‘থার্টিফাস্ট নাইট, ভালেন্টাইন ডে আর পহেলা বৈশাখের’ নামে হুজ্জোতির জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের কৌশলগত নিষ্ক্রীয়তা, স্বার্থবাদী মৌসুমী রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সংস্কৃতি বিপননকারীদের দূরভিসন্ধিতা ও মধ্যবিত্তের  তত্ত্ব-তালাশহীন প্রবণতা তথা হুজুগে মাতা প্রবৃত্তিই দায়ী

সংখ্যা: ১৭৭তম সংখ্যা | বিভাগ:

{কারো উপর ভর করে পাপের প্রচলন করার ইবলিসী কাহিনী ইতিহাসে অনেক পুরানো। কাবিলের দ্বারা- হত্যা, আমর বিন লুহাইর দ্বারা- মুর্তি পূজা, হযরত লুত আলাইহিস্ সালাম-এর ক্বওম দ্বারা সমকাম, জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামকে আগুনে নিক্ষেপকারীদের সর্দারের দ্বারা ব্যভিচার ও টিপ প্রচলন- ইতিহাসে ইবলিসের এরকম বহু নজীর। আর সাম্প্রতিক সময়ে এদেশে ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ প্রর্বতনে ইবলিসের নতুন সংযোজন, ইবলিসের মুয়াজ্জিন- শফিক রেহমান।

১৯৯৩ সালের সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে ছোট এক লেখার মাধ্যমে লোফাফার শফিক রেহমান যদি এদেশে ভ্যালেন্টাইন ডে সংস্কৃতি চালুর জন্য অভিযুক্ত হয় তবে আজকের রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের উৎসবের জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে অভিযুক্ত করতে হয় তথাকথিত ছায়ানটের অধ্যক্ষ সানজীদা খাতুন ও নাওয়াজেশ আহমেদকে। ১৯৬৭ সালে তারাই প্রথম আজকের রমনার অশ্বথ মূলে (প্রকৃতপক্ষে বটমূলে নয়) পহেলা বৈশাখের এ উৎসব চালু করে।

আজকের পহেলা বৈশাখের নামে জান্তব মুখোশ র‌্যালীর প্রচলন ঘটায় চারুকলার ছাত্ররা ১৯৮৯ সালে। আর পান্তা-ইলিশের প্রচলন ঘটায় বোরহান আহমেদ গং ১৯৮৪ সালে।

এসব তথ্যকণিকা থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট হয় যে, আজকে পহেলা বৈশাখের নামে যে মাতামাতি চলছে তা আসলে বাঙালী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা নয়। বিকাশ তো মোটেও নয়। সুতরাং অতি উৎসাহী দু’একজনের আহ্বানে মাতোয়ারা হওয়া বাঙালী সংস্কৃতির অবগাহন প্রমাণ করে না। বরং চিলে কান নিয়েছে ঘোষণাকারীর পিছনে হুযূগে মাতা বাঙালীর হুযূগী মনোভাবই প্রতিভাত হয়।

এক্ষেত্রে তাই চিলে কান নেয়নি- এ ঘোষণাটাই হুযূগে মাতা বাঙালীর হুযূগ থেকে উত্তম। একইভাবে উৎকৃষ্ট, “কথিত পহেলা বৈশাখ ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানের জন্য পালনীয় নয়”- এ আহ্বানও।

 এক সানজীদা খাতুন, বোরহান আহমেদ আর চারুকলার কিছু ছাত্ররা যদি পহেলা বৈশাখের নামে এমন উন্মাদনা তৈরী করতে পারে, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে উলামায়ে হক্কানী রব্বানীর কি এই অধিকার নেই যে, বিভ্রান্ত, পথহারা মুসলমানদের ইসলামের পথে আহ্বান করা। শরীয়তের সীমারেখা বর্ণনা করা।

কারণ, পহেলা বৈশাখে মাতোয়ারা বিভ্রান্ত মুসলমান কখনো বলেনি যে, তারা ইসলাম ত্যাগ করেছে। বরং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে গিয়েও তারা স্বীকার করে যে তারা মুসলমান। অথচ পহেলা বৈশাখের তথাকথিত আনন্দ যে মুসলমানিত্বের বাইরে এ অনুভবের ঘাটতি তাদের মাঝে বিরাজমান।

