কয়েকটি গৎ বাধা ধারায় এদেশের পত্র-পত্রিকাগুলো হজ্জ বিষয়ে রিপোর্ট করে থাকে।
“চলতি বছরে এত হাজার লোক হজ্জে যাবেন।”
“হজ্জে বাড়ী ভাড়া নিয়ে সমস্যা।”
“ব্যালটী নন ব্যালটী হজ্জ যাত্রীদের সুবিধা অসুবিধা।”
“হজ্জ ফ্লাইট উদ্বোধন।”
“৫১২ জন যাত্রী নিয়ে প্রথম সরকারী হজ্জ ফ্লাইট জেদ্দা গিয়েছেন” ইত্যাদি ইত্যাদি।
হজ্জ যাত্রীদের বিপরীতে এদেশের খেলোয়াড়, সংস্কৃতি কর্মীরা বিদেশে যাওয়ার পর থেকে সেখানে কখন কি করছেন, কতটুকু পারফর্ম করছেন, ঠিকমত করছেন কিনা, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছেন কিনা হলে যে চরম লজ্জা আর গ্লানি বয়ে নিয়ে আসলেন তা এদেশের মিডিয়াগুলো ফলাও করে প্রচার করে।
এমনকি কোন খেলোয়াড় বা সংস্কৃতিকর্মী বিদেশে যাওয়ার নামে সেখানেই থেকে গেলেন কি না তাও অনুসন্ধান করে। তন্ন তন্ন করে খোঁজ নেয়া এবং তা বেশ ফলাও করে মিডিয়ায় প্রচার হয় এবং তার যথারীতি এ্যাকশনও হয়।
কিন্তু শতকরা ৯৫% মুসলমানের এই দেশের মুসলমানরা, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এই দেশের মুসলমানরা আসলে হজ্জে গিয়ে কি করল, হজ্জে কিভাবে গেল, গেলেই বা কিভাবে থাকল, সেখানে গিয়ে কারা ভিক্ষা করল, কারা চোরাচালানির ব্যবস্থা করল, কারা মাদ্রাসার নামে চাঁদা আদায় করল, কারা সোনা বহন করে আনল- এসব ব্যাপারে কোন রিপোর্টিং নিয়ে আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকাগুলোর কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
অথচ শতকরা ৯৫% মুসলমানের এই দেশের ধর্মীয় অনুভূতির প্রাধান্য ও প্রাবল্যের প্রেক্ষিতে রিপোর্ট হওয়া উচিত ছিল- (১) যারা হজ্জে যাচ্ছেন, হজ্জের মত ফরয কাজে তাদের যেতে হচ্ছে হারাম ছবির উপর নির্ভর করে, থাকতে হচ্ছে লক্ষকোটি ছবি তোলার মাধ্যমে। ফিরতে হচ্ছে হাজারো ছবির মাধ্যমে, ইসলামের দৃষ্টিতে রিপোর্ট করার বিষয় ছিলো যে, হজ্জ হলো এক ফরয। আর ছবি তোলা হলো আরেক হারাম।
তাহলে এক হজ্জের তথা এক ফরযের পরিবর্তে হাজারো, লক্ষ কোটি হারাম ছবি তুলা হচ্ছে,
তাহলে সে হজ্জ করার ফলাফল কী?
সার্থকতা কোথায়?
ইসলামের দৃষ্টিতে এই আঙ্গিকে রিপোর্ট করার দরকার ছিল যে, হজ্জের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক পথের নিরাপত্তা এবং ঈমানের নিরাপত্তার শর্তের কথা বলেছেন। তাহলে যেখানে হজ্জ করার ক্ষেত্রে দেশেই কয়েক ডজন ছবি তুলতে হয় আর সউদী আরবে গেলে অত্যাধুনিক সি.সি. ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে লক্ষ-কোটি ছবি তোলার মুখোমুখি হতে হয় এমনকি বাথরুমে গেলেও সি.সি.টিভি’র আওতাভুক্ত হতে হয়। সেখানে সে হজ্জের ক্ষেত্রে পথের নিরাপত্তা তথা ঈমানের নিরাপত্তা থাকে কোথায়?
হ্যাঁ, একথা ঠিক উল্লিখিত সুমহান তাজদীদ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-ই প্রথম প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তার এ তাজদীদ কি কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়তের উছুলের বাইরে? এই উছুল কি কুরআন-সুন্নাহর কিতাবে লেখা নেই?
মূলতঃ যারাই আলিম দাবিদার- তাদের সবারই তো এসব জানা উচিত ছিলো
বলা উচিত ছিলো
প্রচার করা উচিত ছিলো
সরকার তথা সউদী সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের দরকার ছিল?
তাদের অতীতের আসমানী কিতাবের উদ্ধৃতি তুলে ধরা দরকার ছিল?
