সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় সংঘটিত ভূমিকম্প কেঁপে উঠল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে ২৪২৬ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি স্থল থাকলেও এর প্রভাবে গত ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বেশির ভাগ স্থানেই ভূকম্পন অনুভূত হয়। তবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রামে মোট তিন দফা ভূকম্পন সৃষ্টি হলে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দফা ছাড়াও বেলা ২টা ৫৮ মিনিটে ২য় দফা এবং বিকাল ৪টা ৫৩ মিনিটে ৩য় দফা ভূকম্পন অনুভূত হয় বলে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
প্রথম ভূমিকম্পটি বাংলাদেশে বেলা ২টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হয়। দ্বিতীয় কম্পনটি হয় তার প্রায় ২ ঘণ্টা পর বেলা ৪টা ৪২ মিনিটের দিকে।
এদিকে ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো ঢাকায়। হাজার হাজার মানুষ আতঙ্কে বহুতল ভবন থেকে দৌড়ে নিচে নামে, অনেকে ছাদে ওঠে কিংবা খোলা জায়গায় অবস্থান নেয়। বহুতল ভবনগুলো থেকে মানুষের হুড়োহুড়িতে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নিতে থাকেন।
পল্টন থেকে নাসির হোসেন জানান, প্রথম দফা ভূমিকম্পের সময় তিনি ১৪ তলা ভবনে ছিলেন। হঠাৎ কাঁপতে থাকায় ভয়ে যেন হিম হয়ে যায় ভবনের সবাই। এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন সবাই। কেউ নিচে নামেন, কেউ ছাদের দিকে দৌড়ান। মতিঝিল এলাকার প্রতিটি ভবনে ছিল এ অবস্থা। কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে ভূমিকম্পের সময় বহু মানুষকে হুড়োহুড়ি করে নিচে নামতে দেখা যায়। হেলে পড়ার আতঙ্কে বাংলা মোটরে সোনার তরী টাওয়ার থেকে নেমে যাওয়া বিভিন্ন অফিসের কর্মীরা কয়েক ঘণ্টা পরও ওপরে ওঠেননি। প্রতিটি বহুতল ভবনে অবস্থান করা মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা গেছে ভূমিকম্প চলাকালে।
নগরীর যেসব বাসিন্দা বহুতল ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন তারাও আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। শান্তিনগর টুইন টাওয়ারের ১৯তম তলা থেকে ছানাউল হক পরিচয়ে এক ব্যক্তি বলেন, মানুষ আর চেয়ার টেবিল সবকিছুই যেন ডানে বাঁয়ে দুলছে আর লাফাচ্ছে। অনেকেই মাথা ঘুরে পড়েও যান। পান্থপথ এলাকা থেকে গৃহবধূ সায়েরা খাতুন জানান, তাদের বাসাটি ১৮ তলায়। তার দুই সন্তান নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যান তিনি। রাতেও আতঙ্কে তার শরীর কাঁপছিল আর মাথা ঘুরছিল। আতঙ্কে আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকেন তিনি।
রাজধানী ঢাকার মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি, মিরপুর, ফার্মগেট, ইস্কাটন, গুলশান, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্কিত মানুষকে অফিস ও ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। এমনকি চট্টগ্রামে ভূমিকম্পকালে সিটি মেয়র নিজেও নেমে আসেন ভবনের বাইরে। শুধু তাই নয়, ভূমিকম্পের সময় চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের বহুতলবিশিষ্ট অ্যাম্বাসেডর ভবন হেলে পড়ে। সুনামি সতর্কতা জারির পর চট্টগ্রাম নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সুনামির কারণে সাগরে জোয়ারের মাত্রা বেড়ে যায়। এ কারণে চট্টগ্রামে জাহাজ চলাচলে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে বিকাল ৬টা থেকে বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
বাগেরহাট, ভোলা, নোয়াখালী, নড়াইল, মৌলভীবাজার, বান্দরবান, মাদারীপুর, গৌরনদীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিরা জানান, ভূকম্পনের সময় সেসব এলাকার বহুতল ভবনগুলো কেঁপে উঠলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সর্বত্র দেখা দেয় আতঙ্ক। এ সময় অনেক এলাকার মসজিদে আজান দেওয়া হয়। ভূকম্পনের সময় পুকুর, ডোবা ও খালের পানি কাঁপতে থাকে; দেখা দেয় বড় বড় ঢেউ।
মূলত ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘ দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুয়ায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইরানের রাজধানী তেহরান এবং দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। গত ১১ এপ্রিল বুধবার ইন্দোনেশিয়ায় দু’দফায় ৮.৬ ও ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। বাংলাদেশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলেই ঢাকা শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে প্রাণহানি ঘটতে পারে প্রায় ২ লাখ মানুষের। অপরিকল্পিত অবকাঠামো, অধিক বহুতল ভবন, সরু গলিপথ ও উদ্ধার উপকরণের দুরবস্থার কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারি হিসাবে রাজধানীর ৭২ হাজার ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেসরকারি তথ্যমতে, এ সংখ্যা কয়েক লাখ। ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সচিবালয়ের একটি ভবনসহ, বিভিন্ন মার্কেট, বসতবাড়িসহ অনেক গুরুত্বপর্ণ সরকারি স্থাপনা।
বলাবাহুল্য, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনায় দেশের খাদ্য ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় কয়েকবার মহড়া দিয়েছে। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি এনেছে। কিন্তু তারপরেও ভূমিকম্প হলে দেশে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে না এমন কথা তারা বলতে পারেনি।
অর্থাৎ ভূমিকম্প, সুনামি, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির কাছে রাষ্ট্রযন্ত্র বড় অসহায়, অক্ষম, দুর্বল। তা কী আজ জনচেতনার অবকাশ আছে না যে, সাংবিধানিকভাবে লিখিত ও স্বীকৃত জনগণই প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক- এ কথা সর্বৈব ভুল।
কারণ ভূমিকম্প অথবা সুনামি অথবা অন্য যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ ভূখ- তথা প্রজাতন্ত্র তছনছ হয়ে যেতে পারে। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কে দেন? বা এর মালিক কে? বলাবাহুল্য, মুসলমান হিসেবে আমরা সবাই জানি বা স্বীকার করি, মহান আল্লাহ পাক তিনি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সমীকরণের মতোই তাহলে প্রতিভাত হয় যে, এ প্রজাতন্ত্রের তথা সবকিছুর মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি।
কুরাআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব মহান আল্লাহ পাক উনার।”
মানুষকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সামান্য কিছু সময়ের জন্য এ পৃথিবীতে বিচরণের জন্য পাঠিয়েছেন। তবে মানুষ তার কর্মফলের জন্যই পৃথিবীতে ভূমিকম্পসহ আযাব-গযব টেনে আনে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, æআসমান এবং যমীনে যা কিছু দুর্যোগ রয়েছে সব মানুষের হাতের কামাই।”
কাজেই আজকে ভূমিকম্প বা সুনামি সম্পর্কে মানুষের যে আতঙ্ক তা থেকে রক্ষার একটাই উপায় পহেলা বৈশাখ, ভ্যালেন্টাইন ডেসহ সব অনৈসলামী দিবস ও অনৈসলামী আমল বাদ দিয়ে ইসলামী আমলে জিন্দেগী অতিবাহিত করা।
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ আলম মৃধা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০