এ ঘাটতির পিছনে দায়ী তথাকথিত সংস্কৃতিবাদী এবং ধর্মব্যবসায়ী, জামাতী, খারিজী, রাজাকার আল বাদরদের কুপমুণ্ডতা ও আদর্শহীনতা তথা আমলহীনতা। সব মিলিয়ে তৈরী হয়েছে এক মহা অবিমৃষ্যকারীতা ও ঢের অনৈসলামীপনা। এ গোলকধাধা হতে বেরিয়ে আসতে হবে মুসলমানকে তার নিজের তাগিদেই। নিজেদের কল্যাণেই। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে তৌফিক নছীব করুন, কবুল করুন। (আমীন)}

(১)

শেয়াল শাহ’র মাজারের এখন রমারমা অবস্থা। ওরসের দিন লোকে লোকারণ্য। সেদিন ভোর থেকে শেয়াল শাহ’র মাজারে জনতার ঢল নামে। সবাই শেয়াল শাহ’র মাজারে এসে জড় হয়। একটা অন্যরকম চেতনায় গদগদ হয়। যারা শেয়াল শাহে’র মাজারে হাজির হয় না তাদের থেকে নিজেদের আলাদা মর্যাদার বলে গর্ববোধ করে।

শেয়াল শাহ’র মাজারে, অগণিত ভণ্ড অনুরক্তদের কাতারে শামিল হতে পেরে সবাই অনির্বচনীয় পুলক অনুভব করে। শেয়াল শাহ’র মাজারে যারা হাজির হতে পারেনি বা হয় না তাদেরকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকায়। তাদেরকে অবজ্ঞা করে। মূর্খ প্রতিপন্ন করে।

শেয়াল শাহের চেতনায় উজ্জীবিত এই যে বিশাল জনগোষ্ঠী-

যারা শেয়াল শাহ’র জৌলুসপূর্ণ ওরছ পালনে মহানিবেদিত।

যারা শেয়াল শাহ’র ওরশ মহাসমারোহে পালনে দ্বীপ্তভাবে উজ্জীবিত

যারা শেয়াল শাহ’র ওরছের প্রতি হালকা বিদ্রুপকারীদের তুলোধুনোই নয় তাদের হাড়গোড় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে ইস্পাত দৃঢ়ভাবে শপথকৃত।

তাদের কেউ কিন্তু জানে না শেয়াল শাহ’র মাজারের আজকের রমরমা অবস্থার সূত্রপাতটা কি? ঘটনার ধারাবাহিকতা কি? প্রকৃত ইতিহাসটা কি? শেয়াল শাহ’র মাজারের নামের তাৎপর্যটাই বা কি?

আর  প্রকৃত ইতিহাসটা যিনি জানেন- সে ‘নওমিয়াই’- আজকের শেয়াল শাহ ভক্তদের চেতনা, প্রেরণা, কর্মউদ্দীপনা, কর্মকাণ্ড তথা হাদিয়া-তোহফা এবং তাদের ভক্তি অর্চনার বেনিফেসিয়ারী, সুবিধাভোগী। শেয়াল শাহ’র মাজারের ঘটনা প্রবাহটা যে এরূপ হবে তা সে নিজেও কল্পনা করতে পারেনি। ৪২ বছর পূর্বে সে ছিল চাল-চুলাহীন বেকার, দরিদ্র, হতচ্ছাড়া যুবক। হাটে গিয়ে কাজ পাবে সে আশাও তার ছিল না। অলস মস্তিষ্কে রাস্তার পাশে নীরব দর্শকই হিসেবেই সেদিন লোকজনের যাতায়াত সে দেখছিল। বাজার থেকে ফেরার পথে এক লোকের ব্যাগ থেকে কিছু তরকারী পড়ে যায়। লোকটি যথারীতি তরকারী উঠিয়ে চলেও যায়। কিন্তু কিছু তরকারী ত্রিমুখী রাস্তার এক কিনারে শেয়ালের বিষ্ঠায় আটকে যায়।

শেয়ালের বিষ্ঠায় আটকে যাওয়া এই তরকারীই যে ‘নওমিয়ার’ আজকের এরূপ প্রভাব-প্রত্তিপত্তির দরজা খুলে দিবে তা সে সেদিন ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি। সে সময়ের ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করে আজও সে মহাপুলক অনুভব করে।

