‘পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ৪০ হাজার কোটি টাকার রেললাইন বসানোর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটা শেষ পর্যন্ত ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু এত টাকা খরচ করে কী লাভ (রেট অব রিটার্ন) পাওয়া যাবে, তা নিয়ে কোনো পর্যালোচনা হয়নি। কবে এত টাকা উঠে আসবে বলা যাচ্ছেনা। ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে পদ্মা সেতু ও ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও এ ধরনের পর্যালোচনা করা হয়নি।’ বেশিরভাগ বড় প্রকল্প বিদেশি টাকায় করা হচ্ছে। এতে ঋণের সুদ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে, তা নিয়ে বিশেষ করে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেশজ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার ফলে ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে দেশ। প্রসঙ্গত প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ঋণ করে ঘি খাচ্ছিনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে শুধু ঘিই নয় বরং চরম ঋণ করে প্রধানমন্ত্রীর সরকার ভাবলেশহীনভাবে পোলাও কোরমা খাচ্ছে। কারো কোনো হুশ বলতে কিছু নেই।।
এদিকে দৈনিক আল ইহসান শরীফের গবেষণায় বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশও চীনের ঋণ ফাঁদে আটকা পড়বে। শ্রীলঙ্কার জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৬৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল পরিমাণ ঋণের মধ্যে একা চীনই দেশটির কাছে পায় ৮ বিলিয়ন ডলার। দেশটি বাংলাদেশকে যে উচ্চ সুদে ঋণ দিচ্ছে, তাতে বাংলাদেশও একই ফাঁদে পড়বে।
গত বছর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর ঢাকা সফরের সময় ৩৪টি প্রকল্পে ঋণ প্রদানে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর আওতায় ঢাকা-সিলেট ৪ লেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলপথসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্প রয়েছে।
গতবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি অনুসারে দেশটির এক্সিম ব্যাংক বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছিল, তার শর্ত ছিল আরও কঠিন। তারপরও সমালোচক মহলের মতে, চীনের ঋণই বাংলাদেশের জন্য বেশি বিপদজনক।
জানা গেছে, সরকারি পর্যায়ে তিনটি বড় প্রকল্পে অর্থায়নে অত্যান্ত ব্যয়বহুল ৫টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে চীন।
জিনপিংয়ের সফরে ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বেশি ঋণের ঘোষণা বা আশ্বাস যা আগে কখনও আসেনি। জি-টু-জি ভিত্তিতে প্রদেয় চীনের এইসব ঋণে বাস্তবায়িত প্রকল্পের ঠিকাদার হবে চীনের প্রতিষ্ঠান। দরপত্র ছাড়াই নিয়োগ দিতে হবে এসব ঠিকাদার। ফলে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হবে পারস্পরিক দর কষাকষির মাধ্যমে।
উল্লেখ, ভারত ও চীন-দুটি দেশই বাংলাদেশকে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। গত বছর ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে ২০০ কোটি ঋণ নেয়ার জন্য চুক্তি করে সরকার। চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ পণ্য ও সেবা ভারত থেকে কিনতে হবে।
প্রসঙ্গত দৈনিক আল ইহসান শরীফের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণের ১১ ধরনের ভীতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ফরেন কারেন্সি রিস্ক, মোর্যাল হ্যাজার্ড, কস্ট অব বোরোয়িং, ফরেন কারেন্সি বোরোয়িং, লোকাল বিজনেস অর্গানাইজেশন, লোন ইউটিলাইজেশন, পলিসি আনসার্টিনিটি, পলিসি সাপোর্ট, ভেরিফিকেশন অব অ্যাপ্লিকেশন, বোরোয়িং ফ্রম অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং ঋণ অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা। তথ্যে আরো উঠে এসেছে, বিশ্বের অনেক দেশ বেসরকারি খাতে বিদেশী বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিদেশী ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ তাদের স্থানীয় ঋণও পরিশোধ করতে দেখা গেছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। বিদেশী ঋণে বহু ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান। এ কারণে ব্যাংকারদের পাশাপাশি গ্রাহকদেরও ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। মোটকথা রেমিট্যান্স, রফতানি ও উৎপাদনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদেশী ঋণ নেয়ার অনুমোদন দিতে হবে। বিদেশী ঋণের অপব্যবহার ঘটলে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে নজরদারি বাড়াতে হবে।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে পুরো দেশের মানুষের উপর ছয় লাখ ৫৯ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। আগামী অর্থবছর (২০১৮-১৯) নতুন করে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেবে সরকার, সুদসহ আগের বছরগুলোর মূল টাকাও সরকার প্রতি বছর পরিশোধ করে আসছে। পরিশোধ না হওয়া টাকা জমতে জমতেই ঋণের বোঝা পাহাড়সম দাঁড়িয়েছে।
আগামী অর্থবছরে শেষে দেশী-বিদেশী মিলিয়ে রাষ্ট্রের মোট ঋণ দাঁড়াবে সাত লাখ ৬১ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে দেশের ভেতর থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ চার লাখ ৭১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ দুই লাখ ৯০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। সরকার ঠিকমতো ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না বলেই এর দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে।
উল্লেখ্য, সরকার যদি এখনই কথিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অতিব্যয় ও লুটপাটের লাগাম টেনে না ধরে তাহলে দেখা যাবে দেশ বৈদেশিক শক্তির আগ্রাসনের মুখে পড়বে। যেমন পড়েছে শ্রীলংকা। শ্রীলংকা চীনের ঋণের ফাঁদে পড়ে এখন ঋণের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হাম্বানটোটো চীনকে দিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ সরকার যেভাবে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অতিব্যয়ে অবকাঠামো তৈরী করছে তাতে করে শ্রীলংকার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশ বরণ করতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে সরকার যদি সচেতন না হয় তাহলে জনগনকেই সক্রিয় হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। কারণ দেশ বা দেশের সম্পদ খোয়া গেলে সরকারের কিছু আসে যায়না। সরকার আসে, যায় কিন্তু জনগণ ছিল, আছে এবং থাকবে। ইনশাআল্লাহ! তাই সংবিধান মতে, দেশের মালিক সরকার নয়- মালিক জনগন। যারা মালিক তাদেরকেই তাদের মালিকানা রক্ষা করতে হবে।
-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান, ঢাকা।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০