‘মহান আল্লাহ পাক তিনি কত সুন্দর এবং সুবিন্যস্তভাবে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন’- সাধারণ মুসলমান আজ এ কথা বলছেন না। বিধর্মীদের মতো মুসলমানও আজ উচ্চারণ করছেন, ‘ওহ পৃথিবী কত সুন্দর! “পেছনের জীবনটা কত গুনাহর মধ্যে গেছে- সে আফসোস মুসলমান করছেন না। সামনের জীবনটা ইবাদতে কাটবে কীনা- মুসলমান সে চিন্তা করছেন না। সাধারণ মুসলমানও আজ বলছেন- “জীবনটা কত উপভোগের! সাধারণ মুসলমান আজ আখিরী যামানা বলে ঈমান রক্ষায় উদগ্রীব নন। বরং সাধারণ মুসলমান ‘এখন বিশ্বায়নের যুগ’ বলে উল্লসিত, অনুপ্রাণিত, আন্দোলিত, আলোড়িত। নাঊযুবিল্লাহ!
এক সময় ‘বিজ্ঞানের যুগ’ বলে সাধারণ মুসলমানকে ইসলাম থেকে বিচ্যুত করার পাঁয়তারার প্রস্রবনী প্রবাহ ছিল। তার ফাকটা ফিকে হবার পর এখন বিশ্বায়নের যুগ বলে প্রচার করা হচ্ছে। দিন দিন একে আরো অগ্রসর করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে- বিশ্বপল্লী। সেই সাথে বলা হচ্ছে- ‘এক বিশ্ব, এক স্বপ্ন’। এতে করে খুব স্বাভাবিক এবং সহজভাবেই মুসলমানদেরকে অমুসলমানের সাথে আত্মীকরণ করা হচ্ছে। মুসলমানের ঈমানহরণ করা হচ্ছে। আমল নষ্ট করা হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ মোতাবেক পৃথিবীতে দু’ধরনের মানুষ আছে। এক. মুসলমান, দুই. অমুসলমান। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পৃথিবীর সব বিধর্মীকে এক বলা হয়েছে। সুতরাং যখন বলা হচ্ছে- ‘এক বিশ্ব, এক স্বপ্ন’, তখন অন্য বিধর্মীর ধর্ম না গেলেও মুসলমানের ঈমান পুরোটাই চলে যায়। অর্থাৎ মুসলমান তখন অমুসলমানই হয়ে যায়। তবে অমুসলমান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কিন্তু প্রচারণাটা চালানো হয়নি। চালানো হয়েছে- একত্রীভূত হওয়ার আহ্বানে বিশ্বায়নের ছদ্মাবরণে। নাঊযুবিল্লাহ!
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুসলমান বিশ্বায়নের প্রতারণাটা আজো বুঝতে পারেনি। যে কারণে মুসলমানের কাছে সাম্রাজ্যবাদ শব্দটি ঘৃণার হয়েছে। কিন্তু বিশ্বায়নের প্রতি বিরূপ মনোভাবের এখনো জন্ম হয়নি। বিশ্বায়ন বরং সাম্রাজ্যবাদের চেয়েও মুসলমানের অনেক বড় শত্রু। কারণ এখানে মুসলমানের ঈমান আমল বিনষ্টকরণের ক্ষেত্রে বিশ্বের সব বিধর্মী একাট্টা। নাঊযুবিল্লাহ!