প্রথম লোকের ফেলে যাওয়া তরকারী দেখে, কি মনে করে পরের লোকও কিছু তরকারী রেখে যায়। এরপরে আরেক লোক রেখে যায় ফল। অন্য লোক রেখে যায় বাধা মুরগী। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বুদ্ধি খেলে যায় ‘নওমিয়ার’ মাথায়। তড়িঘড়ি করে একটা লাল-সালু কাপড় টানিয়ে দেয় সে। বনে যায় মাজারের খাদিম। নাম দেয় শেয়াল শাহর মাযার।

ভেবেছিল কেউ জিজ্ঞেস করলে গায়েবী শেয়ালের অলৌকিকতার কথাই সে বলবে। কিন্তু জনতার ভেবে দেখার সে সময় কোথায়? ‘শাহ’ নামের সংযুক্তকরনে ‘শেয়াল শাহ’ কি আসলে মানুষ না শেয়াল সে ফুসরত আজও জনতার হয়নি। এদিকে ২/৩ বছর পরে নওমিয়ার নতুন ঘোষণা আসে। উদাত্ত কণ্ঠে সে ঘোষণা দেয়- “এ মাযার এ এলাকার জন্মকালের মাজার। এ এলাকার জনগণের চেতনার মাজার। এলাকার জনগণের অনুভূতির মাজার। এখানে হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান সবাই এক। এটা আলাদাভাবে কারো মাযার নয়। এটা সবার মাযার।”

মাজারে গাঁজা খাওয়ার  অবাধ সুযোগ লাভ করার পাশাপাশি নারী-পুরুষ ঢলাঢলির সুবিধা পেয়ে সমগোত্রীয় সবাই নওমিয়ার কথায় সায় দেয়, নেচে উঠে।

তাতে শেয়াল শাহর ওরসে নওমিয়ার আয়োজনে প্রতিবছর আরো জমজমাট হয়। লোকজন আরো বাড়ে। গাজা আর বেলেল্লাপনাকারীদের সংখ্যাধিক্যে নওমিয়া আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে। নিজের বুদ্ধির ধারে  চমকিত হয়। শুধু মুসলমানের জন্য না ঘোষণা দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ সবার জন্য বলায় সবাইকে গাঁজা ধরার আহবানের নগদ ফল প্রাপ্তিতে নিজের কৌশলে নিজেই মুগ্ধ হয়।

(২)

সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি নূরুল ইসলামের সহধর্মিনী- কবি জাহানারা একুশের প্রভাতে শহীদ মিনারের সমাবেশে বাংলা ভাষার প্রীতির অন্যদিকে তন্বী-তরুণীর নিকট স্পর্শ পাবার লোভটাও যে উদ্দীপ্ত করে তা তার কবিতায় তুলে ধরেছেন। সুবেশী ললনা ঘরের বাইরে অসংখ্য চোখের দ্বারা যে ধর্ষিত হয় সে কথাও এখন খোলামেলাভাবে বর্তমান সাহিত্যে স্বীকৃত হচ্ছে। বলাবাহুল্য এ ধারার কর্মকাণ্ডগুলোর অবাধ অনুশীলন হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখের রমনার বটমূলেরও সমাবেশেও।

রমনার বটমূলে যারা যাচ্ছে তারা আসলে পহেলা বৈশাখের চেতনায় ই যায়? না- সুরের মূর্ছনা উপভোগ, বিস্তর ললনাদেরকে একান্ত কাছ থেকে লোভাতুর চোখ দ্বারা চেটেপুটে আস্বাদন, ভীড়ের সুযোগে একটু ঢলাঢলিকরণ- এসবের টানটাই যে আসল ও বড় কারণ তা কেবল বিদগ্ধ দৃষ্টিতেই ধরা পড়ে।

তার একটা প্রমাণ হচ্ছে আজকে যারা কথিত রমনার বটমূলে হাজির হচ্ছে শেয়াল শাহ’র ভক্তের মত তাদের একবার বোধোদয়ও হয়নি যে এটা কি আসলেই বটমূল না অন্য কিছু।

(৩)

এদিকে রমনার বটমূলের কাহিনীও যে কথিত শেয়াল শাহর মাজারের মতই ভিত্তিহীন ও ফাঁপা যা সুবিধাভোগীদের নিজস্ব অর্জন ও কৌশল তা তাদের জবানীতেই শোনা যাবে।

