(ধারাবাহিক)
বিয়ের ব্যবস্থা হলো, বিয়ে হয়ে গেল। হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বাসর ঘরে পাঠিয়ে দরজা থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কোন অঘটন ঘটবে। কারণ ছেলে এত মুত্তাক্বী, এত পরহেযগার, এত তাক্বওয়াধারী, তার দ্বারা কোন ঘটনা ঘটাটাই স্বাভাবিক। তাই তিনি একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রবেশ করা মাত্রই তিনি দ্রুত গতিতে দৌঁড় দিয়ে বের হয়ে আসলেন। হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি লক্ষ্য করতে লাগলেন যে, হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি দ্রুত গতিতে দৌঁড়ে বের হয়ে আসলেন। বের হয়ে আসা মাত্রই সাক্ষাৎ হয়ে গেল হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সাথে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন কেন? হযরত আবু ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন। ৫ঝচ্ছ আপেল ফল খাওয়ার জন্য যদি বার বৎসর বাগানে কাজ করতে হয়, একটা লুলা, লেংড়া, অন্ধ, খঞ্জ, বোবা, বধির মেয়েকে বিয়ে করতে হয়, তাহলে একটা বেগানা মেয়েকে দেখলে, তার কাফফারা কতটুকু আদায় করতে হবে? সেটা আমার জানা নেই। আমি প্রবেশ করে দেখেছি, আপনি যা বলেছেন, তার বিপরীত। তাই এই বেগানা মেয়েকে যদি দেখা হয়, তাহলে তার কতটুকু কাফফারা আদায় করতে হবে? সে জন্য আমি দ্রুত গতিতে বের হয়ে এসেছি। হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি একথা শুনে বুঝলেন, তিনি যা চিন্তা করেছেন, তাই হয়েছে। তিনি বললেন, চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনি ধৈর্যধারণ করুন। আপনি যাকে দেখেছেন, সেই আপনার স্ত্রী। আপনি রাত্র অতিবাহিত করুন। সকাল বেলা আমি যা কিছু বলার সেটা বলব। হযরত আবু ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি রাত্র কাটিয়ে, বা’দ ফজর যখন আসলেন, হযরত আব্দুল্লাহ সাওমাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, আপনি রাত্রে তো মেয়েকে দেখে বের হয়ে এসেছিলেন, যেহেতু যা বলা হয়েছে, তার বিপরীত আপনি দেখেছেন। বলা হয়েছিল লুলা, লেংড়া, অন্ধ, খঞ্জ, বধির, বোবা, কুৎসিৎ ইত্যাদি। কিন্তু আপনি তার বিপরীত পেয়েছেন। আমি যে অর্থে বলেছি, সে অর্থ হচ্ছে, আমি যে তাকে বলেছি, সে বোবা, সে পর পুরুষের সাথে কখনো ক ৫ঝব্দলেনি। বধির বলেছি, পর পুরুষের কোন কথা সে শুনেনি। অন্ধ বলেছি, পর পুরুষকে সে দেখেনি। লুলা-ল্যাংড়া, খঞ্জ বলেছি, সে কোন পাপ কাজের দিকে ধাবিত হয়নি। কুৎসিৎ-কদাকার বলেছি, কোন বেগানা পুরুষ তাকে দেখেনি। ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে আমি এগুলো বলেছি। প্রকৃতপক্ষে আমার মেয়ের কিন্তু কোন খুঁত নেই, সে নিখুঁত। যখন একথা স্পষ্ট করে বলে দেয়া হল, হযরত আবূ ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর শুকরিয়া আদায় করলেন। উনি যেমন পরহেযগার এবং যেমন মেয়ে চেয়েছিলেন, আল্লাহ পাক তেমন মেয়েই মিলিয়ে দিয়েছেন। আর সেই ঘরে জন্ম গ্রহণ করলেন গউছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি। এখন ফিকির এবং চিন্তার বিষয় যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মেয়েদের জন্য কোন আমল সব চাইতে উত্তম? বলা হল, ঐ আমলটাই সব চাইতে উত্তম,
لاترى رحلا ولايرها رجل.
“কোন পুরুষকে সে দেখবেনা, কোন পুরুষও তাকে দেখবেনা” সেটা হচ্ছে সবচাইতে উত্তম আমল। এবং সেই আমলটাই করেছিলেন হযরত গউছূল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মা উম্মূল খায়ের, আমাতুল জাব্বার হযরত ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা। যার কারণে উনার ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী হাছিল হয়েছে এবং উনাকে একজন আওলাদ আল্লাহ্ পাক দান করেছেন, যার ওসীলায় আল্লাহ্ পাক-এর জমিনে লক্ষ-কোটি মানুষ ইছলাহপ্রাপ্ত হয়েছে, হিদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে এবং পরকালেও নাজাতপ্রাপ্ত হয়েছে। খুব চিন্তা এবং ফিকিরের বিষয়। সেটাই বলা হয়েছে,
ذلك ازكى لهم
যদি কেউ সত্যিই পর্দা রক্ষা করতে পারে, সেটা তার জন্য পবিত্রতার কারণ, নাজাতের কারণ।
ان الله خبير بما سصنعون.
