গত ২৪ জানুয়ারী থেকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুফরীর অভিযোগে অভিযুক্ত তথাকথিত ছয় উছুলী তাবলীগ জামাতের বার্ষিক মহাসমাবেশ ৪৯তম ইজতেমা। এবারও দু’পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তথাকথিত ও বিতর্কিত এ ইজতেমা। প্রথম পর্ব গত ২৪ জানুয়ারী থেকে শুরু হয়ে ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত চলছিল। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ৩১ জানুয়ারী থেকে ২ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত আখিরী মোনাজাতের মাধ্যমে এ বদ আক্বীদাসম্পন্ন ইজতেমার সমাপ্তি হয়।
প্রসঙ্গত বিতর্কিত ও কুফরীর অভিযোগে অভিযুক্ত এই ছয় উছুলী তাবলীগ জামাতীদের সম্পর্কে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, আমার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর পূর্ব দেশগুলোর মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যরা হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ। এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মতো। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফজিলতের। তাদের মতো বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। তাদের সকল আমল হবে খুবই নিখুঁত ও সুন্দর। তাদের নামাযের তুলনায় তোমরা তোমাদের নামাযকে তুচ্ছ মনে করবে, তাদের রোযা দেখে তোমাদের রোযাকে তোমরা তুচ্ছ ও নগণ্য মনে করবে। তাদের আমল দেখে তোমরা তোমাদের আমলকে হেয় মনে করবে, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ পড়বে কিন্তু তা তাদের গলার নিচে যাবেনা। তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উপর আমল কিম্বা পবিত্র কুরআন শরীফ উনাকে প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। এ দলের আমল যতোই তোমাদেরকে আকৃষ্ট করুক না কেনো, কখনই তাদের দলে যাবেনা। কারণ প্রকৃতপক্ষে এরা হবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার হতে খারিজ, পবিত্র দ্বীন হতে বহির্ভূত। তীর যেমন ধনুক হতে বের হয়ে যায় সে আর কখনও ধনুকের নিকট ফিরে আসেনা। তেমনিই এরা পবিত্র দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে, আর কখনও পবিত্র দ্বীন উনার পথে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের পথে ফিরে আসবেনা।”
উল্লেখিত পবিত্র হাদীস শরীফ উনার প্রেক্ষিতে ছয় উছুলী তাবলীগীদের অপকর্মের ধারাবাহিকতায় আরেকটি নমুনা দেখা যায় গত ৯ই জানুয়ারী তারিখে প্রকাশিত দৈনিক সকালের খবর পত্রিকায়।
সেখানে নিম্নোক্ত শিরোনাম ও খবর পত্রস্থ হয়-
তাবলীগ জামাতের মুরব্বিকে নিয়ে প্রশ্ন”
অরাজনৈতিক সংগঠন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ছয় উছুলী তাবলীগ জামাত নিয়ে একটি চক্রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অপহরণসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ইজতেমাকে ঘিরে কোনো কোনো চক্রের অপতৎপরতায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে।
বিশ্বের প্রায় ১৮১টিরও বেশি দেশের নাগরিকের অংশগ্রহণে এ ছয় উছুলী তাবলিগ জামাত এখন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন। তাবলিগ জামাত অরাজনৈতিকভাবে পরিচালিত হলেও সম্প্রতি একটি চক্র তা রাজনৈতিকভাবে পরিচালনার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তারা ব্লগারদের সহযোগিতায় মিশন দাওয়াহ নামে একটি দল গঠনের জন্য ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রচার শুরু করেছে।