উল্লেখ্য, আজকের রমনার বটমূলের সমাবেশের কৃতিত্ব দাবী করেছেন নওয়াজেস আহমদ এবং সানজীদা খাতুন দু’জনেই। অর্থাৎ দু’জনেই রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখ বাংলা সংস্কৃতি প্রবর্তনে নিজেদেরকে আলাদা আলাদা চাঁদ দাবী করেছেন। তাহলে তাদের কথা মুতাবিক চাঁদের সংখ্যা দাঁড়ায় দু’টা। কিন্তু তা যে চিরন্তন সত্যের খেলাপ। সেক্ষেত্রে একটা মীমাংসায় আসতে হয়। তাদের দু’জনের দাবীকেই ঠিক রেখে দু’জনকেই অর্ধচন্দ্র (গলাধাক্কা) দিয়ে এ সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গতঃ এখানে রমনার বটমূলের সমাবেশের সূচনা প্রসঙ্গে সানজীদা খাতুনের বক্তব্য তুলে ধরা হলো-

আমাদের পহেলা বৈশাখ

আমরা নগরবাসী বলে, আর আগের দিনের ঘরে-থাকা মানুষ বলেও নতুন বছরের হালখাতার প্রত্যক্ষ পরিচয় পাইনি। দোকানে দোকানে হালখাতার খবর অবশ্য কিছুটা শোনা ছিল বাবার সূত্রে। পহেলা বৈশাখে নতুন বছরের আনন্দের অনুভূতি জেগেছে পরে, বয়সকালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে (১৯৫৩-তে) বান্ধবী মনিমুন্নেসাদের বাড়িতে পুরোনো ‘রায় হাউস’ তখনকার ‘হাসিনা হাউস’। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলাম। মনির মেজ দুলাভাই নাসির ছাহেব ছিলেন সংস্কৃতির ঐকান্তিক অনুরোগী। তারই উদ্যোগে ফুল্ল রক্তিম কৃষ্ণ ছড়া শাখায় প্রফুল্ল হয়ে ওঠা একটি ঘরে আসর বসেছিল। ভারি আনন্দ  হয়েছিল সেদিন। নাসির ভাই তার সিদ্ধেশ্বরীর বাসাতেও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান করেছেন। আমার বান্ধবী হোসনে আরার (মাক্কী) আজিমপুরের ফ্ল্যাটেও পহেলা বৈশাখের সু-সজ্জিত আসর বসেছে কাতবার। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞাতার এসব স্মৃতি আজও আনন্দ দেয়।

উনিশ শ’ তেষট্টি সালে পহেলা বৈশাখ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইংলিশ প্রিপ্যারেটরী স্কুলে’ ‘ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তন’ উদ্বোধন হলো। উনিশ শ’ চৌষট্টির পাহেলা বৈশাখ সন্ধার বিদ্যায়তনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে পুরস্কার বিতরণ আর সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। তাতে নতুন বছরকে আবহান করবার গানও ছিল। বন্ধু জিয়াউল হক (টুলু) বলেছেন, পহেলা বৈশাখে মানুষ পুরস্কার প্রদান আর শিক্ষার্থীদের গানের টানে আসে না মোটেই। পুরোদস্তর নববর্ষের উৎসব চাই আমাদের। পঁয়ষটি সালের পহেলা বৈশাখে বকরিদ পড়েছিল। সেই হুলস্থূলে বর্ষবরণ আর হলো না। ছেষট্টি সালে নতুন বছরের অনুষ্ঠান হলো দোসরা বৈশাখের ভোরে ‘ইংলিশ প্রিপ্যারেটরী স্কুল’ প্রাঙ্গণে। এবারেই ‘পুরোদস্তুর’ বর্ষবরণ। স্কুলের আঙ্গিনায় আগ্রহীজনদের সবাইকে জায়গা দেয়া একেবারে অসম্ভব। বৃহত্তর উন্মুক্ত অঙ্গনের সন্ধান শুরু হলো। এই বছরে ডক্টর নওয়াজেশ আহমদ ফিলিপিনসের চাকরির মেয়াদ শেষে দেশে ফিরলেন। ছবি তুলবার নেশায় ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো তার স্বভাব। আমাদের সমস্যা শুনে ভেবেচিন্তে বললেন, রমনা রেস্তরার ওদিকটায় চলুন একদিন। সতেজ বড় বড় ঘাসের  ভিতরে সাবধানে পা ফেলে চললাম আমরা রমনা রেস্তরাঁর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের দিকে। ফোঁস ফেঁাস নিঃশ্বাস ফেলে ঘাসে মুখ ডবিয়ে চলছিল ক’টি গরু।

