সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
গুলশান লেক ও টিঅ্যান্ডটি ঝিলপাড়ের মধ্যবর্তী স্থানের প্রায় ১৭০ একর জায়গার মালিকানা রয়েছে বিটিসিএলের। এর মধ্যে গুলশান-বনানী লেকপাড়ে রয়েছে প্রায় ৪০ একর। মালিকানা থাকলেও এসব জমি দেখাশোনার কেউ ছিল না। লেক ও পাশের ঝিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজউকের হলেও অনেকটা পরিচর্যার অভাবে পর্যায়ক্রমে দখল হয়ে যায় এই মূল্যবান জমি। গড়ে ওঠে হাজার হাজার বস্তি, রিকশা ও মোটর গ্যারেজ, দোকানপাট আর ছিন্নমূল মানুষের আড্ডাখানা।
গত ১৭ জানুয়ারি ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে গুলশান লেক, বাঁধ দিয়ে নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা’ শিরোনামে একটি পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর ভিত্তিতে হাইকোর্ট ওই দিন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করে। একই সঙ্গে লেক রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রাজউক ও বিটিসিএলের চেয়ারম্যানকে আদালতে হাজির হতে বলে।
এর ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জানুয়ারি আদালত লেকের সীমানা নির্ধারণ করে দুই মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়।
গত ৪ এপ্রিল, বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকা জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ১৭০ একর জমির উপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বস্তির অসংখ্য কাঁচাঘর।
এ দিকে কোনো প্রকার নোটিশ না দিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাস্তুহারা মানুষ। তাদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। তারা বলছেন, ঘরতো ভাঙছেই, তার সাথে কষ্টের পয়সা দিয়ে তৈরি করা আসবাবপত্রও ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, তাদের ঘরের মালামাল লুট করা হয়েছে। দুটি বুলডোজার, শাবল, হাতুড়িসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে প্রায় শতাধিক উচ্ছেদকর্মী এই উচ্ছেদ অভিযান চালায়।
উচ্ছেদ হওয়া বাস্তুহারা মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে কড়াইল বস্তি এলাকা। ঘরবাড়ি ও মালামাল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন অনেকে। মর্জিনা নামে এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের একটি প্লেট কিনতে এক বেলা না খেয়ে থাকা লাগে। খেয়ে না খেয়ে এমন কিছু জিনিস সবাই গড়ে ছিলাম। কিন্তু কোনো ঘোষণা না দিয়ে উচ্ছেদ করায় কিছুই ঘর থেকে সরাতে পারিনি। বুলডোজার দিয়ে সব কিছু গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে।’ তারা অভিযোগ করেন, গত ৩ এপ্রিল, মঙ্গলবার বিকেলে রাস্তায় মাইকিং করে বলা হয়, রাস্তার পাশের ২০ ফুট জায়গা দখলমুক্ত করা হবে। এই ২০ ফুট জায়গা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। মাইকিংয়ের পরে তারা রাস্তার ধারের বাড়িঘর দোকানপাট সরিয়ে নেন। কিন্তু বস্তির ভেতরের ঘরবাড়ি থেকে কিছুই সরানো হয়নি। অথচ রাস্তার পাশের কথা বলে এখন তাদের বাড়িঘর সবকিছুই ভেঙে ফেলেছে উচ্ছেদকারীরা।
উচ্ছেদ হওয়া বস্তিবাসী আলেয়া বেগম জানান, দুই বছর ধরে তিনি এই বস্তিতে বাস করছেন। তারা জানতেন রাস্তার পাশের জমি উচ্ছেদ করা হবে। বস্তির বাড়িঘরের কিছু হবে না। কান্নায় বুক চাপড়াতে চাপড়াতে তিনি বলেন, আমি ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। মানুষের বাসায় কাজ করে যা কিছু জমিয়েছিলাম সবই হারালাম। আমি কোথায় যাব, কিভাবে বাঁচব- কিছুই বুঝতে পারছি না।
উচ্ছেদ হওয়া বস্তিবাসী ফাতেমা জানান, দুই বছর ধরে তিনি এই বস্তিতে বসবাস করেন। তিনি বলেন, আমরা জানতাম রাস্তার পাশের জমি উচ্ছেদ হবে। বস্তির বাড়িঘরের কিছু হবে না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে যা কিছু জমিয়েছিলাম সবই হারালাম। আমি কোথায় যাব কিছুই জানি না। অপর বস্তিবাসী আম্বিয়া খাতুন হট্টগোলের মধ্যে তার বাচ্চা হারিয়ে পাগল হয়ে আহাজারি করছিলেন।
