আল্লামা আবুল বাশার মুহম্মদ রুহুল হাসান
বর্তমান সংখ্যার আলোচনাঃ একই দিনে সারা পৃথিবীতে বাঁকা চাঁদ দেখা সম্ভব কিনা?
আকাশে খালি চোখে দেখার মত চাঁদের নুন্যতম আকার ধারণ করার সময় পৃথিবীর কোন স্থানে সুর্যাস্ত হবে বা চাঁদ দেখার উপযোগী পরিবেশ তৈরী হবে তার কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই। যেহেতু বাঁকা চাঁদ একমাত্র সূর্যাস্ত যাবার পরই দেখা সম্ভব। একটি দেশের আকাশে সুর্যাস্তের সময় চাঁদ দেখা না গেলে তাদের পক্ষে পরবর্তী দিনের সূর্যাস্ত ছাড়া চাঁদ দেখার কোন উপায় নেই। ধরা যাক, কোন এক সোমবার সন্ধ্যায় আমাদের দেশে বাঁকা চাঁদ প্রথম দেখা গেল। আমাদের পূর্বে অবস্থিত অন্যান্য মুসলিম দেশে ইতোমধ্যে সন্ধ্যা গত হয়ে গেছে, বাঁকা চাঁদ না দেখে। কারণ তাদের সন্ধ্যা আমাদেরও কয়েক ঘণ্টা পূর্বে এসেছিল, যখন চাঁদ খালি চোখে দেখার মত নুন্যতম আকার ধারণ করেনি। পূর্বের সে সকল দেশে বাঁকা চাঁদ দেখার জন্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অবশ্য পশ্চিমের স্থান বা দেশগুলোতে তাদের নিজ নিজ সোমবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখতে পাবে যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, যদি কোন স্থানে সন্ধ্যায় খালি চোখে চাঁদ দেখা গিয়ে থাকে, সেই সময়ের পর থেকে পৃথিবীর প্রায় সকল স্থানে নিজ নিজ সন্ধ্যার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঁদ আকাশে দেখতে পাবে আরও সহজভাবে যেহেতু প্রতি ঘণ্টায় চাঁদের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ইংরেজী বছরে মাসের শুরু হবার জন্যে সূর্যকে দেখতে পাবার কোন শর্ত নেই। এমনকি নতুন বছরের শুরু হবার তারিখটা পর্যন্ত সূর্য দেখার উপর নির্ভরশীল নয়। তাই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখাকে নির্ধারিত করা হয়েছে, কোন একটি দিনে তারিখ শুরু করার জন্যে।
নিউজিল্যান্ডের অবস্থান আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার ঠিক পশ্চিমপার্শ্বে। অর্থাৎ কোন একটা তারিখ বা দিন নিউজিল্যান্ডেই প্রথম শুরু হয়। (উত্তর গোলার্ধে রাশিয়াকে ধরা হয়) যদি কখনও নিউজিল্যান্ডেই (ধরা যাক সোমবার সন্ধ্যায়) প্রথম চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সারা পৃথিবীতে সোমবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা সম্ভব যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে। কেননা নিউজিল্যান্ড-এর পূর্বদিকে আর কোন দেশেই সোমবার গত হয়ে যায়নি অর্থাৎ কোন দেশকেই চাঁদ দেখার জন্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না (যদি আকাশ মেঘলা না থাকে)। কিন্তু বাঁকা চাঁদ দেখার ব্যাপারে পূর্বের বর্ণনা থেকে আমরা বুঝতে পারি বাঁকা চাঁদ নির্দিষ্ট একটি দেশে সব সময় প্রথমে দেখা যাবে না। তবে হ্যাঁ যদি পৃথিবী সমতল হত তবে “ওয়াহাদাতাল মাতলা” ধারণাটি সত্যি হত। “ওয়াহাদাতাল মাতলার” বিশ্বাস হচ্ছে- কোথাও বাঁকা চাঁদ দেখা গেলে তবে সমস্ত বিশ্বের জন্য এটাই যথেষ্ট। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা দেখার প্রয়োজন নেই। অবশ্য এ ধারণা শরীয়ত সম্মত নয়। কিন্তু পৃথিবী গোলাকার হওয়াতে এমনও হয় কোন স্থানে প্রাথমিক অবস্থায় দেখা যাওয়া বাঁকা চাঁদটা ঐ স্থানের কয়েক মাইল পূর্বে একই তারিখে দেখা যায় না এবং ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়; যতক্ষণ না আবার তাদের নিজেদের সীমানায় চাঁদ উঠে। সুতরাং একই দিনে সারা পৃথিবীতে বাঁকা চাঁদ দেখা অসম্ভব।
নিউমুন সংঘটিত হবে শুক্রবার, ০১ আগস্ট-২০০৮ ঈসায়ী ১০টা ১২ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে (আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী)। ০২ আগস্ট ২০০৮ তারিখে গ্রীণল্যান্ড, উত্তর রাাশিয়া ছাড়া এদের দক্ষিণের সকল দেশসমূহে চাঁদ দেখা যেতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, নিউমুনের দিন অর্থাৎ ০১ আগস্ট ২০০৮ তারিখে সউদি আরবে চাঁদ দেখতে পাওয়া অসম্ভব।
বাংলাদেশ ১৪২৯ হিজরীর পবিত্র শা’বান মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে শনিবার, ০২ আগস্ট ২০০৮ ঈসায়ী। এই দিনে চাঁদ দেখতে পেলে রবিবার, ০৩ আগস্ট হবে পবিত্র শা’বান মাসের প্রথম তারিখ। ০২ আগস্ট ঢাকায় সূর্যাস্ত ১৮টা ৪৯ মিনিটে (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) এবং চন্দ্রাস্ত ১৯টা ২৫ মিনিটে (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) সেদিন সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার প্রায় ৮ ডিগ্রীর উপরে অবস্থান করতে পারে। তাই উপযুক্ত পরিবেশ না থাকলে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। আর এই দিন চাঁদ দেখতে না পেলে সোমবার ০৪ আগস্ট ২০০৮ ঈসায়ী তারিখ হবে পবিত্র শা’বান মাসের প্রথম তারিখ।
শনিবার, ০২ আগস্ট চাঁদ দেখতে পেলে, শনিবার ১৬ই আগস্ট দিবাগত রাত হবে পবিত্র লাইলাতুল বরাত। আর শনিবার ০২ আগস্ট চাঁদ দেখতে না পেলে রবিবার ১৭ই আগস্ট দিবাগত রাত হবে পবিত্র লাইলাতুল বরাত।
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০