গত ০২.০১.২০১০ ইং ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় প্রথম পৃষ্ঠায় হেডিং হয়েছিলো: æবিশ্বজুড়ে মহা সমারোহে বর্ষবরণ।”
খবরে বলা হয়: æগতকাল শুক্রবার গোটা বিশ্বের অধিবাসীরা মেতেছিল ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের মহড়ায়। নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে সিডনি হয়ে মুম্বাই, দিল্লি, মস্কো, লন্ডন, নিউইয়র্ক কিংবা ওয়াশিংটন সবখানে ছিল একই চিত্র। ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের দেয়াল স্পর্শ করা মাত্রই নাচ-গান আর বাদ্যের তালে মাতোয়ারা হয়েছিল তারা।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিডনী, লন্ডন, মস্কো কিংবা নিউইয়র্ক আর যাই হোক দেশ হিসেবে- ‘বাংলাদেশ’ অথবা জাতি হিসেবে- ‘বাঙালি জাতির’ সমপর্যায়ভুক্ত নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি সত্তা সম্পূর্ণই আলাদা।
বলাবাহুল্য, আমাদের সংবিধানেও কিন্তু এর উল্লেখ রয়েছে। আমাদের কথিত জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষার শর্ত দেয়া হয়েছে।
সংবিধানের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, æরাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
বলাবাহুল্য, থার্টি ফার্স্ট নাইট আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি নয়। এ ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতি- যা জাতীয় সংস্কৃতির সাথে সংঘাতপূর্ণ। সুতরাং জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষার্থে তথা সংবিধান মূল্যায়নকল্পে সরকারকে সঙ্গত কারণেই থার্টি ফার্স্ট নাইট কালচার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হয়।
বলাবাহুল্য, থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের নামে
দেশে সংবিধান বিরোধী কাজ মদ, জুয়া তথা অশ্লীলতা এবং নীতিহীন বিনোদনের খবর পত্র-পত্রিকাগুলোতে অল্প হলেও যা প্রকাশ পেয়েছে তা প্রচ-ভাবে সংবিধান ও রাষ্ট্র বিরোধী।
০২.০১.২০১০ ইং তারিখের পত্র-পত্রিকাগুলোতে রিপোর্ট হয়েছিলো: æউন্মত্ততা আর উচ্ছৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে থার্টি ফার্স্ট নাইট। ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা ১ বাজার সঙ্গে সঙ্গেই
আতশবাজি ও ককটেলের বিস্ফোরণে পুরো রাজধানী প্রকম্পিত হয়ে উঠে। থার্টি ফার্স্ট উদযাপনের নামে রাজধানীর নির্জন রাস্তাগুলোয় শুরু হয় তরুণ-তরুণীদের বেলেল্লাপনা। অভিজাত হোটেলগুলোয় চলে মাতাল তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল নৃত্য। বেসামাল তরুণ-তরুণীদের উন্মত্ততা ঠেকাতে নাকাল হতে হয় হোটেল কর্তৃপক্ষকে। গভীর রাতে ধনীর দুলালদের হাইস্পিডের গাড়ির ধাক্কায় আহত হয় বেশ ক’জন পথচারী। সব মিলিয়ে থার্টি ফার্স্ট নাইটে এবারের উন্মাদনা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
থার্টি ফার্স্ট উপলক্ষে তারকা হোটেলগুলো সাজানো হয়েছিল আলোকসজ্জার বর্ণিল সাজে। তবে মুগ্ধ হওয়ার মতো রূপ থাকলেও প্রায় প্রতিটি হোটেল অভ্যন্তরের আলো ছায়ার মধ্যে মেতে ছিল অশ্লীল নৃত্যে। এসব হোটেলে তরুণ-তরুণী যুগলদের বেসামাল হয়ে আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। তাদের বেশভূষায় ছিল পশ্চিমা সংস্কৃতির উগ্রতা। সেন্ট্রাল পার্কে এবার ল্যাটিন আমেরিকার সাম্বাও নেচেছে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা। তবে সেগুলো আটকে ছিল হোটেল চৌহুদ্দীর মধ্যেই। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রচ- শীত উপেক্ষা করে ঢাবির টিএসসি চত্বরে জড়ো হয়েছিল কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ঘড়ির কাঁটা ১২টা ১ মিনিট ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো টিএসসি চত্বর। ঢাকঢোল বাজিয়ে নাচ আর গানের মধ্য দিয়ে তারা বরণ করে নেয় ২০১০ সালকে।