উচ্ছেদের সময় বস্তিবাসী, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা কান্নায় ভেঙে পড়ে। জমিলা বেগম নামের এক বস্তিবাসী কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, শিশুসন্তানদের নিয়ে এখন কোথায় যাব?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৭ই জানুয়ারি æবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে গুলশান লেক, বাঁধ দিয়ে নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা” এ শিরোনামে একটি পত্রিকায় দেখেই হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে উচ্ছেদ অভিযানের নির্দেশ দিল। আমরা বলি হাইকোর্টের কাছে ৩ হাজার বস্তি ঘরের প্রায় বিশ হাজার লোকের চেয়ে গুলশান লেক রক্ষা বড় হয়ে গেল? অথবা যে গুলশান লেক রক্ষায় হাইকোর্ট এতটা স্বপ্রণোদিত সেই হাইকোর্ট বিশ হাজার লোকের আর্তনাদে, আহাজারিতে, বুকফাটা ক্রন্দনের পরও কথা বলে না কেন?
অথচ বাসস্থান সাংবিধানিকভাবে মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। তা সত্ত্বেও হাইকোর্ট ছিন্নমূল, বস্তি হারানো মানুষদের বাসস্থান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি রুলনিশি জারি করেনা কেন? সমাজের ছিন্নমূল মানুষ, বস্তিবাসী, পথশিশু, অভাবী, গরিব অসহায়দের অসহায়ত্ব নিবারণে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি হাইকোর্টের স্বপ্রণোদিত রুল নেই কেন?
উল্লেখ্য, এলাকাটি ঢাকা-১৭ আসনের অন্তর্গত। এখানে মোট ভোটার দুই লাখ ৬২ হাজার ১৫৫ জন। আসনটি ঢাকার অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত হলেও এখানে ভোটের হিসেব-নিকেশে গুরুত্ব পায় কড়াইল বস্তি এলাকার ভোটাররা।
হালিমা খাতুন নামের বস্তির এক বাসিন্দা জানান, ভোটের সময় সবাই এখানে ভালো হাসপাতাল করার কথা বলেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এখানে কোনো হাসপাতাল হয়নি।
বস্তিবাসীর ভাষায়, এলাকার এমপি হিসেবে এরশাদ সাহেব অনেক সময়ই বস্তিতে যান, খোঁজ-খবর নেন। কিন্তু তাদের নিত্যদিনের সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান হয় না।
অথচ সরকার চাইলেই এখান থেকে বস্তিবাসীদের সরিয়ে যেকোনো জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারে।
বস্তিবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তারা কোনো সামাজিক সমস্যার কারণ হবে না। সরকার এবং নাগরিকদের সদিচ্ছা ও সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়ে সব বস্তিবাসীর জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব।
ঢাকার বেশিরভাগ বস্তিবাসীই নিরীহ এবং সৎ। সবাই বস্তিবাসীদের অবহেলার চোখে দেখলেও বস্তির শ্রমজীবী মানুষেরা ঢাকার পোশাকশিল্প, পরিবহনশিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ নানা কাজের চাকা সচল রেখেছে। স্থানীয় নেতারাই আসলে বস্তিবাসীদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন। কিন্তু কেউ মনে রাখে না যে, বস্তিবাসীরাও মানুষ। তাদেরকেও মানুষের মর্যাদা দিতে হবে। মানুষের মতো মানুষ করে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এজন্য সর্বাগ্রে সব কিছু করতে হবে।
কেবলমাত্র যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনিই সব বিষয়ে বেমেছাল তাজদীদের পাশাপাশি এ বিষয়েও রহমতী দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, মূলতঃ তিনি নিজেই রহমতের ভা-ার। আর দ্বীন-দুনিয়া সব কিছুর উন্নতির মূলে চাই খোদায়ী রহমত। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের উনার নেক ছোহবত তথা রহমতী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ আরিফুল্লাহ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০