-আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল
বর্তমান সংখ্যার আলোচনা
ইহুদীদের মদদপুষ্ট হয়ে এবং সউদী ওহাবী শাসকগোষ্ঠীর অর্থে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে সারাবিশ্বে একটি হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরণের অলীক স্বপ্ন নিয়ে একটি ভুঁইফোঁড় সংগঠন সারা দেশে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
Real Hizri Calendar Implementation Council Bangladesh নামে এই সংগঠনটি সারা বিশ্বে একটি হিজরী ক্যালেন্ডার অনুসরণের পক্ষে অর্থাৎ সারা বিশ্বে একদিনে ঈদ পালন করার পক্ষে নানা প্রচারণা চালাচ্ছে এবং এ সম্পর্কে ৯০টি খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের বর্ণিত শরীয়তের খিলাফ এই মনগড়া যুক্তির শরীয়তসম্মত এবং সঠিক মতামত প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ। যেন সাধারণ মুসলমানগণ চাঁদের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তিতে না পড়ে। তারা লিখেছে-
৪৮ নম্বর মত : মুসলমানগণের ঐক্য এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে পুরনো সব ভ্রান্তি দূর করে। যেহেতু হুকুম শরীয়াহ এক এবং সবার জন্য সমান।
৪৮ নম্বর মতের জাওয়াব : লেখক লিখেছে মুসলমানগণের ঐক্য এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব পুনরায় জাগাতে হবে বা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর অর্থ ভ্রাতৃত্ব একসময় ছিল বর্তমানে নেই। আমাদের প্রশ্ন পূর্বে থাকলে বর্তমানে কেন নেই তার কারণ খুঁজে দেখা দরকার, আর সঠিক কারণটি অনুসন্ধান করতে পারলে এর সমাধান পাওয়া সহজ। অবশ্য লেখক তার শেষ লাইনে নিজের অলক্ষ্যেই সেই উত্তর দিয়েছে আর তা হচ্ছে æযেহেতু হুকুম এবং শরীয়াহ এক এবং সবার জন্য সমান।” এটাই সত্য। হুকুম এবং শরীয়াহ নাযিল হওয়ার পর থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এক এবং অভিন্ন থাকবে। তাহলে ভ্রাতৃত্ব নষ্টের পেছনে যে কারণ তা হচ্ছে শরীয়তের মনগড়া ব্যাখ্যা যা তথাকথিত ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের মতো লেখকরা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এখান থেকে একটি বিষয় আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি তা হচ্ছে, শরীয়তের সঠিক ব্যাখ্যা সবার উপলব্ধিতে আসলে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব এমনিতেই প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বা একমত বলে কিছু নেই এটা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, যার ভাবার্থ হলো এই উম্মত ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে। এর মধ্যে মাত্র একটি দল হবে হক্ব। তাহলে হক্ব-নাহক্বের পার্থক্য থাকবেই। ফলে কিভাবে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হবে? এছাড়াও হাদীছ শরীফ এ রয়েছে æইসলাম টিকে থাকবে মুষ্টিমেয় লোকের মধ্যে।” এখান থেকে আমরা যা উপলব্ধি করতে পারি তা হচ্ছে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরির দায়িত্ব কাউকে দেয়া হয়নি। দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে শরীয়তের আদেশ নিষেধের অনুসরণ করা এবং তার উপর দৃঢ়চিত্ত থাকা। চাঁদ নিয়ে সারাবিশ্বে চলছে নানারকম মত আর এর নেপথ্যে রয়েছে ইহুদী মুশরিকদের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র। অনেক মুসলমান না বুঝে ইহুদী-মুশরিকদের ছড়ানো ষড়যন্ত্রের জালে পা দিয়েছে। ফলে সেদিক থেকে সরে এসে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ অনুযায়ী চাঁদের ইলম হাছিল করতে হবে।
খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা শরীয়তের নির্দেশ। এই নির্দেশ মান্য করলে সকল ভ্রান্তি অনায়াসেই দূর হবে এবং কল্যাণ আসবে। সুতরাং যারা বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য এসব পাগলের প্রলাপ বকছে এবং মনগড়া ক্যালেন্ডার রচনা ও তার অনুসরণ করে কথিত ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে তাদের খুঁজে দেখা দরকার তাদের এই ভ্রান্ত মত অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেবার নেপথ্যে কারা রয়েছে এবং কেন রয়েছে। কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফ এর পূর্ণ অনুসরণেই একমাত্র ঐক্য ও কল্যাণ, আর কিছুতেই নয়।
বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী জিরো মুন (অমাবস্যা) সংঘটিত হবে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি, ২২ সানি আশার, ১৩৭৯ শামসী। ভোর ৫টা ৪৭ মিনিটে। ২১ মে, ২০১২, সোমবার শরীফ।
বাংলাদেশে পবিত্র রজব হারাম মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি, ২২ সানি আশার, ১৩৭৯ শামসী। ২১ মে, ২০১২, সোমবার শরীফ, সন্ধ্যায়।
সেদিন ঢাকায় সূর্যাস্ত ৬টা ৩৮ মিনিটে এবং চন্দ্রাস্ত ৭টা ০০ মিনিটে। অর্থাৎ সূর্যাস্ত এবং চন্দ্রাস্তের সময়ের পার্থক্য ২২ মিনিট। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার প্রায় ৪.৩৯ ডিগ্রি উপরে অবস্থান করবে। কৌণিক দূরত্ব হবে ৫.৪৮ ডিগ্রি। সূর্য থাকবে ২৯২ ডিগ্রি আজিমাতে। আর চাঁদ খুঁজতে হবে ২৯২ ডিগ্রি আজিমাতে। সেদিন চাঁদ দেখার সম্ভাবনা নেই।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০