সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের তহবিল থেকে ঋণ নিতে হলে বরাবরই বিভিন্ন শর্ত মেনে নিতে হয়। এ সংস্থা দুটির চাপে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দারিদ্র্যবিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার। কথিত দাতাদের পরামর্শে দুই মেয়াদে পিআরএসপি প্রণয়ন হলেও তা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায়নি। প্রায় সব ঋণদাতা দেশ ও সংস্থা ঋণের অর্থ ছাড়ে নানা রকমের শর্ত দিয়ে থাকে। শর্ত মেনে বিদেশী ঋণ নিলে আমাদের নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশী উৎস থেকে কত কাল ঋণ নেবে বাংলাদেশ? কত কাল ঋণদাতাদের শর্তের কাছে আবদ্ধ থাকবে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ৩৩৭ কোটি ডলার বিদেশী ঋণসহায়তা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঋণসহায়তা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগটি।
লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৬৬ কোটি ডলার ঋণসহায়তা আসবে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসবে ৩৮২ কোটি ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৪০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। পরের দুই অর্থবছরে ৪২৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার করে বিদেশী ঋণসহায়তা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বিদেশী ঋণসহায়তা এনে দেশের অর্থনীতির কোনো উন্নতিই হয় না।
ইআরডি সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ৮ হাজার ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। এর মধ্যে ছাড় হয়েছে ৫ হাজার ৯৩১ কোটি ডলার। অর্থাৎ বাকি অর্থ কথিত দাতারা প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও দেয়নি- এটা বড় ধরনের প্রতারণা।
প্রতি বছর যে পরিমাণ বিদেশী ঋণ সহায়তা আসে, তার একটি বড় অংশ যায় পূর্বের ঋণ পরিশোধে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ঋণদাতা দেশ ও সংস্থা প্রায় ১৫৭ কোটি ডলার ঋণ ছাড় করেছে। এ সময় সুদ ও আসল মিলিয়ে ঋণদাতাদের ৫৯ কোটি টাকা ৩২ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। এর মধ্যে আসল ৪৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এবং সুদ ১২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে ঋণসহায়তার ৩৮ শতাংশই চলে গেছে আগের ঋণ পরিশোধে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একই সময় এ বাবদ ৪৬ কোটি ডলার খরচ হয়েছিল বাংলাদেশের। আবার সময়মতো কাজ করতে না পারলে কমিটমেন্ট ফির নামে দিতে হয় জরিমানা। সাত (৭) বছরে ১২৭ কোটি টাকা কমিটমেন্ট দিয়েছে সরকার। এর বাইরে রয়েছে পরামর্শক ফি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছে, “আমাদের অনেক মেধাবী ও যোগ্য জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও বিদেশী পরামর্শকেরা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে বড় অঙ্কের অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।” এখন থেকে পাবলিক প্রকল্পগুলোতে যেন স্থানীয় পরামর্শকেরা অগ্রাধিকার পান, সেটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়। কিন্তু সে নির্দেশ আদৌ বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, জাইকার সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রংপুর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। এর আওতায় পানি সরবরাহ, ড্রেনেজ, স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মিউনিসিপ্যাল ফ্যাসিলিটিজ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ওই কাজে নিযুক্ত জনবলের চেয়ে পরামর্শকের সংখ্যা বেশি। আর এসব কাজ যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য ১২৯ জনের পরামর্শক সেবা নেয়া হচ্ছে। এতে খরচ হবে প্রকল্প ব্যয়ের ১১ শতাংশ বা ৩১৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বিদেশী পরামর্শকদের জন্য জনপ্রতি মাসে ২৭ লাখ ৫৩ হাজার ও স্থানীয় পরামর্শকদের ক্ষেত্রে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আর এ স্থানীয় পরামর্শকরাই এ কাজের জন্য যথেষ্ট ছিল।
এদিকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ‘এনহান্সিং ইফিসিয়েন্সি অব দ্য ক্যাপিটাল মার্কেট (ইইসিএম)’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পে ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এই অর্থের ৪ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার টাকাই খরচ হবে প্রকল্প পরামর্শক খাতে।
এভাবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগ অর্থ চলে যায় প্রকল্পের বিদেশী পরামর্শকদের পেছনে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে উন্নয়ন হচ্ছে বিদেশী পরামর্শকদের। এর আরেকটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেয়া কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে পরামর্শক খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অথচ পুনর্বাসনের জন্য ব্যয় বরাদ্দ হলো ২৬৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঋণদাতাদের দেয়া অর্থের একটা বিরাট অংশ পরামর্শকদের মাধ্যমেই তারা আবার নিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পরামর্শকরা যে শুধু অর্থ শুষে নিচ্ছে তাই নয়, এমনকি বিদেশী পরামর্শক নিয়োগেও জালিয়াতি হচ্ছে।
উদাহারণতঃ পদ্মা সেতুর পর এবার দেশের দীর্ঘতম ফ্লাইওভার প্রকল্পে (মগবাজার-মৌচাক) নকশা পর্যালোচনা এবং তদারকির জন্য কথিত পরামর্শক নিয়োগে ব্যাপক জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এতে একদিকে দেশ আর্থিকভাবে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রকৌশলী দিয়ে কাজ করানোর কারণে গোটা প্রকল্পটির ভবিষ্যতই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত আমরা মনে করি, জনগণকেও এসব তথ্য সচেতন হতে হবে এবং তথাকথিত দাতাদেশগুলোকে ঋণ দেয়ার নামে প্রতারণা ও পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে লুটপাট প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য গণপ্রতিবাদী হতে হবে, গণপদক্ষেপ নিতে হবে।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, ঢাকা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০