয়াশিংটনে তখন রাত প্রায় আড়াইটা।
অভিষেক আয়োজক কমিটির চেষ্টা ছিল ওবামার অভিষেকের চার দিনের আয়োজন যেন ওই বল নাচের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ হয়, তা নিশ্চিত করা। সাধারণ আমেরিকানরাও যাতে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক আসরে নাচার সুযোগ পায়, সে চেষ্টাও করেছেন তারা। নাচের আসরগুলোয় রংয়ের ব্যবহারও ছিল চমৎকার। অর্থনৈতিক মন্দার এ সময় কোথাও যাতে বাড়াবাড়ি না হয়, সে চেষ্টাও ছিল। (ইন্টারনেট)
(৬) ওবামা তার দিনের প্রথমাংশ অতিবাহিত করেন সৃষ্টিকর্তার সাহায্য কামনা করেন। তিনি ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে ঐতিহ্যবাহী প্রার্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। (এএফপি, রয়টার্স, এপি, বিবিসি, সিএনএন, পিটিআই)
(৭) উল্লেখ্য, এবারের অভিষেকের মূলমন্ত্র ছিলো ‘এ নিউ বার্থ অব ফ্রিডম।’ এটি যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের দুইশতম জš§বার্ষিকী উপলক্ষে তাকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
ওবামা তার হাত রাখেন আব্রাহাম লিঙ্কনের অভিষেকের বাইবেলের উপর। একইভাবে তার স্ত্রী মিশেলও রাখেন বাইবেলের উপর তার হাত এ দৃশ্য অনেকের মধ্যে শিহরণ জাগায়। (ওয়াশিংটন পোস্ট, এনা)
(৮) ওবামার শপথ পাঠ শেষ হলে সবাই উল্লাসে ফেটে পড়েন। মুহুর্মুহু করতালিতে তাকে অভিনন্দন জানান। মার্কিন মেরিন কোরের ব্যান্ড দলের হেইল টু দ্য চিফ গান এবং ২১ বার তোপধ্বনির মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্টকে বরণ করে নেয়া হয়। (ইন্টারনেট)
ওবামা দম্পতির সারারাত ব্যাপী বলনৃত্য প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থাগুলো ক্যাপশন দেয়:
* ‘বারাক হোসেন ওবামা সস্ত্রীক ওয়াশিংটনের ইস্টার্ন ইনাগরালবলে নাচেন।’ (এপি)
* ‘ওয়াশিংটন কনভেনশন সেন্টারে অভিষেকের নৃত্যানুষ্ঠানে রাজোচিত মহিমায় উদ্ভাসিত ফার্স্টলেডি মিশেল ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।’ (এএফপি)
এএফপি’র অন্য একটি ক্যাপশনে বলা হয়-
* ‘মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর বারাক হোসেন ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামাকে ওয়াশিংটনে একটি অভিষেক পার্টিতে নৃত্যরত দেখা যাচ্ছে।’
-০-
উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে বলতে হয় যে,
(১) ওবামা দম্পতি তাদের অভিষেক অনুষ্ঠানে সারারাত বলনৃত্য করে তাদের সংস্কৃতগত ঐতিহ্যের দুইশ বছর পূর্ণ করেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশের ১৯তম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানসহ কেউই কিন্তু তাদের অভিষেক অনুষ্ঠানে বলনৃত্য তো দূরের কথা হালকা নৃত্যও করেননি।
(২) ওবামার শপথ অনুষ্ঠানে ২০ লাখ লোক একত্রিত হয়েছিলো।
কিন্তু বাংলাদেশের জনসংখ্যা অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলো মাত্র হাজার খানিক লোক।
(৩) ওবামা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী শপথ গ্রহণের পরপরই ভাষণ দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাষণ বহুল আলোচিত মূল্যায়িত হয়।
কিন্তু আমাদের দেশে শপথ গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির ভাষণের নিয়ম নেই।
(৪) ওবামা সবার সামনে স্বল্পবসনা ও নৃত্যরত তার স্ত্রীকে প্রদর্শন করে বলেছে, দেখুন আমার স্ত্রীকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে।
কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের কথা কোন
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি
যেমন বলার চিন্তা করে না তেমনি দেশবাসী জনসাধারণে তা শোনার কল্পনাও করে না।
তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ায়?
আসলে আমেরিকার সংস্কৃতি
আর আমাদের দেশের সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা।
এর পেছনে কারণটা কী?