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সব খবর রাখেন, তোমরা যা করে থাক।” আল্লাহ্ পাক সব জানেন, কে, কেন, কোন উদ্দেশ্যে, কোন আমলটা করে থাকে। আল্লাহ্ পাক-এর জন্য কোনটা সে করে, গাইরুল্লাহ্র জন্য সে কোনটা করে, সেটা আল্লাহ্ পাক-এর জানা রয়েছে। কাজেই খুব সাবধান, পর্দার যে হুকুম-আহ্কাম রয়েছে সেটা যথাযথ আমল করার কোশেশ করতে হবে, তাহলেই কামিয়াবী রয়েছে। এরপর আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ولايبدين زينتهن.
“তোমরা তোমাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করনা, সৌন্দর্য প্রকাশ করনা।”
قل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروحهن ولايبدين زينتهن.
দৃষ্টি অবনত রাখবে, নিজেকে হিফাযত করবে। এটা অবশ্যই পবিত্রতার কারণ, নাজাতের কারণ। তার সাথে সাথে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করনা। শুধু দৃষ্টি অবনত রাখলেই, নিজেকে হিফাযত করলেই চলবেনা। সাথে সাথে নিজের সৌন্দর্য প্রদর্শনও করা যাবেনা।” যে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها ان اسماء بنت ابى بكر رضى الله تعالى عنها دخلت على رسول الله صلى الله عليه وسلم وعليها خمار رقيق وفى رواية اخرى خمار رقاق فاعرض عنها رسول الله صلى الله عليه وسلم.
হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করতেছেন, একদিন উনার বোন হযরত আসমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, উনি এমন অবস্থায় আসলেন, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটবর্তী হলেন, উনার কাপড়, ওড়না যা কিছু ছিল, সেটা পাতলা ছিল। সেটা দেখে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক ফিরিয়ে নিলেন। অর্থাৎ পাতলা কাপড় পরিধান করে মেয়েদের জন্য চলাচল নিষিদ্ধ। অন্য হাদীছ শরীফে এসেছে, পাতলা কাপড় পরিধান করা আর বস্ত্রহীন থাকা একই হুকুম। সেটাও বেপর্দারই শামিল। এ প্রসঙ্গে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كنت ادخل بيت الذى فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم وانى وادى ثوبى و اقول انما هو زوجى وابى فلما دفن عمر رضى الله تعالى عنه معهم فوالله ما دخلته الا وانا مشدودة على ثيابى حياء من عمر رضى الله تعالى عنه.
হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেছেন যে, (সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবেনা। কাপড় যথাযথ পরিধান করতে হবে।) হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন রওযা শরীফে রাখা হল, (রওযা শরীফ ছিল হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর হুজরা শরীফ) আমি সেখানে যিয়ারত করতাম। অতিরিক্ত যে কাপড় নেয়া দরকার পর্দার জন্য, সেটা নিতাম না। আফদ্বালুন্ নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে যখন সেখানে দাফন করা হল, তখনও আমি অতিরিক্ত কাপড় ব্যবহার করতাম না। আমি যখন সেখানে যিয়ারতে যেতাম, আমি বলতাম,
انما هو زوجى وابى.
এখানে যারা শায়িত রয়েছেন, একজন হচ্ছেন আমার স্বামী, আরেকজন হচ্ছেন আমার পিতা। কাজেই এখানে তো আমার পর্দার কোন জরুরত নেই। যার জন্য অতিরিক্ত কাপড়টা উনি সাথে নিতেন না। ওটা রেখে যেতেন।
فلما دفن عُمَرُ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَعَهُمْ
‘যখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সেই একই হুজরা শরীফে দাফন করা হল, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, তখন থেকে
فَوَاللَّهِ مَا دَخَلْتُ
আল্লাহ্ পাক-এর কসম! আল্লাহ্ পাক-এর কসম! আমি কখনও প্রবেশ করিনি, হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে দাফন করার পর,
والا وَأَنَا مَشَدُودَة عَلَى ثِيَابِي
আমার উপর যতক্ষণ পর্যন্ত কাপড় দিয়ে আমাকে ভালভাবে আচ্ছাদিত না করেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সে হুজরা শরীফে প্রবেশ করিনি। একমাত্র হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে পর্দা করার জন্যই আমি কাপড় দিয়ে নিজেকে আচ্ছাদিত করে, এরপর প্রবেশ করেছি।
(অসমাপ্ত)
ওয়াজ শরীফ কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফের আলোকে- পর্দার গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফাযায়িল-ফযীলত ও হুকুম-২৭