আজকে সব মুসলিম দেশ ফিফা, আইসিসি, বিশ্ব অলিম্পিক গেমস, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘ ইত্যাদি দ্বারা শুধু প্রভাবিতই নয়, বরং গভীরভাবে নিয়ন্ত্রিত। মুসলিমবিশ্ব শুধু আইসিসি’র দ্বারা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চরমভাবে চালিত নয়, তাদের প্রতি পরভাবে অনুগত। বিশ্বকাপ ক্রিকেট জ্বরে ভোগে মুসলিম বিশ্ব। ইসলামী অনুষঙ্গ বেমালুম চেপে যেতে এমনকী বিসর্জন দিতেও ভীষণ উম্মত্ত। নাঊযুবিল্লাহ! মুসলমান শুধু ফিফা’র অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিশ্বকাপ ফুটবল দ্বারা আন্দোলিতই না, বরং ফিফা’র দ্বারা শাসিত। ফিফা’র নির্দেশ মোতাবাকে ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ- বাংলাদেশে মহিলা ফুটবল চালুর বিষয়ে ভীষণভাবে নিবেদিত। পাশাপাশি ফিফা’র নির্দেশ না মানলে সাহায্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার হুমকির কাছেও বাংলাদেশ শঙ্কিত।
মুসলমান দেশগুলো আজ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার উৎসব, কান উৎসবকে ঘৃণা করে না। বরং কোনো মুসলমান শ্রেষ্ঠ শিল্পী হতে পারলে মুসলমান দেশসমূহ গৌরব বোধ করে। একইভাবে বিশ্ব মুসলমান গৌরব বোধ করে যদি বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় কোনো মুসলমান মেয়ে জয়ী হতে পারে, নিদেনপক্ষে অংশ গ্রহণ করতে পারে। নাঊযুবিল্লাহ!
মুসলমান এই যে বিশ্বায়নে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে এই বিশ্বের দাম সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে কী বলা হয়েছে? মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, গোটা বিশ্বের দাম যদি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একটি মশার পাখার সমান হতো, তাহলো কোনো কাফিরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এক ফোটা পানি পান করাতেন না। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ কাফিররা শুধু পানিই পাচ্ছে না, পাশাপাশি গোটা রিযিকই পাচ্ছে এবং কোনো ক্ষেত্রে নমরুদ, ফিরাউনের মতো কাফিররা আরো অনেক বেশি পাচ্ছে। অর্থাৎ বিশ্বের মূল্য মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে অতি ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দু বিষয়কে কাফিররা বিশ্বায়নের নামে অনেক বড় করে দেখাচ্ছে। আর অথর্ব, অজ্ঞ মুসলমান তা গোগ্রাসে গিলছে। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ মুসলমান ফিকির করে না যে, ঈমান ও আমলের সাথে ইন্তিকালের পর মুসলমানের রয়েছে অকল্পনীয় অবর্ণনীয় অশেষ সুখের স্থান জান্নাত।
বলাবাহুল্য, আজকে মুসলমান যে বিশ্বায়নের নামে একীভূতকরণের ছলনায় মেতেছে তাহলো মুসলমান (নামধারীদের সাথে)- অমুসলমানের জাহান্নামে একীভূতকরণ। নাঊযুবিল্লাহ! সঙ্গতকারণেই মুসলমানকে আজকে নতুন করে উপলব্ধি করতে হবে যে, বিশ্বায়নের বাতায়নে বল্গাহারাভাবে মুসলমান নিজেদের বিলিয়ে দিতে পারে না। মুসলমান দোয়া করেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাদের ইহকাল ও পরকালের ভালাই (জান্নাত) দান করুন। আর যারা কাফির তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাত পৃথিবী স্বর্ণের বিনিময়েও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন না। সুবহানাল্লাহ!
তাহলে মুসলমান আর অমুসলমানের আমল কী করে এক হতে পারে? বিশ্বায়নে নিজেদের বিলিয়ে মুসলমান কী করে মুসলমান দাবি করতে পারে?
