সব প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লিবিয়া ও মিশর অনেক আগেই রাশিয়া থেকে সমরাস্ত্র কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। আর সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিও ভালো নয়। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে সমরাস্ত্রের বাজার হারিয়েছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ এবং ভারত, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ইসরায়েলের সমরাস্ত্র বাজারে প্রবেশ করায় রাশিয়ার বাজার এখন সংকুচিত।
সংকুচিত রাশিয়ার অস্ত্রবাজারে রহস্যজনক কারণে নতুন ক্রেতা হলো বাংলাদেশ। গত পরশু মঙ্গলবার মস্কোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ৮ হাজার কোটি টাকার সমরাস্ত্র ক্রয়চুক্তি সম্পন্ন করছে। একদিকে দেশে প্রতিরক্ষানীতি না থাকা, অন্যদিকে এ ধরনের চুক্তি সম্পাদনের আগে সংসদে আলোচনা না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে প্রতিভাত হয়।
বিশ্বে সমরাস্ত্রের বাজারে এখন আর রাশিয়ার সেই রমরমা অবস্থান নেই। সে দেশের অনেক কারখানায় এখন অসংখ্য অস্ত্র অবিক্রীত রয়েছে। তাছাড়া নিম্নমানেরও। তাই দেশটি থেকে অস্ত্র আমদানি করলে ভবিষ্যতে তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশকে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে। এতে একদিকে ঋণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে বাংলাদেশকে।
প্রসঙ্গত ঋণের টাকায় অস্ত্র কেনার চেয়ে মানব উন্নয়নে সরকারের বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। এমপিওভুক্তির দাবিতে দিনের পর দিন শিক্ষকরা রাস্তায় আন্দোলন করছে, স্বাস্থ্য খাতে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই এ ধরনের সেবামূলক খাতই এ মুহূর্তে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় থাকা দরকার।
উল্লেখ্য, খসড়া চুক্তি অনুযায়ী, ৮ হাজার কোটি টাকার এই কেনাকাটার জন্য অগ্রিম হিসেবে রাশিয়াকে ঋণের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে। ঋণের সুদ হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কেনাকাটার প্রক্রিয়া শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ওই চুক্তিতে।
স্বাধীনতার পর সত্তর ও আশির দশকের সামরিক সরকার এবং নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারগুলো সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে অস্ত্র কিনেছে। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে এবং কতটুকু যৌক্তিক প্রয়োজনে এসব কেনাকাটা হয়, তা নিয়ে সব সময়ই আলোচনা-সমালোচনা হয়ে আসছে। বিশেষ করে দেশের কোনো প্রতিরক্ষানীতি না থাকায় সমরকৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কখন, কী প্রয়োজনে, কী পরিমাণ অস্ত্র কেনা উচিত, তার কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় না। বিশেষত কীভাবে কতদামে অস্ত্র কেনা হচ্ছে তার কোনো স্বচ্ছ হিসাবও পাওয়া যায়না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিমানবাহিনীর আধুনিকায়নে রাশিয়া থেকে আটটি মিগ-২৯ বিমান কেনা হয়েছিল। মোট ১২৪ মিলিয়ন ডলার দিয়ে ওই জঙ্গি বিমানগুলো কেনা নিয়ে পরবর্তী সময়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাও হয়। মিগ-২৯ কেনা নিয়ে বিতর্কের একপর্যায়ে হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও সরকার প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটিতেও চুক্তির দলিল দেখায়নি।
২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই মিগগুলো বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মামলার কারণে শেষ পর্যন্ত মিগগুলো বিক্রির প্রক্রিয়া থেমে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেনা ওই আটটির মধ্যে ছয়টি বিমানই গ্রাউন্ডেড অবস্থায় অর্থাৎ পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বাকি দুটি জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকমে উড়াল দিতে পারলেও যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর যুদ্ধ বিমানের দুর্ঘটনা মানেই পুরোপুরি ধ্বংস এবং বিমান বাহিনীর কৃতী অফিসারদের মর্মান্তিক মৃত্যু। কিন্তু সব জেনে-বুঝেও বিমান বাহিনীকে প্রচ- ঝুঁকির মধ্যে চলতে হচ্ছে। কারণ, সব মিগ-২৯ মেরামত করতে হলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। এত অর্থ বিমান বাহিনীর বাজেটে নেই। ওদিকে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আট বিমানের ১৬টি ইঞ্জিন পাল্টে ফেলা ছাড়া বিমানগুলোকে সচল এবং কাজের উপযোগী করা সম্ভব নয়। এমন অবস্থায় মিগ-২৯ গুলোই শুধু পড়ে থাকছে না, বিমান বাহিনীর একটি স্কোয়াড্রনও শক্তিহীন হয়ে পড়েছে।
এমন আশঙ্কার কথা কিন্তু প্রথম থেকেই জানানো হয়েছিল। রাশিয়ার এই মিগগুলোকে নিয়ে কেনার সময়ই প্রবল আপত্তি উঠেছিল। চুক্তির মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বিমানগুলো বাংলাদেশে চলে আসায় তথ্যাভিজ্ঞরা বলেছিলো, হুটপাট করে মিগ-২৯ কেনার পেছনে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘নগদ অর্থপ্রাপ্তি’ ধরনের অন্যরকম উদ্দেশ্য রয়েছে। সে উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে চতুর রাশিয়াও তার লক্কড় মার্কা আটখানা বিমান গছিয়ে দিয়েছিল। কারণ, এত অল্প সময়ে আট-আটটি মিগ-২৯ বিমান তৈরি ও সরবরাহ করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া গিয়েছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর। সে সময় দুর্নীতি দমন ব্যুরোর দায়ের করা মামলায় রাষ্ট্রের ৭০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত অপচয় ও আত্মসাৎ করার অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
বলাবাহুল্য, এবারের অস্ত্র ক্রয় চুক্তিতেও এরূপ গন্ধই পাচ্ছেন পক্ষবেক্ষক মহল। তবে তারা শুধু স্বচ্ছতার অভাবই নয় প্রাসঙ্গিক প্রশ্নও উত্থাপন করেছে। বিশেষত যে দেশের শতকরা ৩১ ভাগ মানুষ যেখানে এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, যেখানে এখনো মাথাপিছু গড় আয় মাত্র ৮০০ ডলার- সেই দেশে ঋণের টাকায় আধুনিক সমরাস্ত্র কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখনো বাংলাদেশের বড় সমস্যা দারিদ্র্য, শুধু অর্থের অভাবে পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না, সে দেশে আট হাজার কোটি টাকা ঋণে সমরাস্ত্র কেনার যৌক্তিকতা নিয়ে গভীর আপত্তি উঠেছে। উপরন্তু দেশের কোনো প্রতিরক্ষানীতি যখন নেই, তখন অস্ত্র কেনার প্রয়োজনীয়তা কিভাবে নির্ণয় করা হলো, এমন প্রশ্নও প্রবলভাবে সংযুক্ত হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন অনস্বীকার্য। তবে এটি একটি প্রতিরক্ষানীতির আলোকে সমরকৌশলের পরিকল্পনায় হওয়া আবশ্যকীয়। কিন্তু আমাদের কোনো প্রতিরক্ষানীতি না থাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কেনাকাটা হয়। আর এসব কেনাকাটায় স্বচ্ছতা না থাকায় এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তীতে মামলাও হয়। তাই এসবের অবসান দরকার।
মূলত এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা মুবারক থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ লিসান আযীয
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০