নওয়াজেশ বললেন, দেখবেন ঘাসের ভিতরে লুকিয়ে থাকা পচা গোবর মাড়িয়ে ফেলবেন না যেন! বেদম পা চুলকাবে!! বড় একটি গাছের কাছে পৌঁছানো গেল। অশ্বথ গাছ। গোড়ার বেশ খানকটা বাঁধানোও রয়েছে। ঘাস আর গোবর সত্ত্বেও জায়গা পছন্দ হয়ে গেল।

ব্যাস! উনিশ শ’ সাতষট্টি থেকে শুরু হয়ে গেল বটমূলে নববর্ষ উদযাপন। গাছটি অশ্বথই বটে! কিন্তু আমন্ত্রণপত্রের ‘অশ্বথ তলা’ লিখলে কেমন যেন লাগে। গ্রামের হাট বসে অম্বতলাতে। শহরের নববর্ষের স্থান হিসেবে ‘বটমূল’ই তো শোভন। তাই চিঠিতে ‘বটমূল’ই লিখে বসলাম।

একাত্তর সালে এপ্রিল মাসে কেটেছে পলাতক অবস্থায়। বর্ষবরণ হয়নি। এ ছাড়া কি পাকিস্তানী আমল, কি বাংলাদেশ আমলে, ছায়ানট নববর্ষ উদযাপনে ক্ষান্ত হয়নি। ছায়ানটের এই নববর্ষ উৎসবের ভূমিকা এদেশের সাংস্কৃৃতিক-রাজনৈতিক জীবনে কত যে মূল্যবহ, তা বাঙালিমাত্রেই জানেন। এদেশবাসী প্রতি বছর বটমূলে প্রভাতী সমাবেশে এসে দেশীয় ঐতিহ্যে ধারায় স্নাত হয়েছেন। বাঙালি স্বাভাবে নুতন করে দীক্ষা গ্রহণ করেছেন। (সূত্র- দৈনিক জনকণ্ঠ ১৪ই এপ্রিল-০৮ঈসায়ী)

(৪)

পহেলা বৈশাখে কথিত রমনার বটমূলে সমাবেশের আয়োজন সূত্রপাতকারী নওয়াজেশ আহমদের বক্তব্য:

রমনার বটমূলে জাতীয় উৎসবে :

মহাঅশ্বত্থ গান গায়। শুধু গুনগুনিয়ে নয়, উদ্বেলিত কণ্ঠে জনসমুদ্রে, লোকে লোকারণ্যে। বর্ণাঢ্য রঙবেরঙের পোশাকে সুসজ্জিত জনতা, মনে হলো সারা বাংলাদেশ এসে সমবেত হয়েছে বটমূলে এক জাতীয় উৎসবে- নববর্ষের প্রাণপ্রাচুর্যের এক উজ্জীবিত আনন্দোৎসব। রমনার ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আজ এমন মহোৎসবে পরিণত হয়েছে।

