শুরুতেই একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, ‘ক্বিছ্ছাতুল গ্বরানীক্ব বা গ্বরানীক্বের ঘটনা’ হলো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ একটি বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন বর্ণনা। এই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন বর্ণনা সম্পর্কে বিভিন্ন তাফসীরের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اِنَّ الرَّسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا رَاٰى اِعْرَاضَ قَـوْمِهٖ عَنْهُ وَشَقَّ عَلَيْهِ مَا رَاٰى مِنْ مُّبَاعَدَتِـهِمْ عَمَّا جَاءَهُمْ بِهٖ تَـمَنّٰـى فِـىْ نَـفْسِهٖ اَنْ يَّـأْتِـيَـهُمْ مِّنَ اللهِ مَا يُـقَارِبُ بَـيْـنَهٗ وَبَـيْـنَ قَـوْمِهٖ وَذٰلِكَ لِـحِرْصِهٖ عَلـٰى اِيْـمَانِـهِمْ فَجَلَسَ ذَاتَ يَـوْمٍ فِـىْ نَادٍ مِّنْ اَنْدِيَةِ قُـرَيْشٍ كَـثِـيْـرٍ اَهْلُهٗ وَاَحَبَّ يَـوْمَئِذٍ اَنْ لَّا يَأْتِـيَهٗ مِنَ اللهِ شَىْءٌ يَـنْفِرُوْا عَنْهُ وَتَـمَنّٰـى ذٰلِكَ فَاَنْـزَلَ اللهُ تَـعَالـٰى سُوْرَةَ وَالنَّجْمِ اِذَا هَوٰى [النَّجْمِ 1] فَـقَرَاَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتّٰـى بَـلَغَ قَـوْلَهٗ اَفَـرَاَيْـتُمُ اللّٰتَ وَالْعُـزّٰى وَمَنٰوةَ الثَّالِثَةَ الْاُخْرٰى [النَّجْمِ 19، 21] اَلْقَى الشَّيْطَانُ عَلـٰى لِسَانِهٖ تِلْكَ الْغَرَانِـيْقُ الْعُلـٰى وَاِنَّ شَفَاعَتَـهُنَّ لَـتُـرْتَـجٰى فَـلَمَّا سَـمِعَتْ قُـرَيْشٌ ذٰلِكَ فَرِحُوْا وَمَضٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِـىْ قِرَاءَتِهٖ فَـقَرَاَ السُّوْرَةَ كُلَّهَا فَسَجَدَ وَسَجَدَ الْمُسْلِمُوْنَ لِسُجُوْدِهٖ وَسَجَدَ جَـمِيْعُ مَنْ فِـى الْمَسْجِدِ مِنَ الْمُشْرِكِـيْـنَ فَـلَمْ يَـبْقَ فِـى الْمَسْجِدِ مُؤْمِنٌ وَلَا كَافِرٌ اِلَّا سَجَدَ سِوَى الْوَلِـيْدِ بْنِ الْمُغِـيْـرَةِ وَاَبِـىْ اُحَيْحَةَ سَعِـيْدِ بْنِ الْعَاصِى فَاِنَّـهُمَا اَخَذَا حَفْنَةً مِّنَ التُّـرَابِ مِنَ الْـبَطْحَاءِ وَرَفَـعَاهَا اِلـٰى جَبْـهَتَـيْهِمَا وَسَجَدَا عَلَيْـهَا لِاَنَّـهُمَا كَانَا شَيْخَـيْـنِ كَبِيْـرَيْنِ فَـلَمْ يَسْتَطِيْـعَا السُّجُوْدَ وَتَـفَرَّقَتْ قُـرَيْشٌ وَقَدْ سَرَّهُمْ مَا سَـمِعُوْا وَقَالُوْا قَدْ ذَكَـرَ سَيِّدُنَا مَوْلَانَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اٰلِـهَتَـنَا بِاَحْسَنِ الذِّكْرِ فَـلَمَّا اَمْسٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَتَاهُ حَضْرَتْ جِـبْـرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَـقَالَ مَاذَا صَنَـعْتَ تَـلَوْتَ عَلَى النَّاسِ مَا لَـمْ اٰتِكَ بِهٖ عَنِ اللهِ وَقُـلْتَ مَا لَـمْ اَقُلْ لَكَ فَحَزِنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُزْنًا شَدِيْدًا وَخَافَ مِنَ اللهِ خَوْفًا عَظِيْمًا حَتّٰـى نَـزَلَ قَـوْلُهٗ تَـعَالـٰى وَمَا اَرْسَلْنَا مِنْ قَـبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ وَّلَا نَبِـىٍّ اَلْاٰيَةُ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দেখলেন উনাকে উনার সম্প্রদায়ের লোকজন পরিত্যাগ করছে এবং তিনি তাদের নিকট যা নিয়ে এসেছেন, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন উনার নিকট বিষয়টি কষ্টকর হয়ে পড়লো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমানের বিষয়ে দয়াপরবশ হয়ে মনে মনে আকাঙ্খা মুবারক করলেন- মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যাতে এমন কিছু নাযিল হয়, যা উনার এবং উনার সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছাকাছি হবে, নিকটবর্তী হবে। অর্থাৎ এতে উনার এবং উনার সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে একটা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! এমতাবস্থায় একদিন কুরাইশদের অনেক লোকের এক মজলিসে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি ইচ্ছা করছিলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে যেন উনার নিকট এমন কিছু না আসেন, যাতে কুরাইশরা উনার থেকে দূরে চলে যায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই আকাঙ্খা মুবারক উনার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ’ নাযিল করেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা পাঠ করতে করতে যখন এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ পর্যন্ত পৌঁছলেন-
اَفَـرَاَيْـتُمُ اللّٰتَ وَالْعُـزّٰى وَمَنٰوةَ الثَّالِثَةَ الْاُخْرٰى
‘তোমরা কি লাত ও উয্যা সম্পর্কে লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না? এবং ৩য় অপর একটি মানাত সম্পর্কে কি লক্ষ্য করো না? ফিকির করো না?’ (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯-২০)
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুস সালাম মুবারক-এ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র যবান মুবারক-এ) শয়তান নিক্ষেপ করলো, تِلْكَ الْغَرَانِـيْقُ الْعُلـٰى وَاِنَّ شَفَاعَتَـهُنَّ لَـتُـرْتَـجٰى ‘এগুলো (এই মূর্তিগুলো) খুব সুন্দর, খুব ছূরত পাখির মতো এবং আশা করা যায় যে এগুলো অবশ্যই (মুশরিকদের জন্য) সুপারিশ করবে।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
কুরাইশরা এটা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক করতে করতে পুরো সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ সম্মানিত তিলাওয়াত মুবারক করেন এবং সম্মানিত ও পবিত্র সূরা শরীফ উনার শেষে সম্মানিত সিজদাহ্ মুবারক করেন। তখন উনার সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারাও সিজদাহ্ করলেন এবং মুশরিকদের মধ্য থেকে যারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ উনার মধ্যে ছিলো তারা সকলেই সিজদাহ্ করলো। ঐ সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে হারাম শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং মুশরিকদের মধ্যে যারা ছিলো কেউই সিজদাহ্ করা থেকে বিরত থাকেনি। একমাত্র ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা এবং আবূ উহাইহাহ্ সাঈদ ইবনে আছ তারা দুইজন সিজদাহ্ করলো না। তারা যমীন থেকে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে কপালে ঠেকিয়ে সেটাতে সিজদাহ্ করলো। কারণ তারা দুজনেই ছিলো অতিবৃদ্ধ, তাই তারা সিজদাহ্ করতে সক্ষম ছিলো না। কুরাইশরা বিচ্ছিন্ন হয়ে তাদের দেব-দেবীদের (প্রশংসামূলক) আলোচনা যা শুনেছে, সে জন্য খুশি প্রকাশ করে বলাবলি করছিলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দেব-দেবীদের (প্রশংসামূলক) সর্বোত্তম আলোচনা করেছেন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দুঃখ ভারাক্রান্ত হলেন, তখন হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম তিনি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! একি করলেন আপনি? না‘ঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আমি যা নিয়ে আসিনি, আপনি মানুষদের নিকট তা তিলাওয়াত মুবারক করেছেন। আর আপনি যা বলেছেন আমি তো আপনাকে তা বলিনি।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত চিন্তিত হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে অত্যন্ত ভীতসন্ত্রস্ত হলেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি وَمَا اَرْسَلْنَا مِنْ قَـبْلِكَ এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কাবীর ২৩/২৩৭, মাযহারী ৬/৩৩৬, দুর্রে মানছূর, ইবনে আবী হাতিম, ত্ববারী, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, বাগভী, লুবাবুন নুকূল, জালালাইন ইত্যাদি)
অনুরূপ বর্ণনা ‘তাফসীরে জীলানী শরীফ’ উনার ৩য় খণ্ডের ২৩৪-২৩৫ নং পৃষ্ঠায় এবং ‘মকতূবাত শরীফ’ (ফার্সী) উনার ১ম খণ্ডের ৫১৬-৫১৭ নং পৃষ্ঠার মধ্যেও রয়েছে। এই সকল বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন বর্ণনাগুলোকে সঠিক প্রমাণ করতে যেয়ে কেউ কেউ বুখারী শরীফ উনার ‘কিতাবুত তাফসীরে’ উল্লেখিত একটি মওযূ হাদীছ দিয়ে দলীল দিয়ে থাকেন। আর তা হচ্ছে,
وَقَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالـٰى عَنْهُ فِـىْ اِذَا تَـمَنّٰـى اَلْقَى الشَّيْطٰنُ فِـىْ اُمْنِيَّـتِهٖ اِذَا حَدَّثَ اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِـىْ حَدِيْـثِهٖ فَـيُـبْطِلُ اللهُ مَا يُـلْقِى الشَّيْطَانُ وَيُـحْكِمُ اٰيَاتِهٖ
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি اِذَا تَـمَنّٰـى اَلْقَى الشَّيْطٰنُ فِـىْ اُمْنِيَّـتِهٖ এই সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে বলেন, اِذَا حَدَّثَ اَلْقَى الشَّيْطَانُ فِـىْ حَدِيْـثِهٖ فَـيُـبْطِلُ اللهُ مَا يُـلْقِى الشَّيْطَانُ وَيُـحْكِمُ اٰيَاتِهٖ ‘যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বলছিলেন, তখন শয়তান উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক উনার সঙ্গে নিজের কথা মিলিয়ে দেয়। এরপর মহান আল্লাহ পাক তিনি শয়তানের সে মিলানো কথা মিটিয়ে দিয়ে উনার সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনাকে সুদৃঢ় করেন।” (বুখারী শরীফ, জামিউছ ছহীহ, ইরশাদুস সারী, ফাতহুল বারী, দুররে মানছূর, তাফসীরে ত্ববারী ইত্যাদি)
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “উপরোক্ত বর্ণনাগুলোসহ অনুরূপ আরো যত বর্ণনা রয়েছে, প্রত্যেকটি বর্ণনাই বাতিল, মওযূ, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। এ ধরণের কোন ঘটনাই সংঘটিত হয়নি। কখনও মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে সিজদাহ্ করেনি। শয়তান কখনও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক উনার সাথে তার কথা মিলায়নি। এরূপ চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরী ও চির জাহান্নামী হওয়ার কারণ। এগুলো সব বানানো কিচ্ছা-কাহিনী। এগুলো একটাও গ্রহণ করা যাবে না। এগুলো বিশ্বাস করা কাট্টা কুফরী হবে। বর্ণনাকারীরা ইসরাঈলী বর্ণনা দ্বারা প্রতারিত হয়ে ইবলীসের ধোঁকায় পড়ে এগুলো বর্ণনা করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এরূপ কুফরী আক্বীদাহ্ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন।” (সুবহানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)
আল্লামা হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
اَمَّا اَهْلُ التَّحْقِيْقِ فَـقَدْ قَالُوْا هٰذِهِ الرِّوَايَةُ بَاطِلَةٌ مَوْضُوْعَةٌ وَاحْتَجُّوْا عَلَيْهِ بِالْقُرْاٰنِ وَالسُّنَّةِ وَالْمَعْقُوْلِ
অর্থ: “মুহাক্কিকগণ বলেছেন যে, এই সকল বর্ণনাগুলো বাতিল, মওযূ এবং উনারা তা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ এবং আক্বলী দলীল দ্বারা খণ্ডন করেছেন।” (তাফসীরে কবীর ২৩/২৩৭)
১০ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
يَـقُوْلُ حَضْرَتْ اِبْنُ الْعَرَبِـىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وحَضْرَتْ عِيَاضٌ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ هٰذِهِ الرِّوَايَاتِ بَاطِلَةٌ لَا اَصْلَ لَـهَا
অর্থ: “হযরত ইবনে আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা বলেছেন, ‘এই বর্ণনাসমূহ বাত্বিল-মিথ্যা, এর কোনো ভিত্তি নেই’।” (লুবাবুন নুকূল লিস সুয়ূত্বী ১/১৩৬ ফাতহুল ক্বাদীর লিশ শাওকানী ৫/১২৮)
আল্লামা হযরত ইমাম শিহাবুদ্দীন আলূসী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
ذَكَـرَ حَضْرَتْ اَلشَّيْخُ اَبُـوْ مَنْصُوْرِ نِ الْمَاتُرِيْدِىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فِـىْ كِتَابِ حِصَصِ الْاَتْقِيَاءِ اَلصَّوَابُ اَنَّ قَـوْلَهٗ تِلْكَ الْغَرَانِيْقُ الْعُلـٰى مِنْ جُـمْلَةِ اِيْـحَاءِ الشَّيْطَانِ اِلـٰى اَوْلِـيَائِهٖ مِنَ الزَّنَادِقَةِ حَتّٰـى يَـلْقَوْا بَـيْـنَ الضُّعَفَاءِ وَاَرِقَّاءِ الدِّيْنِ لِـيَـرْتَابُـوْا فِـىْ صِحَّةِ الدِّيْنِ وَحَضْرَةُ الرِّسَالَةِ بَرِيْـئَةٌ مِّنْ مِّثْلِ هٰذِهِ الرِّوَايَةِ
অর্থ: “হযরত ইমাম মাতুরীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘হিছাছুল আতক্বিয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন, ‘সঠিক বিষয় হচ্ছে- تِلْكَ الْغَرَانِيْقُ الْعُلٰى (তিলকাল গ্বরানীকুল ‘উলা) সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো সম্পূর্ণরূপে শয়তানের অনুপ্রেরণা; তার যিন্দিক্ব বন্ধুদের প্রতি। তার অনুপ্রেরণায় যিন্দিক্বরা দূর্বল রাবী এবং মহাসম্মানিত দ্বীন উনার প্রতি নমনীয় ব্যক্তিদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিয়েছে। যেন তারা মহাসম্মানিত দ্বীন উনার সত্যতার বিষয়ে সন্দেহ করে। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই ধরণের (মনগড়া কুফরীমূলক) বর্ণনা থেকে পূত-পবিত্র।” সুবহানাল্লাহ! (রূহুল মা‘আনী ৯/১৬৯)
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার শান মুবারক উনার খিলাফ কোনো বর্ণনা, কোনো ক্বওল (কথা) বা লিখা গ্রহণ করা যাবে না। সেটা যত বড় ইমাম-মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ ও ছিকাহ্ রাবীই বর্ণনা করুক না কেন, বলুক না কেন বা লিখুক না কেন, তা মওযূ ও বাতিল হিসেবে পরিগণিত হবে। আর উনাদের শান মুবারক সম্মত কোনো বর্ণনা, সেটা যত দূর্বল রাবীই বর্ণনা করুক না কেন, তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবেন এবং ছহীহ হিসেবে পরিগণিত হবেন।” (সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!)
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদের, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের শান মুবারক উনার খিলাফ কোনো কথা বা লিখা, সেটা যত বড় ইমাম-মুজতাহিদ, ওলীআল্লাহ বলুক না কেন বা লিখুক না কেন, তা কস্মিনাকালেও গ্রহণ করা যাবে না। এগুলো গ্রহণ করা এবং সমর্থন করা প্রত্যেকটাই কাট্টা কুফরী।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
বি: দ্র: বিস্তারিত জানার জন্য এ বিষয়ে দৈনিক আল ইহ্সান শরীফ-এ প্রকাশিত ধারাবাহিক আর্টিকেলগুলো পড়ুন।
খ্বালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে সমস্ত মুসলমান পুরুষ-মহিলা, জ্বিন-ইনসান, ছোট-বড় সবাইকে এবং আমাদের সবাইকে হাক্বীক্বী ছহীহ সমঝ, বিশুদ্ধ আক্বীদাহ্ ও হুসনে যন মুবারক নছীব করুন। আমীন!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ছিদ্দীক্ব ইবনে আকরাম