মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ করেন,
অর্থ: “নিশ্চয়ই প্রকৃত মু’মিন-মুসলমান উনারাই যাঁরা আল্লাহ তায়ালা ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উপর ঈমান এনেছেন।” (সূরাতুন নূর : আয়াত শরীফ ৬২)
আল্লাহ রব্বুল আলামীন তিনি সূরা আলে ইমরান-এর ১৭৯ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-
অর্থ: “তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও উনার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর ঈমান আনো। যদি তোমরা ঈমান আনো এবং ভয় করো, তাহলে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার রয়েছে।”
আয়াত শরীফদ্বয়ে ঈমানের জন্য আল্লাহ পাক উনার সাথে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিও ঈমানকে শর্ত করা হয়েছে। মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক ছাড়া ঈমানের কালিমা অপূর্ণ অর্থাৎ উনার নাম মুবারকই ঈমানের কালিমার মূল। সুবহানাল্লাহ!
মনে রাখতে হবে, ১ লক্ষ ২৪ হাজার, মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণও ঈমান। তবে উনাদেরও ঈমান আমাদের নবী ও রসূল সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ-এ বর্ণিত আছে-
অর্থ: ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, দ্বীন ইসলাম মৌলিক পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১) এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ বা মা’বূদ নেই আর সাইয়্যিদুনা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার আবদ (হাবীব, নবী) ও রসূল (২) ছলাত (নামায) কায়িম করা (৩) যাকাত আদায় করা (৪) হজ্জ করা (৫) রমাদ্বান মাসে রোযা রাখা।” সুবহানাল্লাহ!
মু’মিন-মুসলমানগণের ঈমান ও আক্বীদার মূল কালিমা শরীফ হলো-
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক ছাড়া কোনো ইলাহ বা মা’বূদ নেই, সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তায়ালা উনার রসূল।”
কিন্তু বর্তমান এই আখিরী যামানায় দেশে-বিদেশে কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল ওহাবী খারিজী সালাফী আত্মপ্রকাশ করেছে, যারা বলে কালিমা শরীফ-এ হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক সংযুক্ত করা ঠিক নয়, কেননা এ বিষয়ে সরাসরি হাদীছ শরীফ-এর কোনো বর্ণনা নেই। নাঊযুল্লিাহ!
মিথ্যাবাদী দাজ্জাল ওহাবী, খারিজী, সালাফী জাহিল ফিতনাবাজ উলামায়ে ছূ’ ও তাদের অনুসারীদের বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরী ও গুমরাহীমূলক। কারণ ঈমানের কালিমা শরীফ-
হুবহু এভাবেই হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে। নিম্নে এ সম্পর্কিত দুইখানা হাদীছ শরীফ পূর্ণ ছহীহ সনদ, মতন ও অর্থসহ উল্লেখ করা হলো,
১ম হাদীছ শরীফ
অর্থ: “হযরত ইমাম হাফিয আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হাকিম নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত হারূন বিন আব্বাস হাশিমী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত জানদাল বিন ওয়ালিক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আমর বিন আউস আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
সনদ পরিবর্তন: হযরত ইমাম হাফিয আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হাকিম নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তনি হযরত ক্বতাদাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে।
তিনি হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে যাঁরা উনাকে পেতে চায় তাঁদেরকে নির্দেশ করুন, উনারা যেনো উনার প্রতি ঈমান আনে। যদি রসূলুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টি না হতেন, তাহলে হযরত আদম ছফীউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে তৈরি করতাম না। আমি যখন পানির উপর আরশ তৈরি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যে
লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।” (সুবহানাল্লাহ)এই হাদীছ শরীফখানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।
(আল মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকিম আননীসাবূরী-কিতাবু তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন-যিকরু আখবারি সাইয়্যিদিল মুরসালীন ওয়া খাতামিন নাবিইয়ীন মুহম্মদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আব্দিল মুত্তালিবিল মুছত্বফা ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহি ওয়া আলা আলিহিত ত্বাহিরীন ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুসতাদরাক ২য় খ- ১০৬৭ পৃষ্ঠা)