বলার অপেক্ষা রাখেনা, তা হলো- পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান ইসলাম।
এদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ লোক মুসলমান। এই ইসলাম এমন একটা দ্বীন যা মুসলমানের পোশাক, চালচলন, চলাফেরা, অঙ্গ ভঙ্গি
কথাবার্তা, বিশ্বাস-ধারণা, সবকিছু সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
কিন্তু অন্য কোনো ধর্ম, অন্য কোন জনগোষ্ঠী
জন জীবনকে কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে না। সুতরাং ওবামার শপথ গ্রহণের
ভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা
অন্য উদ্দীপনা
আলাদা সংস্কৃতি মূলতঃ এটাই প্রমাণ করে যে, আমেরিকা-ইউরোপ
যে সংস্কৃতি লালন করে
যে ঐতিহ্য ধারণ করে
যে অনুষ্ঠান পালন করে
তা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে
আমাদের ঐতিহ্যের ভিত্তিতে
আমাদের দ্বীন ইসলামের প্রেক্ষিতে
গ্রহণ করা যায় না, ধারণ করা যায় না, পালন করা যায় না।
কিন্তু তারপরেও যদি
আমাদের উপর
ইউরোপ-আমেরিকার
সংস্কৃতি
পোশাক
মনোবৃত্তি চাপিয়ে দেয়া হয়
অথবা
চালিয়ে দেবার অপচেষ্টা করা হয় তাহলে তা হবে মূলতঃ
আগ্রাসন, আক্রমণ রীতিমত যুদ্ধ।
আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের স্বাতন্ত্র, আমাদের ঐতিহ্য
আমাদের দ্বীন, আমাদের অস্তিত্ব
বিকৃতকরণের
নষ্টকরণের তথা
নির্মূলীকরণের শুধু ষড়যন্ত্র নয় বরং মহা সাংস্কৃতিক যুদ্ধ।
-০-
সম্প্রতি কক্সবাজারে আমাদের পর্যটনমন্ত্রী বলেছেন, আদিবাসীদের সংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বলাবাহুল্য, আদিবাসীরা এদেশের নিতান্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
তাদের সংস্কৃতি
তাদের স্বাতন্ত্র
রক্ষায় যদি সরকার এতটা নিবেদিত ও প্রতিশ্রুত হতে পারে তাহলে
শতকরা ৯৫ ভাগ অধ্যুষিত মুসলমানদের সংস্কৃতি রক্ষায় সরকারের
কতটুকু নিবেদিত, কতটুকু আগ্রহী, কতটুকু মনোযোগী,
কতটুকু দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
-০-
বলাবাহুল্য, বিভিন্ন ব্যানারে ও ফোরামে এদেশে অবাধে চলছে দেহ প্রদর্শনী প্রতিযোগিতা।
চলছে মহা অশ্লীল ভারতীয় চলচ্চিত্র।
সে আঙ্গিকে ক্ষুদে গানরাজ প্রতিযোগিতা
সুন্দরী প্রতিযোগিতা,
নৃত্য পটিয়সী প্রতিযোগিতা, ব্যান্ড শো, ফ্যাশন শো
ভ্যালেন্টাইন ডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট, পহেলা বৈশাখ
ইত্যাদির নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা। যা মূলতঃ সম্পূর্ণ অনৈসলামিক। ইসলামী সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক।
মুসলমানদের মুসলমানিত্ব নির্মূলীকরণের মহা পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়া।
কাজেই পর্যটনমন্ত্রী যদি আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র রক্ষায় এতটা নিবেদিত প্রচেষ্টিত ও প্রতিশ্রুতিশীল হতে পারেন
সেক্ষেত্রে ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না’
এ প্রতিশ্রুতির সরকারকে শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানদের
সংস্কৃতি, স্বাতন্ত্র তথা দ্বীন ইসলামী আবহ রক্ষায় কতটুকু নিবেদিত হতে হবে, সক্রিয় হতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সরকার মাদক নিরোধ, সন্ত্রাসী দমনে র্যাব গঠন করেছেন।
কিন্তু তার পাশাপাশি সব বেহায়াপনা, সব অশ্লীলতা
সব অনৈসলামিক কর্মকা- বন্ধেও তথা মুসলমানদের সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র রক্ষার্থেও সরকারকে সক্রিয় ও এলিট বাহিনী তৈরি করতে হবে।
সরকারকে বুঝতে হবে
‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’র নামে
ইউরোপ-আমেরিকা এদেশে যে মুক্ত সংস্কৃতি অবাধে চালিয়ে দিবে
অথবা তাদের এদেশীয় এজেন্টরা
তাদের প্রভুদের ‘ফ্রি সেক্স সংস্কৃতি’ বাস্তবায়ন করবে
তা আদৌ বরদাশ্তযোগ্য নয়
গ্রহণযোগ্য নয়।
‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না’
সে প্রতিশ্রুতির সরকারের কাছে দেশবাসী মুসলমান
ইসলামের আলোকে যেমন তা আশা করেনা
তেমনি ঐতিহ্যগত কারণেও তা গ্রহণযোগ্য মনে করে না।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা ও আমাদের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের শপথ গ্রহণের
সম্পূর্ণ ভিন্ন ও আলাদা আনুষ্ঠানিকতা এবং ঐতিহ্যের প্রেক্ষিতেই তাই শতভাগ প্রমাণিত ও প্রতিভাত হয়েছে।
তবে আমেরিকা কথিত সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট ওবামা চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করে
বাইবেল ধরে শপথ করলেন।
আর শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট
শপথ অনুষ্ঠানে ইসলামী কোনো আচারের কাছেও গেলেন না।
এটা সত্যিই দেশবাসীর মনে একটি উপশমহীন বেদনার মত বিঁধে আছে।
হয়তবা দিন বদলের নকীব শেখ হাসিনা পনের কোটি মুসলমানের সে গভীর বেদনার উপশমে নতুনভাবে কুরআন-সুন্নাহর রূপায়ন সংযুক্তিতে প্রচেষ্ট হবেন- এটাই দেশবাসী মুনলমানের গভীর প্রত্যাশা।
মুহম্মদ আলম মৃধা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ২
কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮
কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা-৩