(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফে পবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالَى عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يُـؤْمِنُ اَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُوْنَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَّالِدِهٖ وَوَلَدِهٖ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমাকে তার নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুতি এমনকি সমস্ত মানুষ হতে অধিক মুহাব্বত না করবে।
অপরদিকে যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট থাকবে অর্থাৎ উনার আনীত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে, সেই ব্যক্তিই ঈমান উনার স্বাদ লাভ করবে অর্থাৎ সে ব্যক্তিই মু’মিনে কামিল হতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফে পবিত্র হাদীছ শরীফ ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاقَ طَعْمَ الْإِيْـمَانِ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلَامِ دِينًا وَّبِـسَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَسُوْلًا
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ ব্যক্তিই ঈমান উনার স্বাদ পেয়েছে; যে ব্যক্তি মহান রব্বুল আলামীন উনাকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে, সম্মানিত ইসলাম উনাকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট রয়েছে।
উল্লেখ্য, যখন বলা হবে, ‘মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি ঈমান আনলাম বা উনাদেরকে বিশ্বাস করলাম’ তখন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতিটি বিষয় বিনা চু-চেরায় মেনে নিতে হবে এবং সে বিষয়গুলোর উপর আমল করতে হবে। কেননা, মানুষ যখন কাউকে বিশ্বাস করে তখন (যাকে বিশ্বাস করে) সে ব্যক্তি যা বলে, সেটাই সে বিশ্বাস করে মেনে নেয়। যে বিষয় থেকে নিষেধ করে, সে বিষয় থেকে বিরত থাকে। সুতরাং যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে বিশ্বাস করবেন, উনারা মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের তর্জ-তরীক্বা সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উভয়ের প্রতি ঈমান এনে উনাদের অনুসরণ করবে সে ইহকাল ও পরকালে ফায়দা লাভ করবে। আর যে উনাদের মধ্যে একজনকে অস্বীকার করবে, সে কুফরী করবে, ফলে তাকে জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কুফরীর শাস্তি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা কাহাফ শরীফ উনার ২৯ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَـلْيُـؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَـلْيَكْفُرُ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِيْنَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُـهَا، وَإِنْ يَسْتَغِيْـثُـوْا يُغَاثُـوْا بـِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوْهَ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَـفَقًا
আপনি বলুন, সত্য তোমাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে। সুতরাং যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে কুফরী করুক। নিশ্চয়ই আমি যালিমদের জন্য জাহান্নামের আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি। তাদেরকে আগুনের তাবু বেষ্টন করে নিবে। যখন তারা পানি চাবে, তাদেরকে (শাস্তির কারণে তাদের শরীর থেকে নির্গত) গলিত পুঁজের ন্যায় পানি দেয়া হবে। যা তাদের চেহারাকে জ্বালিয়ে দিবে। কতইনা নিকৃষ্ট পানীয় এবং কতইনা নিকৃষ্ট আবাসস্থল!
অর্থাৎ যারা কুফরী করবে, তারাই যালিম সাব্যস্ত হবে। তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামে আগুনের তাবু। যখন তারা পানি চাবে, তখন আযাবের কারণে তাদের শরীর থেকে নির্গত গলিত পুঁজের ন্যায় পানি তাদেরকে দেয়া হবে। যা তাদের চেহারাকে জ্বালিয়ে দিবে। নাউযুবিল্লাহ!
আর মু’মিনদের প্রতিদান সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন,
بَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِـحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَـجْرِي مِنْ تَـحْتِهَا الْـأَنْـهَارُ
আপনি উনাদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন যারা ঈমান এনেছেন এবং আমলে ছলেহ করেছেন। নিশ্চয়ই উনাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার নিম্নদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হয়।
কাজেই, সমস্ত উম্মাহর জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত যা কিছু রয়েছে সবকিছুর মুহাব্বত ত্যাগ করে একমাত্র মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার এবং উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রতি হাক্বীক্বীভাবে ঈমান এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। তাহলেই হাক্বীক্বী মু’মিন হওয়া এবং দুনিয়া ও আখিরাতে খায়ের-বরকত, সম্মান-ইজ্জত, মুহাব্বত-মা’রিফত, কুরবত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিল করা সম্ভব হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে মু’মিনে কামিল হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। (আমীন)