তাবলিগের নামে অর্থ আদায়, রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ছয় উছুলী তাবলিগ জামাতের সংশ্লিষ্টতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবি ব্যঙ্গ করার অভিযোগও রয়েছে। এসব কর্মকা- বন্ধ করতে মুসল্লিরা মাঠে নেমেছে। তবে যারাই এ কর্মকা- বন্ধ করতে চাচ্ছে তারাই নানাভাবে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ ডিসেম্বর ওই চক্রের বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে অপহরণের শিকার হয় মেহেদী হাসান নামে এক মুসল্লি। তাকে ওই রাতেই লিফলেট বিতরণের অভিযোগে কয়েকজন মিলে প্রহার করে। ওই দিনই গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে পুলিশের সহযোগিতায় রক্ষা পায় মেহেদী। এ ঘটনায় সিএমএম আদালতে ৮ জানুয়ারী মেহেদী হাসান বাদী হয়ে কাকরাইল মসজিদের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ওয়াসিফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৮-৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার অন্য আসামিরা হলো- ওয়াসিফুল ইসলামের ছেলে ওসামা ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আনিসুল রহমান, মাওলানা আবদুল মতিন। মামলাটি রমনা থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি কাকরাইল মসজিদের মুরব্বি ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত্, তাবলিগে অনিয়ম, মিথ্যাচার, সাধারণ মুসল্লিদের ওপর হামলা, তাবলিগ জামাতকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে গত ২৪ ডিসেম্বর পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা চলাকালে লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে মারামারি ও সাধারণ মুসল্লিদের আটক এবং তাদের মালপত্র আটকে রাখারও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। এ সময় আটক মালপত্র ছাড়িয়ে আনতে গেলে ৫-৭ জনকে আটক করে রাখেন ওয়াসিফুল ইসলাম ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় কাকরাইল মসজিদের সাবেক মুকিম মাওলানা আশরাফ আলীকে লিফলেট বিতরণের ঘটনায় সন্দেহ করে বেধড়ক মারধর করা হয়। সে বেশ কিছুদিন গুরুতর আহত অবস্থায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিদের অভিযোগ, ওয়াসিফুল ইসলাম ও তার ছেলে ওসামা ইসলাম তাবলিগ জামাতের নামে কোটি কোটি টাকা বিদেশিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে তা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে ব্যবসার কাজে ও জমি ক্রয়সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের পেছনে ব্যয় করছে। তাদের উইং কমান্ডার হিসেবে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান ও মাওলানা আবদুল মতিন।
ছয় উছুলী তাবলীগ জামাতের মুসল্লি মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলে, ওয়াসিফুল ইসলাম তাবলীগ জামাতের মুসল্লিদের নিয়ে হেফাজতের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রক্ষা করে। যার প্রমাণ রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের গত ৫ মের সম্মেলন।
সে আরো জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর হেফাজতের কর্মসূচিতে টঙ্গীতে জোড় ইজতেমা চলাকালে সেখান থেকে দুই লাখ মুসল্লির ঢাকার সমাবেশে নেয়ার প্রস্ততি নেয়া হয় ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে। ওই সময় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের তদন্তের ভিত্তিতে সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমা ময়দান থেকে মুসল্লিদের চলে যেতে বলা হয়। আর এটিই ছিল ৬ উছুলী তাবলীগ জামাতের ইতিহাসের প্রথম যে কারো কথায় মুসল্লিদের এভাবে চলে যাওয়া।
