খাদ্যদ্রব্যে অতিরিক্ত ভেজাল মিশ্রণে হুমকির মুখে ৩০ কোটি মানুষ। ভেজাল খাবারে দেশব্যাপী চলছে নীরব গণহত্যা। ভেজাল দমনে সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

সংখ্যা: ২৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

গত ১৮ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী বলেছে, খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। যারা ব্যবসা করতে চায় বা ব্যবসা করছে, দুই পয়সা বেশি কামাই করার জন্য, তারা এই ভেজাল দিতে থাকে, বা পচা-গন্ধযুক্ত খাবার আবার ব্যবহার করে। এই ব্যাপারে একদিকে যেমন সচেতনা সৃষ্টি করতে হবে..যে ঠিক আছে আপনারা পয়সা যেটা খরচ হবে সেটা নিয়েন। লাভের অংশও ওইভাবে হিসেব করেন। কিন্তু এইভাবে ভেজাল দিয়ে মানুষের ক্ষতি করবেন না।

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভেজাল খাবার খেয়ে দেশের ৩০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিরাপদ খাবার তৈরি এবং বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়ন জরুরি। দৈনিক আল ইহসান শরীফের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের প্রায় সব ভোগ্যপণ্যের মধ্যে ভেজাল ঢুকে গেছে। বেশি লাভের আশায় অনেকে খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। শক্ত হাতে এগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব না হওয়ায় এ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০১৯ সালে হাইকোর্ট ভেজাল ও নিম্নমানের ৫২ খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারে নির্দেশ দিলেও সেই খাদ্যপণ্যগুলো এখনো বাজারে চলছে। এমনকি গত ২৫ বছরে ভেজাল খাদ্য তৈরী ও বিপননের অপরাধে প্রায় কয়েকশত কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও ভেজাল খাদ্য তৈরী ও বিক্রি থামছেই না।

উল্লেখ্য, বর্তমানে খাদ্যপণ্যে চলছে ভেজালের ছড়াছড়ি। চালে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত ক্যাডমিয়াম। আটায় চক পাউডার। দুধের ছানার পানির সঙ্গে খাওয়ার সোডা, বিষাক্ত পারঅক্সাইড ও বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় কৃত্রিম দুধ। সয়াবিন তেলে মেশানো হয় পাম অয়েল। সরষে তেলে মেশানো হয় মরিচের গুঁড়া, সাবান তৈরির ক্যাস্টার অয়েল ও কেমিক্যাল ঝাঁজ। মিষ্টিকুমড়া-গাজর পিষে, রং, ফ্লেভার ও প্রিজারভেটিভ মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গাওয়া ঘি। মরিচের গুঁড়ার সঙ্গে মেশানো হয় ইটের গুঁড়া। ধনের সঙ্গে মেশানো হয় কাঠের গুঁড়া আর ধানের ভূষি। হলুদের রং উজ্জ্বল করতে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। ঢাবির এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ৯৬% মিষ্টি, ২৪% বিস্কুট, ৫৪% পাউরুটি, ৫৯% আইসক্রিম ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি। এক্ষেত্রে নমুনা পরীক্ষা করে প্রায় ৫০% খাদ্যপণ্যে অস্বাস্থ্যকর উপাদান পেয়েছে জাতীয় জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান। আর এসব কারণে প্রতিনিয়ত দেশের মানুষ নানাবিধ রোগ-ব্যাধীতে আক্রান্ত হচ্ছে।

স্বীকৃত হিসাব অনুযায়ীই বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। অপরদিকে স্বীকৃত হিসাব মতে- কিডনী রোগীর সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের কিডনী স্থায়ীভাবে বিকল হচ্ছে। দেশের কিডনী রোগীদের মাঝে ২০% চিকিৎসাসেবা পেলেও ৮০% রোগী চিকিৎসার বাইরে থেকে মারা যায়। বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দেড়কোটি। বছরে প্রায় ৫০ হাজার লোক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসজনিত লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

