সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য এবার নমিনেশন পেয়েছে ২৭৮ জন। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইতিহাসে এই প্রথম মাত্র ১৭ বছরের পাকিস্তানি কন্যা মালালা ইউসুফজাইয়ের এবং অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত ও পরিচিত ব্যক্তিত্ব কৈলাশ পেয়েছে এবারের কথিত নোবেল শান্তি পুরস্কার। মালালাকে এখন দেখানো হচ্ছে বিশ্বে কিশোর-তরুণদের ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বান কি মুন মালালা ইউসুফজাইকে ‘জাতিসঙ্ঘ কন্যা’ বলে অভিহিত করেছে।
মালালা তার নিজ দেশ পাকিস্তানে অনেকটা অচ্ছুত বটে। দেশ-বিদেশের মানুষ তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। সঙ্গতকারণেই তারা মনে করে বন্ধুহীন মালালা পশ্চিমাদের সৃষ্টি। বিদেশে পাকিস্তানের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করতে তাকে দাঁড় করানো হয়েছে। মালালাকে এখন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
পাকিস্তানে ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর তারিখে কথিত তালেবান হামলায় আহত মালালা- পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আনুকূল্য পেয়েছে।
২০১২ সালের অক্টোবরে তালেবান হামলায় আহত হওয়ার পর থেকে মালালা সন্ত্রাসবাদবিরোধী প্রচারণার উল্লেখযোগ্য অংশে পরিণত হয়েছে। মালালা যেন এখন মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পরিচালিত সেনা অভিযানের বৈধতার প্রতীক। এখন অমেরিকানদের সামরিক আগ্রাসনের বৈধতার পক্ষে মালালার নাম আর ছবি যেন বিরাট আর বাস্তব উদাহরণ। মালালা যা নয়, তার চেয়েও তাকে বড় করে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে।
অথচ মালালা ইউসুফজাইয়ের মতোই আরেক আহত নারী অন্ধ নাবিলা। কিন্তু ওয়াশিংটনে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয়নি। যদিও তারা দু’জনই পাকিস্তান থেকে যায়। দু’জনই সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। সেটি হলো দু’জনার হামলাকারী এক নয়। মালালা আহত হয়েছে পাকিস্তানের তালেবান গোষ্ঠীর হাতে। অন্যদিকে মার্কিন ড্রোন হামলার শিকার হয়েছে নাবিলা। আর তাই মালালা ও নাবিলার প্রতি পশ্চিমা বৈষম্য প্রকটভাবে প্রতিভাত।
২০১২ সালের ২৪ অক্টোবর মার্কিন ড্রোন হামলায় আহত হয় ৮ বছরের নাবিলা রহমান ও তার ভাই। হামলায় শহীদ হন তার দাদি মোমিনা বিবি।
ড্রোন হামলার বর্ণনা দিতে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকা গিয়েছিলো দৃষ্টিশক্তি হারানো নাবিলা। সঙ্গে ছিলো তার স্কুল শিক্ষক বাবা আর এক ভাই। ওয়াশিংটনে এক প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশ নেয় নাবিলা ও তার বাবা। কিন্তু নাবিলার এই সফর যুক্তরাষ্ট্রে তেমন প্রচার পায়নি। মালালার সফরের মতো সংবাদ মাধ্যমে সাড়া জাগায়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অবাধ চলাফেরারও অনুমতি দেয়নি মার্কিন প্রশাসন। সেখানে কংগ্রেস সদস্যদের উপস্থিতিতে এক শুনানিতে অংশ নেয় নাবিলা। শুনানিতে ৪৩০ জন কংগ্রেস সদস্যের উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র পাঁচ জন উপস্থিত হয়। সেখানে নাবিলার বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে বা মা কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তাহলে তারা এতবড় হামলার শিকার কেন হলো, আমার বুদ্ধিতে তা আসে না। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমেরিকানদের জানাতে চাই- আমার ছেলে-মেয়ে হামলায় আহত হয়েছে।’
ওই হামলার ঘটনা বর্ণনা করার সময় অনুবাদক কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেও মন গলেনি মার্কিন সরকারের। নাবিলার এই ট্রাজেডিকে পুরোপুরি এড়িয়ে যায় সরকার। সাক্ষ্য দেয়ার সময় নাবিলা একটা ছোট্ট প্রশ্ন করেছে, ‘আমার দাদিমা কী দোষ করেছিল।’ কিন্তু এ প্রশ্নের কোনো উত্তর পায়নি সে।
অনেকে তো শোনেইনি তার প্রশ্ন। নাবিলার পরিবার যখন ভয়াবহ হামলার বর্ণনা দিচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তখন মার্কিন যুদ্ধবিমান নিয়ে বৈঠক করছিল।
মালালার উষ্ণ প্রচারণার সঙ্গে নাবিলাকে খাপ খাওয়ানো যায় না। কারণ নাবিলা পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বা অন্যান্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বা ড্রোন হামলার শিকার। তার মতো অসহায় বালিকাদের দুর্দশায় সমবেদনা জানানোর ইচ্ছা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। তাই তার জন্য নেই কোনো পুরস্কার বা স্বীকৃতি।
মালালার বাসস্থান সোয়াত এলাকার লোক অভিযোগ করে বলেছেন, মালালা একজন সিআইএ এজেন্ট। আর তার পরিবার হামলার ঘটনা সাজিয়েছে, যেন তারা এ থেকে উপকৃত হতে পারে। বাস্তবেও মালালা সবকিছু পেয়েছে, কিন্তু তার এলাকা সোয়াত কিছুই পায়নি। উল্লেখ্য, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষিকা তালেবান বোমা হামলায় বিধবা হয়েছেন। কিন্তু তারা কোনো অনুদান বা বিদেশে থাকার প্রস্তাব পাননি। তারা জানতে চান, সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের জন্য কি করবে? তারা জানান, মালালা সোয়াতের একমাত্র বাসিন্দা নয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মালালার নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মুসলিম দেশের সরকারপ্রধান এবং মুসলমানগণ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! এটা শুধু দায়িত্বহীনতাই নয়; বরং চরম অজ্ঞতারও বিষয়। এ অজ্ঞতাই আজকে মুসলমানদের অবনতির কারণ। মুসলমান তাদের শত্রুকে চিনে না, জানে না। শুধু তাই নয়, মুসলমানের শত্রুরা মুসলমানের ক্ষতি করতে যে নামধারী মুসলমান তথা মুনাফিকদের ব্যবহার করে মুসলমান তাও বুঝে না। মুসলমান কাফিরদের তৈরি ফাঁদে বারবার পা দেয়। আর তাদের আক্বীদা নষ্ট করে আমল বিচ্যুত হয়। কথিত জাকির নায়েক তথা কাফির নালায়েক থেকে মালালা সে অপকৌশলেরই অংশ। কাজেই শুধু কাফির নায়েক আর মালালা ষড়যন্ত্র নস্যাৎই নয়; মুসলমানদেরকে বিশেষ সতর্ক ও সক্রিয় হতে হবে তাদের শত্রুদের সম্পর্কে; বিশেষতঃ ভালোর ছুরতে চরম শত্রুতার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০