 দেখতে দেখতে ৪২ বছর কেটে গেল। স্বভাবতই মনে পড়ে প্রথম বছরের কথা। ১৯৬৭ সালে বাঙালি সংস্কৃতির আকাশে মেঘের ঘনঘটা। মনে পড়ে সরকারি হামলা ও তার প্রতিবাদী অভিব্যক্তির কথা। থমথমে তার চারদিকে। আজিমপুরের সনজীদাদের (ড. সন্জীদা খাতুন) ফ্ল্যাটে গুনি সেই প্রতিরোধী বজ্যকণ্ঠ। ছায়ানটের সভা বসেছে। সভায় ঠিক হলো প্রতিবাদ হিসেবে নববর্ষের অনুষ্ঠান হবে উন্মুক্ত ময়দানে, সর্বসাধারণের সমাগমে। সান্জীদা প্রস্তাব করলেন, কোনো বড় গাছের নিচে অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা। ওয়াহিদুল হক এতে সায় দিয়ে আমার দিকে তাকাল, ‘চেনা কোনো জায়গা আছে?’ হঠাৎ মনে পড়ে গেল রমনা পার্কের মহীরুহ অশ্বত্থের কথা। দোয়েল পাখির ছবি তুলতে গিয়ে একদিন গাছটার সন্ধান পাই। চারদিক তখন ছিল জঙ্গলি ঘাসে আচ্ছাদিত আর বেশ নিভৃত ছিল জায়গাটা। ছায়ানটের কর্মকর্তাদের বললাম গাছটার কথা। সেদিনই শেষ বিকেলে ওয়াহিদুল, সন্জীদা, কমল সিদ্দীকী, পিয়ারু (আনুয়ারুল হক) ও আরও কয়েকজনকে নিয়ে গেলাম গাছ দেখতে। সবার পছন্দ হলো। কিন্তু বেশ পরিষ্কার করে নিতে হবে গাছের গুঁড়ির চারধার আর কেটে নিতে হবে জঙ্গলা আগাছা।

জায়গা তো পছন্দ হলো কিন্তু কী করে ওখানে অনুষ্ঠান করা যায়? জায়গাটা সরকারি। অনুমতি চাইতে গেলে নির্ঘাত পণ্ড হয়ে যাবে সবকিছু। বিপদ এড়ানোর এক পথ বের করা হলো। উল্লিখিত জায়গার সন্নিকটেই রমনা রেস্টুরেন্ট। মোয়াজ্জেম ভাই (মোয়াজ্জেম আহম্মদ চৌধুরী) তখন সম্পূর্ণ ভার নিয়েছে রেস্তোরা পরিচালনার। মোয়াজ্জেম ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক হলো রেস্তোরা আয়োজন করবে পয়লা বৈশাখের এক বিক্রয় মেলা। কাগজের ঠোঙায় মুড়ি-মুকড়ি ও অন্য খাবারদাবার রেস্তোরায় সামনে সাজিয়ে বিক্রয় করা হবে। পুলিশ বা সরকারি লোক এলে যেন বলা যায় রমনা রেস্টুরেন্টই আয়োজন করেছে বৈশাখী অনুষ্ঠানটা।

তাড়াহুড়ো করে ছায়ানট আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে ফেলল। অনুষ্ঠানের স্থান। রমনার বটমূল। আসলে কিন্তু গাছটা বট নয় অশ্বত্থ। তাতে কী আসে যায়- দুটোই ঘনিষ্ট প্রজাতি। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে মাইক লাগানো হলো। মধ্যরাত পর্যন্ত খেটে পিয়ারু, আনোয়ার জাহান ও আর্ট কলেজের আরও অনেকে মিলে মঞ্চ তৈরি করল। কমল সিদ্দীকী গাছের পোক মারার জন্য রাতের বেলায় কয়েক দফা স্প্রে করে ফেলল- সন্জীদার কড়া নির্দেশ, গানের সময় শিল্পীদের গাছ থেকে যেন পোকামাকড় না পড়ে। তা হলে গান সব পণ্ড হয়ে যাবে। বেচারি কমল বারবার আমার কাছে আসে পরামর্শের জন্য।

বসার জন্য সে রকম ভালো ব্যবস্থা করা যায়নি সময়ের অভাবে না শিল্পীদের, না শ্রোতাদের জন্য। তবুও যথাসময়ে তানপুরায় নববর্ষের শুভাগমণকে সাদর সম্ভাষণ জানানো হলো।

পহেলা বৈশাখ প্রভাতে রমনার বটমূলে বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার অঙ্গীকার সমৃদ্ধ হবার, উজ্জীবিত হবার পুণ্যস্থানে পরিণত হয়েছে।

স্বাধীনতার পরে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাসে, বটমূলের প্রাঙ্গণ ছাপিয়ে পড়িয়ে গেল চারদিকে। বাংলা একাডেমীতে পয়লা বৈশাখের মেলা, শিল্পকলা একাডেমীতে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান, ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান ছড়িয়ে গেল। কেবল রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ রইল না এই বর্ষবরণ উৎসব। যশোহর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ গাজীপুর থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সর্বত্র নতুনকে স্বাগত জানানো উৎসব পয়লা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় উৎসব।“ (সূত্র- দেনিক প্রথম আলো, ১৪ই এপ্রিল)

