নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক পালনের অফুরন্ত ফযীলত
তাফসীরে হাক্কী ৭ম খণ্ড ২৪৫ পৃষ্ঠা এবং তাফসীরে রূহুল বয়ান ৩য় খণ্ডের ২৬২ পৃষ্ঠায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ حَفِظَ سُنَّتِىْ أَكْرَمَهُ اللهُ تَـعَالٰى بِأَرْبَعِ خِصَالٍ اَلْمَحَبَّةُ فِيْ قُـلُوْبِ الْبَـرَرَةِ وَالْـهَيْـبَةُ فِيْ قُـلُوْبِ الْفَجَرَةِ وَالسَّعَةُ فِي الرِّزْقِ وَالثِّقَةُ فِي الدِّيْنِ
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার পবিত্র সুন্নত মুবারক হিফাযত করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে চারটি ছিফত বা গুণ দ্বারা সম্মানিত করবেন:
১. নেককারদের অন্তরে সুন্নত পালনকারী ব্যক্তির প্রতি মুহাব্বত পয়দা করার দ্বারা পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনকারী ব্যক্তি উনাকে সম্মানিত করবেন।
২. পাপীদের অন্তরে পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনকারী ব্যক্তি সম্পর্কে ভয়-ভীতি পয়দা করার দ্বারা সুন্নত পালনকারী ব্যক্তি উনাকে সম্মানিত করবেন।
৩. রিযিকের ব্যাপারে সচ্ছলতা দান করার দ্বারা পত্রি সুন্নত মুবারক পালনকারী ব্যক্তি উনাকে সম্মানিত করবেন।
৪. দ্বীনের ব্যাপারে দৃঢ়তা দান করার দ্বারা পবিত্র সুন্নত মুবারক পালনকারী ব্যক্তি উনাকে সম্মানিত করবেন। অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন উনার উপর ইস্তিক্বামত থাকার তাওফীক্ব দান করবেন।
জামি’উল আহাদীছ, জাম’উল জাওয়ামি’, আল ফিরদাউস ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْـرَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَةٌ لَا تَـمَسُّهُمْ فِتْـنَةُ الدُّنْـيَا وَالْأٰخِرَةِ الْمُقِرُّ بِالْقَدْرِ وَالَّذِيْ لَا يَـنْظُرُ فِي النُّجُوْمِ وَالْمُتَمَسِّكُ بِسُنَّتِيْ
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিন প্রকার লোক রয়েছেন যাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো ফিতনা (বিপদ-আপদ, আযাব-গযব) স্পর্শ করবে না। (১) যাঁরা তাকদীরের উপর বিশ্বাস করেন, (২) যাঁরা তারকা দেখেন না অর্থাৎ নক্ষত্রের প্রভাব বিশ্বাস করেন না এবং (৩) যাঁরা আমার পবিত্র সুন্নত মুবারক দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
বাইহাক্বী শরীফে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ أَبِيْ هُرَيْـرَةَ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَمَسَّكَ بِسُنَّتِىْ عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِىْ فَـلَهٗ أَجْرُ مِائَةِ شَهِيْدٍ
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যামানায় একটি পবিত্র সুন্নত মুবারক আঁকড়ে ধরবে, তার জন্য রয়েছে একশত শহীদের সওয়াব। সুবহানাল্লাহ!
তিরমিযী শরীফে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছেন,
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحَبَّ سُنَّتِيْ فَـقَدْ أَحَبَّنِيْ وَمَنْ أَحَبَّنِيْ كَانَ مَعِيَ فِي الْـجَنَّةِ
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি আমার পবিত্র সুন্নত মুবারক উনাকে মুহাব্বত করল সে অবশ্যই আমাকে মুহাব্বত করল আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুবহানাল্লাহ! নাওয়াদিরুল উছূল, জামি’উল আহাদীছ, জাম’উল জাওয়ামি’ লিস সুয়ূতী ইত্যাদি কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهَ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِيْ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ الْـمُتَمَسِّكُ فِيْهِ بِسُنَّتِيْ عِنْدَ اخْتِلَافِ أُمَّتِيْ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمَرِ
হযরত ইবনে মাস’ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে, যে সময়টি হবে আমার উম্মতের ইখতিলাফের সময়। তখন আমার একখানা পবিত্র সুন্নত মুবারক দৃঢ়তার সাথে আঁকড়ে ধরে থাকা, হাতের তালুতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখার ন্যায় অত্যন্ত কঠিন হবে। নাউযুবিল্লাহ!
বর্ণিত ফযীলত লাভ করতে হলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত মুবারক উনার ইত্তেবা বা অনুসরণ করতে হবে। পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ বলতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ মুবারক উনার অনুসরণ-অনুকরণ করাকেই বুঝানো হয়েছে। নিজস্ব কোনো মতাদর্শ বা সুন্নতকে বুঝানো হয়নি। আর এর দ্বারা কোনো ফযীলতও লাভ করা যাবেনা। দৈনন্দিন জীবনে আমলের জন্য কিছু সুন্নতের বর্ণনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. মুসলমান পরস্পরের সাথে দেখা-সাক্ষাত হলে সালাম বিনিময় করা এবং মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করা। বিপদ-আপদে পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগীতা করা।
২. সর্বাবস্থায় প্রত্যেকের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও গালি-গালাজ না করা, ঠাট্টা-বিদ্রুপ বা উপহাস না করা।
৩. পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার করা এবং পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণে পোশাক-পরিচ্ছদ বানিয়ে পরিধান করা। প্রত্যেক কাজ বিসমিল্লাহ বলে ডান দিক থেকে শুরু করা।
৪. খাবার খাওয়ার সময় দস্তরখানা বিছিয়ে মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে বিসমিল্লাহ বলে সামান্য লবণ মুখে দিয়ে বসে ডান দিক থেকে খাবার খাওয়া শুরু করা। দুপুরে খাওয়ার পর কিছু সময় কায়লুলা বা বিশ্রাম করা।
৫. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সমস্ত খাবার গ্রহণ করেছেন সে সমস্ত খাবার পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার খেয়ালে অর্থাৎ মনে মনে পবিত্র সুন্নত পালনের নিয়ত করে খাওয়ার চেষ্টা করা। পবিত্র সুন্নতি খাবার যেমন- রুটি, গোশত, ভাত, মাছ, ডাল, শাক-সবজি, ফল, পনির, ঘি, মাখন, দুধ, ডিম, জয়তুন, ত্বীন, মধু, শশা ইত্যাদি।
৬. ইস্তিঞ্জাখানায় প্রবেশের সময় প্রথমে বাম পা প্রবেশ করানো আর বের হওয়ার সময় ডান পা দিয়ে বের হওয়া। ৭. চোখে সুরমা দেয়া। মাথা ডান দিক থেকে আঁচড়ানো, মাঝখানে সিঁথি করা, জয়তুনের তেল ব্যবহার করা, পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন থাকা। মিসওয়াক করা।
৮. শোয়ার সময় ওযূ করে বিছানা ঝেড়ে ডান কাত হয়ে শোয়া ।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে সর্বাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক পালন করার তাওফীক্ব দান করেন। (আমীন)