মেহেদী আরো জানায়, তাবলীগের মুসল্লিরা তিন চিল্লা অর্থাৎ ১২০ দিনের সফরে আসে। ছয় উছুলী তাবলীগ অনুসারীরা প্রথম ইজতেমা আগামী ২৪ জানুয়ারির ও দ্বিতীয় ইজতেমা ২ ফেব্রুয়ারি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার পর ওই মুসল্লিরা অন্য স্থানে গিয়ে তাদের সফর শেষ করার কথা থাকলেও এরই মধ্যে হেফাজতের রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশে মুসল্লিদের যোগ দেয়ার জন্য ওয়াসিফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
ইতোপূর্বে কাকরাইলের সাবেক শীর্ষ মুরব্বি ওয়াসিফুল ইসলাম ও তার ছেলে ওসামা ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে বলা হয়, ওয়াসিফুল ইসলাম বিভিন্ন দেশ থেকে তাবলিগ জামাতের নামে অর্থ এনে তা আত্মসাৎ করেছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় সফরের নামে অর্থ এনে ওই টাকা আত্মসাৎ করে।
জোড় ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা লিফলেটের মাধ্যমে অভিযোগ করে বলে, ২০১২ সালে ইজতেমা চলাকালে ওয়াসিফুল ইসলাম ছয় উছুলী তাবলীগের নামে বিদেশি লোকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়কালে হারুনের নেতৃত্বে কয়েকজন মুসল্লি বাধা দেয়। এরই জের ধরে হারুনকে ইজতেমা চলাকালে গভীর রাতে পুলিশ দিয়ে আটক করানো হয়। এতে ইজতেমা মাঠজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর ওয়াসিফুল ইসলামের কথায় পরদিন পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এ খবর ছয় উছুলী তাবলীগিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে হারুনকে বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। এক পর্যায়ে হারুনের ছেলেকে ওয়াসিফুলের লোকজন দিয়ে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। এত টাকা হারুন দিতে না চাইলে তার ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ওয়াসিফুল ইসলামের লোকেরা। পরে অনেক কাকুতি-মিনতির পর কিছু অঙ্কের টাকা দিলে ওই দুর্বৃত্তরা তার ছেলেকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ফেলে রেখে যায় এবং বলে যায় সে যদি একথা কারও কাছে প্রকাশ করে তাহলে তার ছেলেকে আবারও তারা অপহরণ করে নিয়ে যাবে।
ওয়াসিফুল ইসলামের বিষয়ে তাবলিগের মুসল্লি জাকারিয়া জানায়, ওয়াসিফুল ইসলাম ও তার বাহিনীর সদস্যরা বেপরোয়া। তারা এমন জঘন্যতম কাজটি করতে পারে তা আমার জানা ছিল না। সে ছয় উছুলী তাবলীগ জামাতের নাম ভাঙিয়ে শতকোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ করেছে। সে জানায়, ইতোপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার সন্ত্রাসী কানেকশনের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। তার সঙ্গে কথিত জিহাদি ব্লগারদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওয়াসিফুল ইসলাম পাকিস্তানে লেখাপড়া করেছে এবং তার ছেলে ওসামা ইসলামকে সেখানেই লেখাপড়া করানো হয়। সে অভিযোগ করে বলে, কাকরাইলের শীর্ষ মুরব্বিদের মধ্যে সে অন্যতম।
ওসামা ইসলাম ইতোপূর্বে একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তুলতে চেয়েছিলো। এই দলের নাম দেয়া হয় দাওয়াহ মিশন। এই নামেই কথিত জিহাদি ব্লগার মানছুর মোহাম্মদের সঙ্গে এক সঙ্গে ছবি তুলে তা বিশ্ব ব্লগারদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।” (দৈনিক সকালের খবর, ০৯ জানুয়ারী ২০১৪ ঈসায়ী)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ছয় উছুলী তাবলীগ জামাতের তথাকথিত ইজতেমায় যে আন্তর্জাতিক মাফিয়া তথা আন্তর্জাতিক স¦র্ণ চোরাচালান, অস্ত্র ব্যবসায়ী ইত্যাদির মহা মিলন ঘটে, প্রকাশিত রিপোর্টে তার আংশিক সত্যতা জাহির হয়েছে।
ধোঁয়া দেখেই আগুন বোঝা যায়।
ভাত একটা টিপলেই বোঝা যায়।
কাজেই ছয় উছুলী তাবলীগিদের হাক্বীক্বত সম্পর্কে উপলব্ধির জন্য এতটুকুই যথেষ্ট।
-মুহম্মদ ওয়ালীউল্লাহ
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি ও ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৫০