২য় হাদীছ শরীফ
অর্থ: “হযরত ইমাম হাফিয আবু আব্দিল্লাহ মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হাকিম নীসাবূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবু সাঈদ আমর বিন মুহম্মদ বিন মানছূর আদল রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবুল হাসান মুহম্মদ বিন ইসহাক বিন ইবরাহীম হানযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন আবুল হারিছ আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম ফাহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসমাঈল বিন মাসলামাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত আব্দুর রহমান বিন যায়িদ বিন আসলাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার দাদা থেকে, তিনি ছাহাবী হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। তিনি বলেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া কবুলের সময় হলো। তখন তিনি দোয়া করলেন, হে আমার রব! আমি আপনার কাছে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলায় প্রার্থনা করছি। অতএব, আমার দোয়া কবুল করুন। আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনলেন, অথচ এখনো উনাকে দুনিয়ায় প্রেরণ করিনি? জবাবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার রব! আপনি যখন আমাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারক-এ তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ ফুঁকে দেন, তখন আমি আমার মাথা উত্তোলন করে আরশের খুঁটিসমূহে লিখিত দেখতে পাই-
‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোনো ইলাহ বা মাবূদ নেই সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার রসূল।’ তখন আমি বুঝতে পারলাম আপনার নাম মুবারক-এর সাথে যাঁর নাম মুবারক সংযুক্ত আছে তিনি সৃষ্টির মধ্যে আপনার সবচেয়ে মুহব্বতের হবেন। আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি ঠিকই বলেছেন, কারণ তিনি সৃষ্টির মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে মুহব্বতের। হযরত আদম আলাইহিস সালাম বললেন, আয় আল্লাহ পাক! উনার উসীলায় আমার দোয়া কবুল করুন। আল্লাহ পাক বললেন, আমি আপনার দোয়া কবুল করলাম। যদি আমার হাবীব মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন তাহলে আমি আপনাকেও তৈরি করতাম না।” সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফ খানার সনদ ছহীহ তথা বিশুদ্ধ।
(আল মুসতাদরাক আলাল ছহীহাইন লিল হাকিম আননীসাবূরী-কিতাবু তাওয়ারিখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারি সাইয়্যিদিল মুরসালীন ওয়া খাতামিন নাবিইয়ীন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবিল মুস্তফা ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহি ওয়া আলা আলিহিত ত্বাহিরীন ৪র্থ খ- ১৫৮৩ পৃষ্ঠা, আছ ছহীহাহ ১ম খ- ৮৮ পৃষ্ঠা, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক ২য় খ- ১০৬৯ পৃষ্ঠা, আত তাওয়াসসুল ১১৫ পৃষ্ঠা, তাফসীরুদ দুররিল মানছূর লিছ ছূয়ূত্বী ১ম খ- ৫৮ পৃষ্ঠা, কানযুল উম্মাল ১১ খ- ৪৫৫ পৃষ্ঠা।)
কুরআন শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কেউ যদি ক্বিয়ামত পর্যন্ত শুধু
‘আল্লাহ পাক ব্যতীত কোনো ইলাহ বা মা’বূদ নেই’ বলে বিশ্বাস করে সে কখনোই ঈমানদার হতে পারবে না, বরং কাফির ও চির জাহান্নামী থেকেই যাবে। যতোক্ষণ পর্যন্ত না সে
‘হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার রসূল’ এ বাক্যকে মনে প্রাণে মেনে না নিবে। অর্থাৎ মু’মিন-মুসলমানের জন্য ঈমানী পূর্ণ কালিমা হচ্ছে-
অর্থাৎ “আল্লাহ পাক ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আর সাইয়্যিদুনা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার প্রেরিত রসূল।”
মূলকথা হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক মু’মিন-মুসলমানের ঈমানের মূল। উনার নাম মুবারক ছাড়া ঈমানের কালিমা অপূর্ণ।
আয় আল্লাহ পাক! আমাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী মুহব্বত মা’রিফত যিয়ারত ও শাফায়াত নছীব করুন। আমীন।
-আল্লামা মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ আফদ্বালুল হক