সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।
“হুব্বুল ওয়াতানে মিনাল ঈমান”- “দেশকে ভালোবাসা পবিত্র ঈমান উনার অঙ্গ।” নিজ দেশ-স্বদেশের প্রতি ভালোবাসা চিরন্তন, শাশ্বত সত্য বলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “দেশ রক্ষার্থে একদিন এক রাতের প্রহরা-ক্রমাগত এক মাসের নফল রোযা এবং সারা রাত পবিত্র ইবাদতে কাটিয়ে দেয়ার চেয়ে উত্তম।” (পবিত্র মুসলিম শরীফ)
দেশের স্বাধীনতা রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে চোখ দেশের সীমান্ত রক্ষায় বিনিদ্র থাকে, সে চোখকে জাহান্নাম স্পর্শ করবে না।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিষয় ও ঘটনার তাৎপর্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মঘাতী প্রবণতাই এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিলম্বিত করেছিল এবং জামাত ও তাবৎ ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা কথিত রাজাকার, আল বাদর, আস শামস নামধারী কলঙ্কিত কাহিনীর সূচনা করেছিল।
বলাবাহুল্য, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে হলেই যে তা পবিত্র দ্বীন ইসলামী নয়- এ ফতওয়ার গুরুত্ব যেমন এখনও আছে তেমনি তখনও ছিল। পাকিস্তান হয়েছিল পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে। কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার কিছুই হয়নি। পবিত্র দ্বীন ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও মূল্যবোধ কিছুই প্রচার হয়নি, প্রতিষ্ঠা পায়নি। যদি কিছু হয়ে থাকে তবে তা তাদের রাজদ- রক্ষার্থে।
কিন্তু এ শাসকরা খোদ পাকিস্তান আমলেই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার খিলাফ করে দাদার সম্পত্তিতে নাতিকে ওয়ারিছ করেছিল। তিন তালাক দিলে নব্বই দিন পার না হলে তালাক কার্যকর হবে না এবং এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী মিলেমিশে গেলেও তালাক কার্যকর হবে না বলে অনৈসলামী আইন করেছিল।
পাকিস্তান সৃষ্টির পরদিনই ভাষণে তথাকথিত কায়েদে আযম ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভাষণ দিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সে বলেছিল, ‘আজকে থেকে পাকিস্তানে কোনো মুসলমান আর মুসলমান থাকবে না। কোনো হিন্দু আর হিন্দু থাকবে না। সবাই হয়ে যাবে পাকিস্তানী।’ একই সাথে সে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঝা-া উড়িয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
কিন্তু লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আন্দোলনের লাখ লাখ মৌলানারা সেদিন তথাকথিত কায়েদে আযমের এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও জাতীয়তাবাদীর ভাষণের কোনো প্রতিবাদ জানায়নি, প্রতিকার করেনি। এমনকি সত্যি বলতে কিছুই বুঝেনি।
বলাবাহুল্য, মৌলানা সাহেবদের এসব কূপমণ্ডুকতা দেশ-জনগণের জন্য বিরাট অভিশাপ। এদের অজ্ঞতা এদেরকে নফসের কাছে অথর্ব করে তোলে। ফলত এরা হয় নফসের পূজারী। হয় ধর্মব্যবসায়ী। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ঘোষিত নিকৃষ্ট জীব।
এ নিকৃষ্ট জীবরা মুসলমানদের ক্ষতি করে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে বদনাম করে। ’৭১-এও তাই করেছিল। জালিম পাকিদের পক্ষাবলম্বন করেছিল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। পাকিদের সাহায্য করে, পাকিদের পথ ধরে এদেশের মা-বোনদের সম্ভ্রম লুণ্ঠন করেছিল। সম্পদ লুটেপুটে নিয়েছিল। কিন্তু এসব মহা অনৈসলামী কাজই তারা করেছিল পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে। নাঊযুবিল্লাহ!
বলাবাহুল্য, এসব যুদ্ধাপরাধীরা আজো ধর্মব্যবসা করে যাচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে। এমনকি তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে দেশব্যাপী অবর্ণনীয় সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর পর বিচার কেন? এটাও তাদের খোঁড়া যুক্তি।
অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই লক্ষ লক্ষ বছর পর বান্দার বিচার করবেন, যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে বিবৃত হয়েছে। তাও কী তাহলে অন্যায় হবে? নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত এসব ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ‘সূ’রা শুধু ধর্মের নামে অপকর্মকারীই নয়, বরং ধর্ম সম্পর্কে মহাঅজ্ঞও বটে। অজ্ঞ বলেই এরা উপলব্ধি করতে অক্ষম যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা শুধু জায়িযই নয়, বরং পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ফরয-ওয়াজিব।
কাজেই বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের উচিত ছিল সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় একদিনে ঘোষণা করে তারপর দিন রায় কার্যকর করা। তাহলে চুনোপুটি জামাতীরা আর চোরাগোপ্তা হামলার সাহস ও সুযোগ পেতো না।
বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে যে অনাকাঙ্খিত বিলম্ব করছে তা শুধু অযৌক্তিকই নয়, বরং খুবই অশুভ। পাশাপাশি সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতির যে অনুমোদন দিচ্ছে তা শুধু অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বিশেষ আত্মঘাতী।
কাজেই, এসব অশুভ ও আত্মঘাতী প্রবণতা ও তৎপরতা থেকে সরকার যত তাড়াতাড়ি সরে আসবে ততই দেশ ও জনগণের জন্য কল্যাণ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে একটি কথা প্রায়ই প্রচার করা হয়েছিল যে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনার ভিত্তিতে। কিন্তু একথা সর্বৈব মিথ্যা। কারণ ’৭০-এর নির্বাচনের বিজয়ী ফলাফল অস্বীকার করাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের কারণ। আর ’৭০-এর বিজয়ের মূলে মূল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই ছিল ‘পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবেনা।’ এছাড়া ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিল না। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে একথা প্রত্যাহার করতে হবে এবং সংবিধান থেকে তা প্রত্যাখ্যাত করতে হবে।
বলাবাহুল্য, এবারেও সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ‘পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী আইন পাস হবেনা’ যে কারণে সরকার অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। যে কারণ ৯৭ ভাগ মুসলমান সংক্ষুব্ধ। প্রসঙ্গত আমরা মনে করি সরকারের হাতে এখনও যতটুকু সময় আছে তার মধ্যেও সরকার পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। দেশবাসীকে স্বাধীনতার সত্যিকার সুফল দিতে পারে।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ আরিফুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ২
কোকাকোলা ও অন্যান্য কোমল পানীয় সম্পর্কে উন্মোচিত সত্য-১৮
কট্টর কমুনিস্ট মাওসেতুং এর নতুন ভাবশিষ্য ফুলতলীর লংমার্চ এবং তার শরয়ী পর্যালোচনা ও প্রসঙ্গ কথা-৩