পূর্ব প্রকাশিতের পর
এখন এখানে দেখা যাচ্ছে যে, হজ্জ করতে হলে টাকা-পয়সা, বাহন এটা প্রয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যেটা হচ্ছে, ‘যাদ’ এখানে ‘যাদ’ বলতে বুঝানো হয়েছে তাক্বওয়া, পরহেযগারী। তাক্বওয়া পরহেযগারী যদি না থাকে তাহলে কিন্তু ‘যাদ’ এর ব্যাখ্যাটা পূর্ণ হবে না। অর্থাৎ পাথেয়-এর সাথে তাক্বওয়াও অবলম্বন করা, মুত্তাক্বী হওয়াটা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন অন্যত্র-
يَا أَيُّـهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَقَـبَائِلَ لِتَـعَارَفُـوْا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْـقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْـرٌ
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
يَا أَيُّـهَا النَّاسُ
হে মানুষেরা! তোমরা জেনে রাখ,
إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّنْ ذَكَرٍ وَأُنثٰى
আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা- হযরত আবুল বাশার এবং হযরত উম্মুল বাশার আলাইহিমাস সালাম উনাদের থেকে সৃষ্টি করেছি।
وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَقَـبَائِلَ لِتَـعَارَفُـوْا
এরপর তোমাদেরকে গোত্রে গোত্রে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি, যেন একজন আরেকজনের পরিচয় লাভ করতে পারো। এখানে যারা মুফাসসির উনারা বলে থাকেন-
شُعُوْبًا وَقَـبَائِلَ
এর পার্থক্য হচ্ছে ‘শুয়ূব’ বলতে বুঝানো হয়েছে অনারব, আর ‘ক্ববায়িল’ বলতে বুঝায়েছেন আরব। যারা বিভক্ত হয়েছে। তবে এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বলছেন কেন? পরিচয় পাওয়ার জন্য। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে বলেন তোমরা এটা জেনে রাখ-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْـقَاكُمْ
তোমাদের মধ্যে সবচাইতে সম্মানিত অর্থাৎ প্রিয় ঐ ব্যক্তি যিনি মুত্তাক্বী, যিনি তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْـرٌ
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত বিষয় জানেন, খবর রাখেন, তিনি জ্ঞানী। এখন এখানে বলা হচ্ছে, সবচেয়ে সম্মানিত অর্থাৎ প্রিয় হচ্ছেন যিনি মুত্তাক্বী, যিনি তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন। এখন তাক্বওয়া অবলম্বন যদি সে করে। অর্থাৎ ‘যাদ’ এর অর্থ মুত্তাক্বী হওয়া, তাক্বওয়া অবলম্বন করা। মুত্তাক্বী যখন সে হবে তখনই কিন্তু হজ্জে মাবরূর তার নছীব হবে। এখন এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শানে নযূল সম্পর্কে যেটা বলা হয়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় করলেন তখন পবিত্র কা’বা শরীফ-এ নামাযের আযান দেয়ার জন্য বলা হলো হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে। তিনি ছিলেন আবিসিনায়ার লোক। কুরাইশ ছিলেন না বা আরবীদের মতো উনার ছূরত মুবারকও ছিল না। উনাকে যখন আযান দিতে বলা হলো, তিনি আযান দিলেন। যারা কুরাইশ তারা কেউ কেউ বিষয়টা নিয়ে নানা রকম মন্তব্য করেছিল। যদিও তাদের এ বিষয় কোন কিছু বলার অধিকার ছিলো না, তারপরেও। এবং কিছু লোক হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কাছে এসে কিছু বলল। হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছিলেন যে, আমি এ বিষয় কোন কথা বলব না। কারণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবীয়্যিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন। এ বিষয় কোন কথা বললে সে বিষয় তিনি জানবেন এবং এ বিষয়ে কিছু বলাটাও সঠিক নয়। এখন কিছু লোক এলোমেলো বক্তব্য, মন্তব্য পেশ করলো। আযান হয়ে গেল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবীয়্যিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক যিনি খ¦লিক যিনি মালিক যিনি রব উনার নির্দেশে তাদেরকে ডাকালেন, যারা চূ-চেরা কিল ও কাল করেছিল। ডেকে বললেন যে, আপনারা ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলেছেন। হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছেন। যে, উনি ব্যতীত কুরাইশদের মধ্যে অনেক লোক ছিলো যাদেরকে আযান দেয়ার জন্য বলা যেত, ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন উনার খুছূছিয়াত যেটা সেটা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ¦তামুন নাবীয়্যিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সাথে সাথে এ পবিত্র আয়াত শরীফও নাযিল করলেন-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّنْ ذَكَرٍ وَأُنثٰى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوْبًا وَقَـبَائِلَ لِتَعَارَفُـوْا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْـقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْـرٌ
(মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে বিষয়টা বলে দিলেন-) হে মানুষেরা! তোমরা জেনে রাখ, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং উম্মুল বাশার হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের থেকে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ একজন পুরুষ একজন মহিলা উনাদের থেকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর গোত্রে গোত্রে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছেন। আরব অনারব সৃষ্টি করেছেন। এটা হচ্ছে,
لِتَعَارَفُـوْا
পরিচয় পাওয়ার জন্য। প্রত্যেকেই তার পরিচয় যাতে পেতে পারে সেজন্য। তবে মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তোমরা জেনে রাখ-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْـقَاكُمْ
নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত অর্থাৎ প্রিয় ঐ ব্যক্তি যিনি মুত্তাক্বী, যিনি তাক্বওয়া অবলম্বন করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয় মহান আল্লাহ পাক তিনি সবচাইতে ভালো জানেন। এ বিষয় খবর রাখেন। তিনি আলীম। পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হলো তিনি জানিয়ে দিলেন, সকলে চুপ হয়ে গেলেন। এখানে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাক্বওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর যারা মুত্তাক্বী তারা সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রিয়। ঠিক হজ্জের মধ্যে সেটাই বলা হয়েছে-
تَـزَوَّدُوْا فَإِنَّ خَيْـرَ الزَّادِ التَّـقْوَى
পাথেয় অবলম্বন করো। উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া, পরহেযগারী। উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া-পরহেযগারী। পরহেযগারী ব্যতীত কেউ যদি হজ্জ করে হজ্জে মাবরূরের যে ফযীলত সেটা তার পক্ষে হাছিল করা সম্ভব হবে না এবং সে হজ্জে মাবরূর করতে পারবে না। (অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-২৭