পিতা-মাতার দায়িত্ব সন্তানের সুন্দর শরীয়ত সম্মত নাম রাখা

সংখ্যা: ২৯৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খিলাফতকালে এক পিতা আসলেন। এসে একটা মামলা দায়ের করলেন। মামলা হলো- পিতা বললো যে, “হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে, মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ও মাহবুব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে সন্তানদেরকে আদেশ দিয়েছেন পিতার হক্ব আদায় করার জন্য। কিন্তু আমার সন্তান আমার কোন হক্ব আদায় করেনা। কাজেই আমি তার বিরুদ্ধে আপনার কাছে মামলা দায়ের করলাম। আপনি দয়া করে এটার ব্যবস্থা করে দিন।”

পিতা মামলা দায়ের করা মাত্রই খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সে সন্তানকে ডেকে পাঠালেন। যখন সন্তানকে ডেকে পাঠানো হলো, সন্তান হাযির হলো। হাযির হওয়ার পরে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “হে সন্তান! তুমি তোমার পিতার হক্ব আদায় করনা কেন যথাযথভাবে? মহান আল্লাহ্ পাক তিনি যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ও মাহবুব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন সে অনুযায়ী তুমি কেন হক্ব আদায় করনা?” সন্তান বললো, “হে খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আমার কিছু কথা আছে। অবশ্যই আমার অপরাধ হলে আমি শাস্তি গ্রহণ করবো, কোন অসুবিধা নেই। তবে আমারও কিছু কথা আছে।” খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “কি কথা তোমার রয়েছে, বল!” তখন সে সন্তান বললো, “খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! প্রথম আমার জানার বিষয় হচ্ছে, সন্তানের প্রতি পিতার কি হক্ব রয়েছে? সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কি হক্ব রয়েছে?” যখন এই প্রশ্ন করা হলো, তখন খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ও মাহবুব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলে দিয়েছেন যে, পিতার প্রতি সন্তানের তিনটা হক্ব রয়েছে।

প্রথমত, যে কোন পুরুষ, সে এমন মেয়ে বিয়ে করবেন, যে মেয়েটা হচ্ছে পরহেযগার, দ্বীনদার, আল্লাহওয়ালী।

দ্বিতীয়ত, সন্তান যখন জন্মগ্রহণ করবে তখন সে পিতা সন্তানের একটা শরীয়তসম্মত সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখবেন।

তৃতীয়ত, সন্তান যখন বড় হবে তখন তাকে দ্বীনি ইলম তা’লীম দিবেন। এই তিনটা সন্তানের প্রাপ্য হক্ব পিতার কাছে।”

যখন এটা বলা হলো, তখন সে সন্তান বললো যে, “আপনি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করুন, উনি আমার হক্ব আদায় করেছেন অথবা করেননি।” যখন খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সে পিতাকে ডেকে আনলেন যে, “তুমি তোমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছ, এখন তোমার ছেলে তোমার বিরুদ্ধে বলেছে, তুমি তোমার সন্তানের হক্ব আদায় করেছ কিনা?” পিতা চুপ করে রইলো। তখন সন্তান বললো যে, “খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম, মূলতঃ আমার পিতা আমার একটা হক্বও আদায় করেননি।

এক নাম্বার হচ্ছে, যিনি আমার মাতা উনি কৃতদাসী। শরীয়তের সাথে উনার কোন সম্পর্ক নেই। ইলম-কালাম, আমল-আখলাক বলতে উনার কিছুই নেই।

দুই নাম্বার হচ্ছে, আমার এমন নাম রাখা হয়েছে যা মানুষ শুনলে হাসে।” “নাম কি রাখা হয়েছে?” “নাম রাখা হয়েছে ‘জুল।” ‘জুল’ অর্থ হচ্ছে, ‘গোবরের পোকা।’

তিন নাম্বার হচ্ছে, আমাকে দ্বীনি ইলম বলতে কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়নি। আমি শরীয়ত সম্পর্কে কিছুই জানিনা। যার জন্য আমার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই পিতা-মাতার হক্ব আদায় করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়না ইত্যাদি। এলোমেলো অনেক কাজই আমার দ্বারা হয়ে থাকে যেহেতু আমার সে বিষয়ে কিছুই জানা নেই। পিতাকে বলা হয়েছিল, আমাকে দ্বীনি ইলম দেয়ার জন্য কিন্তু পিতা সে ব্যবস্থা করেননি, যার জন্য আমার পক্ষে হক্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি।” যখন এ কথা বলা হলো, তখন খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মামলা খারিজ করে দিলেন। তিনি বললেন “এই মামলা এখানে চলবেনা। কারণ তুমি তোমার সন্তানের হক্ব আদায় করনি তাই তোমার সন্তান কি করে তোমার হক্ব আদায় করবে।”

এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা থেকে সুস্পষ্ট ভাবে বুঝা গেছে যে, পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো সন্তানের সুন্দর শরীয়তসম্মত অর্থবোধক নাম রাখা।

হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ও মাহবুব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের মাতার নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা তোমাদের উত্তম নাম রাখবে।” (আহমাদ ও আবূ দাঊদ)

পবিত্র হাদিছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, “মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব ও মাহবুব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করা পিতার ওপর সন্তানের হক্ব। ’ (মুসনাদে বাজজার, হাদীছ শরীফ : ৮৫৪০)

তাই, প্রতিটি পিতা-মাতার উচিৎ সন্তানের সুন্দর শরীয়তসম্মত অর্থবোধক উত্তম নাম রাখা।

বর্তমান সমাজে দেখা যায়, কাফির-মুশরিকদের নামে মুসলমানগণ নিজেদের সন্তানদের নামকরণ করছে। নাম শুনে বুঝা যায় না, মানুষটি মুসলমান নাকি কাফির। আবার অনেক সময় দেখা যায়, মূল নাম আরবী ও সুন্দর ও অর্থবোধক হলেও পিতা-মাতা তথা অভিভাবকগণ ডাক নাম এমন শব্দের রেখেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে অর্থহীন এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ প্রমাণ করছে। কষ্মিনকালেও কাফির-মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্যমূলক কোন নাম রাখা যাবে না।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পবিত্র নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সবাইকে সন্তানের নাম রাখার তাওফিক দান করুন।

-আহমদ মাশুক মারজান।

ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা: হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা উনার দাওয়াতে আহালের দ্বীন ইসলাম গ্রহণ

ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বেমেছাল মুহব্বত  ও খিদমত

ক্বদরে বাবা নাদানী, গারতু বাবা নাশাবী, ক্বদরে মাদর নাদানী, গারতু মাদর নাশাবী

ঈমানদীপ্ত সম্মানিত মহিলা: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বেমেছাল মুহব্বত  ও খিদমত

দুনিয়ার মুহব্বত সকল গুনাহের মূল