উল্লেখ্য, এসব কথা হক্ব সিলসিলার কিতাবে তো বটেই এমনকি গাফিল ও চোখ্খা সিলসিলা দেওবন্দীদের আকাবিরের কিতাবেও লেখা রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের শাইখুল হদস তার “আল কোরআনের দৃষ্টিতে মহিলাদের পর্দা” শীর্ষক বইয়ে লিখেছে, “বর্তমানে হজ্জ করতে মহিলাদের যেহেতু পর্দার ক্ষতি হয়, তাই মহিলাদের উপর হজ্জ ফরয হলে, বদলী হজ্জ করানো চাই। কারণ, এই হজ্জের ন্যায় বরকতময় সফরে অনেক মহিলা দেখা যায় মাহরাম পুরুষ ব্যতীত রওয়ানা হয়ে যায়, যা কবীরাহ গুনাহ ও নাজায়িয। অনেক সময় দেখা যায়, মাহরাম সাথে থাকা সত্ত্বেও মহিলারা হজ্জের সফরে পর্দাহীন চলে ও অনেক অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই বদলী হজ্জ করানোই মহিলাদের জন্য উত্তম।
এ সম্পর্কে আল্লামা কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘এটা হিকমতের খেলাফ যে, এক ফরয আদায় করতে গিয়ে অপর ফরয বাদ দেয়া।’
মাসআলা: মহিলাগণ হজ্জের ইহরাম বাঁধতে উচ্চ আওয়াজ না করে ‘লাব্বায়েকা’ অর্থাৎ তালবীয়া পড়বে। কারণ, মহিলাদের আওয়াজও পর্দার অন্তর্ভুক্ত।
মাসআলা: হজ্জের সময় মহিলাগণ চেহারা ব্যতীত গোটা শরীর ঢেকে রাখবে। হ্যাঁ, চেহারাকে একেবারে খোলাও রাখা যাবে না তাই মহিলাদের জন্য জরুরী চেহারার পর্দা রক্ষার্থে বোরকার মুখের কাপড় এভাবে রাখবে যেন চেহারাও দেখা না যায় আবার কাপড় চেহারা থেকে পৃথকও থাকে। অধিকন্তু দেখা যায় যে, মহিলাগণ হজ্জের সময় এব্যাপারে গাফলতী করে থাকে। হয়ত তারা তাদের চেহারা একেবারে খোলা রাখে যা গুনাহ। না হয় চেহারার সাথে বোরকা লাগিয়ে রাখে এতে কাফফারা দিতে হয়।
মাসআলা: ইহরাম অবস্থায় মহিলাগণ সব সময় আওয়াজবিহীন তালবীয়া বা লাব্বায়েকা আল্লাহুম্মা বলবে।”
কাজেই দেখা যাচ্ছে, হজ্জের ক্ষেত্রে হারাম ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়া বিরাট একটা বাধা।
আর চোক্কা দেওবন্দীরাও একমত যে, এক ফরজ আদায় করতে গেলে অপর ফরজ বাদ দেয়া বা হারাম কাজ করা যাবে না।
উল্লেখ্য, শতকরা ৯৫% মুসলমানের এই দেশের মুসলমান নামধারী সাংবাদিক, সম্পাদকদের এইসব অতীব জরুরী ও অনিবার্য ইসলামিক মাসয়ালাগুলো জানা দরকার ছিলো এবং সে আঙ্গিকে তাদের রিপোর্ট করাও ফরয-ওয়াজিব ছিলো। অথচ অন্যান্য দুনিয়াবী পত্রিকাতো নয়ই এমনকি ইসলামের খোলশধারী পত্রিকা ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত, সংগ্রামও সে ধারার কোন রিপোর্টের কথা এখনও চিন্তাই করতে পারছে না।
ইসলাম সম্পর্কে তারা একদিকে কত অজ্ঞ অপরদিকে কত গাফিল এবং দায়-দায়িত্ববিহীন- এর দ্বারা তাই প্রমাণিত ও প্রতিভাত হয়। অথচ এসব তথাকথিত ইসলামপন্থী পত্র-পত্রিকাও প্রথম পৃষ্ঠায়
বিশ্বকাপ ফুটবল,
বিশ্বকাপ ক্রিকেট,
ওয়ান ডে ক্রিকেট,
অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণকারীরা কে কোথায় থাকলেন,
কি ধরনের অসুবিধায় পড়লেন,
কোথায় হাঁটলেন,
কি খেলেন,
কি ধরনের খেলা খেললেন,
কতটুকু সফলতা,
ব্যর্থতা, গৌরব
অথবা গ্লানি নিয়ে ফিরলেন-
সব বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট তারা করে।
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে ইসলামী ভাবধারার আলোকে এটাই তো উচিত ছিলো, হজ্জযাত্রীরা হজ্জ করতে গেলে দেশেই প্রথমে ২০টির মত হারাম ছবি তুলতে বাধ্য হচ্ছেন, হারাম ছবি সার্বক্ষণিক গলায় লটকিয়ে সার্বক্ষণিক রহমত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্লেনে বেপর্দা মহিলার মুখোমুখি হচ্ছেন। সউদী আরবে গিয়ে প্রতি মুহূর্তে অত্যাধুনিক সিসিটিভি’র আওতাভুক্ত হয়ে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় লক্ষ কোটি হারাম ছবির পাল্লায় পড়ছেন অর্থাৎ এক ফরয হজ্জ আদায় করতে গিয়ে তারা লক্ষ কোটি হারাম দ্বারা আবর্তিত হচ্ছেন।
অথবা
লক্ষ কোটি হারাম ছবির কারণে মুসলমানদের ইসলামের পঞ্চম ভিত্তি হজ্জ তারা ঠিকমত করতে পারছেন না এ বিষয়ে কোন ইসলামী, নন-ইসলামী, মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী কেউই সামান্য আবেদন নিয়ে কোনো রিপোর্ট করছেন না।
বিষয়টি অবশ্যই শতকরা ৯৫% মুসলমানের এই দেশে তাদের দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর অনুভূতি, অভাব, অভিযোগ সম্পর্কে অজ্ঞ, গাফিল ও বিচ্ছিন্ন বলে প্রতীয়মান করে।
যা তাদেরকে সত্যিকার গণমানুষের সাথে সম্পৃক্ত সাংবাদিক প্রমাণ না করে বিশেষ অজ্ঞ স্বার্থলোভী সাংঘাতিক রূপে প্রতীয়মান করে।
-মুহম্মদ আলম মৃধা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১
কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮
কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা