সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।
দেশকে নিয়ে কথা বলার অধিকার কার?
যিনি দেশবাসীকে জানেন না, দেশবাসীর খবর রাখেন না, দেশবাসীর ধর্মীয় অনভূতি বুঝেন না
তার বা তাদের?
গত ১৯ নভেম্বর ২০১১ ঈসায়ী তারিখ শনিবার, ৪০তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর উইম্যান ভলেনটিয়াস অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক আলোচনায় ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম প্রশ্ন তুলেছেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
এ রকম অর্বাচীনের মতো মন্তব্য করেছেন খোদ আইনমন্ত্রীও। তিনি বলেছেন, বাহাত্তরের সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব জনগণ পালন করেনি।
উল্লেখ্য, গোটা জনগণের প্রতি এ রকম অভিযোগ সংবিধানের ক্রমবিকাশে আজ পর্যন্ত কেউ করেনি।
খোদ রাষ্ট্র জনগণকে প্রতিপক্ষ বানায় এমন অবুঝ মন্ত্রী আজ পর্যন্ত হয়নি। বরং মন্ত্রীর কথার বিশ্লেষণ করতে হলে বলতে হয়- জনগণ ’৭২-এর সংবিধান গ্রহণ না করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম এবং ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ এর সংবিধান মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিল বলেই জনগণ তাতে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এখন যদি মন্ত্রী সেটাকেই বলেন যে, ’৭২-এর সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব জনগণ পালন করেনি, তাহলে জনগণের প্রতি অভিযোগ আনার পরিবর্তে তারই পদত্যাগ করা উচিত। কারণ আইনমন্ত্রী হিসেবে তার জানা থাকার কথা সংবিধান গৃহীত হয়েছে জনগণের নামে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় লিখিত হয়েছে, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ……. এতদ্বারা আমাদের এই গণপরিষদে, অদ্য তের শত ঊনআশি বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসের আঠার তারিখ, মোতাবেক উনিশ শত বাহাত্তর খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসের চার তারিখ আমরা এই সংবিধান রচনা ও বিধিবদ্ধ করিয়া সমবেতভাবে গ্রহণ করিলাম।’
সংবিধানের ৭ (১) ধারায় রয়েছে: “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।
সংবিধানের ৭ (২) ধারায় রয়েছে, “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।”
অর্থাৎ সংবিধানের সর্বত্রই
জনগণের সর্বময় কর্তৃত্ব।
কিন্তু ৪০তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে ঘাদানিকের সভায় যে ক’জন চিহ্নিত কুবুদ্ধিজীবী হাজির হয়েছিল তারা মূলত এদেশের, এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব করে না।
তারা এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানের দ্বীনি অনুভূতির খবর রাখে না।
তাদের অন্তর এদেশে বাস করে না।
তাদের চোখে এদেশের দৃশ্য ভেসে উঠে না।
তাদের কানে এদেশের কলরব ঢুকে না।
যদি তাই হতো
তাহলে তারা দেখতে পেতো এদেশে ৯৭ ভাগ লোক মুসলমান।
এদেশের দশ লাখেরও বেশি মসজিদ
এদেশে লাখ লাখ মাদরাসা
এদেশে প্রতি জুমুয়ায় প্রায় ৫ কোটি মুসুল্লীর সমাবেশ হয়।
এদেশে দশ লাখ মসজিদে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ৩০ বার করে ‘আল্লাহ পাক মহান’ অর্থাৎ দিনে মোট ৩ কোটি বার
‘আল্লাহ পাক মহান’,
‘আল্লাহ পাক বড়’ সে কথা উচ্চারণ হয়
সুতরাং এ দেশের সংবিধানে কী করে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস উঠিয়ে নেয়া যায়?
যে দেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ১ কোটি বার ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ’ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল) উচ্চারণ হয়
সে দেশে কী করে ধর্মনিরপেক্ষতা মানা যায়?
যে দেশে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ লাখ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই) উচ্চারণ হয়,
সে দেশে কী করে ধর্মনিরপেক্ষতা গৃহীত হয়?
অপরদিকে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছে!’
কী মুরতাদী কথা?
আদালত কী রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ’র চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে গেলো?
মূলত, গণতন্ত্রের সাধারণ সমঝদারও জানেন, সংসদ সার্বভৌম আদালত নয়। তাহলে আইনমন্ত্রী আদালতকে সংসদের চেয়েও বড় প্রমাণ করলেন।
উল্লেখ্য, মন্ত্রী ও তার পাত্র-মিত্র সবাই স্বীকার করেছেন যে, সংবিধান সাংঘর্ষিক হয়েছে এবং এটা তাদের অজ্ঞতার জন্যই হয়েছে।
আর এ অজ্ঞতা শুধু সংবিধানের ক্ষেত্রে নয়। এ অজ্ঞতা এদেশের অবস্থান, অবকাঠামো, অনুভূতি, জনমত, ৯৭ ভাগ মুসলমানের সংখ্যা ও তাদের ধর্মীয় অনুভূতি সব কিছু সম্পর্কে।
কাজেই এহেন অজ্ঞ ও মূর্খদের উচিত নয়- সংবিধানের মালিক জনগণের পরম অভিব্যক্তি সংবিধান নিয়ে নাড়াচাড়া করা। সংবিধান প্রণয়ন বা সংশোধন সম্পর্কে কথা বলা। সর্বোপরি সংবিধান সম্পর্কে কথা বলতে হলে সর্বপ্রথম ৯৭ ভাগ মুসলমান ও দশ লাখ মসজিদ এবং লাখ লাখ মাদরাসার কথা চিন্তা করা।
মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র তা খুব সহজে পরিপূর্ণ হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)
-মুহম্মদ তা’রীফুর রহমান
প্রসঙ্গঃ আমেরিকায় ইহুদী প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ- ২
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা-৩৪
চাঁদ দেখা এবং নতুন চন্দ্রতারিখ শুরু নিয়ে প্রাসঙ্গিক আলোচনা- ১