মহাপবিত্র হাদিছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, বিশিষ্ট মহিলা ছাহাবীয়া হযরত ওয়াফরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, তিনি মহিলা ছাহাবী হওয়ার পরেও অনেক জিহাদে তিনি শরীক ছিলেন। উনার ৭ জন আওলাদ ছিলেন। বদরের জিহাদের সময়, ৭ জন আওলাদের মধ্যে বড় সন্তান যিনি, উনার বয়স বেশী না, ১৫-১৬ হবে। উনার দাড়ি মোছ তেমন উঠেনি কিন্তু উঁচু লম্বা ছিলেন, স্বাস্থ খুব ভাল ছিল। উনারা ২ ভাই, একজন ১৫-১৬ হতে পারে, অপরজন ১৪-১৫ বছর। বাকিরা সকলেই ছোট ছিলেন। উনারা ২ ভাইয়ের স্বাস্থ ভাল, উঁচু লম্বা ছিলেন।
হযরত ওয়াফরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি শুনেছেন, জেনেছেন যে, আবু জেহেল কাট্টা কাফির, চির জাহান্নামি সে মক্কা শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দুনিয়াবী দৃষ্টিতে সে অনেক কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করেছে। নাউযুবিল্লাহ।
আর সে সেই ধারাবাহিকতায় বদরের জিহাদে এসেছে। এটা হযরত ওয়াফরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি জেনে উনার ২ ছেলের সাথে চুক্তি করলেন। কি চুক্তি করলেন, তিনি বললেন,
১ নং শর্ত, আপনাদেরকে অবশ্যই জিহাদে যেতে হবে।
২ নং শর্ত হচ্ছে যে, জিহাদে যেয়ে আবু জাহেলকে হত্যা করতেই হবে। আবু জাহেলকে হত্যা করতে না পারলে আমার বাড়ীতে আপনাদের কোন জায়গা হবে না।
আবু জাহেলকে হত্যা করতে গিয়ে আপনারা যদি শহীদও হয়ে যান, তাতে আমার কোন দাবি নাই।
কিন্তু আবু জেহেলকে হত্যা করতেই হবে। সে একটা নিকৃষ্ট পাপি। সে নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবসময় কষ্ট দাওয়ার ফিকিরে থাকে। নাউযুবিল্লাহ।
উনারা ২ ভাই, উনাদের সম্মানিত মাতার দেয়া সেই শর্ত চুক্তি অনুযায়ী বদরের জিহাদে আসলেন।
বদরের জিহাদে মুসলমানদের সংখ্যা কম ছিলেন, ৩১৩ জন মাত্র। কাফিরদের এক হাজার, তারা ছিল সুসজ্জিত, অস্ত্র সস্ত্র সহ। তাদের লোহার বর্ম ছিল। সবদিক থেকে তারা সুসজ্জিত ছিল।
হযরত ওয়াফরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার ২ ছেলে, ঐ ২ ভাই, উনাদের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অস্ত্রপাতি ছিল না, তরবারী ছাড়া। বর্ম ছিল না। বয়সের অভিজ্ঞতা কম। ছুরতান উঁচা লম্বা। উনারা আসলেন। নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন জিহাদ শুরু হবে সবাইকে স্থান নির্ধারণ করে দিলেন। কোথায় কে দাড়াবে। হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এক স্থানে দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট করে দিলেন। কিতাবে বর্ণিত রয়েছে হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খুব শক্তিশালী যুদ্ধা ছিলেন। হাজার যুদ্ধার সমান উনার শক্তি ছিল। উনাকে একখানে স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলো। কিন্তু উনার পাশে বড় কেউ নাই। ২ পাশে ২ জন এই ছেলেগুলি। হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পরবর্তী সময়ে বলেছেন, আমি যেখানে দাড়িঁয়েছি সেখানে আমি একা। আশে পাশের আমার তেমন কোন বড় যোদ্ধা নাই। ২ পাশে ২ জন ছেলে। লক্ষ করলেন, উনাদেরতো দাড়ি মোছই উঠেনি। এই অল্প বয়সের ছেলে কি যুদ্ধ করবেন। তিনি একটু চিন্তিত ছিলেন। ডান দিকে যিনি ছিলেন তিনি খুব দ্রুত হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে আসলেন, এসে কানে কানে বললেন, চাচা, আবু জেহেল কোনটা, জিহাদ তো শুরু হয়ে যাচ্ছে। তখন হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি একটু আশ্চর্য হলাম, যে আবু জেহেলতো অনেক বড় পাহলোয়ান। তার কথা শুনলে তাকে দেখলে মানুষ পালিয়ে যায়। আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, আপনি আবু জেহেল দিয়ে কি করবেন। তিনি বললেন, আমার যিনি সম্মানিত মাতা উনার সাথে আমি চুক্তি করেছি। কি চুক্তি করেছেন? আবু জেহেলকে অবশ্যই হত্যা করতেই হবে। এই চুক্তি করে এসেছি। আবু জেহেলকে হত্যা করতে যেয়ে আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তাতে কোন অসুবিধা নাই, আমার মা উনারও কোন দাবি নাই। কিন্তু শর্ত হচ্ছে আবু জেহেলকে হত্যা করতেই হবে।
হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি যখন ছেলেটির কথা শুনলাম, আমি তখন এই বাচ্চা ছেলেটির দিকে ভাল ভাবে দৃষ্টি করলাম। আমি উনাকে বললাম, আপনি কি পারবেন? উনি বললেন, হ্যাঁ। বললেন, আপনি আমাকে সময় মত দেখিয়ে দিবেন। হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এই কথা শুনে আমার অনেক শক্তি বেড়ে গেল। এরকম ছেলে, এত সাহসী। উনাদেরকেই তো জিহাদে দরকার। কিছুক্ষণ পরে বাম দিকে যিনি ছিলেন, তিনি আমার কাছে আসলেন, বললেন চাচা, আবু জেহেল কোনটা? তিনি এই ছেলেকে একই জবাব দিলেন। আপনি আবু জেহেল দিয়ে কি করবেন? আবু জেহেল তো অনেক বড় পাহলোয়ান। তার চেহারা দেখলে মানুষ পালিয়ে যায়। আপনি কি করবেন? তখন তিনিও বললেন, আমার যিনি সম্মানিত মাতা উনার সাথে আমার চুক্তি হয়েছে। কি চুক্তি? জিহাদে যেভাবেই হোক আবু জেহেলেকে হত্যা করতেই হবে। আমি যদি শহীদ হয়ে যাই, তাতে কোন অসুবিধা নাই। হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি শুনলাম, উনার দিকে ভাল করে তাকালাম। দেখলাম, তখনও দাড়ি মোছ উঠেনি, অল্প বয়স। আমি সময়মত দেখিয়ে দিলাম আবু জেহেলকে। উনারা চোখের পলকে যেয়ে আবু জেহেলকে ধরাশায়ী করে দিলেন। সুবহানআল্লাহ।
উল্লেখিত মহিমান্বিত ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই, হযরত মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনাদের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক আঞ্জামের কত বেমেছাল ভূমিকা। হযরত পুরুষ ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের কামিয়াবীর পিছনে মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনাদের অবদানও ছিল বেমেছাল। মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুুম উনাদের অনুসরণে মুহব্বত করার তাওফিক দান করুন।
-তাসনীম আহমদ খান
প্রচলিত হারাম রছম করুন বর্জন, পবিত্র দ্বীন পালনেই কামিয়াবী অর্জন
ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা