গত ২৭ ফেব্রুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী ভোর পর্যন্ত এ গ্রেপ্তার অভিযান চলে? তাদের কাছ থেকে অবৈধ পাসপোর্ট, সিপিইউ, ছুরি ও ভারতীয় মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। ২৬ বছর বয়সী রেজোয়ান ছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া অন্য জঙ্গিরা হলো ইমাদ উদ্দিন ওরফে মুন্না (১৮). আবু নাসের মুন্সী (২৮), সাদেক হোসেন ওরফে খোকা (১৯) ও নান্নু মিয়া ওরফে বেলাল মন্ডল ওরফে বিল্লাল (৩৫)। উদ্ধার করা তিনটি পাসপোর্টের মধ্যে বেলালের একটি, রেজোয়ানের একটি ও জোয়াদ নামে আরেক পাকিস্তানি নাগরিকের একটি পাসপোর্ট রয়েছে। জোয়াদকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেপ্তারকৃতদের নিউ মার্কেট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে র্যাব।
রেজোয়ান জানিয়েছে, সাড়ে তিন বছর আগে ঢাকায় আসার পর থেকে সে সদস্য সংগ্রহের কাজ করছে। তারা বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী একটি দেশে বোমা হামলারও
পরিকল্পনা করছিল।
উল্লেখ্য, জেইএম পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই তৈয়েবার সহযোগী সংগঠন।
গ্রেফতারকৃত জেইএম সদস্য রেজোয়ান আহম্মেদ একে-৪৭, এলএমজি, এইচএমজি, আরপি জি-৭ ও স্নাইপার রাইফেল চালনায় পারদর্শী। এছাড়া সে বিস্ফোরকের সাহায্যে শক্তিশালী বোমা তৈরির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের পর উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে র্যাব। প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় জঙ্গিদের হেলমেট পরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। জঙ্গি রেজোয়ান প্রথমে উর্দুতে পরে ইংরেজিতে কথা বলে। কয়েক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে সক্ষম জানিয়ে সে বলে, এ দেশে সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করছে সে।
র্যাব সূত্র জানায়, রেজোয়ান হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় পারদর্শী। সে পিস্তল, একে-৪৭, এলএমজি, এইচএমজি, আরপিজি-৮ স্নাইপার রাইফেলসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র চালাতে পারে। এ ছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে অভিযান পরিচালনায় সক্ষম সে। রেল স্টেশন, চলন্ত ট্রেনে বোমা হামলার বিষয়ে সে যথেষ্ট পারদর্শী।
র্যাবের কমান্ডার সোহায়েল বলেন, ১৯৯৯ সালে
নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডু থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের আইসি- ৮১৪ বিমান ছিনতাই হয়। পরে ছিনতাইকারীরা বিমানটি কান্দাহারে নিয়ে গিয়ে যাত্রীদের মুক্তি দেয়। এরপর ছিনতাইকারীরা নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। এই বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিল্লাল ভারতে গ্রেফতার হয়েছিল। প্রায় ১০ বছর গৌহাটি কারাগারে থাকার পর কিছুদিন আগে মুক্তি পায়। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা ভারতের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গ্রেফতারকৃত রেজোয়ান সাড়ে ৩ বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সে বাংলাদেশে অবস্থান করে জেইএম-এর সদস্য সংগ্রহ করছে। রেজোয়ানের সঙ্গে পাকিস্তানে জেইএম-এর শীর্ষ নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে। সে উর্দু, হিন্দী, ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে।
রেজোয়ান জানান, পাকিস্তানের করাচি দিল্লি কলোনি কিফটনে তার বাড়ি। প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে আসেন তিনি। তার ব্যবহƒত পাসপোর্ট ইতোমধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। দুটি পাকিস্তানি পাসপোর্ট ব্যবহার করছে রেজোয়ান। ভিসার মেয়াদও শেষ হয়েছে সাড়ে তিন বছর আগে। পাকিস্তানে তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তারা দিকনির্দেশনা দিতেন কীভাবে কাজ করতে হবে। র্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, জঙ্গিরা বড় ধরনের কোন নাশকতা ও হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা করছিল। তারা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে নিরাপদ ঘাঁটি মনে করে ‘শেল্টার হোম’ হিসেবে ব্যবহার করে ভারতে নাশকতামূলক কর্মকা- চালানোর পরিকল্পনাকারী করছিলো এসব জঙ্গিরা।
বাংলাদেশে এ চক্রের আশ্রয়দাতা হিসেবে উঠে এসেছে একেএম মহিউদ্দিন নামের এক রাজনৈতিক নেতার নাম। তার বাসায়ই থাকত রেজোয়ান। মহিউদ্দিনের দুই সন্তান সাদেক হোসেন খোকা ও ইমাম উদ্দিন মুন্নাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
জামাত থেকে বিএনপিতে অতঃপর জেইএমদের পৃষ্ঠপোষক মহিউদ্দিন মিয়া। ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে সুকন্যা টাওয়ারের মালিক এই মহিউদ্দিন মিয়া। তার বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুরের মুন্সীবাড়ি। দীর্ঘদিন সে জামাতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও হঠাৎ করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপিতে যোগদান করে। নিজ এলাকায় প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে স্থানীয় ৭ নম্বর বড়কুল ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি নির্বাচিত হয়। মহিউদ্দিন নিজের সুকন্যা টাওয়ারের ৫/এফ ফ্ল্যাটটি রেজোয়ানকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলো। গ্রেফতারকৃত তার দুই ছেলে ও ভাতিজা রেজোয়ানের গাইড হিসেবে কাজ করত। এছাড়া সংগঠনের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতাও করত। শুধু সুকন্যা টাওয়ারে নয়, মহিউদ্দিন নানা সময়ে হাজীগঞ্জে গ্রামের বাড়িতেও জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছে। তার ভাই সালাহউদ্দিনও এই সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা দু’জনেই জেইএম-এর বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করছেন। মহিউদ্দিনকে গ্রেফতারের জন্য র্যাব ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে।
মহিউদ্দিন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। স্বতন্ত্র ও দলীয় ব্যানারে একাধিকবার নিজ জেলা চাঁদপুর থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থীও হয়েছে সে। তবে নির্বাচিত হতে পারেননি। এলাকাবাসী ও গোয়েন্দা তথ্যে এবং গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে মহিউদ্দিনের অনেক অর্থবিত্তের সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট করে আবারো প্রতিভাত হয়েছে যে, এদেশের যত প্রকার জঙ্গিদের আনাগোনাই থাকুক অথবা যত প্রকার জঙ্গির উদ্ভবই হোক না কেন; তাদের সবারই আনাগোনা তথা জš§ সবই হয় আজ জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধী জামাতীদের হাত ধরেই।
জামাতীরা যে এখনও পাকিস্তানে বিশ্বাস করে তথা এদেশটাকে আবারো পাকিস্তান বানাতে চায় তার বড় প্রমাণ সেই পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাথে সাবেক জামাতের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। কিন্তু নেপথ্যে রয়েছে শীর্ষ জামাতীরাই। কান টানলে যেমন মাথা আসে তেমনি যে কোন জঙ্গি টানলে শেষ পর্যন্ত জামাতীদের তথ্যই বেরিয়ে আসছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
মুহম্মদ আলম মৃধা
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা-১৪
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৪৫