(৫)

সানজিদা খাতুন ও নওয়াজেশ আহমেদের উপরোক্ত বিবৃতি সাপেক্ষে প্রতিভাত হয় যে, আজকের রমনার বটমূলের কথিত সমাবেশ হাজার বছরের বাঙালী চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালীদের নয়। আর ইতিহাসও হাজার বছরের নয়; বরং এটা সানজিদা খাতুন ও নওয়াজেশ আহমেদের পরিকল্পিত ৪২ বছরের আগেকার এক অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতার ফসল।

সুতরাং দুইজন ব্যক্তিত্ব সানজিদা খাতুন ও নওয়াজেশ আহমেদের তৈরিকৃত নেশায় গোটা জাতি বুদ হয়ে থাকতে পারে না বা গোটা জাতি বুদ হয়ে থাকবে সে প্রচারনাও চলতে পারে না। বিশেষ করে দেশটা যখন মুসলমানের। দেশের রাষ্ট্রধর্ম যখন ইসলাম। এতএব, রাষ্ট্রীয়ভাবে বা সাংবিধানিকভাবেই অধিকার রয়েছে সানজিদা ও নওয়াজেশ যে অনৈসলামিক ভাবধারার সূচনা ও সূত্রপাত করেছে ইসলামের আলোকে সে অনৈসলামীপনা ফুটিলে তোলা ও তা থেকে মুসলমানকে ফিরে আসার জন্য বলা। তওবা করতে বলা।

আল্লাহ পাক তওবাকারীদের ভালবাসেন। (আমীন)

-মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান, ঢাকা

বাংলাদেশের ধর্মব্যবসায়ীদের মতই- আমেরিকার হিলারী ও ওবামা ধর্মকে হাতিয়ার করেই রাজনৈতিক ফায়দা লূটছে। ‘কে কত বেশী ইসলাম বিদ্বেষী ও ইসরাইল দরদী’- সেটা প্রমাণই ওদের ধর্মব্যবসার বড় পুঁজি। মিথ্যা, ধোঁকা, সাম্প্রদায়িকতা ও চাতুরীর সংমিশ্রনে ওদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার প্রচেষ্টা প্রমাণ করছে যে, কি বাংলাদেশ অথবা গণতন্ত্রের পাদপীঠ আমেরিকা- সবস্থানেই গণতান্ত্রিক নির্বাচন মানেই মিথ্যা প্রচারণা আর অসৎ নীতি তথা নোংরা খেলার সংমিশ্রণ।

হযরত মুজাদ্দিদে আযম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী এর প্রতি অপবাদ লেপনে হাটহাজারীর খারেজী আহমক শফী গং এর অখ্যাত  মুখপত্রের নব্য সংযোজনের মূলোৎপাটন প্রসঙ্গে।

রাজাকারদের গডফাদার গোআযমের চুরি করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তত্ত্ব ও মইত্যা রাজাকারের গ্রেফতার প্রসঙ্গঃ

মন্তব্য প্রতিবেদন হাফেজ্জী শুধু যুদ্ধাপরাধীই নয় বরং সে দেওবন্দী ঘরানার প্রধান পৃষ্ঠপোষকতার পক্ষে সাফাই গেয়ে খতীব নুরুদ্দীন মহা কাযযাব হয়েছেও হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম-এর কঠোর অবমাননা করেছে।

রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের এই দেশে, প্রকাশ্যে ইসলামের চরম অবমাননা, আখিরী রসুল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ….. বাচ্চা বলার পরও গোটা সরকারের প্রতিক্রিয়াহীনতা খুবই দুঃখজনক ও রহস্যজনক। যা দেশবাসী মুসলমান কোনমতেই মেনে নিতে পারে না। কাজেই দেশবাসী মুসলমানরা, প্রত্যেক থানাতেই এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনে অগ্রণী সেনা পাঠান, সংবিধানের ২(ক) ধারা মতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে অবমাননা করার দায়ে হাইকোর্টে রিট করুন অথবা প্রতি থানায় ১৫৩(ক)/২৯২/২৯৪/২৯৫(ক)/২৯৮/৫০৪/৩৪ দণ্ডবিধি আইনী ধারায় মামলা করুন। কমপক্ষে থানায় জিডি করুন।