মুসলমানের কী এখনো সময় হয়নি বিশ্বায়নের বাতাবরণ থেকে নিজেদের আলাদা করা? বিদায় হজ্জের খুতবা মুবারকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কী মুসলমান উনাদের বিশেষভাবে সতর্ক করে দেননি- “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত লাঞ্ছিত হবে না, বঞ্ছিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে ইস্তিকামত থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
কিন্তু মুসলমান যাতে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের থেকে বিচ্যুত হয়, বিশ্বায়নের নামে বিধর্মীদের সে ষড়যন্ত্র শুরু থেকেই চলছে। প্রসঙ্গত, বিশ্বায়নের নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রথম ও প্রধান ষড়যন্ত্র হলো গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার।
অথচ গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির মাধ্যমে অজান্তেই প্রতিদিন অনেক দেব-দেবীর নাম স্মরণ হয়। এই বর্ষপঞ্জির ৬টি মাসের নামকরণ করা হয়েছে দেব-দেবীর নামে (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন); ৪টি মাসের নামকরণ হয়েছে রোমান শব্দ থেকে (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর); আর ২টি মাসের নামকরণ করা হয়েছে দুই কথিত রোমান সম্রাটের স্মরণে (জুলাই, আগস্ট)। পাশাপাশি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিকার নাম দ্বারা দেব-দেবীর নাম এবং বিজাতীয় শব্দের ও বিধর্মী ব্যক্তিত্বের স্মরণ করা হয়। নাঊযুবিল্লাহ!
খ্রিস্টান ধর্মযাজক পোপ গ্রেগরির নামে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার হয়েছে, যা মুসলমানগণের জন্য অনুসরণ করা হারাম এবং এর ব্যবহার পরিত্যাজ্য।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা কাফির-মুশরিক তথা ইহুদী-নাছারা ও মুশরিকদেরকে অনুসরণ অনুকরণ করো না।”
উল্লেখ্য, মাস শুরু এবং শেষ, বিশেষ দিন নির্বাচনে চাঁদের ক্যালেন্ডারের যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে; তেমনি ওয়াক্ত নির্ণয়ে প্রয়োজন রয়েছে সৌর ক্যালেন্ডারের। কিন্তু ইতিহাসে মুসলমানগণের রচিত এতোদিন যাবৎ কোনো সৌর ক্যালেন্ডার তথ্য পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি বিশ্বায়নের বাতাবরণে বা ছদ্মাবরণ থেকে নিজেদের আলাদা করার কোনো জজবা বা ফয়েজও এতোদিন পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উদ্ধারের জন্য রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মক্বাম যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নেক দোয়া এবং পৃষ্ঠপোষকতায় উনার খাছ আওলাদ, আওলাদে রসূল, কুতুবুল আলম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত খলীফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সঙ্গে গভীর নিসবতের কারণে মহিমান্বিত তাক্বউইম (দিন গণনা পদ্ধতি) রচনা করেন। পাশাপাশি বিশ্বায়নের বাতাবরণ থেকে মুক্ত হয়ে কাফিরদের গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুসরণ না করে, বরং এই মুবারক বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের পূর্ণ অনুসরণ করার জজবা, ইলম ও তায়াজ্জুহ বিতরণ করছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
মূলত, ইসলামে বিশ্বাসী মুসলমানদের উচিত, আর গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি পালন না করা, এ অনুযায়ী বছর শুরু না করা, হিসাব না রাখা। পাশাপাশি ‘আত-তাক্বউইমুশ শামসী অনুযায়ী বছর শুরু করা।
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “তোমরা একটি পবিত্র আয়াত শরীফ হলেও পৌঁছিয়ে দিও”।
পাশাপাশি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “যে মানুষের শুকরিয়া আদায় করে না, সে মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করে না”। সেক্ষেত্রে খলীফাতুল উমাম, মুজাদ্দিদে আ’যমে ছানী, আল মানছুর হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার কর্তৃক আত-তাক্বউইমুশ শামসী প্রণীত হওয়ার ফলে সমস্ত উম্মাহ উনার শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযিলত বর্ণনা করতে হবে। উনার সুমহান তাজদীদ মুবারক আত-তাক্বউইমুশ শামসী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে ও সে অনুযায়ী সৌরবর্ষ গণনা করতে হবে। সুবহানাল্লাহ!
মহান সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার ও ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার এবং সম্মানিত, পূত-পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উসীলায় মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সেই তাওফীক দান করুন। (আমীন)
-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০