নগরীর ৮৪ পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদারের খবর আগেভাগেই বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে চাউর হওয়ায় উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণী এসব স্থান ছেড়ে অন্যত্র নানা অপকর্মে মেতে ছিল। রাত ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মগবাজারের পিয়াসী বার থেকে ঢালাওভাবে মদ বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতাদের ভিড়ে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে কিশোর-কিশোরীদেরও দেখা গেছে। টঙ্গী ড্রাইভারশন রোডে র্যাব-পুলিশের টহল থাকলেও রহস্যজনক
কারণে পিয়াসী বারের এ ঢালাও মদ বিক্রির দৃশ্য তারা এড়িয়ে গেছে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিএনপি বস্তি, মহাখালী সাততলা বস্তির পাশের এলাকা ও মানিকনগরসহ নগরীর অধিকাংশ মাদক স্পট জমজমাট হয়ে ওঠে। মাদকের এসব স্পটে পুলিশের আনাগোনা দেখা গেলেও মাদক বেচাকেনা ছিল অনেকটা প্রকাশ্যে। (যায়যায়দিন- ০২.০১.২০১০)
… অভিজাত হোটেলগুলোতে মাঝরাতে জমেছিলো ড্যান্স পার্টি। সেন্ট্রাল পার্কে ল্যাটিন আমেরিকার সাম্বাও নেচেছে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা। অভিজাত হোটেলগুলোতে আলোকসজ্জা আর বর্ণিল সাজেরও কোন কমতি ছিল না। খানিক পরপরই সেগুলোতে ঢুকতে দেখা গেছে তরুণ-তরুণী যুগলদের। তাদের বেশভূষায় পশ্চিমা সংস্কৃতির উগ্র প্রকাশই ফুটে উঠেছে।” (যুগান্তর- ০২.০১.২০১০)
পত্রিকায় প্রকাশিত উপরের রিপোর্টে যে মাতলামি ও অশ্লীলতার বিবরণ পাওয়া যায়; তা কিন্তু আমাদের সংবিধান মতে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
কারণ, আমাদের সংবিধানে বিনোদনের পালনের ক্ষেত্রে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। বল্গাহারা বিনোদন আমাদের দেশে গ্রহণযোগ্য নয়।
সংবিধানের ১৫(গ) ধারায় বলা হয়েছে- æযুক্তিসঙ্গত বিশ্রাম, বিনোদন ও অবকাশের অধিকার।”
দেখা যাচ্ছে- সংবিধানে বিনোদনের আগে ‘যুক্তিসঙ্গত’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে,
‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক-উনার প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস।”
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম বলা হয়েছে ‘ইসলামকে’।
সুতরাং আল্লাহ পাক-এর পছন্দের খিলাফ এবং ইসলাম বহির্ভূত কোন বিনোদন
সংবিধানে উল্লিখিত যুক্তিসঙ্গত বিনোদনের পর্যায়ে পড়ে না।
তদপ্রেক্ষিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট
পহেলা বৈশাখ ভ্যালেন্টাইন ডে
ইত্যাদির নামে হুজ্জোতি ও বেলেল্লাপনাও সংবিধান মতে জায়িয নয়। এদেশে গ্রহণযোগ্য নয়।
অপরদিকে প্রশাসনের তরফ থেকে এবার ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো যে, প্রকাশ্যে মাতলামি কোনমতেই গ্রহণ করা হবে না।
ভাবখানা এই যে, মদ খাওয়া যাবে; কিন্তু মাতলামি চলবে না।
অথচ মদ সম্পর্কে সম্পর্কে সংবিধানে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে।
সংবিধানের ১৮(১) ধারায় বলা আছে, æমদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
উল্লেখ্য, দেশের সাবেক আইনমন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং এক যুগেরও বেশি যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো, জেলে পাঠানো হয়েছিলো মদ রাখার কারণেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে সংবিধানে মদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রেখেছেন।
অথচ সেই মদই অবাধে চলছে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনে।
অন্য কথায়, থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের ভিত্তিই হলো ‘মদ’। নাঊযুবিল্লাহ!
বলাবাহুল্য, থার্টি ফার্স্ট নামে গোটা অনুষ্ঠানটিই
পরতে পরতে বাঙালি জাতিসত্তা
বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে
সাংঘর্ষিক
সংঘাতপূর্ণ
বিরোধযুক্ত
তথা
রাষ্ট্রদ্রোহীও।
সঙ্গতকারণেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। এটা বন্ধে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।
-আল্লামা মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০