পাশাপাশি, দেশে হৃদরোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। এমনকি এ রোগের কারণে দেশে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা জানিয়েছে, দেশের প্রায় ৩০% লোকই হৃদরোগে আক্রান্ত। ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদী ও মারাত্মক রোগের নাম হচ্ছে ক্রোনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি (সিওপিডি)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, দেশে সিওপিডিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ। পাশাপাশি দেশে হাঁপানী রোগীর সংখ্যাও ১ কোটিরও বেশি এবং প্রতিবছর আরো ৫০ হাজার লোক হাঁপানী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত অভিজ্ঞমহল মনে করেন, এতসব রোগ বালাই সহজেই দুর হবে যদি দেশ থেকে ভেজাল খাদ্য দুর করা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, সরকারের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি ইনস্টিটিউটের (আইপিএইচ) ল্যবরেটরি পরীক্ষায় দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্যে মারাত্মক রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। সারাদেশ থেকে সংগৃহীত এসব ভোগ্যপণ্যে কেমিক্যাল ও কীটনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। ফলে এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মানবদেহে রোগব্যাধি আক্রান্তের হার ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, আমাদের সংবিধানে অনুচ্ছেদ নং- ১৫ এবং ১৮-এ বলা আছে সরকার জনগণের খাদ্য নিশ্চিত করবে এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন বা সরবরাহ-ই হবে সরকারের অন্যতম কাজ। কিন্তু সরকার আজ সেখানে ব্যর্থ। অবাধ প্রতিযোগিতা, মুনাফা অর্জনের জন্য লালায়িত মানসিকতা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা ইত্যাদি কারণে বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটা স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হয়েছে। ১৮৬০ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ২০টির অধিক ভেজালবিরোধী আইন হয়েছে।

পাশাপাশি, দেশের প্রধান খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটকে (বিএসটিআই) আরো সতর্ক ও সক্রিয় হয়ে ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে হবে। শহরের দোকান ও রেস্টুরেন্টে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানোর পর কিছুদিন ভেজালমুক্ত খাদ্যদ্রব্য পাওয়া যায়, কিন্তু পরে যেই-সেই হয়ে যায়। এর থেকে পরিত্রাণে আমাদের সমাজিকভাবেও নীতি-নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সৎ পন্থা অবলম্বন করতে হবে। ইসলামী মূল্যবোধ থেকে সততা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সবচেয়ে গরিব কে? অতঃপর তিনি বলেন, সবচেয়ে গরিব ওই ব্যক্তি- যে ক্বিয়ামতের দিনে পাহাড় পরিমাণ নেকী নিয়ে উঠবে। মানুষ মনে করবে সে নিশ্চিত জান্নাতী। কিন্তু এরপর তার একের পর এক পাওনাদাররা আসবে। যাদের হক্ব সে নষ্ট করেছে। তখন তার নেকি দ্বারা তাদের সে হক্ব আদায় করা হবে। এরপরও পাওনাদার বাকি থেকে যাবে। তখন পাওনাদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। কিছুক্ষণ পূর্বে যে ব্যক্তি ছিল নিশ্চিত জান্নাতী এখন সে ব্যক্তি হয়ে পড়বে নিশ্চিত জাহান্নামী।” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এ ব্যক্তিকেই সবচেয়ে গরিব বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত আমরা মনে করি যে, শুধু আইনের বল প্রয়োগেই এ ভেজাল প্রবণতা রোধ করা যাবে না। কারণ মানুষের তৈরি আইনের গোলকধাঁধাঁয় মানুষ সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয় হলো- মানুষের সৃষ্টিকর্তা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুগত হওয়া ও উনার ভয় লালন করা এবং এ সম্পর্কিত মূল্যবোধ ও চেতনা জাগ্রত করা।

-আল্লামা মুহম্মদ আরিফুল্লাহ, ঢাকা।

যুগের আবূ জাহিল, মুনাফিক ও দাজ্জালে কাযযাবদের বিরোধিতাই প্রমাণ করে যে, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি হক্ব। খারিজীপন্থী ওহাবীদের মিথ্যা অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব-১২৩

‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার’ অর্থ হচ্ছে- ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও অনৈসলামী শিক্ষা’। যার ফলাফল ‘শূন্য ধর্মীয় শিক্ষা’। বিতর্কিত ও বামঘেঁষা মন্ত্রী এটা করলেও ‘পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’- এ প্রতিশ্রুতির সরকার কী করে তা গ্রহণ করতে পারলো?

বেপর্দা-বেহায়াপনায় আক্রান্ত কলুষিত সমাজের নতুন আতঙ্ক ‘সেলফি’। সেলফি উম্মাদনায় সমাজে ব্যাপকভাবে বেড়েছে হত্যা, আত্মহত্যা, সম্ভ্রমহরণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ। বিভিন্ন দেশে সেলফি’র উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বাংলাদেশে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের উচিত অপসংস্কৃতি এবং আত্মহত্যার মতো অপরাধ বন্ধ করতে অবিলম্বে সেলফি নিষিদ্ধ করা।

প্রতারণার ফাঁদে নাগরিক জীবন। সরকারের নজরদারী নেই। রকমফের প্রতারণা বন্ধে সম্মানিত ইসলামী আদর্শ বিস্তারের বিকল্প নেই

পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে অবাধ খ্রিস্টান ধর্মান্তরিতকরণ। বিষয়টি অদূর ভবিষ্যতে গভীর শঙ্কার। রহস্যজনক কারণে নীরব সরকার